লগইন করুন
পরিচ্ছেদঃ ১৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - অনুগ্রহ ও স্বজনে সদাচার
৪৯১৫-[৫] মুগীরাহ্ ইবনু শু’বাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা তোমাদের জন্য মায়ের অবাধ্যতা, কন্যাদের জীবন্ত প্রোথিতকরণ, কৃপণতা ও ভিক্ষাবৃত্তি হারাম করেছেন। আর তোমাদের জন্য বৃথা তর্কবিতর্ক, অধিক সওয়াল করা ও সম্পদ বিনষ্ট অপছন্দ করেছেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الْبِرِّ وَالصِّلَةِ
وَعَن الْمُغِيرَةِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ اللَّهَ حَرَّمَ عَلَيْكُمْ عُقُوقَ الْأُمَّهَاتِ وَوَأْدَ الْبَنَاتِ وَمَنَعَ وَهَاتِ. وَكَرِهَ لَكُمْ قِيلَ وَقَالَ وَكَثْرَةَ السُّؤَالِ وَإِضَاعَةَ الْمَالِ» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
ব্যাখ্যাঃ (وَوَأْدَ الْبَنَاتِ) এর অর্থ হচ্ছে কন্যা সন্তানদেরকে জীবিত দাফন করা। জাহিলী যুগের মানুষ নারীদের প্রতি অবজ্ঞাবশতঃ এ কাজ করত। সর্বপ্রথম যে এ কাজটি করে তার নাম কায়স ইবনু ‘আসিম আত্ তামিমী। ঘটনাটি হলো : কায়স ইবনু ‘আসিম-এর কোন শত্রু একদিন তার ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে তার কন্যাকে বন্দী করে নিজের স্ত্রী বানিয়েছেন। অতঃপর কোন এক সময় তাদের মাঝে সন্ধি স্থাপিত হয় এবং শত্রুটি তার মেয়েকে স্বাধীনতা দেয়, মেয়েটি তার স্বামীর কাছে থাকতেই পছন্দ করে। এ কারণে কায়স শপথ করে যে, এর পরবর্তীতে যত মেয়ে সন্তান তার জন্ম নিবে সবাইকে সে মাটিতে জিবন্ত পুঁতে ফেলবে। ‘আরব সমাজ তার এ নীতি অনুসরণ করে কন্যা সন্তানদের জীবিত মাটিতে পুঁতে ফেলা শুরু করে দেয়। দ্বিতীয় আরেকটি দল ছিল, যারা যে কোন সন্তানকেই (ছেলে হোক মেয়ে হোক) হত্যা করত। এর একটি কারণ ছিল যে সন্তান তার সাথে খেলে তার সম্পদ কমে যাবে। তাদের এ ঘৃণ্য স্বভাবকে আল্লাহ রববুল ‘আলামীন কুরআনে কয়েকটি জায়গায় উল্লেখ করেছেন।
পরবর্তীতে কায়স ইবনু ‘আসিম আত্ তামিমী ইসলাম গ্রহণ করেন এবং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীর মর্যাদা লাভ করেন। উল্লেখিত হাদীসে কন্যা সন্তান বিশেষভাবে উল্লেখ করার কারণ হলো সাধারণত কন্যা সন্তানদেরকেই জীবিত কবর দেয়া হত।
(كَثْرَةُ السُّؤَالِ) হাদীসের এ অংশটুকুর ব্যাখ্যায় যথেষ্ট মতবিরোধ রয়েছে। এটা কি কোন মাল সম্পদ চাওয়া নাকি কোন সমস্যার সমাধান চাওয়া, নাকি এর চেয়ে ব্যাপক কোন বিষয়? এক্ষেত্রে সঠিক কথা হলো বিষয়টিকে ব্যাপক রাখাই শ্রেয়। কেউ কেউ বলেছেন, এ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো মানুষের খুঁটিনাটি বিষয়ে বেশি বেশি জিজ্ঞেস করা, অথবা কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি সম্পর্কে বিস্তারিত জিজ্ঞাসা। অসম্ভব, অহেতুক বা বিরল কোন বিষয়ে প্রশ্ন করা অপছন্দনীয়। আল্লাহ রববুল ‘আলামীন বলেনঃ ‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা এমন কোন বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করো না যা প্রকাশ হলে তোমাদের ক্ষতি হবে।’’ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর নিকট সেই ব্যক্তি সর্বাধিক পাপিষ্ট যে এমন কোন বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল যে বিষয়টি হারাম ছিল না, কিন্তু তার প্রশ্ন করার কারণে হারাম করে দেয়া হয়েছে।
ভিক্ষা করা নিন্দনীয় এবং ভিক্ষা থেকে বিরত থাকা প্রশংসনীয় কাজ। আল্লাহ রব্বুল ‘আলামীন তাদের প্রসংশা করেছেন যারা দরিদ্র হওয়া স্বত্ত্বেও মানুষের কাছে হাত পাতে না। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে বান্দা ভিক্ষাবৃত্তি করে বেড়ায় কিয়ামতের মাঠে সে এমন অবস্থায় উঠবে যে, তার মুখে কোন গোশত থাকবে না। সহীহ মুসলিমে এসেছে, তিন শ্রেণীর মানুষ ছাড়া কারও জন্য ভিক্ষা করা বৈধ নয়।
১। প্রচণ্ড দারিদ্রে্য জর্জরিত ব্যক্তি; ২। ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি, যে ঋণ প্রতিশোধ করার সাধ্য রাখে না; ৩। যার সম্পদ দুর্ভিক্ষে নষ্ট হয়ে গেছে।
ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ ‘উলামায়ে কিরাম এক মত যে, বিনা প্রয়োজনে ভিক্ষা করা নিষেধ। আমাদের সাথীরা মতবিরোধ করেছেন উপার্জনক্ষম ব্যক্তির ভিক্ষাবৃত্তির বিষয়ে। কেউ কেউ বলেছেন, এটা সম্পূর্ণ হারাম। কেউ বলেছেন, তিনটি শর্তে এটা অপছন্দনীয়তার সাথে জায়িয। শর্ত তিনটি হলো : ১) চাইতে গিয়ে পিড়াপিড়ি করবে না, ২) চাইতে গিয়ে নিজেকে অপদস্থ করবে না, ৩) দানকারীকে কষ্ট দিবে না। উল্লেখিত তিন শর্তের কোন একটি শর্ত যদি না পাওয়া যায় তাহলে ভিক্ষা করা অবৈধ হারাম হবে।
ফাকিহানী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ আমি আশ্চর্যান্বিত হয়ে যাই তাদের কথায়, যারা বলে, মানুষের কাছে চাওয়া কোন অবস্থাতেই বৈধ নয়; অথচ মানুষের কাছে চাওয়ার ব্যাপরটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগ থেকে প্রমাণিত। পূর্ববর্তী সালাফে সলিহীনদের নিকট থেকেও প্রমাণিত, তাই ইসলামী শারী‘আহ্ এটাকে অপছন্দনীয় বলেনি।
(إِضَاعَةَ الْمَالِ) ধন-সম্পদ নষ্ট করার ব্যাপারে ইসলাম কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। কেননা সম্পত্তি হলো মানব কল্যাণের জন্য, তাই তা নষ্ট করা মানবতা বিরোধী কর্মকাণ্ড-র শামিল। তবে আখিরাতের সাওয়াবের আশায় জনকল্যাণমূলক কাজে তা অত্যধিক ব্যয় করা খারাপ কিছু নয়। অধিক ব্যয়ের তিনটি দিক হতে পারে। ১) অন্যায় পথে খরচ করা, এটা বিনা সন্দেহে নিষিদ্ধ। ২) ন্যায়ের পথে খরচ করা, যার প্রতি শারী‘আত উৎসাহিত করেছে। ৩) শারী‘আত কর্তৃক বৈধ বিষয়ে খরচ করা। যেমন একটু চাকচিক্যময় জীবন যাপন করা। ইমাম সুবকী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ সম্পদ নষ্টের ব্যাপারে মূলনীতি হলো তা খরচের ব্যাপারে দীনী ও পার্থিব কোন উদ্দেশ্য না থাকা, সম্পদ খরচের ক্ষেত্রে দীনী ও পার্থিব কোন উদ্দেশ্য না থাকলে তা অকাট্য হারাম হবে। ইমাম ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ উত্তম চরিত্রের মূলনীতি হিসেবে হাদীসটি অনেকগুলো ভালো স্বভাবকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। (ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৫৯৭৫)