লগইন করুন
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - চুল আঁচড়ানো
৪৪৭৩-[৫৫] উক্ত রাবী [’আবদুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাত্রে শোয়ার পূর্বে প্রত্যেক চোখে তিন তিন শলাকা ইসমিদ সুরমা লাগাতেন। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো বলেছেনঃ যে সব জিনিস দ্বারা তোমরা চিকিৎসা গ্রহণ করো তন্মধ্যে সবচেয়ে উত্তম-লাদূদ, সাঊত, শিঙ্গা লাগানো এবং জোলাপ নেয়া। যে সব সুরমা তোমরা ব্যবহার করো তার মধ্যে ইসমিদ সর্বোত্তম। তাতে চোখের দৃষ্টিশক্তি সতেজ হয় এবং চোখের পলকের চুল অধিক জন্মায়। আর শিঙ্গা লাগানোর জন্য উত্তম দিন হলো চাঁদের সতের, ঊনিশ ও একুশ তারিখ। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যখন মি’রাজ হয়েছিল, তখন তিনি মালায়িকাহ্’র (ফেরেশতাদের) যে দলের নিকট দিয়ে অতিক্রম করেছিলেন, তাঁরা প্রত্যেকেই বলেছিলেন যে, আপনি অবশ্যই শিঙ্গা লাগাবেন। (তিরমিযী; এবং তিনি বলেছেনঃ এ হাদীসটি হাসান ও গরীব।)[1]
وَعَنْهُ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَكْتَحِلُ قَبْلَ أَنْ يَنَامَ بِالْإِثْمِدِ ثَلَاثًا فِي كُلِّ عَيْنٍ قَالَ: وَقَالَ: «إِنَّ خَيْرَ مَا تَدَاوَيْتُمْ بِهِ اللَّدُودُ وَالسَّعُوطُ وَالْحِجَامَةُ وَالْمَشِيُّ وَخَيْرَ مَا اكْتَحَلْتُمْ بِهِ الْإِثْمِدُ فَإِنَّهُ يَجْلُو الْبَصَرَ وَيُنْبِتُ الشَّعْرَ وَإِنَّ خَيْرَ مَا تَحْتَجِمُونَ فِيهِ يَوْمُ سَبْعَ عَشْرَةَ وَيَوْمُ تِسْعَ عَشْرَةَ وَيَوْمُ إِحْدَى وَعِشْرِينَ» وَإِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَيْثُ عُرِجَ بِهِ مَا مَرَّ عَلَى مَلَأٍ مِنَ الْمَلَائِكَةِ إِلَّا قَالُوا: عَلَيْكَ بِالْحِجَامَةِ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ
ব্যাখ্যাঃ (اللَّدُودُ) মুখের পার্শ্ব দিয়ে যে ঔষধ সেবন করানো হয় তাকে ‘লাদূদ’ বলা হয়। সম্ভবত এটি সে সময়কার বিশেষ এক প্রকার উত্তম ঔষধ, যা ঐভাবে (ফোঁটা ফোঁটা করে মুখের ঔষধ) সেবন করানো হত।
(السَّعُوطُ) ড্রপ দিয়ে (ফোঁটা ফোঁটা করে নাকের ঔষধ) নাকে ব্যবহারের ঔষধ। সে সময়কার উত্তম ঔষধের মাঝে এটিকে গণ্য করা হয়েছে।
(الْحِجَامَةُ) রক্তমোক্ষণ চিকিৎসা। শিঙ্গা ব্যবহারের মাধ্যমে শরীরের বিষাক্ত রক্ত উঠানোর মাধ্যমে এই চিকিৎসা গ্রহণ করা হয়ে থাকে। আধুনিক কালে এর নতুন প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়েছে।
(الْمَشِيُّ) শব্দটির ‘মীম’ হরফে যবর, ‘শিন’ অক্ষরে যের এবং পরবর্তীতে ‘ইয়া’ তাশদীদযুক্ত। পেট নামানোর কাজে ব্যবহৃত যে কোন ঔষধকেই ‘মাশিয়্যু’ বলা হয়। শব্দটি (الْمَشِيُّ) থেকে উদগত। যার অর্থ চলাফেরা। তুরিবিশতী বলেনঃ পেট নামানোর কাজে ব্যবহৃত ঔষধকে ‘মাশিয়্যু’ বলার কারণ হলো, এই ঔষধ সেবনকারী বাথরুমে যাওয়া আসা বেড়ে যায়। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
এই চারটি চিকিৎসাকে সর্বোত্তম চিকিৎসা বলে আখ্যায়িত করেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। এগুলোই হয়ত সে সময়কার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা ছিল।
(وَإِنَّ خَيْرَ مَا تَحْتَجِمُونَ فِيهِ يَوْمُ سَبْعَ عَشْرَةَ وَيَوْمُ تِسْعَ عَشْرَةَ وَيَوْمُ إِحْدٰى وَعِشْرِينَ) শিঙ্গা লাগিয়ে চিকিৎসার ক্ষেত্রে কোন কোন হাদীসে কিছু তারিখকে উত্তম বলা হয়েছে। যেমন বর্ণিত হাদীসে চান্দ্র মাসের ১৭, ১৯, ২১ তারিখে হিজামাহ্ উত্তম বলা হয়েছে। কোন হাদীসে সপ্তাহের কিছু দিনে শিঙ্গা লাগাতে উৎসাহিত করা হয়েছে আবার কিছু দিনে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। যেমন সোমবার ও মঙ্গলবারে উৎসাহিত করা হয়েছে এবং অন্যদিন নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
তবে নির্ধারিত তারিখ বা নির্ধারিত দিনে হিজামাহ্ সম্পর্কে যত হাদীসে বর্ণিত হয়েছে তার সবই দুর্বল বলে মত দিয়েছেন মুহাদ্দিসীনে কিরাম। মুহাদ্দিসীনে কিরাম বলেনঃ নির্ধারিত দিনে হিজামার প্রতি উৎসাহিত বা নিরুৎসাহিতের ক্ষেত্রে বিশুদ্ধ কিছু নেই।
(حَيْثُ عُرِجَ بِه) অর্থাৎ মি‘রাজ রজনীতে যখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আকাশে চড়ানো হচ্ছিল, তখন যখনই তিনি মালায়িকাহ্’র (ফেরেশতাগণের) দল অতিক্রম করেছেন, মালায়িকাহ্ তাকে বলেছে- (عَلَيْكَ بِالْحِجَامَةِ) তোমার জন্য হিজামা জরুরী বা তুমি হিজামাকে আঁকড়ে ধরো। হাদীসটি সহীহ হলে হিজামার গুরুত্ব আরো অনেক বেশি বেড়ে যেত। তবে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিজামাহ্ দ্বারা চিকিৎসা করেছেন তা বিভিন্ন সহীহ হাদীসের মাধ্যমে নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত এবং উপকার ও গুরুত্বও প্রমাণিত।