১১৪৭

পরিচ্ছেদঃ

১১৪৭। যখন তুমি কবরবাসীকে অতিক্রম করবে তখন বলবেঃ আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কুবুরে মিনাল মুসলিমীনা অল-মুমিনীন, আনতুম লানা সালাফুন, অ-নাহনু লাকুম তাব’উন, অ-ইন্না ইনশাআল্লাহু বিকুম লাহিকুন। আবু রাযীন বলেনঃ হে আল্লাহর রসূল! তারা কি শ্রবণ করে? তিনি বলেনঃ তারা শ্রবণ করে কিন্তু তারা উত্তর দিতে সক্ষম নয়। হে আবু রাযীন! তাদের সংখ্যার সমপরিমাণ ফেরেশতা কর্তৃক তোমার সালামের উত্তর প্রদান করাতে কি তুমি সম্ভষ্ট নও।

হাদীসটি মুনকার।

হাদীসটি ওকায়লী “আয-যুয়াফা” গ্রন্থে (৩৬৯) ও আব্দুল গানী মাকদেসী "আস-সুনান" গ্রন্থে (কাফ ২/৯২) নাজম ইবনু বাশীর ইবনে আব্দিল মালেক ইবনে উসমান আল-কুরাশী সূত্রে মুহাম্মাদ আল-আশ’য়াস হতে, তিনি আবূ সালামাহ হতে ... বর্ণনা করেছেন।

আবূ রাযীন (রাঃ) বলেনঃ হে আল্লাহর রসূল! আমার যাতায়াতের পথ হচ্ছে কবরস্থানের নিকট দিয়ে, আমি কি তাদের নিকট দিয়ে যাওয়ার সময় কোন কথা বলতে পারি? তখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত কথা বলেন।

ওকায়লী বলেনঃ মুহাম্মাদ ইবনুল আশ’য়াস, তিনি বংশ পরিচয় এবং বর্ণনা করা উভয় ক্ষেত্রে মাজহুল (পরিচয়হীন বর্ণনাকারী)। তার এ হাদীস নিরাপদ নয়, শুধুমাত্র এ সনদের মাধ্যমেই এটি জানা যায়।

সালামের অংশটি সালেহ সূত্রে অন্য সনদে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু সম্পূর্ণ হাদীসটির দিকে লক্ষ্য করলে হাদীসটি নিরাপদ নয়।

এছাড়া আরেক বর্ণনাকারী আননাজম ইবনু বাশীরকে ইবনু আবী হাতিম (১/৪) উল্লেখ করে তার সম্পর্কে ভাল-মন্দ কিছুই বলেননি।

আমি (আলবানী) বলছিঃ হাদীসটি উক্ত বাড়তি অংশের (আবু রামীন (রাঃ) বলেনঃ ...) কারণে মুনকার। উক্ত পরিচয়হীন বর্ণনাকারী কর্তৃক এককভাবে বর্ণিত হওয়ার কারণে। এ বাড়তি অংশ ছাড়া দু’আর শেষ পর্যন্ত বর্ণিত অংশটি সহীহ। সেটি ইমাম মুসলিম আয়েশা ও বুরায়দাহ হতে বর্ণনা করেছেন। এ বর্ধিত অংশটুকুর ভাষাও অপছন্দনীয়। কারণ কুরআন ও হাদীসের মধ্যে এরূপ কোন দলীল পাওয়া যায় না যে, মৃত ব্যক্তিরা শুনে থাকে। বরং দলীলের বাহ্যিকতা প্রমাণ করে যে, তারা শ্রবণ করে না। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ (وَمَا أَنْتَ بِمُسْمِعٍ مَنْ فِي الْقُبُورِ) “তুমি কখনও এমন মানুষদের কিছু শোনাতে পারবে না যারা কবরের অধিবাসী" (সূরা ফাতেরঃ ২২)।

আর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদের মধ্যে তার সাথীদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেনঃ “তোমরা জুম’আর দিন আমার প্রতি বেশী দুরূদ পাঠ কর, কারণ তোমাদের দুরূদ আমার নিকট পৌছবে।” তিনি বলেননি যে, আমি তোমাদের দুরূদ পাঠ করাকে শুনতে পাব। বরং অন্য হাদীসের মধ্যে এসেছে ফেরেশতারা পঠিত দুরূদকে তার নিকটে পৌছিয়ে দেয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ রব্বুল আলামীনের ভ্রমনকারী ফেরেশতা রয়েছে তারা আমার উম্মাতের সালাম আমার নিকট পৌঁছিয়ে দেয়। [এ হাদীসটি ইমাম নাসাঈ (১২৮২), আহমাদ (৩৬৫৭, ৪১৯৮, ৪৩০৮) ও দারেমী (২৭৭৪) সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন]।

আর বুখারীতে যে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে "বান্দাকে যখন কবরে রাখা হয় অতঃপর তার সাথীরা যখন সেখান থেকে বিদায় নেয় তখন সদ্য কবরে রাখা ব্যক্তি তাদের জুতার আওয়াজ শুনতে থাকে, তার নিকট দু’জন ফেরেশতা আসে অতঃপর তাকে উঠিয়ে বসায়, অতঃপর তাকে তারা দু’জনে জিজ্ঞাসা করে ...।" আলহাদীস। এ হাদীসের (বিভিন্ন ভাষা) থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় যে, সে সময় মৃত ব্যক্তির নিকট প্রশ্নোত্তরের জন্য তার আত্মাকে ফিরিয়ে দেয়া হয় যাতে সে শুনে দু’ফেরেশতার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে। যেমনটি হাদীসটির পারিপাশ্বিকতা থেকে বুঝা যায়।

আর বদর যুদ্ধে নিহত কাফেরদের সম্পর্কে রসূলসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উমার (রাঃ)-কে লক্ষ্য করে যে কথা বলেছিলেনঃ "আমি তাদের সম্পর্কে যে কথা বলছি তাদের চেয়ে তা তোমরা বেশী শুনতে পাচ্ছ না।" এটি ছিল তাদের সাথেই সম্পৃক্ত বিশেষ ঘটনা। মূলত মৃত ব্যক্তিরা শ্রবণ করে না। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাদেরকে উদ্দেশ্য করে কিছু কথা বলেন তখন এ মূলের উপরে ভিত্তি করেই উমার (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উদ্দেশ্যে বলেনঃ আপনি তো সেই সব দেহগুলোকে ডাকছেন যেগুলো লাশে পরিণত হয়েছে। অর্থাৎ উমার (রাঃ) জানতেন যে, মৃতরা কিছু শ্রবণ করতে পারে না। আর তার এ কথাকে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যাখ্যান করেননি বরং সমর্থন করে তাকে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, এটি একটি বিশেষ ঘটনা। কারণ যদি বিশেষ ঘটনা না হতো তাহলে তিনি উমার (রাঃ)-এর ধারণার বিপরীতে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিতেন যে, তারা শ্রবণ করে। অতএব তিনি যখন এ সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে কিছুই বলেননি তখন বুঝা যাচ্ছে যে, তিনি উমার (রাঃ)-এর কথাকে সমর্থন করেন। অতএব এটি ছিলো বিশেষ ঘটনা যা সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। বরং আসল হচ্ছে এই যে, মৃত ব্যক্তিরা শুনতে পায় না।

দুঃখজনক হলেও সত্য, বর্তমান যুগে বহু লোক পথভ্রষ্ট হয়ে আল্লাহকে ডাকা ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর সাথে শরীক স্থাপন করে কবরে থাকা তথাকথিত মৃত অলীআওলিয়া আর নেককার ব্যক্তিদের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করছে, তাদেরকে অসীলা ধরছে এ ধারণা পোষণ করে যে, তারা তাদের কথা শ্রবণ করে থাকে এবং তারা সাহায্য করতে সক্ষম। অথচ আল্লাহ্ তা’আলা বলছেনঃ

إِنْ تَدْعُوهُمْ لَا يَسْمَعُوا دُعَاءَكُمْ وَلَوْ سَمِعُوا مَا اسْتَجَابُوا لَكُمْ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يَكْفُرُونَ بِشِرْكِكُمْ وَلَا يُنَبِّئُكَ مِثْلُ خَبِيرٍ

যদি তোমরা তাদের ডাকো তারা তো শোনবেই না, যদি তারা তা শোনেও তবে তারা তোমাদের ডাকের কোন উত্তর দেবে না, আর কিয়ামতের দিন তারা তোমাদের এ শির্ককে অস্বীকার করবে। একমাত্র সুবিজ্ঞ আল্লাহ্‌ ছাড়া অন্য কেউই তোমাকে কিছু অবহিত করতে পারবে না। (সূরা ফাতেরঃ ১৪)।

إذا مررت عليهم (يعني أهل القبور) فقل: السلام عليكم يا أهل القبور من المسلمين والمؤمنين، أنتم لنا سلف، ونحن لكم تبع، وإنا إن شاء الله بكم لاحقون. فقال أبو رزين: يا رسول الله ويسمعون؟ قال: ويسمعون، ولكن لا يستطيعون أن يجيبوا، أولا ترضى يا أبا رزين أن يرد عليك [بعددهم من] الملائكة منكر - أخرجه العقيلي في " الضعفاء " (369) وعبد الغني المقدسي في " السنن " (ق 92: 2) عن النجم بن بشير بن عبد الملك بن عثمان القرشي حدثنا محمد بن الأشعث عن أبي سلمة عن أبي هريرة قال " قال أبو رزين: يا رسول الله: إن طريقي على المقابر، فهل من كلام أتكلم به إذا مررت عليهم؟ قال: " فذكره. وقال العقيلي والزيادة له " محمد بن الأشعث مجهول في النسب والرواية، وحديثه هذا غير محفوظ، ولا يعرف إلا بهذا الإسناد. وأما " السلام عليكم يا أهل القبور " إلى قوله " وإنا إن شاء الله بكم لاحقون " فيروى بغير هذا الإسناد من طريق صالح، وسائر الحديث غير محفوظ والنجم بن بشير أورده ابن أبي حاتم (4/1) ولم يذكر فيه جرحا ولا تعديلا قلت: فهو بهذه الزيادة منكر، لتفرد هذا المجهول بها، وأما بدونها فهو حديث صحيح أخرجه مسلم من حديث عائشة وبريدة، وهو مخرج في كتابي " أحكام الجنائز وبدعها وهذه الزيادة منكرة المتن أيضا، فإنه لا يوجد دليل في الكتاب والسنة على أن الموتى يسمعون، بل ظواهر النصوص تدل على أنهم لا يسمعون. كقوله تعالى " وما أنت بمسمع من في القبور " وقوله صلى الله عليه وسلم لأصحابه وهم في المسجد: " أكثروا علي من الصلاة يوم الجمعة، فإن صلاتكم تبلغني ... " فلم يقل: أسمعها. وإنما تبلغه الملائكة كما في الحديث الآخر: " إن لله ملائكة سياحين يبلغوني عن أمتي السلام ". رواه النسائي وأحمد بسند صحيح وأما قوله صلى الله عليه وسلم: " العبد إذا وضع في قبره، وتولى وذهب أصحابه حتى إنه ليسمع قرع نعالهم أتاه ملكان فأقعداه، فيقولان له.. " الحديث رواه البخاري فليس فيه إلا السماع في حالة إعادة الروح إليه ليجيب على سؤال الملكين كما هو واضح من سياق الحديث ونحوه قوله صلى الله عليه وسلم لعمر حينما سأله عن مناداته لأهل قليب بدر: " ما أنتم بأسمع لما أقول منهم " هو خاص أيضا بأهل القليب، وإلا فالأصل أن الموتى لا يسمعون، وهذا الأصل هو الذي اعتمده عمر رضي الله عنه حين قال للنبي صلى الله عليه وسلم: إنك لتنادي أجسادا قد جيفوا، فلم ينكره الرسول صلى الله عليه وسلم بل أقره، وإنما أعلمه بأن هذه قضية خاصة، ولولا ذلك لصحح له ذلك الأصل الذي اعتمد عليه، وبين له أن الموتى يسمعون خلافا لما يظن عمر، فلما لم يبين له هذا، بل أقره عليه كما ذكرنا، دل ذلك على أن من المقرر شرعا أن الموتى لا يسمعون. وأن هذه قضية خاصة وبهذا البيان ينسد طريق من طرق الضلال المبين على المشركين وأمثالهم من الضالين، الذين يستغيثون بالأولياء والصالحين ويدعونهم من دون الله، زاعمين أنهم يسمعونهم، والله عز وجل يقول: " إن تدعوهم لا يسمعوا دعاءكم، ولو سمعوا ما استجابوا لكم، ويوم القيامة يكفرون بشرككم ولا ينبئك مثل خبير وراجع لتمام هذا البحث الهام مقدمتي لكتاب " الآيات البينات في عدم سماع الأموات عند الحنفية السادات للآلوسي


হাদিসের মানঃ মুনকার (সহীহ হাদীসের বিপরীত)
পুনঃনিরীক্ষণঃ