৩৯৬৯

পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - যুদ্ধবন্দীদের বিধিমালা

৩৯৬৯-[১০] ’ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, বানী সাক্বীফ ছিল বানী ’উকায়ল-এর মিত্র গোত্র। একদিন বানী সাক্বীফ-এর লোকেরা অন্যায়ভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দু’জন সাহাবীকে বন্দী করল। বন্দীর প্রতিশোধ স্বরূপ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীগণ বানী ’উকায়ল-এর এক ব্যক্তিকে সুযোগ পেয়ে বন্দী করে মদীনার অদূরে ’হাররাহ্’ নামক মরু প্রান্তরে ফেলে রাখলেন। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার সম্মুখ দিয়ে যাচ্ছিলেন, এমতাবস্থায় সে চিৎকার দিয়ে বলল, হে মুহাম্মাদ! হে মুহাম্মাদ! কি অপরাধে আমাকে বন্দী করা হয়েছে? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমার মিত্র গোত্র সাক্বীফ গোত্রের অপরাধে।

এটা বলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সম্মুখে অগ্রসর হলেন। লোকটি আবারও হে মুহাম্মাদ! হে মুহাম্মাদ! বলে তাকে আহবান করতে লাগল। এতে তাঁর মনে দয়ার উদ্রেক হলো। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিরে এসে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কি হয়েছে? লোকটি বলল, আমি মুসলিম হয়েছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এ স্বীকারোক্তি তুমি যদি তোমার স্বাধীনতা ও কর্তৃত্ব থাকাকালীন সময়ে বলতে, তবে তুমি পূর্ণরূপে সাফল্য লাভ করতে। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ঐ দু’জন মুসলিম বন্দীর বিনিময়ে ছেড়ে দিলেন, যাদেরকে বানী সাক্বীফ বন্দী করে রেখেছিল। (মুসলিম)[1]

بَابُ حُكْمِ الْاُسَرَاءِ

وَعَن عمرَان بن حُصَيْن قَالَ: كَانَت ثَقِيفٌ حَلِيفًا لِبَنِي عُقَيْلٍ فَأَسَرَتْ ثَقِيفٌ رَجُلَيْنِ مِنْ أَصْحَابِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَسَرَ أَصْحَابِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَجُلًا مِنْ بَنِي عُقَيْلٍ فَأَوْثَقُوهُ فَطَرَحُوهُ فِي الْحَرَّةِ فَمَرَّ بِهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَنَادَاهُ: يَا مُحَمَّدُ يَا مُحَمَّدُ فِيمَ أُخِذْتُ؟ قَالَ: «بِجَرِيرَةِ حُلَفَائِكُمْ ثَقِيفٍ» فَتَرَكَهُ وَمَضَى فَنَادَاهُ: يَا مُحَمَّدُ يَا مُحَمَّدُ فَرَحِمَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم فرجعَ فَقَالَ: «مَا شَأْنُكَ؟» قَالَ: إِنِّي مُسْلِمٌ. فَقَالَ: «لَوْ قُلْتَهَا وَأَنْتَ تَمْلِكُ أَمْرَكَ أَفْلَحْتَ كُلَّ الْفَلَاحِ» . قَالَ: فَفَدَاهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بالرجلينِ اللَّذينِ أسرَتْهُما ثقيفٌ. رَوَاهُ مُسلم

ব্যাখ্যা: (فَأَسَرَتْ ثَقِيفٌ رَجُلَيْنِ مِنْ أَصْحَابِ رَسُوْلِ اللّٰهِ ﷺ) অন্য নুসখাতে আছে, ‘‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীদের অন্তর্ভুক্ত দু’জন লোক’’ এর পরিবর্তে আল্লাহর রসূলের সাহাবীগণ ‘আক্বীল বংশের একজন লোককে আটক করল। তাদের নিয়ম ছিল মিত্রের অপরাধের কারণে মিত্রের কাউকে পাকড়াও করা। সুতরাং তাদের নিয়ম অনুযায়ী তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ কাজ করলেন। ইবনুল মালিক একে উল্লেখ করেছেন।

(قَالَ : بِجَرِيرَةِ حُلَفَائِكُمْ ثَقِيْفٍ) তোমাদের মিত্র সাক্বীফ গোত্রের অপরাধের কারণে। আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাক্বীফ গোত্রের মাঝে পারস্পরিক সন্ধি চুক্তি ছিল। অতঃপর সাক্বীফ গোত্র যখন তাদের সন্ধি ভঙ্গ করল এবং বানূ ‘আক্বীল তা অসমীচীন মনে করল না। অথচ বানূ ‘আক্বীল সাক্বীফ গোত্রের সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ ছিল, চুক্তিভঙ্গের ক্ষেত্রে তারা সাক্বীফ গোত্রের মতো সাব্যস্ত হলো। সুতরাং সাহাবীগণ ‘আক্বীল গোত্রের লোকটিকে সাক্বীফ গোত্রের অপরাধের কারণে পাকড়াও করল।

একমতে বলা হয়েছে, এর অর্থ হলো- তোমাকে পাকড়াও করা হয়েছে যাতে তোমার মাধ্যমে আমরা তোমার মিত্র সাক্বীফ গোত্রের অপরাধ প্রতিহত করতে পারি। এর উপর প্রমাণ বহন করছে যে, পরবর্তীতে সাক্বীফ গোত্রের আটক করা ঐ দু’ মুসলিম ব্যক্তির মুক্তিপণ হিসেবে বানূ ‘আক্বীল গোত্রের লোকটিকে উপস্থাপন করা হয়েছিল।

(أَفْلَحْتَ كُلَّ الْفَلَاحِ) অর্থাৎ- দুনিয়াতে দাসত্ব হতে মুক্তির মাধ্যমে, পরকালে জাহান্নাম থেকে মুক্তির মাধ্যমে তুমি সফল হতে।

ইবনুল মালিক বলেনঃ এতে ঐ ব্যাপারে প্রমাণ আছে যে, কাফির ব্যক্তি যখন বন্দীত্বে পতিত হয়, অতঃপর দাবী করে যে, সে ইতিপূর্বে ইসলাম গ্রহণ করেছে তাহলে প্রমাণ ছাড়া তার ঐ কথা গ্রহণ করা হবে না। আর যদি বন্দী হওয়ার পর ইসলাম গ্রহণ করে তাহলে তাকে হত্যা করা হারাম এবং তাকে দাস বানানো বৈধ। আর যদি বন্দী হওয়ার পর জিয্ইয়াহ্ দিতে সম্মত হয় তাহলেও তাকে হত্যা করা হারাম হওয়ার ক্ষেত্রে মতানৈক্য আছে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)

(لَوْ قُلْتَهَا وَأَنْتَ تَمْلِكُ أَمْرَكَ أَفْلَحْتَ كُلَّ الْفَلَاحِ) এর অর্থ হলো- বন্দী হওয়ার পূর্বে তুমি যখন তোমার বিষয়ের মালিক ছিলে তখন যদি তোমার ইসলাম গ্রহণের কথা বলতে তাহলে পূর্ণরূপে সফলকাম হতে। কেননা তুমি যদি বন্দী হওয়ার পূর্বে ইসলাম গ্রহণ করতে তাহলে তোমাকে বন্দী করা বৈধ হতো না, কেননা তুমি মুসলিম হওয়ার কারণে বন্দী হওয়া থেকে নিরাপদ থাকা ও মালিক হওয়ার সুযোগ গ্রহণের মাধ্যমে সফলকাম হতে। পক্ষান্তরে যখন বন্দী হওয়ার পর ইসলাম গ্রহণের কথা বললে তখন তোমাকে হত্যা করার সুযোগ রহিত হয়ে যাবে। আর দাস বানানো, অনুগ্রহ করা ও মুক্তিপণ দেয়ার ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাধীনতা স্থায়ী থাকবে।

অত্র হাদীসে মুক্তিপণ দেয়ার বৈধতা রয়েছে, আর বন্দী ব্যক্তির ইসলাম গ্রহণ বন্দী থেকে যোদ্ধাদের অধিকার রহিত করবে না, বন্দী হওয়ার পূর্বে যদি ইসলাম গ্রহণ করে তার হুকুমের বিপরীত। (শারহে মুসলিম ১১শ খন্ড, হাঃ ১৬৪১)

অত্র হাদীসের সাথে সামঞ্জস্যশীল আবূ দাঊদ-এর «قال : نأخذك بجريرة خلفائك» এ হাদীসাংশের ব্যাখ্যায় ‘আওনুল মা‘বূদে যা এসেছে তা হলো- ইমাম খত্ত্বাবী বলেনঃ বিদ্বানগণ এর বিশ্লেষণে মতানৈক্য করেছেন। অতঃপর তাদের কতকে বলেছেন, এটা ঐ কথার উপর প্রমাণ বহন করছে যে, তারা বানূ ‘আক্বীলের সাথে ঐ কথার উপর চুক্তিবদ্ধ হয়েছে যে, তারা মুসলিমদের এবং তাদের কোনো মিত্রের মুকাবেলা করবে না। অতঃপর তাদের মিত্ররা চুক্তি ভঙ্গ করেছে। এমতাবস্থায় বানূ ‘আকীল তার অসম্মতি জানায়নি, ফলে বানূ সাক্বীফের অপরাধের কারণে বানূ ‘আক্বীলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যরা বলেন, এটা কাফির ব্যক্তি তার কোনো অঙ্গীকার নেই, তাকে গ্রেপ্তার করা, বন্দী করা এবং হত্যা করা সবই বৈধ। (‘আওনুল মা‘বূদ ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ৩৩০৬)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ