লগইন করুন
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৩৭৯৬-[১০] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মানুষের মধ্যে সর্বোত্তম জীবনযাপন করে ঐ ব্যক্তি, যে আল্লাহর পথে স্বীয় ঘোড়ার লাগাম ধরে তার পিঠের উপর বসে অপেক্ষারত থাকে। যখনই কোনো ভয়ভীতির সংকেত শুনতে পায়, তৎক্ষণাৎ সে দ্রুতবেগে তার দিকে ধাবিত হয় এবং তাকে হত্যা করে বা মৃত্যু সম্ভাবনাময় স্থানে খুঁজতে থাকে। আর ঐ ব্যক্তির জীবন (সর্বোত্তম) কিছু বকরীর একটি পাল বা ছোট একটি বকরীর পাল নিয়ে কোনো পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থান নেয় বা কোনো সমতল ভূমিতে বকরী চরায় এবং শেষ নিঃশ্বাস থাকা তথা মৃত্যু পর্যন্ত সালাত কায়িম করে, যাকাত আদায় করে এবং সর্বদা স্বীয় প্রতিপালকের ’ইবাদাতে মশগুল থাকে। এসব মানুষেরাই সর্বোত্তম জীবন যাপনের অধিকারী হয়ে থাকে। (মুসলিম)[1]
اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مِنْ خَيْرِ مَعَاشِ النَّاسِ لَهُمْ رَجُلٌ مُمْسِكٌ عِنَانَ فَرَسِهِ فِي سَبِيلِ اللَّهِ يَطِيرُ عَلَى مَتْنِهِ كُلَّمَا سَمِعَ هَيْعَةً أَوْ فَزْعَةً طَارَ عَلَيْهِ يَبْتَغِي الْقَتْلَ وَالْمَوْتَ مَظَانَّهُ أَوْ رَجُلٌ فِي غُنَيْمَةٍ فِي رَأْسِ شَعَفَةٍ مِنْ هَذِهِ الشَّعَفِ أَوْ بَطْنِ وَادٍ مِنْ هَذِهِ الْأَوْدِيَةِ يُقِيمُ الصَّلَاةَ وَيُؤْتِي الزَّكَاةَ وَيَعْبُدُ الله حَتَّى يَأْتِيَهُ الْيَقِينُ لَيْسَ مِنَ النَّاسِ إِلَّا فِي خير» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে দুই শ্রেণীর ব্যক্তিকে কল্যাণের উপর অধিষ্ঠিত বলে ঘোষণা করা হয়েছে। তাদের মধ্যে প্রথম শ্রেণী জিহাদে অংশগ্রহণের জন্য সদা প্রস্তুত থাকে এবং শাহাদাতের কামনায় ছুটে যায় ময়দানে।
আর অপর শ্রেণী জিহাদে অংশগ্রহণে যদিও অপারগ, কিন্তু আল্লাহর ‘ইবাদাত উপাসনা থেকে কখনো বিমুখ থাকে না; বরং সদা ‘ইবাদাতে মশগুল থাকে। এ দুই শ্রেণীর ব্যক্তিই কল্যাণের উপর রয়েছে বলে হাদীসে বর্ণনা করা হয়েছে।
(خَيْرِ مَعَاشِ النَّاسِ) দ্বারা মানুষের জীবনযাত্রার মধ্যে জীবনযাপনের সর্বোত্তম অবস্থা বুঝানো হয়েছে।
(يَطِيرُ عَلَى مَتْنِه) অর্থাৎ উক্ত ঘোড়ার পিঠের উপর সওয়ার হয়ে খুব দ্রুত বেগে এগিয়ে যায়।
(كُلَّمَا سَمِعَ هَيْعَةً أَوْ فَزْعَةً طَارَ عَلَيْهِ) অর্থাৎ যখনই সাহায্যের আবেদন বা ভয়ঙ্কর আওয়াজ শুনতে পায়, তখনই তার ঘোড়ার উপর সওয়ার হয়ে দ্রুত গতিতে যুদ্ধের জন্য এগিয়ে যায়। هَيْعَةً শব্দ দ্বারা শত্রুবাহিনীর উপস্থিতির কারণে যে (সাহায্যের আকুতি সম্বলিত) শব্দ বা আওয়াজ (মানুষের মুখ থেকে) বেরিয়ে আসে তাই বুঝানো হয়। আর فَزْعَةً অর্থ ভয়ঙ্কর আওয়াজ বা শত্রুর দিকে ছুটে যাওয়া।
(يَبْتَغِى الْقَتْلَ وَالْمَوْتَ مَظَانَّه) এ বাক্যে বুঝানো হয়েছে যে, ঐ ব্যক্তির শাহাদাত লাভের অত্যধিক আকাঙ্ক্ষা থাকার কারণে সে জিহাদের ময়দানে সব জায়গায় এই কামনাই করবে। হাদীসের এ অংশে জিহাদের মর্যাদা এবং সেক্ষেত্রে শাহাদাত বরণের প্রতি আকাঙ্ক্ষার ফযীলত বর্ণনা করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রথম ব্যক্তি জিহাদের ময়দানে ঝাপিয়ে পড়ার জন্য সদা প্রস্তুত। আর এ শ্রেণীর মানুষ কল্যাণের উপর অধিষ্ঠিত। দ্বিতীয় শ্রেণীর ব্যক্তি হচ্ছে ঐ ব্যক্তি যে তার মেষপাল নিয়ে নির্জনে পাহাড়ের উচ্চ শৃঙ্গে অথবা কোনো সমতল ভূমিতে অবস্থানরত অবস্থায় আল্লাহর ‘ইবাদাতে মগ্ন থাকে। সেও কল্যাণের উপর রয়েছে।
এখানে غُنَيْمَةٍ শব্দটি ‘গানাম’ এর তাসগীর। এর অর্থ কিছু বকরী বা একপাল বকরী। আর شَعَفَةٍ এর অর্থ হলো أعلى الجبل তথা ‘পাহাড়ের চূড়া বা শীর্ষস্থান’। (শারহে মুসলিম ১৩শ খন্ড, হাঃ ১২৫, ১৮৮৯)