লগইন করুন
পরিচ্ছেদঃ ২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - প্রশাসনিক কর্মস্থলে কাজ করা এবং তা গ্রহণের দায়িত্বে ভয় করা
৩৭৪২-[১২] সা’ঈদ ইবনু মুসাইয়্যাব (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন এক মুসলিম ও এক ইয়াহূদীর মধ্যে পরস্পর বিবাদ নিয়ে ’উমার (রাঃ)-এর নিকট আসলো। এমতাবস্থায় ’উমার (রাঃ) তা সত্যায়িত করে ইয়াহূদীর পক্ষে রায় দিয়ে দিলেন। তখন ইয়াহূদী ’উমার (রাঃ)-কে লক্ষ্য করে বললঃ আল্লাহর কসম! আপনি হক বিচার করেছেন। অতঃপর ’উমার তাকে চাবুক দিয়ে আঘাত করে বললেনঃ তুমি কিভাবে জানলে (হক বিচার হয়েছে)? উত্তরে ইয়াহূদী বললঃ আল্লাহর কসম! আমরা তাওরাত কিতাবে পেয়েছি, যে শাসক ন্যায়বিচার করে তার ডানপাশে একজন মালাক (ফেরেশতা) থাকেন এবং বামপাশে একজন মালাক থাকেন। তারা তার কাজটিকে সহজসাধ্য করে দেন এবং ন্যায় ও সঠিক কাজ করার মধ্যে সাহায্য করেন, যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি ন্যায়ের সাথে থাকেন। কিন্তু যখন তিনি ন্যায় ও হক পন্থা পরিহার করেন, তখন মালায়িকাহ্ (ফেরেশতারা) উপরে চলে যান এবং তার সঙ্গ পরিত্যাগ করেন। (মালিক)[1]
وَعَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيَّبِ: أَنَّ مُسْلِمًا وَيَهُودِيًّا اخْتَصَمَا إِلَى عُمَرَ فَرَأَى الْحَقَّ لِلْيَهُودِيِّ فَقَضَى لَهُ عُمَرُ بِهِ فَقَالَ لَهُ الْيَهُودِيُّ: وَاللَّهِ لَقَدْ قَضَيْتَ بِالْحَقِّ فَضَرَبَهُ عُمَرُ بِالدِّرَّةِ وَقَالَ: وَمَا يُدْريكَ؟ فَقَالَ الْيَهُودِيُّ: وَاللَّهِ إِنَّا نَجِدُ فِي التَّوْرَاةِ أَنَّهُ لَيْسَ قَاضٍ يَقْضِي بِالْحَقِّ إِلَّا كَانَ عَنْ يَمِينِهِ مَلَكٌ وَعَنْ شِمَالِهِ مَلَكٌ يُسَدِّدَانِهِ وَيُوَفِّقَانِهِ لِلْحَقِّ مَا دَامَ مَعَ الْحَقِّ فَإِذَا تركَ الحقَّ عرَجا وترَكاهُ. رَوَاهُ مَالك
ব্যাখ্যা: অত্র হাদীসটি বিশিষ্ট তাবি‘ঈ সা‘ঈদ বিন মুসাইয়্যাব (রহঃ) কর্তৃক বর্ণিত বিচার কাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করার উজ্জ্বল নমুনা। যেখানে দ্বিতীয় খলীফা ‘উমার -এর ন্যায়নীতির বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। ঘটনার বিবরণ হলো একজন মুসলিম ও একজন ইয়াহূদী বিচার নিয়ে ‘উমার -এর নিকট আসলেন। ‘উমার দেখলেন ইয়াহূদী সঠিকতার উপর আছে, তাই ইনসাফ করতঃ বিচার তার পক্ষে করলেন। ইয়াহূদী বলে উঠলো, আল্লাহর শপথ! ‘আপনি ন্যায় করেছেন’ এ কথা বললে ‘উমার তাকে প্রহার করলেন এবং বললেন, তুমি কিভাবে বুঝলে? তখন ইয়াহূদী বললো, আমরা তাওরাতে পেয়েছি যে, কোনো বিচারক যদি ন্যায়সঙ্গত বিচার করে তাহলে তার ডান ও বাম পাশে দু’জন মালাক থাকেন তারা তাকে সঠিকতায় পৌঁছানোর জন্য সহযোগিতা করেন। যতক্ষণ পর্যন্ত সে ন্যায়ের পথে থাকে যখন সে ন্যায় বিচার না করে তখন মালায়িকাহ্ তাকে বর্জন করেন।
এখানে প্রশ্ন হলো, ‘উমার ন্যায় করলে ইয়াহূদী ব্যক্তি তাকে সমর্থন করলেন এবং আপনি ন্যায় বিচার করেছেন। পরবর্তীতে ‘উমার ইয়াহূদীকে বেত্রাঘাত করার কারণ কি? এ প্রশ্নের উত্তরে ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ তাকে ব্যথাদায়ক হয় এমন আঘাত করেননি বরং সে প্রহারটি ছিল এরূপ যেমন আমরা কেউ আমাদের পক্ষে সমর্থন দিলে তাকে একটু মৃদু আঘাত করে থাকি এরূপ ছিল। অত্র হাদীসের ইয়াহূদী যেহেতু যিম্মী ছিলেন, তাই তাদের মাঝে ইসলামের হুকুম বাস্তবায়িত হয়েছে।
মাস্আলাহ্ : যদি আহলে কুফুরের তথা অমুসলিমদের মাঝে বিচার করতে হয় তাহলে তা কয়েক শ্রেণীর হতে পারে। বাদী-বিবাদী দু’জনই ইয়াহূদী অথবা দু’জনই নাসারা অথবা একজন ইয়াহূদী অপরজন নাসারা। সুতরাং যদি দু’জনেই ইয়াহূদী হয় তাহলে মুসলিমরা তাদের বিচার করবে না। আর যদি বিচার করতে হয় তাহলে তারা চাইলে করা যেতে পারে ন্যায়সঙ্গতভাবে। ইবনু ‘আবদুল হাকাম বলেন, বিচারক চাইলে বিচার করতে পারে। যদি বাদী-বিবাদী উভয়জন সন্তুষ্টচিত্তে কোনো মুসলিম বিচারকের নিকটে বিচার চায় তাহলে এক্ষেত্রে মুসলিম বিচারকের পথ দু’টি একটি বিচার না করা আর অপরটি হলো বিচার করলে তাদের মধ্যে ইসলাম অনুপাতে ন্যায়সঙ্গত বিচার করা- এ দু’টি বিষয়ে মুসলিম বিচারপতি স্বাধীন যেটি ইচ্ছা করতে পারেন।
মহান আল্লাহ বলেনঃ ‘‘হে নাবী! বেধর্মীরা আপনার নিকট বিচার নিয়ে আসলে আপনি তাদের বিচার করুন অথবা ফিরিয়ে দেন আপনি তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে তারা আপনার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না আর তাদের মাঝে বিচার করলে ন্যায়সঙ্গত বিচার করুন, নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায় বিচারকারীকে পছন্দ করেন’’- (সূরা আল মায়িদাহ্ ৫ : ৪২)। (আল্ মুনতাকা ৭ম খন্ড, হাঃ ১৩৮০; মিরকাতুল মাফাতীহ)