৩৫৩৮

পরিচ্ছেদঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - মুরতাদ এবং গোলযোগ সৃষ্টিকারীকে হত্যা করা প্রসঙ্গে

৩৫৩৮-[৬] আবূ বকরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দু’জন মুসলিম যখন পরস্পরে বিবাদে লিপ্ত হয়ে একজন অপরজনের ওপর অস্ত্র ধারণ করে তাহলে তারা উভয়ে জাহান্নামের দাঁরপ্রান্তে উপনীত হবে। অতঃপর যদি একজন অপরজনকে হত্যা করে বসে, তাহলে তারা উভয়ে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।

অপর বর্ণনাতে রয়েছে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যখন দু’জন মুসলিম তরবারি নিয়ে পরস্পর মুখোমুখি হয় তখন হত্যাকারী ও নিহত ব্যক্তি উভয়ই জাহান্নামী হয়। আমি বললাম, হত্যাকারীর বিষয়টিতো পরিষ্কার; কিন্তু নিহত ব্যক্তি এমন (জাহান্নামী) হলো কেন? অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, কেননা সেও তার সঙ্গীকে হত্যা করার আকাঙ্ক্ষায় ছিল। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ قَتْلِ أَهْلِ الرِّدَّةِ وَالسُّعَاةِ بِالْفَسَادِ

وَعَنْ أَبِي بَكْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِذَا الْتَقَى الْمُسْلِمَانِ حَمَلَ أَحَدُهُمَا عَلَى أَخِيهِ السِّلَاحَ فَهُمَا فِي جُرُفِ جَهَنَّمَ فَإِذَا قَتَلَ أَحَدُهُمَا صَاحِبَهُ دَخَلَاهَا جَمِيعًا» . وَفِي رِوَايَةٍ عَنْهُ: قَالَ: «إِذَا الْتَقَى الْمُسْلِمَانِ بسيفهما فَالْقَاتِلُ وَالْمَقْتُولُ فِي النَّارِ» قُلْتُ: هَذَا الْقَاتِلُ فَمَا بَالُ الْمَقْتُولِ؟ قَالَ: «إِنَّهُ كَانَ حَرِيصًا عَلَى قَتْلِ صَاحِبِهِ»

ব্যাখ্যা: আবূ বাকরাহ্ এ হাদীসটি উষ্ট্রের যুদ্ধের সময় আহনাফ বিন কায়সকে লক্ষ্য করে বর্ণনা করেন। এ যুদ্ধটি সংঘটিত হয়েছিল ‘আলী ও তার সাহাবীদের সাথে উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) ও তার সাহাবীদের। এই যুদ্ধকে উষ্ট্রের যুদ্ধ বলার কারণ হলো সেদিন ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) উটের উপর সওয়ার ছিলেন। এজন্য এর নাম হয় উষ্ট্রের যুদ্ধ।

(فِى النَّارِ) এর ব্যাখ্যা ‘আল্লামা ইবনু হাজার ‘আস্ক্বালানী বলেনঃ যদি আল্লাহ তাদের জন্য এ বিষয়টি কার্যকর করে থাকেন তবে উভয়ে এমন কার্য সম্পাদন করে যাতে তারা শাস্তির উপযুক্ত হয়ে যাবে।

বাকিল্লানী এ হাদীসকে প্রমাণস্বরূপ পেশ করে বলেন যে, যে ব্যক্তি কোনো পাপ কর্মের ইচ্ছা পোষণ করবে আর তা কাজে পরিণত না করলেও গুনাহগার হবে। কিন্তু যারা এর বিরোধিতা করে তারা এই হাদীসের জবাবে বলেন, এটা কাজের সাথে সম্পৃক্ত। আর যে ব্যক্তি ইচ্ছা পোষণ করে, অতঃপর দৃঢ় সংকল্প করে অথচ করে না, সে গুনাহগার হবে কিনা, মতভেদ রয়েছে।

কুসতুলানীও অনুরূপ মত পোষণ করেন। তিনি বলেনঃ এটা কাজের সাথে জড়িত। আর তা হচ্ছে অস্ত্র নিয়ে পরস্পরের সম্মুখীন হওয়া এবং যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া। ঘাতক ও নিহত ব্যক্তি জাহান্নামে একই স্তরের হওয়া অবশ্যক নয়। সুতরাং ঘাতককে যুদ্ধ করা ও হত্যা করার শাস্তি দেয়া হবে। আর নিহত ব্যক্তিকে শুধু যুদ্ধের জন্য শাস্তি দেয়া হবে। তাই বুঝা গেলো যে, শুধু ইচ্ছা পোষণ করার জন্য শাস্তি দেয়া হয়নি। (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৪২৬২)

* খত্ত্বাবী বলেনঃ এই শাস্তির বিধান প্রযোজ্য এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে যে দুনিয়াবী শত্রুতার নিমিত্তে যুদ্ধ করে অথবা রাজত্ব কামনা করে। সুতরাং যে অত্যাচারী অথবা আক্রমণকারীর সাথে যুদ্ধ করে তার ওপর শাস্তি প্রযোজ্য নয়। কেননা এক্ষেত্রে শারী‘আতের নির্দেশ রয়েছে। (ফাতহুল বারী ১২তম খন্ড, হাঃ ৬৮৭৫)

কোনো মুহাদ্দিস বলেনঃ হত্যাকারী ও নিহত উভয়ে জাহান্নামী এক্ষেত্রে কোনো ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। তাদের যুদ্ধ স্বার্থবাদী হওয়ায় উভয়ে জাহান্নামে দাখিল হওয়ার যোগ্য। কখনো এর জন্য শাস্তি দেয়া হয় কখনো আল্লাহ মাফ করে দেন। এটা আহলে হকদের অভিমত।

সাহাবীগণের মাঝে যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল তা এই শাস্তির অন্তর্ভুক্ত নয়। আহলুস্ সুন্নাহ্ ও আহলুল হকদের ‘আকীদা হলো তাদের প্রতি সুধারণা রাখা। আর তাদের মাঝে ঘটে যাওয়া বিষয়াবলীকে এবং তাদের পরস্পর যুদ্ধের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ থেকে বিরত থাকা। তারা ইজতিহাদ করেছেন এবং ব্যাখ্যা করেছেন। কিন্তু এগুলো তারা পাপের উদ্দেশে বা দুনিয়া লাভের উদ্দেশে করেননি। বরং তাদের প্রত্যেকেই মনে করতো যে, তারা ন্যায়পন্থী সত্যবাদী এবং প্রতিপক্ষরা অন্যায়কারী ও বাড়াবাড়িকারী। এভাবেই তাদের মাঝে আল্লাহর বিধানের প্রতি প্রত্যাবর্তন করতে গিয়ে যুদ্ধ অবধারিত হয়ে যায়। তাদের কেউ ছিলেন সঠিক, আবার কেউ ভুল-ত্রুটির ক্ষেত্রে অপারগ হওয়াই বেঠিক। কেননা এটা হয়েছে ইজতিহাদের কারণে। আর মুজতাহিদ যখন ভুল করে তখন তার গুনাহ হয় না। আহলুস্ সুন্নাহ্-এর মত হলো ‘আলী ঐ যুদ্ধে সঠিক ও ন্যায়পন্থী ছিলেন। আর সমস্যাটা ছিল সংশয়পূর্ণ। এমনকি সাহাবীদের একটি দল এই বিষয়ে দিশেহারা এবং কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছিল। ফলে তারা উভয় দল থেকে বিরত ছিলেন এবং যুদ্ধে জড়াননি। আর নিশ্চিতভাবে সঠিকতা বুঝতে পারেননি। অবশেষে তারা তাদেরকে সহযোগিতা থেকে পিছু হটেছিলেন। (শারহে মুসলিম ১৮তম খন্ড, হাঃ ১৪)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ বাকরা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ