লগইন করুন
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
মিরকাতুল মাফাতীহে বর্ণিত, মরোক্কার পরিভাষায় الْعِتْقِ শব্দটি ব্যবহৃত দাসত্ব হতে বের হয়ে আসা। যেমন বলা হয়أُعْتِقَ الْعَبْدُ عِتْقًا দাস স্বাধীন হয়েছে।
الْعِتْقِ বা العتاق এ শব্দদ্বয়ের আভিধানিক অর্থ হলো শক্তি বা প্রাবল্য। এ কারণে খানায়ে কা’বাকে বলা হয় ’’বায়তুল আতীক’’। কেননা তা নিজস্ব শক্তির বদৌলতে তার অনিষ্টকারী কিংবা ধ্বংসকারীকে প্রতিহত করে দেয়। তথা সমকালীন অনিষ্ট কোনো বাদশার ধ্বংস হতে (যেমন আবরাহা বাদশার অনিষ্ট হতে প্রতিহত করেছে)।
আবার পুরনো বস্তুকেও ’আতীক বলা হয়, কেননা কোনো জিনিস পূর্বে সংঘটিত হলেও তাতে গুণগত হিসেবে এক ধরনের শক্তি অর্জিত হয়ে থাকে। এ জন্য আবূ বকর সিদ্দীক -এর উপাধি ছিল ’’আতীক’’। কেননা পূর্ব হতেই তিনি একাধিক গুণের অধিকারী ছিলেন, আবার কেউ বলেছিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ভাষায় জাহান্নামের আগুন হতে মুক্তি লাভ করেছিল বলে মর্যাদার উঁচুমানের হওয়াতে, আবার কারও মতে মা যখন তাকে প্রসব করেন তখন বলেন, عَتِيقُكَ مِنَ الْمَوْتِ তোমার স্বাধীনতা মৃত্যু হতে অর্থাৎ তোমার মুক্তি মৃত্যুতে, কেননা তার কোনো সন্তানই বেঁচে থাকত না। তবে এখানে কোনো ক্রীতদাস তার মালিক হতে মুক্তি লাভ করার অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
বস্তুত মানুষ জনমগতভাবে আযাদ বা স্বাধীন করেও করতলগত হওয়াটা তার মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। দাসত্ব অবস্থায় সে নিজের স্বভাবগত চাহিদা কিংবা দীন ঈমানের দাবীতে ধর্মীয় কার্যকলাপ যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে পারে না। এমতাবস্থায় সে একজন অসহায় ও অক্ষম, তার সেই দাসত্বের শৃঙ্খল হতে মুক্তি লাভ করাটাই শক্তি। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
৩৩৮২-[১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোনো মুসলিম গোলামকে মুক্ত করবে আল্লাহ তা’আলা তার প্রতিটি অঙ্গের বিনিময়ে তার প্রতিটি অঙ্গকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দিবেন। এমনকি ঐ ব্যক্তির গুপ্তাঙ্গও তার গুপ্তাঙ্গের বিনিময়ে মুক্তি দিবেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ أَعْتَقَ رَقَبَةً مُسْلِمَةً أَعْتَقَ اللَّهُ بِكُلِّ عُضْوٍ مِنْهُ عُضْوًا مِنَ النَّارِ حَتَّى فَرْجَهُ بِفَرْجِهِ»
ব্যাখ্যা: আল্লাহ তা‘আলার বাণী: أَوْ تَحْرِير رَقَبَة ‘দাস আযাদ করা’ ইঙ্গিত করে সাধারণত কসমের জরিমানা স্বরূপ। (أَيُّ الرِّقَابِ أَزْكٰى) কোন্ দাস মুক্ত করা বেশী উত্তম তা আবূ যার (রাঃ)-এর হাদীস প্রমাণ করে যা ইতিপূর্বে গেছে। (عَنْ أَبِي ذَرٍّ وَفِيهِ قُلْتُ فَأَيُّ الرِّقَابِ أَفْضَلُ قَالَ أَغْلَاهَا ثَمَنًا وَأَنْفَسُهَا عِنْدَ أَهْلِهَا) যে গোলামের মূল্য বেশী এটা তার মালিকের নিকট বেশী পছন্দ। (ফাতহুল বারী ১১শ খন্ড, হাঃ ৩৭১৫)
(مَنْ أَعْتَقَ رَقَبَةً أَعْتَقَ اللّٰهُ بِكُلِّ عُضْوٍ مِنْهَا عُضْوًا مِنْ أَعْضَائِه مِنَ النَّارِ حَتّٰى فَرْجَه بِفَرْجِه) যে ব্যক্তি কোনো মুসলিম দাসকে দাসত্ব হতে মুক্তি করবে (আযাদকৃত দাসের) প্রত্যেকটি অঙ্গের বিনিময়ে আল্লাহ তার (মুক্তি দানকারীর) প্রত্যেক অঙ্গকে জাহান্নামের আগুন হতে মুক্তি দান করবেন। এমনকি ঐ ব্যক্তির (ক্রীতদাসের) লজ্জাস্থানের বিনিময়ে এ ব্যক্তির (মুক্তিদানকারীর) লজ্জাস্থানও আগুন হতে মুক্তি পাবে।
অন্য বর্ণনায় এসেছ, (مَنْ أَعْتَقَ رَقَبَةً مُؤْمِنَةً أَعْتَقَ اللّٰهُ بِكُلِّ إِرْبٍ مِنْهَا إِرْبًا مِنْهُ مِنَ النَّارِ) যে ব্যক্তি কোনো মু’মিন দাসকে দাসত্ব হতে মুক্ত করবে (আযাদকৃত দাসের) প্রত্যেকটি অঙ্গের বিনিময়ে আল্লাহ তার (মুক্তিদানকারীর) প্রত্যেক অঙ্গকে জাহান্নামের আগুন হতে মুক্তি করবেন।
হাদীসে দাসমুক্ত করার বর্ণনা এবং এটা উত্তম ‘আমল যা দ্বারা জাহান্নামের আগুন হতে মুক্ত হওয়া এবং জান্নাতে প্রবেশ প্রমাণিত হয়। আরও প্রমাণিত হয় অঙ্গবিহীন দাসের চেয়ে নিখুঁত দাস আযাদ করা উত্তম।
আর এ হাদীস দলীল হিসেবে প্রমাণিত যে, দাসী মুক্ত করার চেয়ে দাস মুক্ত করা উত্তম। কাযী ‘আয়ায বলেনঃ ‘উলামারা এ ব্যাপারে মতানৈক্য করেছেন- পুরুষ দাস আযাদ করা উত্তম, না মহিলা দাস? অনেকে বলেন, মহিলা দাস মুক্ত করা উত্তম, কেননা মহিলাকে যখন আযাদ করা হবে তখন তার সন্তানেরাও মুক্ত হবে, চাই তাকে স্বাধীন পুরুষ বিবাহ করুক বা দাস।
আবার অন্য ‘উলামাহ্ দল বলেন, পুরুষকে আযাদ করা উত্তম। সামগ্রিকভাবে পুরুষে যে উপকার আসে মহিলাতে তা আসে না, যেমন- সাক্ষ্যদানে, বিচারক হিসেবে এবং জিহাদের ময়দানে যুদ্ধ করতে প্রভূত বিষয়ে যা বিশেষ পুরুষের সাথেই সংশ্লিষ্ট। আর বিশেষ করে মু’মিন মহিলা/দাসকে খাছ করা হয়েছে, কেননা এতে বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। অবশ্য মু’মিনাহ্ মহিলা ব্যতিরেকে কাফির দাসকে মুক্ত করাও মর্যাদা রয়েছে। তবে তা মু’মিনাহ্ দাসী মহিলার চেয়ে দাস মর্যাদা। এজন্য সকল ‘উলামাহ্ ঐকমত্য হয়েছিল যে, হত্যার জরিমানায় মু’মিনাহ্ দাসীর আযাদের কথা বলা হয়েছে।
কাযী ‘ইয়ায মালিক হতে বর্ণনা করেন যে, সবচেয়ে উত্তম দাসী গোলামকে আযাদ করা যদিও সে কাফির হয়। তবে তার অন্য সাথীরা বিরোধিতা করেছেন। আল্লাহই ভালো জানেন। (শারহে মুসলিম ১০ম খন্ড, হাঃ ১৫০৯)
মিরকাতুল মাফাতীহে বর্ণিত, (حَتّٰى فَرْجَه بِفَرْجِه) লজ্জাস্থানের বিনিময়ে এই ব্যক্তির লজ্জাস্থানও চাই তা পুরুষের হোক বা মহিলার হোক। আশরাফ (বাহেমা) বলেনঃ লজ্জাস্থানকে খাস করে উল্লেখ করার কারণ হলো, শির্কের পরে বড় গুনাহের করার স্থান হলো লজ্জাস্থান তথা যিনা। (যিনার ব্যয় মারাত্মক ধরনের কবীরা গুনাহে লিপ্ত হলেও দাস মুক্ত করার দরুন সে জাহান্নামের আগুন হতে মুক্তি লাভ করবে)
মুযহির বলেনঃ নিকৃষ্টতম অঙ্গ বুঝানো হয়েছে। তবে অধিকতর স্পষ্ট হলো আধিক্য অর্থে বুঝানো হয়েছে। (ফাতহুল বারী ১১শ খন্ড, হাঃ ৩৭১৫)