লগইন করুন
পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - তাসবীহ (সুবহা-নাল্ল-হ), তাহমীদ (আল হাম্দুলিল্লা-হ), তাহলীল (লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ) ও তাকবীর (আল্ল-হু আকবার)- বলার সাওয়াব
২৩১৩-[২০] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ’সুবহা-নাল্ল-হ’ হলো পাল্লার অর্ধেক, ’আলহামদুলিল্লা-হ’ একে পূর্ণ করে, আর ’লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ’-এর সামনে কোন পর্দা নেই, যে পর্যন্ত না তা আল্লাহর কাছে গিয়ে না পৌঁছে। (তিরমিযী; তিনি বলেছেন, হাদীসটি গরীব, এর সানাদ সবল নয়)[1]
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «التَّسْبِيحُ نِصْفُ الْمِيزَانِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ يَمْلَؤُهُ وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ لَيْسَ لَهَا حِجَابٌ دُونَ اللَّهِ حَتَّى تَخْلُصَ إِلَيْهِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ. وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ وَلَيْسَ إِسْنَاده بِالْقَوِيّ
ব্যাখ্যা: (التَّسْبِيحُ نِصْفُ الْمِيزَانِ) অর্থাৎ- তাসবীহ বর্ণনার সাওয়াবকে আকৃতি দেয়ার পর তা অর্ধেক দাড়িপাল্লাকে পূর্ণ করে নিবে। এখানে উদ্দেশ্য হল প্রতিষ্ঠিত দাড়িপাল্লাতে পুণ্য রাখার কারণে তার দু’ পাল্লার এক পাল্লাকে তা পূর্ণ করে নিবে।
(وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ يَمْلَؤُه) অর্থাৎ- যদি (الْحَمْدُ لِلّٰهِ) দাড়িপাল্লার এক পাল্লাতে রাখা হয় তাহলে তা এক পাল্লাকে পূর্ণ করে নিবে। সুতরাং (الحمد) তাসবীহ অপেক্ষা উত্তম। তার সাওয়াব তাসবীহের সাওয়াবের দ্বিগুণ, কেননা তাসবীহ দাড়িপাল্লার এক পাল্লার অর্ধেক পূর্ণ করে। পক্ষান্তরে (الْحَمْدُ لِلّٰهِ) দাড়িপাল্লার দু’ পাল্লার একটিকে একাই পূর্ণ করে দেয়। অথবা উদ্দেশ্য এও হতে পারে যে, (الْحَمْدُ لِلّٰهِ) দাড়িপাল্লার বাকী অর্ধেককে পূর্ণ করে দিবে। অর্থাৎ- যদি তাসবীহের সাওয়াবকে দাড়িপাল্লার এক পাল্লাতে রাখার পর অন্য পাল্লাতে (الْحَمْدُ لِلّٰهِ) এর সাওয়াব রাখা হয় তাহলে দাড়িপাল্লা পূর্ণ হয়ে যাবে। তখন (الحمد) এর সাওয়াব তাসবীহের সাওয়াবের সমান হবে, কেননা (الحمد) এবং (تسبيح) থেকে প্রত্যেকটি দাড়িপাল্লার অর্ধেককে গ্রহণ করে এক সাথে দাড়িপাল্লাকে পূর্ণ করে দিবে তখন (الحمد) এবং (تسبيح) উভয়টি সমান হবে।
ত্বীবী বলেন, হাদীসে দু’টি দিক আছে। দু’টি দিকের একটি হল (تسبيح) এবং (تحميد) এর মাঝে সমতা উদ্দেশ্য করা আর তা এভাবে যে, (تسبيح) এবং (تحميد) প্রত্যেকটি অর্ধেক পাল্লা করে এক সাথে সম্পূর্ণ পাল্লাকে পূর্ণ করে দেয়। আর এটা এ কারণে যে, কেননা ঐ সকল জিকির যা দৈহিক ‘ইবাদাতের মূল তা দু’ প্রকারে সীমাবদ্ধ। দু’ প্রকারের একটি হল, পবিত্রতা বর্ণনা করা অপরটি প্রশংসা করা। (تسبيح) প্রথম প্রকারকে আয়ত্ব করে এবং (تحميد) দ্বিতীয় প্রকারকে অন্তর্ভুক্ত করে। দু’টির দ্বিতীয়টি দ্বারা (الحمد) কে (تسبيح)-এর শ্রেষ্ঠত্ব দান করা উদ্দেশ্য। এর সাওয়াব (تسبيح)-এর সাওয়াবের দ্বিগুণ। কেননা (تسبيح) এর দাড়িপাল্লার অর্ধেক আর (تحميد) একাই তাকে পূর্ণ করে আর এটা এ কারণে যে, কেননা সাধারণ (حمد)-এর অধিকারী হবে কেবল ঐ সত্তা যে সকল ঘাটতি থেকে মুক্ত সম্মান মর্যাদার গুণে গুণান্বিত। সুতরাং (حمد) দু’টি বিষয়কে এবং দু’টি প্রকারের সর্বোচ্চ প্রকারকে শামিল করতেছে। প্রথমটির দিকে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর (বাণী দু’টি জবানে হালকা এবং দাড়িপাল্লাতে ভারি) এ উক্তি দ্বারা এবং দ্বিতীয়টির দিকে (আমার হাতে থাকবে حمد-এর পতাকা) এ উক্তি দ্বারা ইঙ্গিত করা হচ্ছে।
‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী বলেন, আমি বলব, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তি (لا إله إلا الله)-এর কোন পর্দা নেই (কেবল হওয়ার ক্ষেত্রে) এ উক্তির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ঊর্ধ্বগতির অর্থকে সমর্থন করা হচ্ছে। কেননা (لا إله إلا الله)-এর বাণী আল্লাহর পবিত্রতা সাব্যস্তকরণ এবং প্রশংসাকরণকে অন্তর্ভুক্ত করে যেমন অতিবাহিত হয়েছে। আর আল্লাহ ছাড়া যা কিছু রয়েছে তাদের পবিত্রতা ও প্রশংসাকরণকে সাব্যস্ত করে না। এখান থেকে এটিকে অন্য জাতের আওতাভুক্ত করা হয়েছে। কেননা প্রথম দু’টি ‘আমলের ক্ষেত্রে ওযন এবং পরিমাণের অর্থের মাঝে অন্তর্ভুক্ত। এ থেকে বিনা বাধাতে আল্লাহর নৈকট্যতা অর্জন হল।
হাদীসের বাহ্যিক অর্থ জটিলতা সৃষ্টি করেছে। কেননা (حمد) পাঠ করা যখন দাড়িপাল্লাকে পূর্ণ করবে তখন অবশিষ্ট ‘আমলকে কিভাবে ওযন করা হবে? পুণ্য এবং পাপ ওযনের ক্ষেত্রে বর্ণিত হাদীসসমূহের বাহ্যিক দিক হল নিশ্চয়ই সমস্ত পুণ্য কর্মসমূহকে এক পাল্লাতে রাখা হবে এবং সকল পাপসমূহকে অন্য পাল্লাতে রাখা হবে। আরো উত্তর দেয়া হয়েছে যে, ঐ ‘আমলসমূহ এবং জিকিরসমূহ ওযন করার সময় বহু আকৃতি ও ছোট আকৃতিতে পরিণত করার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সত্ত্বেও এদের ওযনে ত্রুটি সৃষ্টি হবে না এবং একে অন্যের সাথে গাদাগাদি সৃষ্টি করবে না। আর আল্লাহ সর্বাধিক জ্ঞানী।
(وَلَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ لَيْسَ لَهَا حِجَابٌ دُونَ اللّٰهِ) অর্থাৎ- (لا إله إلا الله) কবূল হওয়ার জন্য এমন কোন পর্দা নেই যা (لا إله إلا الله) কবূল হওয়াকে বাধা দিবে। আর তা পবিত্রতা ও প্রশংসা সাব্যস্ত করার কারণে এবং আল্লাহর সাথে অন্যের সমতা সাব্যস্তকে পরিষ্কারভাবে নিষেধ করার কারণে।
(حَتّٰى تَخْلُصَ إِلَيْهِ) অর্থাৎ- তাঁর পর্যন্ত ও কবূলের স্থান পর্যন্ত পৌঁছে যায়। এটা এবং এর মতো আরো বাণী দ্বারা উদ্দেশ্য হল, দ্রুত কবূল হওয়া ও অধিক সাওয়াব লাভ করা। উল্লেখিত হাদীসাংশে স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে যে, নিশ্চয়ই (لا إله إلا الله) হল (سبحان الله) এবং (الحمد لله) অপেক্ষা উত্তম।