১১১৪

পরিচ্ছেদঃ ২৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ইমাম ও মুক্তাদীর দাঁড়াবার স্থান

১১১৪-[৯] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের কামরায় সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলেন। আর লোকেরা কামরার বাইরে হতে তাঁর সাথে সালাতের ইকতেদা করলেন। (আবূ দাঊদ)[1]

وَعَنْ عَائِشَةَ رِضَى اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: صَلَّى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي حُجْرَتِهِ وَالنَّاسُ يَأْتَمُّونَ بِهِ مِنْ وَرَاءِ الْحُجْرَةِ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد

ব্যাখ্যা: হুজরাহ্ এর ব্যাখ্যা সম্পর্কে মতানৈক্য করা হয়েছে, অতঃপর অধিকাংশ মতভেদকারী বলেন, হুজরাহ্ দ্বারা ঐ স্থান উদ্দেশ্য যা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমাযান মাসে ই‘তিকাফের উদ্দেশে চাটাই দ্বারা মসজিদে গ্রহণ করেছিলেন। কারো মতে, হুজরাহ্ দ্বারা ঘরের হুজরাহ্ উদ্দেশ্য। যেমন বুখারী ‘আবদাহ্-এর হাদীস কর্তৃক ইয়াহ্ইয়া বিন সা‘ঈ আল আনসারী থেকে তিনি ‘আমারাহ্ থেকে তিনি ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হুজরাতে (কক্ষে) রাতে সালাত আদায় করতেন। এমতাবস্থায় হুজরার দেয়াল ছিল খাটো; তখন মানুষ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখে রসূলের সালাতের অনুসরণ করতে লাগল। হাফিয বলেন, হুজরার ক্ষেত্রে বাহ্যিক দিক হচ্ছে; রসূলের ঘরের হুজরাহ্ উদ্দেশ্য। হুজরার দেয়ালের উল্লেখের উপরই প্রমাণ বহন করছে।

এর অপেক্ষা আরও স্পষ্ট যা আবূ নু‘আয়মে (كَانَ يُصَلِّيْ فِيْ حُجْرَةِ مِنْ حُجَرِ أَزْوَاجِه) অর্থাৎ ‘‘নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রীদের কক্ষে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করতেন।’’ এ শব্দ দ্বারা ইয়াহ্ইয়া বিন সা‘ঈদ কর্তৃক হাম্মাদ বিন যায়দ-এর বর্ণনা। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চাটাই কর্তৃক মসজিদে সে হুজরাহ্ গ্রহণ করেছিলেন, যেমন ইমাম বুখারী ও অন্যান্যগণ ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) কর্তৃক আবূ সালামাহ্-এর হাদীসে থেকে যা বর্ণনা করেছেন তা হচ্ছে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একটি চাটাই ছিল যা দিনের বেলাতে বিছাতেন, রাত্রিতে তা হুজরাহ্ হিসেবে গ্রহণ করতেন, অতঃপর মানুষ তার কাছে এসে কাতারবন্দী হয়েছিল।

হাফিয বলেন, ইমাম বুখারীর বর্ণনা থেকে উদ্দেশ্য হল এ বর্ণনার পূর্বের বর্ণনাতে উল্লেখিত হুজরাহ্ থেকে কি উদ্দেশ্য তা বর্ণনা করা। ‘আয়নী বলেন, ইমাম বুখারীর বর্ণনা থেকে উদ্দেশ্য হচ্ছে এ হাদীসের পূর্বের হাদীসে উল্লেখিত হুজরাহ্ থেকে উদ্দেশ্য বর্ণনা করা। আর কতক হাদীস কতক হাদীসের ব্যাখ্যা করে প্রত্যেক স্থান যার উপর সীমাবদ্ধ বা স্থির হয়ে থাকে তাকে হুজরাহ্ বলা হয়।

যায়দ বিন সাবিত এর হাদীসে আছে যা ইমাম বুখারী ‘আয়িশার বিগত হওয়া হাদীসের পর বর্ণনা করেছেন যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমাযানে চাটাই দিয়ে হুজরাহ্ (রুম/কক্ষ) তৈরি করে তাতে কয়েক রাত্রি সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করেছেন, অতঃপর তাঁর সাহাবীগণ তাঁর সালাতের অনুকরণ করেছেন, তারপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সাহাবীগণ সম্পর্কে অবস্থান জানালেন তখন সে তারাবীহ সালাত সেখানে আদায় করা থেকে অবসর নিতে শুরু করলেন। আবূ দাঊদ, আহমাদ এবং ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) কর্তৃক আবূ সালামাহ্-এর বর্ণনাতে আছে, নিশ্চয় ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তাঁর ঘরের দরজার কাছে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য সে চাটাইটি স্থাপন করেছিল।

হাফিয বলেন, হাদীসকে বিভিন্নতার দিকে ঘুরিয়ে দেয়া অথবা দেয়ালের ক্ষেত্রে বা হুজরাকে ‘আয়িশার দিকে সম্বন্ধ করার ক্ষেত্রে রূপক অর্থের দিকে ঘুরিয়ে দেয়া যেতে পারে। যায়দ বিন সাবিত-এর হাদীসের উল্লেখের পর ‘আয়নী বলেন, এক বর্ণনাতে এসেছে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে চাটাই/চামড়াকে হুজরাহ্ হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। এক বর্ণনাতে আছে, তিনি আমার কক্ষে সালাত আদায় করলেন, যা ‘উমরাহ্ ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, এক বর্ণনাতে আছে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  আমাকে নির্দেশ করলেন তখন আমি তাঁর জন্য চাটাই স্থাপন করলে তিনি তার উপর সালাত আদায় করলেন। সম্ভবত এ সকল বর্ণনা বিভিন্ন সময় ঘটেছে।

‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী বলেন, আমি বলবঃ আমার কাছে অগ্রাধিকারপূর্ণ হচ্ছে- বিষয়টিকে বিভিন্নতার দিকে ঘুরিয়ে দেয়া। উল্লেখিত হাদীসে এসেছে মানুষেরা হুজরার পেছন থেকে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাতের অনুসরণ করেছিলেন এতে ঐ ব্যাপারে দলীল আছে যে, ইমাম ও মুক্তাদীদের মাঝে আড়াল হওয়া সালাত বিশুদ্ধ হওয়াতে প্রতিবন্ধক না। কেননা বর্ণনার দাবি নিশ্চয় সাহাবীগণ তারা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুকরণ করত এমতাবস্থায় রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুজরাহ্/কক্ষের ভিতরে ও তারা হুজরার বাইরে থাকতো। ইমাম আবূ দাঊদ এ ব্যাপারে একটি অধ্যায় বেঁধেছেন তা হচ্ছে মুক্তাদী ইমামের অনুসরণ করবে এ অবস্থায় মুক্তাদী ও ইমাম উভয়ের মাঝে দেয়াল থাকা। ইমাম বুখারী ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) কর্তৃক ‘উমরাহ্ ও আবূ সালামাহ্ এর দু’ বর্ণনা এবং যায়দ বিন সাবিত-এর হাদীসের উপর একটি অধ্যায় বেঁধেছেন তা হচ্ছে যখন ইমাম ও সম্প্রদায়ের মাঝে (সালাতাবস্থায়) প্রাচীর বা পর্দা থাকবে। তাতে তিনি হাসান-এর কথা উল্লেখ করেছেনঃ তুমি ও তোমার ইমাম সালাত আদায় করা অবস্থায় উভয়ের মাঝে নদী থাকলেও কোন সমস্যা নেই।

আরও উল্লেখ করেছেন আবূ মিযলাজ-এর কথা (প্রসিদ্ধ তাবি‘ঈ লাহিক্ব বিন হুমায়দ) তা হচ্ছে মুক্তাদী যখন ইমামের তাকবীর শুনবে তখন সে ইমামের অনুকরণ করবে যদিও উভয়ের মাঝে পথ বা প্রাচীর থাকে। ‘আয়নী বলেন, ‘এতে কোন ক্ষতি হবে না’- কথাটুকু গোপন আছে। এ ব্যাপারে মাসআলাটি মতানৈক্যপূর্ণ। তবে অধ্যায়ে এমন কিছু নেই যা উল্লেখিত মাসআলা জায়িয হওয়ার ব্যাপারে প্রমাণ বহন করে। এটা মালিকীদের মাযহাবও বটে। যা আনাস (রাঃ), আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ), ইবনু সীরীন ও সালিম হতে বর্ণিত।

‘উরওয়াহ্ ইমামের ইকতেদা করতেন এমতাবস্থায় তিনি তার গৃহে থাকতেন, তার মাঝে ও মসজিদের মাঝে পথ থাকত। মালিক বলেন, মুক্তাদী ও ইমামের মাঝে পথ বা ছোট নদী রেখে সালাত আদায় করাতে কোন সমস্যা নেই। এমনিভাবে কাছাকাছি অবস্থানকারী নৌযানসমূহ; এ নৌযানগুলোর কোন একটিতে ইমাম অন্যগুলোতে মুক্তাদী অবস্থান করে সালাত আদায় করলে মুক্তাদীদের সালাত জায়িয হবে। তবে একটি দল এটা মাকরূহ মনে করেন। ‘উমার বিন খাত্ত্বাব (রাঃ) থেকে বর্ণনা করা হয়েছে, যখন ইমাম ও মুক্তাদীর মাঝে পথ, প্রাচীর বা কোন নদী থাকবে তখন মুক্তাদী ইমামের সাথে আছে বলে ধরা হবে না।

শা‘বী ও ইব্রাহীম ইমাম ও মুক্তাদীর মাঝে পথ থাকা মাকরূহ মনে করেন। আবূ হানীফাহ্ বলেন, ইমাম ও মুক্তাদীর মাঝে পথ থাকলে ইকতেদা বৈধ হবে না তবে কাতারগুলোর মাঝে সম্পৃক্ততা থাকলে জায়িয। এ ব্যাপারে উক্তি করেছেন লায়স, আওযারী ও আশহব। ‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী বলেন, আমি বলবঃ হানাফীদের মাযহাব হচ্ছে ইমাম ও মুক্তাদীর মাঝে পথ থাকলেও ইমামের অনুকরণ জায়িয হবে তবে ৩টি শর্তসাপেক্ষেঃ

১। ইমামের অবস্থা মুক্তাদীর কাছে সংশয়পূর্ণ বা এলোমেলো না হওয়া।

২। ইমাম ও মুক্তাদীর স্থান আলাদা না হওয়া; মাসজিদ এক স্থানের হুকুমে।

৩। এটা দ্বিতীয়টির পরিপূরক তথা একই ধরনের স্থানে ইমাম মুক্তাদী থাকলে ইমামের অনুকরণ করতে মুক্তাদীদের কোন কিছু বাধা দিবে না।

উল্লেখিত হাদীসগুলো সম্পর্কে হানাফীগণ উত্তর দিয়েছেন যে, সে হাদীসগুলোতে এমন কোন কিছু পাওয়া যাবে না যা এ শর্তসমূহের বিরোধিতা করে কেননা মাসজিদ সম্পূর্ণ এক স্থান। আর এক স্থানে দেয়ালের আড়াল সৃষ্টি হওয়ার সময় শুধু ইমামের অবস্থান পরিবর্তন জেনে এমনকি যদি আওয়াজ শুনার মাধ্যমেও হয় তথাপি তার অনুসরণ করা জায়িয। এটাই উদ্দেশ্য।

দর্শন করার প্রয়োজন নেই। কাতারসমূহ যখন পরস্পর কাছাকাছি হবে না তখন মাঠের ক্ষেত্রে তিন কাতার সমপরিমাণ দূরত্বকে বিবেচনা করা হবে। যদি ইমাম মুক্তাদীর মাঝে কোন পথ বা নদী থাকে যাতে নৌকা চলাচল করে তাহলে এ ধরনের ক্ষেত্রে তারা (হানাফীগণ) ইমামের (সালাত) অনুকরণ করা সাধারণভাবে বারণ করেছেন। তারা ইমাম মুক্তাদীর অবস্থান স্থলকে আলাদা স্থান হিসেবে গণ্য করেছেন। তারা এ ব্যাপারে ‘উমার (রাঃ)-এর ঐ আসারের মাধ্যমে দলীল গ্রহণ করেছেন ‘আয়নী যা বিনা সানাদে উল্লেখ করেছেন।

ইবনু হাজার বলেন, ‘আত্বা এবং অন্যান্যগণ যা বলেছেন হাদীসে তার কোন দলীল নেই যে, ইমামের অনুকরণ বিশুদ্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে ইমামের অবস্থান পরিবর্তন ‘আমলকে অবলোকন করা, এ প্রসঙ্গে প্রথম কথা হচ্ছে যদি ইমামের ইকতেদা বিশুদ্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে মুক্তাদী কর্তৃক তাঁর ‘আমল অবলোকন করাকে যথেষ্ট মনে করা হয় তাহলে যে ব্যাপারে নির্দেশ করা হয়েছে ও জামা‘আতবদ্ধ হওয়ার দিকে আহবান করা হয়েছে সে চেষ্টা বাতিল হয়ে যাবে। প্রত্যেক ব্যক্তি মসজিদে ইমাম রেখে নিজ ঘর ও বাজার থেকে ইমামের সালাতের অনুকরণ করবে তা কিতাব সুন্নাহর বিপরীত।

সুতরাং বিভিন্ন হাদীসে যা ব্যাখ্যা করা হল তার আলোকে ইমাম ও মুক্তাদীর স্থান একই হওয়া শর্ত। কেননা পারিভাষিকভাবে ইমামের ইকতেদা থেকে উদ্দেশ্য সকলের একই স্থানে একত্রিত হওয়া। যেমনিভাবে বিগত যুগগুলোতে জামা‘আতের উপর প্রতিশ্রুত ছিল এবং অনুকরণ সংরক্ষণার্থে এর উপরই ‘ইবাদাতের নির্ভরতা ছিল। পক্ষান্তরে দ্বিতীয় মতটি গ্রহণ করলে হুজরাহ্ দ্বারা উদ্দেশ্য ঐ হুজরাহ্ যেমন মতামত পেশকারীগণ বলেছেন তা এমন স্থান যা ইতিকাফের উদ্দেশে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চাটাই কর্তৃক মসজিদে গ্রহণ করেছিলেন এ মতটিকে সহীহ হাদীস সমর্থন করেছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চাটাই কর্তৃক হুজরাহ্ গ্রহণ করে সেখানে কয়েক রাত্রি সালাত আদায় করলেন।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ