১০৪২

পরিচ্ছেদঃ ২২. প্রথম অনুচ্ছেদ - সালাত নিষিদ্ধ সময়ের বিবরণ

১০৪২-[৪] ’আমর ইবনু ’আবাসাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় তাশরীফ আনলে আমিও মদীনায় চলে আসলাম। তাঁর কাছে প্রবেশ করলাম। অতঃপর আমি বললাম, আমাকে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) সম্পর্কে অবহিত করুন। তিনি বললেন, ফজরের (ফজরের) সালাত আদায় করো। এরপর সালাত হতে বিরত থাকো যতক্ষণ পর্যন্ত সূর্য উঠে উপরে না আসে। কেননা, সূর্য উদয় হয় শায়ত্বনের (শয়তানের) দু’ শিং-এর মাঝখান দিয়ে। আর এ সময় কাফিরগণ (সূর্য পূজারীরা) একে সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করে। তারপর সালাত পড়ো। কেননা এ সময়ে (আল্লাহর কাছে বান্দার) সালাতের উপস্থিতির সাক্ষ্য দেয়া হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত ছায়া বর্শার উপর উঠে না আসে ও জমিনের উপর না পড়ে (অর্থাৎ ঠিক দুপুরের সময়), এ সময়ও সালাত হতে বিরত থাকো। এজন্য যে এ সময় জাহান্নামকে গরম করা হয়। তারপর ছায়া যখন সামান্য ঢলে যাবে তখন সালাত আদায় করো। সালাতের সময়টা মালায়িকাহ্’র (ফেরেশতাদের) উপস্থিতি ও সাক্ষ্য দেয়ার সময় যে পর্যন্ত তুমি ’আসরের সালাত আদায় না করবে। তারপর আবার সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) হতে বিরত থাকবে সূর্য ডুবা পর্যন্ত। কারণ সূর্য শায়ত্বনের (শয়তানের) দু’ শিং-এর মাঝখান দিয়ে অস্ত যায়। এ মুহূর্তে সূর্য পূজক কাফিররা সূর্যকে সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করে।

’আমর ইবনু ’আবাসাহ্ (রাঃ) বলেন, আমি আবার আবেদন করলাম, হে আল্লাহর রসূল! উযূর ব্যাপারে কিছু বয়ান করুন। তিনি বললেন, তোমাদের যে লোক উযূর পানি তুলে নিবে, কুলি করবে, নাকে পানি দিয়ে ঝেড়ে নেবে। তাতে তার চেহারার, মুখের ও নাকের ছিদ্রের পাপরাশি ঝরে যায়। সে যখন তার চেহারাকে আল্লাহর নির্দেশ মতো ধুয়ে নেয় তখন তার চেহারার পাপরাশি তার দাড়ির পাশ দিয়ে পানির সঙ্গে পড়ে যায়। আর সে যখন তার দু’টি হাত কনুই পর্যন্ত ধুয়ে নেয় তখন দু’হাতের পাপ তার আঙ্গুলের মাথা দিয়ে বের হয়ে পানির ফোটার সঙ্গে পড়ে যায়। তারপর সে যখন তার মাথা মাসেহ করে তখন তার মাথার পাপরাশি চুলের পাশ দিয়ে পানির সঙ্গে পড়ে যায়। আর যখন সে তার দু’ পা গোছাদ্বয়সহ ধৌত করে তখন তার দু’ পায়ের পাপ তার আঙ্গুলের পাশ দিয়ে পানির সঙ্গে পড়ে যায়। তারপর সে উযূ (ওযু/ওজু/অজু) সমাপ্ত করে যখন দাঁড়ায় ও সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে এবং আল্লাহর উপযুক্ত প্রশংসা ও গুণগান বর্ণনা করে, আল্লাহর জন্যে নিজের মনকে নিবেদিত করে, তাহলে সালাতের শেষে তার অবস্থা তেমন (নিষ্পাপ) হয়ে যায় যেদিন তার মা তাকে প্রসব করেছিল। (মুসলিম)[1]

بَابُ أَوْقَاتِ النَّهْيِ

وَعَن عَمْرو بن عبسة قَالَ: قَدِمَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَدِينَةَ فَقَدِمْتُ الْمَدِينَةَ فَدَخَلْتُ عَلَيْهِ فَقُلْتُ: أَخْبِرْنِي عَنِ الصَّلَاةِ فَقَالَ: «صَلِّ صَلَاةَ الصُّبْحِ ثُمَّ أقصر عَن الصَّلَاة حَتَّى تَطْلُعُ الشَّمْسُ حَتَّى تَرْتَفِعَ فَإِنَّهَا تَطْلُعُ حِينَ تَطْلَعُ بَيْنَ قَرْنَيْ شَيْطَانٍ وَحِينَئِذٍ يَسْجُدُ لَهَا الْكُفَّارُ ثُمَّ صَلِّ فَإِنَّ الصَّلَاةَ مَشْهُودَةٌ مَحْضُورَةٌ حَتَّى يَسْتَقِلَّ الظِّلُّ بِالرُّمْحِ ثُمَّ أَقْصِرْ عَنِ الصَّلَاةِ فَإِنَّ حِينَئِذٍ تُسْجَرُ جَهَنَّمُ فَإِذَا أَقْبَلَ الْفَيْءُ فَصَلِّ فَإِنَّ الصَّلَاةَ مَشْهُودَةٌ مَحْضُورَةٌ حَتَّى تُصَلِّيَ الْعَصْرَ ثُمَّ أَقْصِرْ عَنِ الصَّلَاةِ حَتَّى تَغْرُبَ الشَّمْسُ فَإِنَّهَا تَغْرُبُ بَيْنَ قَرْنَيْ شَيْطَانٍ وَحِينَئِذٍ يسْجد لَهَا الْكفَّار» قَالَ فَقلت يَا نَبِيَّ اللَّهِ فَالْوُضُوءُ حَدِّثْنِي عَنْهُ قَالَ: «مَا مِنْكُم رجل يقرب وضوءه فيتمضمض ويستنشق فينتثر إِلَّا خَرَّتْ خَطَايَا وَجْهِهِ وَفِيهِ وَخَيَاشِيمِهِ ثُمَّ إِذَا غَسَلَ وَجْهَهُ كَمَا أَمَرَهُ اللَّهُ إِلَّا خَرَّتْ خَطَايَا وَجْهِهِ مِنْ أَطْرَافِ لِحْيَتِهِ مَعَ الْمَاءِ ثُمَّ يَغْسِلُ يَدَيْهِ إِلَى الْمِرْفَقَيْنِ إِلَّا خَرَّتْ خَطَايَا يَدَيْهِ مِنْ أَنَامِلِهِ مَعَ الْمَاءِ ثُمَّ يَمْسَحُ رَأْسَهُ إِلَّا خَرَّتْ خَطَايَا رَأْسِهِ مِنْ أَطْرَافِ شَعْرِهِ مَعَ الْمَاءِ ثُمَّ يَغْسِلُ قَدَمَيْهِ إِلَى الْكَعْبَيْنِ إِلَّا خَرَّتْ خَطَايَا رِجْلَيِهِ مِنْ أَنَامِلِهِ مَعَ الْمَاءِ فَإِنْ هُوَ قَامَ فَصَلَّى فَحَمِدَ اللَّهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ وَمَجَّدَهُ بِالَّذِي هُوَ لَهُ أَهْلٌ وَفَرَّغَ قَلْبَهُ لِلَّهِ إِلَّا انْصَرَفَ مِنْ خَطِيئَتِهِ كَهَيْئَتِهِ يَوْمَ وَلَدَتْهُ أُمُّهُ» . رَوَاهُ مُسلم

ব্যাখ্যা: (أَخْبِرْنِي عَنِ الصَّلَاةِ) ‘আমাকে সালাত  সম্পর্কে অবহিত করুন’ অর্থাৎ সালাতের সময় সম্পর্কে অবহিত করুন।

(حَتّى تَرْتَفِعَ) ‘তা সূর্য উপরে উঠা পর্যন্ত।’ এ থেকে বুঝা যায় সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) বৈধ হওয়ার জন্য সূর্য উদয় হওয়াই যথেষ্ঠ নয়। বরং সূর্যোদয় হয়ে তা প্রকাশমান হতে হবে। তথা বর্শার দৈর্ঘ্য পরিমাণ উপরে উঠতে হবে যেমন আবূ দাঊদ ও নাসায়ীতে বর্ণিত হয়েছে

(مَشْهُوْدَةٌ مَحْضُوْرَةٌ) ইমাম নাবাবী বলেনঃ এর অর্থ হল ঐ সালাতে মালাক (ফেরেশতা) উপস্থিত হয় ফলে তা কবূল হওয়া এবং রহমাত অর্জনের সম্ভাবনা বেশী। মুল্লা ‘আলী কারী  বলেনঃ এর অর্থ হল ঐ সালাতের সাওয়াব লিখার জন্য মালাক উপস্থিত হয় এবং যে ঐ সালাত আদায় করে তার পক্ষে সাক্ষী হয়।

(حَتّى يَسْتَقِلَّ الظِّلُّ بِالرُّمْحِ) ইমাম নাবাবী বলেনঃ এর অর্থ হলো বর্শার ছায়া তার বরাবরে উত্তর দিকে থাকবে। পূর্ব বা পশ্চিম দিকে ঝুঁকে থাকবে না। সিন্দী বলেনঃ বর্শার ছায়া ছোট হয়ে তা তার নীচে চলে আসবে। এ থেকে উদ্দেশ্য হলো সূর্য মাথার উপরে উঠে যাবে।

(تُسْجَرُ جَهَنَّمُ) জাহান্নাম অগ্নি দিয়ে পূর্ণ করা হয়। ইমাম খাত্ত্বাবী মা‘আলিমে ১ম খন্ডের ২৭৬ পৃষ্ঠায় বলেনঃ জাহান্নাম অগ্নি দিয়ে পূর্ণ করা, সূর্য শায়ত্বনের (শয়তানের) দুই শিংয়ের মাঝে থাকে এগুলো এমন বিষয় যার অর্থ আমরা অবহিত হতে পারি না। তবে এগুলোর প্রতি ঈমান আনা ওয়াজিব। আর সে অনুযায়ী কর্ম সম্পাদন করা জরুরী।

(فَإِذَا أَقْبَلَ الْفَيْءُ) ছায়া যখন পূর্ব দিকে প্রকাশ পায় শুধুমাত্র সূর্য ঢলে পড়ার পরের ছায়াকে আরবীতে فَيْ বলে। আর সূর্য ঢলার আগে ও পরের উভয় ছায়াকে ظل বলা হয়।

(حَتّى تُصَلِّيَ الْعَصْرَ) ‘আসরের সালাত আদায় করা পর্যন্ত। এ থেকে বুঝা যায় যে, ‘আসরের ওয়াক্ত প্রবেশ করলেই নফল সালাত আদায় করা অবৈধ হয় না। যতক্ষণ না ‘আসরের সালাত আদায় করা হয়। তেমনিভাবে একজনের ‘আসরের সালাত আদায়ের ফলে অন্যের জন্য নফল সালাত অবৈধ হবে না যতক্ষণ না সে নিজে ‘আসরের সালাত আদায় করবে। এমনকি যদি কোন ব্যক্তি ‘আসরের সালাতের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পর তা আদায় করতে বিলম্ব করে তা হলে সালাত আদায়ের পূর্বে নফল সালাত অদায় করা মাকরূহ হবে না।

(فَالْوُضُوءُ حَدِّثْنِي عَنْهُ) উযূর ফাযীলাত সম্পর্কে আমাকে অবহিত করুন। (مِنْ أَنَامِلِه) ‘তার আঙ্গুলের মাথা থেকে (গুনাহ ঝড়ে যায়)।’

(فَرَّغَ قَلْبَه لِلّهِ) ‘তার অন্তরকে আল্লাহর জন্য খালি করে’ তার অন্তরকে আল্লাহর সমীপে উপস্থিত করে অর্থাৎ সালাতরত অবস্থায় একমাত্র আল্লাহর ধ্যানে নিমগ্ন থাকে অন্য কিছুর দিকে মনোনিবেশ করে না।

(كَهَيْئَتِه يَوْمَ وَلَدَتْهُ أُمُّه) ‘তার অবস্থা তেমন হয়ে যায় যেদিন তার মা তাকে প্রসব করেছিল’ অর্থাৎ মায়ের পেট থেকে ভূমিষ্ট হওয়ার সময় যেমন নিষ্পাপ ছিল সেই রকম নিষ্পাপ হয়ে যায়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ