লগইন করুন
পরিচ্ছেদঃ ৭. প্রথম অনুচ্ছেদ - মাসজিদ ও সালাতের স্থান
এ অধ্যায়ে সালাতের স্থান সংক্রান্ত বর্ণনা এসেছে। মাসজিদ এর শাব্দিক অর্থ সাজদার স্থান, আর পরিভাষিক অর্থ সালাত আদায়ের জন্য নির্ধারিত স্থান।
৬৮৯-[১] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কা’বাহ্ ঘরে প্রবেশ করে প্রত্যেক কোণে দু’আ করলেন, কিন্তু সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলেন না। পরে বের হয়ে এলেন। কা’বার সামনে দুই রাক্’আত সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলেন এবং বললেন, এটিই ক্বিবলা (কিবলা/কেবলা)হ্ (কিবলাহ/কিবলা)। (বুখারী)[1]
بَابُ الْمَسَاجِدِ وَمَوَاضِعِ الصَّلَاةِ
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: لَمَّا دَخَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْبَيْتَ دَعَا فِي نَوَاحِيهِ كُلِّهَا وَلَمْ يُصَلِّ حَتَّى خَرَجَ مِنْهُ فَلَمَّا خَرَجَ رَكَعَ رَكْعَتَيْنِ فِي قُبُلِ الْكَعْبَةِ وَقَالَ: «هَذِه الْقبْلَة» . رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: (الْبَيْتَ) অর্থাৎ- কা‘বাহ্ এবং সেটা হচ্ছে পবিত্র আল্লাহর ঘর।
অত্র হাদীস থেকে প্রতীয়মান হয় যে, পবিত্র কা‘বাহ্ ঘরে দু‘আ অথবা তাকবীর দেয়া মুসতাহাব। আর এ ব্যাপারে কারো ইখতেলাফ নেই।
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর বর্ণিত হাদীসে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কা‘বার অভ্যন্তরে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করেননি। আর বিলাল (রাঃ)-এর হাদীসে আদায় করেছেন। দ্বন্দ্ব সমাধান নিম্নরূপ-
* দ্বন্দ্বে হ্যাঁ-সূচক হাদীস প্রাধান্য পায় না-সূচক হাদীসের উপর।
* কা‘বাহ্ ঘরে প্রবেশের পর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্যে দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল অন্ধকার থাকার কারণে, অন্যরা দেখেননি আর বিলাল (রাঃ) তাঁর কাছে থাকায় তিনি সালাত আদায় করা দেখেছেন।
* ঘটনা দু’বার হতে পারে মক্কা বিজয়ের সময় কা‘বার অভ্যন্তরে সালাত আদায় করেছেন আর বিদায় হাজ্জে কা‘বার অভ্যন্তরে ঢুকেছেন সালাত আদায় করেননি যা ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর বর্ণনা।
ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর হাদীস যা পরবর্তীতে বিলাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কা‘বাহ্ ঘরে সালাত আদায় করেছেন। সুতরাং বিলাল (রাঃ) সাব্যস্ত করেছেন যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কা‘বাহ্ ঘরে সালাত আদায় করেছেন। আর ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তা নফী (অস্বীকার) করেছেন।
আর মুহাদ্দিসীনে কিরাম বিলাল (রাঃ)-এর রিওয়ায়াত গ্রহণ করার ক্ষেত্রে ঐকমত্য পোষণ করেছেন। তার (বিলাল-এর) সাব্যস্ত করাকে অন্যের অস্বীকারের উপর প্রাধান্য দেয়া হয়েছে দু’টি কারণে। যথা-
১. রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেদিন কা‘বাহ্ ঘরে প্রবেশ করেন সেদিন বিলাল (রাঃ) তাঁর সাথে ছিলেন। কিন্তু ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) ছিলেন না।
২. ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর অস্বীকার করাটা একবার উসামার দিকে আর একবার তার ভাই ফাজল (রাঃ)-এর দিকে সম্পৃক্ত করেছেন। এ সত্ত্বেও সাব্যস্ত হয়নি যে, ফাজল (রাঃ) তাদের সাথে ছিলেন। ফাজল (রাঃ) তাদের সাথে ছিলেন বলে শায (অর্থাৎ- যে বিশ্বস্ত রাবীর বিপরীতে কোন দুর্বল রাবী বর্ণনা করেন) রিওয়ায়াত ব্যতীত প্রমাণিত হয়নি।
ইমাম মুসলিম (রহঃ) কা‘বার মধ্যে সালাত অস্বীকার হওয়ার বিষয়টি উসামাহ্ (রাঃ) থেকে ইবনু ‘আব্বাস-এর মাধ্যমে বর্ণনা করেছেন। যেমনভাবে এ বিষয়টি মুসান্নাফ (রহঃ) থেকে বিস্তারিত বর্ণনা আসবে এবং সেখানে সালাত আদায় করা ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর একটি বর্ণনায় ‘উসামাহ্ (রাঃ) থেকে ইমাম আহমাদ এবং অন্যান্য ইমামদের নিকট সাব্যস্ত হয়েছে।
তবে এ ব্যাপারে রিওয়ায়াতগুলো একটি আরেকটির বিপরীতমুখী হয়েছে। বিলাল (রাঃ)-এর রিওয়ায়াত এ দিক থেকে প্রাধান্যযোগ্য হয়েছে যে, তিনি এটাকে সাব্যস্ত করেছেন এবং তিনি অধিক জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। আর বিলাল (রাঃ)-এর বিপরীতে অন্য কেউ অস্বীকার সাব্যস্ত করতে পারেনি এবং এক্ষেত্রে সাব্যস্ত হওয়ার ব্যাপারে কেউ ইখতেলাফও করেনি। আর যিনি অস্বীকার করেছেন তার ব্যাপারে ইখতেলাফ রয়েছে।
ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেন, বিলাল (রাঃ)-এর রিওয়ায়াতটা প্রাধান্য দেয়া ওয়াজিব। কেননা বিলাল (রাঃ)-এর রিওয়ায়াত সাব্যস্ত করেছেন এ কারণে যে, তিনি অধিক জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। আর উসামাহ্ (রাঃ)-এর বর্ণনায় তা অস্বীকার করার কারণ হচ্ছে যে, যখন তারা কা‘বাহ্ ঘরে প্রবেশ করলেন তখন দরজা বন্ধ করে দিলেন এবং দু‘আয় মশগুল হলেন। উসামাহ্ (রাঃ) দেখলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কা‘বাহ্ ঘরে দু‘আ করছেন। তখন উসামাহ্ এক কোণে দু‘আয় মশগুল হলেন যেদিকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আছেন। অতঃপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কা‘বাহ্ ঘরে সালাত আদায় করলেন আর এ সময় বিলাল (রাঃ) তার কাছে থেকে দেখলেন। কিন্তু ‘উসামাহ্ (রাঃ) তখন দূরে এবং দু‘আয় মশগুল থাকার কারণে দেখেননি।
২. আরেকটি মতে বলা হয়েছে- কেউ কেউ বলেনঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কা‘বাহ্ ঘরে দু’বার প্রবেশ করেছেন, একবার সেখানে সালাত আদায় করেছেন এবং দ্বিতীয়বার সেখানে দু‘আ, তাকবীর দিয়েছিলেন। কিন্তু সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করেননি। ইবনু হিব্বান বলেনঃ আমার নিকট অধিক সামঞ্জস্যপূর্ণ বিষয় হলো দুই হাদীসে দু’টি সংবাদ বর্ণিত হয়েছে যা দু’ সময় ঘটেছিল।
বলা যায়, যখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের দিন কা‘বাহ্ ঘরে প্রবেশ করলেন তখন সালাত আদায় করেছেন।
যখন বিদায় হাজ্জের (হজ্জের/হজের) সময় তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কা‘বাহ্ ঘরে প্রবেশ করেছেন তখন সালাত আদায় করেননি।
هذِه অর্থাৎ- কা‘বাহ্ القبله অর্থাৎ- যার দিকে মুখ করার নির্দেশ সাব্যস্ত হয়েছে যা ছাড়া অন্য কিছুর দিকে পরিবর্তন হবে না। যেমনভাবে بيت المقدس কে পরিবর্তন করা হয়েছে।
উক্ত হাদীস থেকে বুঝা যায় যে, কা‘বাহ্ গৃহে প্রবেশ করা জায়িয। আর তাতে সালাত আদায় করা মুস্তাহাব। চাই সে সালাত নফল হোক বা ফরয হোক। কারণ উক্ত দু’ সালাত মুক্বীম ব্যক্তির জন্য কা‘বাহ্ গৃহের সম্মুখে আদায় করা না করার মাঝে কোন মতানৈক্য নেই। এটা জমহূরদের মত। ইমাম মালিক তা অবৈধ বলেছেন।