লগইন করুন
পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
২৭১-[৭৪] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে দুই পাত্র (দুই প্রকারের ’ইলম) শিখেছি। এর মধ্যে এক পাত্র আমি তোমাদের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছি, কিন্তু অপর পাত্রের ’ইলম- তা যদি আমি তোমাদেরকে বলে দিই তাহলে আমার এ গলা কাটা যাবে। (বুখারী)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: «حَفِظْتُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وِعَاءَيْنِ فَأَمَّا أَحَدُهُمَا فَبَثَثْتُهُ فِيكُمْ وَأَمَّا الْآخَرُ فَلَوْ بَثَثْتُهُ قُطِعَ هَذَا الْبُلْعُومُ يَعْنِي مجْرى الطَّعَام» رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: হাদীসে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) কর্তৃক দু’পাত্র ‘ইলম শিক্ষার কথা উল্লেখ আছে। ‘‘দু’পাত্র ‘ইলম শিক্ষা’’ কথাটির মর্মার্থ হচ্ছে যদি সে ‘ইলম লিখা হয় তাহলে দু’টি পাত্র পূর্ণ হয়ে যাবে। এক পাত্র ‘ইলমকে তিনি মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছেন। অন্য পাত্রের ‘ইলম যা তিনি মানুষের সামনে প্রকাশ করেননি; তা মূলত ফিতনাহ্ (ফিতনা) ও ব্যাপক যুদ্ধের খবরসমূহ, শেষ যামানাতে অবস্থাসমূহের বিবর্তন এবং যে ব্যাপারে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতিপয় কুরায়শী নির্বোধ ক্রীতদাসের হাতে দীন নষ্ট হওয়ার খবর দিয়েছেন।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) কখনো কখনো বলতেন- আমি চাইলে তাদের নামসহ চিহ্নিত করতে পারি। অথবা আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) কর্তৃক গোপন করা ‘ইলম দ্বারা ঐ হাদীসসমূহও হতে যেগুলোতে অত্যাচারী আমীরদের নাম, তাদের অবস্থাসমূহ ও তাদের যামানার বিবরণ আছে। আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) কখনো কখনো এদের কতক সম্পর্কে ইশারা করতেন তাদের থেকে নিজের ওপর ক্ষতির আশংকায় তা স্পষ্ট করে বলতেন না যেমন তাঁর উক্তি- আমি ষাট দশকের মাথা ও তরুণদের নেতৃত্ব থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) উল্লিখিত উক্তি দ্বারা ইয়াযীদ ইবনু মু‘আবিয়াহ্ (রাঃ)-এর খিলাফাত এর দিকে ইশারা করতেন, কেননা তার খিলাফাত ছিল ষাট হিজরী সন। আল্লাহ আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-এর দু‘আতে সাড়া দিলেন, অতঃপর আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) ষাট হিজরীর এক বছর পূর্বেই মারা যান।
ইবনুল মুনীর বলেন- বাত্বিনী সম্প্রদায় এ হাদীসটিকে বাতিলপন্থীদের সঠিক বলার কারণ স্বরূপ উপস্থাপন করে থাকে। যেমন তারা বিশ্বাস করে শারী‘আতের একটি বাহ্যিক ও একটি আভ্যন্তরীণ দিক রয়েছে এ উক্তির মাধ্যমে ঐ বাতিলপন্থীদের অর্জিত বিষয়টি হলো দীন থেকে বেরিয়ে যাওয়া। ইবনুল মুনযীর বলেন- আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তার উক্তি- قطع দ্বারা উদ্দেশ করেছেন অত্যাচারী ব্যক্তিরা যদি আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) কর্তৃক তাদের দোষ-ত্রুটি বর্ণনা ও তাদের চেষ্টা ব্যর্থ করে দেয়ার কথা জানতে পারে তাহলে তার মাথা কেটে নিবে। এ বিশ্লেষণটি ঐ কথাকে আরো জোরদার করছে যে, আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-এর গোপন করা বিষয়টি যদি শারী‘আতী কোন হুকুম-আহকাম হতো তাহলে তা গোপন করা বৈধ হতো না। কারণ তিনি এমন বাক্য উল্লেখ করেছেন যা ‘ইলম গোপনকারী ব্যক্তির নিন্দা জ্ঞাপন করে।
ইবনুল মুনযীর ছাড়াও অন্য আরেকজন বলেছেন- আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তার গোপন করা ‘ইলম সাধারণ ব্যক্তিদের কাছে ব্যক্ত করা থেকে বিরত থেকেছেন, বিশেষ ব্যক্তিদের কাছে নয়। অতএব বাতিলপন্থীরা কিভাবে এর দ্বারা দলীল উপস্থাপন করছে যে, শারী‘আতে এক প্রকার বাত্বিনী ‘ইলম আছে? কিংবা আমরা যা জানি আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তার গোপন করা বিষয় প্রকাশ করেননি; অতএব আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) যা গোপন করেছেন বাতিলপন্থীরা তা কোথা থেকে জানতে পারলো? এরপরও যে ব্যক্তি এ ধরনের দাবী করবে তার উচিত সে ব্যাপারে দলীল পেশ করা।