১৪৪

পরিচ্ছেদঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - কিতাব ও সুন্নাহকে সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা

১৪৪-[৫] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা একদল মালাক (ফেরেশতা) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আসলেন। এ সময় তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) শুয়েছিলেন। মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) পরস্পরে বলাবলি করলেন, তোমাদের সাথী (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সম্পর্কে একটি উদাহরণ রয়েছে। তাঁর সামনেই উদাহরণটি বলো। তখন একজন বললেন, তিনি তো ঘুমিয়ে আছেন। আবার একজন বললেন, তাঁর চোখ ঘুমালেও তাঁর মন সর্বদা জাগ্রত। তাঁর উদাহরণ হলো সে ব্যক্তির ন্যায়, যিনি একটি ঘর বানিয়েছেন। অতঃপর মানুষকে আহার করানোর জন্য দস্তরখান বিছালেন, তারপর মানুষকে ডাকবার জন্য আহবায়ক পাঠালেন। যারা আহবানকারীর আহবানে সাড়া দিল তারা ঘরে প্রবেশ করলো এবং খাবারও খেল। আর যারা আহবানকারীর আহবানে সাড়া দিল না, তারা ঘরে প্রবেশ করতে পারলো না আর খাবারও পেল না।

এসব কথা শুনে তারা (মালায়িকাহ্) পরস্পর বললেন, এ কথাটার তাৎপর্য বর্ণনা কর যাতে তিনি কথাটা বুঝতে পারেন। এবারও কেউ বললেন, তিনি তো ঘুমিয়ে। আর কেউ বললেন, তাঁর চোখ ঘুমিয়ে থাকলেও অন্তর জেগে আছে। তারা বললেন, ’ঘরটি’ হলো জান্নাত আর আহবায়ক হলেন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ঘর ও মেহমানদারী প্রস্তুতকারী হলেন আল্লাহ তা’আলা)। সুতরাং যে ব্যক্তি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অবাধ্য হলো সে আল্লাহর অবাধ্য হলো। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলেন মানুষের মধ্যে (মুসলিম ও কাফিরের) পার্থক্য নির্ধারণকারী মানদন্ড। (বুখারী)[1]

بَابُ الْإِعْتِصَامِ بِالْكِتَابِ وَالسُّنَّةِ

عَن جَابر بن عبد الله يَقُول جَاءَتْ مَلَائِكَةٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ نَائِم فَقَالَ بَعْضُهُمْ إِنَّهُ نَائِمٌ وَقَالَ بَعْضُهُمْ إِنَّ الْعَيْنَ نَائِمَة وَالْقلب يقظان فَقَالُوا إِنَّ لِصَاحِبِكُمْ هَذَا مَثَلًا فَاضْرِبُوا لَهُ مثلا فَقَالَ بَعْضُهُمْ إِنَّهُ نَائِمٌ وَقَالَ بَعْضُهُمْ إِنَّ الْعَيْنَ نَائِمَةٌ وَالْقَلْبَ يَقْظَانُ فَقَالُوا مَثَلُهُ كَمَثَلِ رَجُلٍ بَنَى دَارًا وَجَعَلَ فِيهَا مَأْدُبَةً وَبَعَثَ دَاعِيًا فَمَنْ أَجَابَ الدَّاعِيَ دَخَلَ الدَّارَ وَأَكَلَ مِنَ الْمَأْدُبَةِ وَمَنْ لَمْ يُجِبِ الدَّاعِيَ لَمْ يَدْخُلِ الدَّارَ وَلَمْ يَأْكُلْ مِنَ الْمَأْدُبَةِ فَقَالُوا أَوِّلُوهَا لَهُ يفقهها فَقَالَ بَعْضُهُمْ إِنَّهُ نَائِمٌ وَقَالَ بَعْضُهُمْ إِنَّ الْعَيْنَ نَائِمَة وَالْقلب يقظان فَقَالُوا فالدار الْجنَّة والداعي مُحَمَّد صلى الله عَلَيْهِ وَسلم فَمن أطَاع مُحَمَّدًا صلى الله عَلَيْهِ وَسلم فقد أطَاع الله وَمن عصى مُحَمَّدًا صلى الله عَلَيْهِ وَسلم فقد عصى الله وَمُحَمّد صلى الله عَلَيْهِ وَسلم فرق بَين النَّاس. رَوَاهُ البُخَارِيّ

ব্যাখ্যা: এ হাদীসে বলা হয়েছে যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চক্ষু নিদ্রিত হলেও তাঁর অন্তর জাগ্রত। এর দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ঘুমের অবস্থায় চক্ষু বন্ধ থাকলেও তাঁর অন্তর এবং অনুভূতি শক্তি জাগ্রত থাকে।

হাদীসে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য যে দৃষ্টান্ত পেশ করা হয়েছে, এর তাৎপর্য হিসেবে বলা হয়েছেঃ ঘরটি হলো জান্নাত। তিরমিযীর বর্ণনায় রয়েছে যে, ঘরের মালিক হলেন আল্লাহ, ইসলাম হলো দরজা, ঘরটি হলো জান্নাত এবং আপনি হে মুহাম্মাদ! আহবানকারীর দূত।

ইবনু মাস্‘ঊদ কর্তৃক মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে যে, ঘরটির মালিক হলেন আল্লাহ রব্বুল ‘আলামীন, ঘরটি হলো ইসলাম। খাবার বা যিয়াফত হলো- জান্নাত এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলেন আহবানকারী। সুতরাং যে তাঁর অনুসরণ করবে সে জান্নাতী হবে। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলেন আহবানকারী, সুতরাং যে তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে আনুগত্য করলো, সে যেন আল্লাহরই আনুগত্য করলো। কেননা তিনি হচ্ছেন খাবার ব্যবস্থাপকের পক্ষ থেকে দূত। অতএব, যে তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে তাঁর দা‘ওয়াত গ্রহণ করলো সে যেন খাবার খেলো, অর্থাৎ- জান্নাতে প্রবেশ করলো।

তিরমিযীর অন্য বর্ণনায় রয়েছে, হে মুহাম্মাদ! আপনি আল্লাহর রসূল! যে আপনার ডাকে সাড়া দিল সে ইসলামে প্রবেশ করলো এবং যে ইসলামে প্রবেশ করলো, সে জান্নাতে প্রবেশ করলো আর যে জান্নাতে প্রবেশ করলো সে জান্নাতী খাবার খেলো। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হচ্ছেন মু‘মিন ও কাফির এবং সৎ ও অসৎ ব্যক্তির মাঝে পার্থক্যকারী।

হাদীসে মালায়িকাহ্ কর্তৃক দৃষ্টান্তের মাঝে রয়েছে জাগ্রত শ্রোতামণ্ডলীর জন্য গাফলতি ও অজ্ঞতা থেকে বেরিয়ে আসার আহবান। আরো রয়েছে অনুপ্রেরণা কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়িয়ে ধরা এবং বিদ্‘আত ও ভ্রষ্টতা থেকে বিমুখতা প্রদর্শনের ক্ষেত্রে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ