১৩

পরিচ্ছেদঃ ১: ইখলাস প্রসঙ্গে - প্রকাশ্য ও গোপনীয় আমল (কর্ম) কথা ও অবস্থায় আন্তরিকতা ও বিশুদ্ধ নিয়ত জরুরী

১৩/১৩। আবূ আব্দুর রহমান আব্দুল্লাহ ইবনু উমার ইবনু খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ’আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, তোমাদের পূর্বে (বনী ইসরাঈলের যুগে) তিন ব্যক্তি একদা সফরে বের হল। চলতে চলতে রাত এসে গেল। সুতরাং তারা রাত কাটানোর জন্য একটি পর্বত-গুহায় প্রবেশ করল। অল্পক্ষণ পরেই একটা বড় পাথর উপর থেকে গড়িয়ে নীচে এসে গুহার মুখ বন্ধ করে দিল। এ দেখে তারা বলল যে, ’এহেন বিপদ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হচ্ছে এই যে, তোমরা তোমাদের নেক আমলসমূহকে অসীলা বানিয়ে আল্লাহর কাছে দো’আ কর।’ সুতরাং তারা সব সব আমলের অসীলায় (আল্লাহর কাছে) দো’আ করতে লাগল।

তাদের মধ্যে একজন বলল, ’’হে আল্লাহ! তুমি জান যে, আমার অত্যন্ত বৃদ্ধ পিতা-মাতা ছিল এবং (এও জান যে,) আমি সন্ধ্যা বেলায় সবার আগে তাদেরকে দুধ পান করাতাম। তাদের পূর্বে স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে ও কৃতদাস-দাসী কাউকে পান করাতাম না। একদিন আমি গাছের খোঁজে দূরে চলে গেলাম এবং বাড়ী ফিরে দেখতে পেলাম যে পিতা-মাতা ঘুমিয়ে গেছে। আমি সন্ধ্যার দুধ দহন করে তাদের কাছে উপস্থিত হয়ে দেখলাম, তারা ঘুমিয়ে আছে। আমি তাদেরকে জাগানো পছন্দ করলাম না এবং এও পছন্দ করলাম না যে, তাদের পূর্বে সন্তান-সন্ততি এবং কৃতদাস-দাসীকে দুধ পান করাই। তাই আমি দুধের বাটি নিয়ে তাদের ঘুম থেকে জাগার অপেক্ষায় তাদের শিয়রে দাঁড়িয়ে থাকলাম। অথচ শিশুরা ক্ষুধার তাড়নায় আমার পায়ের কাছে চেঁচামেচি করছিল। এভাবে ফজর উদয় হয়ে গেল এবং তারা জেগে উঠল। তারপর তারা নৈশদুধ পান করল। হে আল্লাহ! আমি যদি এ কাজ তোমার সন্তুষ্টি বিধানের জন্য করে থাকি, তাহলে পাথরের কারণে আমরা যে গুহায় বন্দী হয়ে আছি এ থেকে তুমি আমাদেরকে উদ্ধার কর।’’

এই দো’আর ফলস্বরূপ পাথর একটু সরে গেল। কিন্তু তাতে তারা বের হতে সক্ষম ছিল না।

দ্বিতীয়-জন দো’আ করল, ’’হে আল্লাহ! আমার একটি চাচাতো বোন ছিল। সে আমার নিকট সকল মানুষের চেয়ে প্রিয়তমা ছিল। (অন্য বর্ণনা অনুযায়ী) আমি তাকে এত বেশী ভালবাসতাম, যত বেশী ভালবাসা পুরুষরা নারীদেরকে বাসতে পারে। একবার আমি তার সঙ্গে যৌন মিলন করার ইচ্ছা করলাম। কিন্তু সে অস্বীকার করল। পরিশেষে সে যখন এক দুর্ভিক্ষের কবলে পড়ল, তখন সে আমার কাছে এল। আমি তাকে এই শর্তে ১২০ দিনার (স্বর্ণমুদ্রা) দিলাম, যেন সে আমার সঙ্গে যৌন-মিলন করে। সুতরাং সে (অভাবের তাড়নায়) রাজী হয়ে গেল। অতঃপর যখন আমি তাকে আয়ত্তে পেলাম। (অন্য বর্ণনা অনুযায়ী) যখন আমি তার দু’পায়ের মাঝে বসলাম, তখন সে বলল, তুমি আল্লাহকে ভয় কর এবং অবৈধভাবে (বিনা বিবাহে) আমার পবিত্রতা নষ্ট করো না। সুতরাং আমি তার কাছ থেকে দূরে সরে গেলাম; যদিও সে আমার একান্ত প্রিয়তমা ছিল এবং যে স্বর্ণমুদ্রা আমি তাকে দিয়েছিলাম তাও পরিত্যাগ করলাম। হে আল্লাহ! যদি আমি এ কাজ তোমার সন্তুষ্টির জন্য করে থাকি, তাহলে তুমি আমাদের উপর পতিত মুসীবতকে দূরীভূত কর।’’

সুতরাং পাথর আরো কিছুটা সরে গেল। কিন্তু তাতে তারা বের হতে সক্ষম ছিল না।

তৃতীয়জন দো’আ করল, ’’হে আল্লাহ! আমি কিছু লোককে মজুর রেখেছিলাম। (কাজ সুসম্পন্ন হলে) আমি তাদের সকলকে মজুরী দিয়ে দিলাম। কিন্তু তাদের মধ্যে একজন মজুরী না নিয়ে চলে গেল। আমি তার মজুরীর টাকা ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করলাম। (কিছুদিন পর) তা থেকে প্রচুর অর্থ জমে গেল। কিছুকাল পর একদিন সে এসে বলল, ’হে আল্লাহর বান্দা! তুমি আমার মজুরী দিয়ে দাও।’ আমি বললাম, ’এসব উঁট, গাভী, ছাগল এবং গোলাম (বাঁদি) যা তুমি দেখছ তা সবই তোমার মজুরীর ফল।’ সে বলল, ’হে আল্লাহর বান্দা! তুমি আমার সঙ্গে উপহাস করবে না।’ আমি বললাম, ’আমি তোমার সঙ্গে উপহাস করিনি (সত্য ঘটনাই বর্ণনা করছি)।’ সুতরাং আমার কথা শুনে সে তার সমস্ত মাল নিয়ে চলে গেল এবং কিছুই ছেড়ে গেল না। হে আল্লাহ! যদি আমি এ কাজ একমাত্র তোমার সন্তুষ্টি লাভের জন্য করে থাকি, তাহলে যে বিপদে আমরা পড়েছি তা তুমি দূরীভূত কর।’’ এর ফলে পাথর সম্পূর্ণ সরে গেল এবং সকলেই (গুহা থেকে) বের হয়ে চলতে লাগল।[1]

(1) - باب الإخلاص وإحضارالنية

وعن أبي عَبْد الرَّحْمَن عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ بْنِ الْخطَّاب،ِ رضي االله عنهما قال: سَمِعْتُ رسول االله صَلّى االلهُعَلَيْهِ وسَلَّم يَقُولُ: »انْطَلَقَ ثَلاَثَةُ نفر مِمَّنْ آَانَ قَبْلَكُمْ حَتَّى آوَاهُمُ الْمبِيتُ إِلَى غَارٍ فَدَخَلُوهُ، فانْحَدَرَتْ صَخْرةٌمِنَ الْجبلِ فَسَدَّتْ عَلَيْهِمْ الْغَار،َ فَقَالُوا : إِنَّهُ لا يُنْجِيكُمْ مِنْ الصَّخْرَةِ إِلاَّ أَنْ تَدْعُوا االله تعالى بصالح أَعْمَالكُمْ .قال رجلٌ مِنهُمْ : اللَّهُمَّ آَانَ لِي أَبَوانِ شَيْخَانِ آَبِيرانِ ، وآُنْتُ لاَ أَغبِقُ قبْلهَما أَهْلاً وَلا مالاً فنأَى بي طَلَبُالشَّجرِ يَوْماً فَلمْ أُرِحْ عَلَيْهمَا حَتَّى نَامَا فَحَلبْت لَهُمَا غبُوقَهمَا فَوَجَدْتُهُمَا نَائِميْنِ ، فَكَرِهْت أَنْ أُوقظَهمَا وَأَنْأَغْبِقَ قَبْلَهُمَا أَهْلاً أَوْ مَالا،ً فَلَبِثْتُ وَالْقَدَحُ عَلَى يَدِى أَنْتَظِرُ اسْتِيقَاظَهُما حَتَّى بَرَقَ الْفَجْرُ وَالصِّبْيَةُ يَتَضاغَوْنَعِنْدَ قَدَمى فَاسْتَيْقظَا فَشَربَا غَبُوقَهُمَا . اللَّهُمَّ إِنْ آُنْتُ فَعَلْتُ ذَلِكَ ابْتِغَاءَ وَجْهِكَ فَفَرِّجْ عَنَّا مَا نَحْنُ فِيهِ مِنْ هَذِهِالصَّخْرَة ، فانْفَرَجَتْ شَيْئاً لا يَسْتَطيعُونَ الْخُرُوجَ مِنْهُ .قال الآخر : اللَّهُمَّ إِنَّهُ آَانتْ لِيَ ابْنَةُ عمٍّ آانتْ أَحَبَّ النَّاسِ إِلَيَّ « وفي رواية : » آُنْتُ أُحِبُّهَا آَأَشد مَا يُحبُّالرِّجَالُ النِّسَاءِ ، فَأَرَدْتُهَا عَلَى نَفْسهَا فَامْتَنَعَتْ مِنِّى حَتَّى أَلَمَّتْ بِهَا سُنَةٌ مِنَ السِّنِينَ فَجَاءَتْنِى فَأَعْطَيْتُهِاعِشْرينَ وَمِائَةَ دِينَارٍ عَلَى أَنْ تُخَلِّىَ بَيْنِى وَبَيْنَ نَفْسِهَا ففَعَلَت ، حَتَّى إِذَا قَدَرْتُ عَلَيْهَا « وفي رواية : » فَلَمَّاقَعَدْتُ بَيْنَ رِجْليْهَا ، قَالتْ : اتَّقِ االله ولا تَفُضَّ الْخاتَمَ إِلاَّ بِحَقِّهِ ، فانْصَرَفْتُ عَنْهَا وَهِىَ أَحَبُّ النَّاسِ إِليَّ وَترآْتُالذَّهَبَ الَّذي أَعْطَيتُهَا ، اللَّهُمَّ إِنْ آُنْتُ فَعْلتُ ذَلِكَ ابْتِغَاءَ وَجْهِكَ فافْرُجْ عَنَّا مَا نَحْنُ فِيهِ ، فانفَرَجَتِ الصَّخْرَةُغَيْرَ أَنَّهُمْ لا يَسْتَطِيعُونَ الْخُرُوجَ مِنْهَا .وقَالَ الثَّالِثُ : اللَّهُمَّ إِنِّي اسْتَأْجَرْتُ أُجرَاءَ وَأَعْطَيْتُهمْ أَجْرَهُمْ غَيْرَ رَجُلٍ وَاحِدٍ تَرَكَ الَّذي لَّه وذهب فثمَّرت أجرهحتى آثرت منه الأموال فجائنى بعد حين فقال يا عبد االله أَدِّ إِلَيَّ أَجْرِي ، فَقُلْتُ : آُلُّ مَا تَرَى منْ أَجْرِكَ : مِنَالإِبِلِ وَالْبَقَرِ وَالْغَنَم وَالرَّقِيق فقال: يا عَبْدَ اللَّهِ لا تَسْتهْزيْ بي ، فَقُلْتُ : لاَ أَسْتَهْزيُ بك، فَأَخَذَهُ آُلَّهُ فاسْتاقَهُفَلَمْ يَتْرُكْ مِنْه شَيْئاً ، اللَّهُمَّ إِنْ آُنْتُ فَعَلْتُ ذَلِكَ ابْتغَاءَ وَجْهِكَ فافْرُجْ عَنَّا مَا نَحْنُ فِيهِ ، فَانْفَرَجَتِ الصَّخْرَةُفخرَجُوا يَمْشُونَ « متفقٌ عليه.

(1) Chapter: Sincerity and Significance of Intentions and all Actions, Apparent and Hidden


'Abdullah bin 'Umar bin Al-Khattab (May Allah be pleased with them) narrated that: He heard Messenger of Allah (ﷺ) as saying: "Three men, amongst those who came before you, set out until night came and they reached a cave, so they entered it. A rock fell down from the mountain and blocked the entrance of the cave. They said: 'Nothing will save you from this unless you supplicate to Allah by virtue of a righteous deed you have done.' Thereupon, one of them said: 'O Allah! I had parents who were old, and I used to offer them milk before any of my children or slaves. One day, I went far away in search of grazing and could not come back until they had slept. When I milked as usual and brought the drink I found them both asleep. I hated to disturb them and also disliked to give milk to my children before them. My children were crying out of hunger at my feet but I awaited with the bowl in my hand for them to wake up. When they awoke at dawn, they drank milk. O Allah! If I did so to seek Your Pleasure, then deliver us from the distress caused by the rock'. The rock moved slightly but they were unable to escape. The next said: 'O Allah! I had a cousin whom I loved more than any one else (in another version he said: as a man can love a woman). I wanted to have sexual intercourse with her but she refused. Hard pressed in a year of famine, she approached me. I gave her one hundred and twenty dinars on condition that she would yield herself to me. She agreed and when we got together (for sexual intercourse), she said: Fear Allah and do not break the seal unlawfully. I moved away from her in spite of the fact that I loved her most passionately; and I let her keep the money I had given her. O Allah! If I did that to seek Your Pleasure, then, remove the distress in which we are.' The rock moved aside a bit further but they were still unable to get out. The third one said: 'O Allah! I hired some labourers and paid them their wages except one of them departed without taking his due. I invested his money in business and the business prospered greatly. After a long time, he came to me and said: O slave of Allah! Pay me my dues. I said: All that you see is yours - camels, cattle, goats and slaves. He said: O slave of Allah! Do not mock at me. I assured him that I was not joking. So he took all the things and went away. He spared nothing. O Allah! If I did so seeking Your Pleasure, then relieve us of our distress.' The rock slipped aside and they got out walking freely". [Al-Bukhari and Muslim]. Commentary: 1. It is permissible to pray through our virtuous deeds. But to make someone a medium for it, is an innovation in Deen which should be avoided for two major reasons. Firstly, there is no evidence in Shari`ah to support this.Secondly, it is against the practice of Khair-ul-Qurun, the best of generations. (This term is used for the first three generations of Muslims, the one in which the Prophet (PBUH) lived and the two following). 2. Preference should be given to the service of parents, even over the service of one's own wife and children. 3. To abstain from sins out of fear of Allah is a highly meritorious act. 4. Labourers should always be treated fairly. If someone has paid to a labourer less than his due, it should be paid to him in a decent manner. 5. Any supplication which is made sincerely, and with real sense of humbleness is granted by Allah. 6. Allah sometimes helps His pious men even in an unusual manner, which is termed as Karamat (wonder or marvel). Thus, like the miracles of the Prophets, wonders of the righteous people are also true. But miracles and wonders both appear with the Will of Allah.


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ