পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ইবনু সাইয়্যাদ-এর ঘটনা
৫৫০৪-[১১] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। এক সময় মদীনার জনৈকা মহিলা এমন একটি পুত্র সন্তান জন্ম দিল, যার এক চোখ মোছানো, মাঢ়ির দাঁতগুলো মুখের বাহির পর্যন্ত লম্বা, তাতে রাসূলুল্লাহ (সা.) এই আশঙ্কা করেছিলেন যে, হয়তো সে-ই দাজ্জাল। অতঃপর একদিন তিনি (সা.) তাকে দেখলেন, সে একখানা চাদর জড়িয়ে শুয়ে গুনগুন করছে, তখন তার মা তাকে ডেকে বলল, হে ’আবদুল্লাহ! এই যে আবূল কাসিম। তখন সে চাদরের ভিতর হতে বের হলো, এ সময় রাসূলুল্লাহ (সা.) (বিরক্তির সুরে) বললেন, এ মহিলাটির কি হলো আল্লাহ তাকে ধ্বংস করুন, যদি সে তাকে আপন অবস্থায় ছেড়ে দিত, তাহলে প্রকৃত অবস্থা উদঘাটিত হয়ে যেত। অতঃপর বর্ণনাকারী জাবির ইবনু উমার (রাঃ)-এর বর্ণিত হাদীসের মতো বর্ণনা করেন। তখন ’উমার (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে অনুমতি দিন, আমি তাকে হত্যা করে ফেলি।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, যদি সে প্রকৃত দাজ্জালই হয়, তবে তুমি তার হত্যাকারী নও, বরং তার হত্যাকারী হলেন ’ঈসা ইবনু মারইয়াম (আঃ)। আর যদি সে প্রকৃত দাজ্জালই না হয়, তাহলে এমন এক লোককে হত্যা করা তোমার অধিকার নেই, যে নিরাপত্তা চুক্তির আওতার রয়েছে। বর্ণনাকারী জাবির (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) তখন থেকে এই আশঙ্কা করতেন যে, হয়তো সে (ইবনু সাইয়্যাদ)-ই প্রকৃত দাজ্জাল। (শারহুস্ সুন্নাহ্)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ ( بَاب قصَّة ابْن الصياد)
وَعَنْ جَابِرٍ أَنَّ امْرَأَةً مِنَ الْيَهُودِ بِالْمَدِينَةِ وَلَدَتْ غُلَامًا مَمْسُوحَةٌ عَيْنُهُ طَالِعَةٌ نَابُهُ فَأَشْفَقَ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم إِن يَكُونَ الدَّجَّالَ فَوَجَدَهُ تَحْتَ قَطِيفَةٍ يُهَمْهِمُ. فَآذَنَتْهُ أُمُّهُ فَقَالَتْ: يَا عَبْدَ اللَّهِ هَذَا أَبُو الْقَاسِمِ فَخَرَجَ مِنَ الْقَطِيفَةِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَا لَهَا قَاتَلَهَا اللَّهُ؟ لَوْ تَرَكَتْهُ لَبَيَّنَ فَذَكَرَ مِثْلَ مَعْنَى حَدِيثِ ابْنِ عُمَرَ فَقَالَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ ائْذَنْ لِي يَا رَسُولَ اللَّهِ فَأَقْتُلَهُ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِن يكن هُوَ فَلَيْسَتْ صَاحِبَهُ إِنَّمَا صَاحِبُهُ عِيسَى بْنُ مَرْيَمَ وَإِلَّا يكن هُوَ فَلَيْسَ لَك أتقتل رَجُلًا مِنْ أَهْلِ الْعَهْدِ» . فَلَمْ يَزَلْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُشْفِقًا أَنَّهُ هُوَ الدَّجَّال. رَوَاهُ فِي شرح السّنة وَهَذَا الْبَابُ خَالٍ عَنِ الْفَصْلِ الثَّالِثِ اسنادہ ضعیف ، رواہ البغوی فی شرح السنۃ (5 / 78 ح 4274) [و احمد (3 / 368 ح 15018)] * فیہ ابو الزبیر مدلس و عنعن
ব্যাখ্যা: (فَأَشْفَقَ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم) রাসূলুল্লাহ (সা.) তার উম্মতের জন্য ভীত-সন্ত্রস্ত হলেন এ কারণে যে, হয়তো সে দাজ্জাল হতে পারে। (যেহেতু দাজ্জালের গুণাবলির সাথে ইবনু সাইয়্যাদ-এর গুণাবলির মিল পাওয়া গেছে)
(فَلَمْ يَزَلْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُشْفِقًا أَنَّهُ هُوَ الدَّجَّال) রাসূলুল্লাহ (সা.) ও তার উম্মতের ব্যাপারে সর্বদা ভীত থাকতেন এ কারণে যে, হয়তো ইবনু সাইয়্যাদই দাজ্জাল হতে পারে। কতিপয় গবেষক এর কারণ ব্যাখ্যা দিয়েছেন এভাবে, ইবনু সাইয়্যাদ-এর কতিপয় গুণাবলি দাজ্জালের সাথে মিল ও অমিল থাকায় নবী (সা.) তার ব্যাপারে সন্দিহান ছিলেন এবং ধারণা করেছিল সে দাজ্জাল হতে পারে। এটা নবী (সা.) -এর দাজ্জাল সম্পর্কে নিশ্চিত সংবাদ জানার পূর্বের ঘটনা। যখন তিনি তামীম আদ দারী-এর ঘটনার মাধ্যমে সকলকে দাজ্জালের ফিতনাহ্ সম্পর্কে অবগত করলেন তখন তার উক্ত ধারণা দূরীভূত হয় যে, ইবনু সাইয়্যাদ প্রকৃত দাজ্জাল নয়। আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) -এর বর্ণনা একে আরো শক্তিশালী করে যে, তিনি ইবনু সাইয়্যাদ-এর সাথে মক্কার উদ্দেশে যাত্রা সঙ্গী হয়েছিলেন।
মূলত দাজ্জালের পিতা-মাতার গুণাবলির সাথে ইবনু সাইয়্যাদ-এর পিতামাতার গুণাবলি মিলে যাওয়ার মাধ্যমে এটা প্রমাণিত হয় না যে, নিশ্চিতভাবে উভয়েই এক ব্যক্তি। এমনিভাবে ‘উমার (রাঃ) ও তার পূর্বের কসম খাওয়া এবং রাসূল (সা.) তার প্রতিবাদ না করার দ্বারা প্রমাণিত হয় না যে, সেই দাজ্জাল। কেননা এটা ছিল তার বাস্তব ঘটনা অবগত হওয়ার পূর্বের অবস্থা। তাই তিনি সে সময় উম্মতের জন্য ভীত ছিলেন। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)