পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৫৩৮১-[৩] উক্ত রাবী [হুযায়ফাহ্ (রাঃ)] বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদেরকে দু’টি হাদীস বর্ণনা করেন। যার একটি আমি সংঘটিত হতে দেখেছি। আর অপরটির প্রতীক্ষায় আছি।
১. তিনি (সা.) আমাদেরকে বলেছেন যে, আমানত মানুষের অন্তরসমূহের অন্তস্থলে (আল্লাহর নিকট হতে) অবতীর্ণ হয়। অতঃপর তারা কুরআন হতে শিক্ষা গ্রহণ করেন, তারপর সুন্নাহ হতে শিক্ষা গ্রহণ করেন।
২. আমানত কিরূপে উঠে যাবে- এ কথাটিও তিনি (সা.) আমাদেরকে বলেছেন। এমন সময় মানুষ নিদ্রা যাবে, এমতাবস্থায় তার অন্তর হতে আমানত তুলে নেয়া হবে। তখন শুধুমাত্র কালো দাগের মতো একটি সাধারণ চিহ্ন অবশিষ্ট থাকবে। অতঃপর মানুষ আবার নিদ্রা যাবে, তখন আমানত উঠিয়ে নেয়া হবে। এতে এমন ফোসকা সদৃশ চিহ্ন অবশিষ্ট থাকবে, যেমন জ্বলন্ত অগ্নিশিখা, তাকে তুমি নিজের পায়ের উপর রেখে রোমন্থন করলে তথায় ফুলে উঠে। তুমি অবশ্য স্ফীতি দেখতে পাবে, কিন্তু তার ভিতরে কিছুই নেই। আর লোকজন ভোরে উঠে স্বভাবত ক্রয়-বিক্রয়ে ব্যস্ত হবে, কিন্তু কাউকেও আমানত রক্ষাকারী পাবে না। তখন বলা হবে, অমুক সম্প্রদায়ে একজন বিশ্বস্ত ও আমানতদার লোক রয়েছে। আবার কোন ব্যক্তি সম্পর্কে বলা হবে যে, সে কতই জ্ঞানী! সে কতই চালাক ও চতুর! এবং সে কতই সচেতন ও দৃঢ় প্রত্যয়ী! অথচ তার অন্তরে রাই পরিমাণও ঈমান নেই। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول
وَعَنْهُ قَالَ: حَدَّثَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَدِيثَيْنِ رَأَيْتُ أَحَدَهُمَا وَأَنَا أَنْتَظِرُ الْآخَرَ: حَدَّثَنَا: «إِنَّ الْأَمَانَةَ نَزَلَتْ فِي جَذْرِ قُلُوبِ الرِّجَالِ ثُمَّ عَلِمُوا مِنَ الْقُرْآنِ ثُمَّ عَلِمُوا مِنَ السُّنَّةِ» . وَحَدَّثَنَا عَنْ رَفْعِهَا قَالَ: يَنَامُ الرَّجُلُ النَّوْمَةَ فَتُقْبَضُ الْأَمَانَةُ مِنْ قَلْبِهِ أَثَرُهَا مِثْلُ أَثَرِ الْوَكْتِ ثُمَّ يَنَامُ النَّوْمَةَ قتقبض فَيَبْقَى أَثَرُهَا مِثْلَ أَثَرِ الْمَجْلِ كَجَمْرٍ دَحْرَجْتَهُ عَلَى رِجْلِكَ فَنَفِطَ فَتَرَاهُ مُنْتَبِرًا وَلَيْسَ فِيهِ شَيْءٌ وَيُصْبِحُ النَّاسُ يَتَبَايَعُونَ وَلَا يَكَادُ أَحَدٌ يُؤَدِّي الْأَمَانَةَ فَيُقَالُ: إِنَّ فِي بَنِي فُلَانٍ رَجُلًا أَمِينًا وَيُقَالُ لِلرَّجُلِ: مَا أَعْقَلَهُ وَمَا أَظْرَفَهُ وَمَا أَجْلَدُهُ وَمَا فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ حَبَّةٍ مِنْ خَرْدَلٍ مِنْ إِيمَانٍ . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ متفق علیہ ، رواہ البخاری (6497) و مسلم (230 / 143)، (367) ۔ (مُتَّفق عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা : মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, “যার আমানতদারিতা নেই, তার ঈমান নেই। তাহরীর গ্রন্থকার সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেছেন, কিয়ামতের পূর্বে ধীরে ধীরে মানুষের অন্তর হতে আমানতদারিতার অনুভূতি হ্রাস পাবে। আমানতদারিতার প্রথমাংশ বিদূরিত হলে হৃদয়ে খিয়ানতের কালো দাগ পড়ে যায়। এমনিভাবে আস্তে আস্তে আমানতদারিতা নষ্ট হয়ে যাবে। উল্লেখ্য যে, আমানত রক্ষা করা পরিপূর্ণ ঈমানের নিদর্শন। আমানতদারিতা হ্রাস পেলে ঈমানের ঘাটতি হয়। কিয়ামতের পূর্বে আমানতদারিতা প্রচণ্ডভাবে কমে যাবে যে, আমানতদার লোক বিরল হবে। তখন বলা হবে অমুক গোত্রে একজন আমানতদার লোক আছেন। ইমাম আবূল হাসান আল ওয়াহিদী (রহিমাহুল্লাহ) (إنَّاعَرَضْنَا الْأَمَانَةَ....) আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন: ‘আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন: আমানত হচ্ছে সেসব ফরয কাজসমূহ যা আল্লাহর বান্দাদের জন্য প্রতিপালন আবশ্যক করেছেন। হাদীসের শেষাংশের সারকথা হচ্ছে, শেষ যামানায় মানুষেরা অন্যান্য ব্যক্তির চতুরতা, বুদ্ধি ও শারীরিক সৌন্দর্যের প্রশংসায় অধিক ব্যাপৃত হবে। অপরদিকে জ্ঞানী ও ‘আমলদার কারো প্রশংসা করবে না।
হাসান বসরী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন : দীন পুরোটাই হচ্ছে আমানত। আবূল আলিয়া (রহিমাহুল্লাহ)এর মতে আল্লাহ তা'আলার আদেশকৃত ও নিষেধাজ্ঞার বিষয়সমূহ আমানত।
মুকাতিল (রহিমাহুল্লাহ) বলেন: আনুগত্যই হচ্ছে আমানত। ইমাম ওয়াহিদী (রহিমাহুল্লাহ)-র মতে, অধিকাংশ তাফসীরকারকের মত এটাই। আনুগত্য ও আল্লাহর ফরযকৃত বিষয়সমূহ যা আদায় করলে সাওয়াব অর্জন হয় এবং নষ্ট করলে শাস্তি পেতে হয়। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
তাহরীর গ্রন্থকারের মতে, আলোচ্য হাদীসের সারমর্ম হচ্ছে- কিয়ামতের পূর্বে মানুষের হৃদয় হতে ধীরে ধীরে আমানতের অনুভূতি দূর হয়ে যাবে এবং আমানতদার লোকের সংখ্যা হবে বিরল। অতঃপর তা একেবারে বিলীন হয়ে যাবে। এমনিভাবে আমানতদার ব্যক্তির সংখ্যা হবে খুবই নগণ্য। আমানতের বিষয়টি হৃদয়ের গহীনে অবস্থিত, তা গোপন একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু।
মুহাদ্দিসীন কিরামের মতে, আমানত কোন ব্যক্তির হৃদয়ের জ্যোতিস্বরূপ। বিপর্যয়ের যুগে ধীরে ধীরে এই আলো মানুষের হৃদয় হতে মুছে গিয়ে পরিশেষে সম্পূর্ণরূপে শেষ হয়ে যাবে। তবে কতিপয় মুষ্টিমেয় ঈমানদার মুমিন ব্যক্তি আমানতদার থাকবেন এবং তারা হবেন সংখ্যায় খুবই কম। দিন দিন আমানতদার ব্যক্তি কমে গিয়ে আমানতদার ব্যক্তিদের খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন হবে।
মুসনাদে আহমাদ ও সহীহ ইবনু হিব্বানে আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত সংকলিত হাদীসে এসেছে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : “যার আমানতদারিতা নেই তার দীন নেই।” ইমাম আলবানী (রহিমাহুল্লাহ) তদীয় সহীহ আল জামি' গ্রন্থে হাদীসটি সহীহ বলেছেন। উক্ত হাদীসে এসেছে- “যার আমানতদারিতা নেই তার ঈমান নেই এবং যার প্রতিশ্রুতি নেই তার দীন নেই।” (তুহফাতুল আহওয়াযী)