পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - ভয় ও কান্না
৫৩৫২-[১৪] আবূ সাঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সা.) একদিন সালাতের উদ্দেশে বের হয়ে দেখলেন, লোকেরা যেন হাসছে। তখন তিনি (সা.) বললেন, তোমরা যদি স্বাদ বিনষ্টকারী অর্থাৎ মৃত্যুকে বেশি বেশি স্মরণ করতে তাহলে তা তোমাদেরকে বিরত রাখত তা হতে যা আমি দেখছি। কাজেই তোমরা সেই স্বাদ বিনষ্টকারী মৃত্যুকে খুব বেশি স্মরণ কর। প্রতিদিন কবর নিজের ভাষায় এ কথা বলতে থাকে, আমি পরিবার-পরিজনদের হতে দূরবর্তী একটি ঘর। আমি স্বীয় সাথিহীন একাকী ঘর, আমি মাটির ঘর, আমি পোকামাকড়ের ঘর। আর মুমিন বান্দাকে যখন দাফন করা হয়, তখন কবর এই বলে তাকে শুভেচ্ছা জানায়, তোমার আগমন বরকতময় হোক, তুমি আপনজনের কাছেই এসেছ। আমার পৃষ্ঠের উপরে যারা চলাফেরা করছে, তাদের সকলের চাইতে তুমি ছিলে আমার নিকট অধিক প্রিয়। আজ আমাকে তোমার ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রক ধার্য করা হয়েছে এবং তোমাকে আমার নিকট ন্যস্ত করা হয়েছে। তুমি অচিরেই দেখতে পারবে আমি তোমার সাথে কিরূপ উত্তম আচরণ করি।
অতঃপর তিনি (সা.) বললেন, তখন তার দৃষ্টির প্রান্তসীমা পর্যন্ত কবর বিস্তৃত হয়ে যাবে এবং তার জন্য জান্নাতের দিকে একটি দরজা খুলে দেয়া হবে! আর যখন পাপী অথবা কাফিরকে দাফন করা হয়, তখন কবর তাকে বলে তোমার আগমন কল্যাণকর নয় এবং তুমি আপনজনের নিকট আসনি। বস্তুত যারা আমার পৃষ্ঠের উপর বিচরণ করছে তাদের সকলের অপেক্ষা তুমিই ছিলে আমার নিকট সর্বাপেক্ষা ঘৃণিত। আজ আমাকেই তোমার ওপর পরিচালক বানানো হয়েছে। আমার নিকট তোমাকে ন্যস্ত করা হয়েছে। শীঘ্রই দেখতে পাবে আমি তোমার সাথে কি ব্যবহার করি। তিনি (সাঃ) বলেন, তখন তার কবর তার উপর চাপ প্রয়োগ করবে, এমনকি তার পাঁজরের হাড় একটি আরেকটির ভিতরে ঢুকে পড়বে।
বর্ণনাকারী বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ও নিজের উভয় হাতের অঙ্গুলিগুলো একটিকে আরেকটির মধ্যে প্রবেশ করিয়ে (পাঁজরের হাড় ঢোকার দৃশ্যই ইঙ্গিতে) দেখালেন। তারপর বললেন, সেই নাফরমান কাফিরের জন্য সত্তরটি বিষধর অজগর স্থির করা হবে (তাদের বিষক্রিয়া এত অধিক হবে যে,) যদি তাদের একটি এই পৃথিবীতে একবার ফুক মারে তাহলে কিয়ামত পর্যন্ত তার বিষের ক্রিয়ায় একটি ঘাসও উৎপন্ন হবে না। অবশেষে তাকে হিসাব-নিকাশে উপস্থিত করানো পর্যন্ত উক্ত অজগরসমূহ তাকে দংশন করতে ও ছোবল মারতে থাকবে। বর্ণনাকারী আবূ সাঈদ বলেন, এরপর রাসূলুল্লাহ (সা.) এই বললেন : কবর মূলত জান্নাতের উদ্যানসমূহের একটি উদ্যান অথবা জাহান্নামের গর্তসমূহের একটি গর্ত। (তিরমিযী)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب الْبكاء وَالْخَوْف)
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ قَالَ: خَرَجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِصَلَاةٍ فَرَأَى النَّاسَ كَأَنَّهُمْ يَكْتَشِرُونَ قَالَ: أَمَا إِنَّكُمْ لَوْ أَكْثَرْتُمْ ذِكْرَ هَادِمِ اللَّذَّاتِ لَشَغَلَكُمْ عَمَّا أَرَى الْمَوْتُ فَأَكْثِرُوا ذكر هَادِم اللَّذَّات الْمَوْت فَإِنَّهُ لَا يأتِ على الْقَبْر يومٌ إِلَّا تَكَلَّمَ فَيَقُولُ: أَنَا بَيْتُ الْغُرْبَةِ وَأَنَا بَيْتُ الْوَحْدَةِ وَأَنَا بَيْتُ التُّرَابِ وَأَنَا بَيْتُ الدُّودِ وَإِذَا دُفِنَ الْعَبْدُ الْمُؤْمِنُ قَالَ لَهُ الْقَبْرُ: مَرْحَبًا وَأَهْلًا أَمَا إِنْ كُنْتَ لَأَحَبُّ مَنْ يَمْشِي عَلَى ظَهْرِي إِلَيَّ فَإِذْ وُلِّيتُكَ الْيَوْمَ وَصِرْتَ إِلَيَّ فَسَتَرَى صَنِيعِي بِكَ . قَالَ: فَيَتَّسِعُ لَهُ مَدَّ بَصَرِهِ وَيُفْتَحُ لَهُ بَابٌ إِلَى الْجَنَّةِ وَإِذَا دُفِنَ الْعَبْدُ الْفَاجِرُ أَوِ الْكَافِرُ قَالَ لَهُ الْقَبْرُ: لَا مَرْحَبًا وَلَا أَهْلًا أَمَا إِنْ كُنْتَ لَأَبْغَضَ مَنْ يَمْشِي عَلَى ظَهْرِي إِلَيَّ فَإِذْ وُلِّيتُكَ الْيَوْمَ وَصِرْتَ إِلَيَّ فَسَتَرَى صَنِيعِي بِكَ قَالَ: «فَيَلْتَئِمُ عَلَيْهِ حَتَّى يَخْتَلِفَ أَضْلَاعُهُ» . قَالَ: وَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِأَصَابِعِهِ. فَأَدْخَلَ بَعْضَهَا فِي جَوْفِ بَعْضٍ. قَالَ: «وَيُقَيَّضُ لَهُ سَبْعُونَ تِنِّينًا لَوْ أَنَّ وَاحِدًا مِنْهَا نَفَخَ فِي الْأَرْضِ مَا أَنْبَتَتْ شَيْئًا مَا بَقِيَتِ الدُّنْيَا فَيَنْهَسْنَهُ وَيَخْدِشْنَهُ حَتَّى يُفْضِي بِهِ إِلَى الْحِسَابِ» قَالَ: وَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّمَا الْقَبْرُ رَوْضَةٌ مِنْ رِيَاضِ الْجَنَّةِ أَوْ حُفْرَةٌ مِنْ حُفَرِ النَّارِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ اسنادہ ضعیف ، رواہ الترمذی (2460) * عبید اللہ بن الولید الوصافی : ضعیف و عطیۃ العوفی ضعیف مدلس و لبعض الحدیث شواھد ۔ (ضَعِيف)
ব্যাখ্যা : (خَرَجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِصَلَاةٍ) নবী (সা.) সালাতের উদ্দেশে বের হওয়ার বাহ্যিক অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে সেটা ছিল জানাযার সালাত। কেননা নবী (সা.)-এর ব্যাপারে এটা প্রমাণিত যে, তিনি জানাযাহ্ দেখলে প্রচণ্ড চিন্তিত হয়ে পড়তেন এবং অল্প কথা বলতেন।
(فَرَأَى النَّاسَ كَأَنَّهُمْ يَكْتَشِرُونَ) তিনি প্রত্যক্ষ করলেন যে, লোকেরা হাসাহাসি করছে। (يَكْتَشِرُونَ) শব্দটি (كثر) মূল ধাতু থেকে নেয়া হয়েছে। যার অর্থ হাসার জন্য দাঁত বের করা। সম্ভবত এ শব্দটিতে ‘তা’ হরফটি মুবালাগাহ্ বা আধিক্যের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। অতএব এই শব্দ থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, তারা অধিক হাসাহাসি ও কথার সমন্বয় করেছিল।
(قَالَ: أَمَا إِنَّكُمْ لَوْ أَكْثَرْتُمْ ذِكْرَ هَادِمِ اللَّذَّاتِ) তিনি (সা.) বললেন, সাবধান! যদি তোমরা দুনিয়ার স্বাদ বিনষ্টকারী মৃত্যুর কথা বেশি করে স্মরণ করতে।
(لَشَغَلَكُمْ عَمَّا أَرَى) তাহলে তা তোমাদেরকে আমি যে অবস্থায় দেখছি তা থেকে বিরত থাকতে। অর্থাৎ তোমরা গাফেলদের মতো হাসাহাসি ও কথাবার্তায় লিপ্ত হতে না।
(إِنَّمَا الْقَبْرُ رَوْضَةٌ مِنْ رِيَاضِ الْجَنَّةِ أَوْ حُفْرَةٌ مِنْ حُفَرِ النَّارِ) মূলত কবর হচ্ছে, জান্নাতের একটি বাগান নতুবা জাহান্নামের একটি গর্ত।
সুফইয়ান আস্ সাওরী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, যারা অধিক মাত্রায় কবরের কথা স্মরণ করে তারাই কবরকে জান্নাতের বাগান হিসেবে পায় আর যারা তা স্মরণ করা থেকে গাফেল থাকে, তারাই কবরকে জাহান্নামের গর্ত হিসেবে পায়।
(তুহফাতুল আহওয়াযী ৬/২৪৬০, মিরকাতুল মাফাতীহ, শারূহু ইবনু মাজাহ ৩/৪২৫৮, শারহ সুনান আন্ নাসায়ী ২/১৮২৩)