পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - তাওয়াক্কুল (আল্লাহর ওপর ভরসা) ও সবর (ধৈর্যধারণ) প্রসঙ্গে
৫৩০০-[৬] ইবনু মাস্’উদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, হে লোক সকল! যে ব্যাপারে আমি তোমাদেরকে আদেশ করেছি তাছাড়া এমন কোন জিনিসই নেই যা তোমাদেরকে জান্নাতের নিকটবর্তী করবে এবং জাহান্নাম থেকে দূরে রাখবে। আর যা থেকে আমি তোমাদেরকে নিষেধ করেছি তাছাড়া এমন কোন জিনিসই নেই যা তোমাদেরকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখবে। রূহুল আমীন আরেক বর্ণনায় আছে রূহুল কুদুস (জিবরীল আলাইহিস সালাম) আমার অন্তরে এ কথাটি ঢেলে দিয়েছেন যে, কোন দেহ তার (নির্ধারিত) রিযক পরিপূর্ণভাবে ভোগ না করা পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করবে না। সাবধান! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং ধনসম্পদ উপার্জনে উত্তম নীতি অবলম্বন কর। কাঙিক্ষত রিযক পৌছার বিলম্বতা যেন তোমাদেরকে আল্লাহর অবাধ্যতার খোঁজার পথে তা অন্বেষণে উদ্বুদ্ধ না করে। কেননা আল্লাহর কাছে যা নির্ধারিত রিযক আছে তা আল্লাহর আনুগত্য ছাড়া অর্জন করা যায় না। (আল্লামা বাগাবী’র “শারহুস্ সুন্নাহ্” এবং বায়হাক্বী’র শুআবূল ঈমান বর্ণনা করেছেন। তবে (وَإنَّ رُوحَ اوقُدُسِ) “আর নিশ্চয় রূহুল কুদুস (জিবরীল আলায়হিস সালাম)” এ বাক্যটি বায়হাক্বী বর্ণনা করেননি)
اَلْفصْلُ الثَّنِفْ (بَاب التَّوَكُّل وَالصَّبْر)
وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَيُّهَا النَّاسُ لَيْسَ مِنْ شَيْءٍ يُقَرِّبُكُمْ إِلَى الْجَنَّةِ وَيُبَاعِدُكُمْ مِنَ النَّارِ إِلَّا قَدْ أَمَرْتُكُمْ بِهِ وَلَيْسَ شَيْءٌ يُقَرِّبُكُمْ مِنَ النَّارِ وَيُبَاعِدُكُمْ مِنَ الْجَنَّةِ إِلَّا قَدْ نَهَيْتُكُمْ عَنْهُ وَإِنَّ الرُّوحَ الْأَمِينَ - وَفِي روايةٍ: وإِن رُوحَ الْقُدُسِ - نَفَثَ فِي رُوعِي أَنَّ نَفْسًا لَنْ تَمُوتَ حَتَّى تَسْتَكْمِلَ رِزْقَهَا أَلَا فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَجْمِلُوا فِي الطَّلَبِ وَلَا يَحْمِلَنَّكُمُ اسْتِبْطَاءُ الرِّزْقِ أَنْ تَطْلُبُوهُ بِمَعَاصِي اللَّهِ فَإِنَّهُ لَا يُدْرَكُ مَا عِنْدَ اللَّهِ إِلَّا بِطَاعَتِهِ «. رَوَاهُ فِي» شرح السّنة «وَالْبَيْهَقِيّ فِي» شعب الإِيمان إِلَّا أَنَّهُ لَمْ يَذْكُرْ: «وَإِنَّ رُوحَ الْقُدُسِ» اسنادہ ضعیف ، رواہ البغوی فی شرح السنۃ (14 / 303 ۔ 304 ح 4111) و البیھقی فی شعب الایمان (10376 ، نسخۃ محققۃ : 9891) * السند منقطع ، زبید الایامی لم یدرک ابن مسعود و للحدیث شاھدان ضعیفان ۔
ব্যাখ্যা: মানুষকে জান্নাতের নিকটবর্তী করা এবং জাহান্নাম থেকে দূরে থাকার যাবতীয় বিষয়ের দিক নির্দেশনা নবী (সা.) করেছেন। এমনিভাবে মানুষকে জাহান্নামের নিকটবর্তী করে ও জান্নাত থেকে দূরে সরিয়ে দেয় এমন সমস্ত বিষয় থেকে নিষেধ করেছেন। এর মাধ্যমে প্রতীয়মান হয় যে, যাবতীয় উপকারী ও প্রতিরোধকারী বিষয়ে জ্ঞান কেবল কুরআন ও হাদীস থেকেই শিখতে হবে। এ দুটি ছাড়া অন্য কোন জ্ঞান চর্চা করা অপকারী কাজে জীবন নষ্ট করা।
(أَنَّ نَفْسًا لَنْ تَمُوتَ حَتَّى تَسْتَكْمِلَ رِزْقَهَا) আল্লাহ তা'আলা এই মর্মে প্রত্যাদেশ করেছেন যে, সৃষ্টিকুলে কোন প্রাণী তার জন্য নির্ধারিত রিযক পরিপূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করবে না। যেমন আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কুরআনে বলেন, (اَللّٰهُ الَّذِیۡ خَلَقَکُمۡ ثُمَّ رَزَقَکُمۡ ثُمَّ یُمِیۡتُکُمۡ) “আল্লাহই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তোমাদেরকে রিযক দিয়েছেন, অতঃপর তিনি তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন...”- (সূরা আর রূম ৩০ : ৪০)।
(أَلَا فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَجْمِلُوا فِي الطَّلَبِ) সাবধান! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং উত্তম পন্থায় জীবিকা অর্জন কর এবং জীবিকা অর্জনের ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করো না। আল্লাহ তা'আলা বলেন, (وَ مَا خَلَقۡتُ الۡجِنَّ وَ الۡاِنۡسَ اِلَّا لِیَعۡبُدُوۡنِ ﴿۵۶﴾ مَاۤ اُرِیۡدُ مِنۡهُمۡ مِّنۡ رِّزۡقٍ وَّ مَاۤ اُرِیۡدُ اَنۡ یُّطۡعِمُوۡنِ ﴿۵۷﴾ اِنَّ اللّٰهَ هُوَ الرَّزَّاقُ ذُو الۡقُوَّۃِ الۡمَتِیۡنُ ﴿۵۸﴾)
“আমি জিন্ ও মানবকে সৃষ্টি করেছি একমাত্র এ কারণে যে, তারা আমারই ইবাদাত করবে। আমি তাদের থেকে রিযক চাই না, আর আমি এও চাই না যে, তারা আমাকে খাওয়াবে। আল্লাহই তো রিযকদাতা, মহা শক্তিধর, প্রবল পরাক্রান্ত।” (সূরাহ্ আহ্ যা-রিয়া-ত ৫১: ৫৬-৫৮)
(أَلَا فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَجْمِلُوا فِي الطَّلَبِ) রিযক প্রাপ্তির বিলম্ব যেন তোমাদেরকে অন্যায়ভাবে, অবৈধ ও হারাম পন্থায় জীবিকা অর্জন করতে প্ররোচিত না করে। কেননা আল্লাহর নিকট যে হালাল রিযক ও জান্নাত রয়েছে তা আনুগত্যের মাধ্যমেই অর্জন করা সম্ভব, অবৈধ পন্থায় নয়।
আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাআত এখান থেকে দলীল গ্রহণ করেন যে, হালাল ও হারাম সবই রিযক এবং সবকিছু আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে মুতাযিলাগণ বিরোধিতা করেছে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)।