পরিচ্ছেদঃ ১১.তৃতীয় অনুচ্ছেদ - ফাই (বিনাযুদ্ধে প্রাপ্ত শত্রুদের সম্পদ)-এর বর্ণনা
৪০৬৩-[৯] মুগীরাহ্ [ইবনু যিয়াদ মুসিলী] (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ’উমার ইবনু ’আবদুল ’আযীয (রহঃ) খলীফাহ্ নিযুক্ত হয়েই মারওয়ান-এর সন্তান-সন্ততিদের উদ্দেশে বললেনঃ নিশ্চয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাদাক ভূমির আয় নিজের পরিবার-পরিজনের জন্য ব্যয় করতেন। এছাড়া বানী হাশিম-এর শিশু-কিশোরের জন্যও তা হতে ব্যয় করতেন এবং তাদের অবিবাহিতদের বিবাহ-শাদিতে ব্যয় করতেন। তখন ফাতিমা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট চাইলেন যে, উক্ত ফাদাক ভূমি তাঁকে দেয়া হোক, কিন্তু তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তা দিতে অস্বীকার করলেন। ফলে তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবদ্দশায় অনুরূপভাবেই পরিচালিত হয়ে আসছিল। অতঃপর আবূ বকর যখন খলীফাহ্ নিযুক্ত হলেন, তিনিও তাতে সেই নিয়ম-নীতিই অবলম্বন করলেন, যে নীতি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জীবনের শেষ মুহূর্তে পর্যন্ত অবলম্বন করেছিলেন।
পরিশেষে এ অবস্থায় রেখে তিনিও ইন্তেকাল করলেন। অতঃপর যখন ’উমার ইবনুল খত্ত্বাব খলীফাহ্ নিযুক্ত হলেন, তখন তিনিও তার মধ্যে সে অনুরূপ নীতি অবলম্বন করলেন- যা তাঁর পূর্বসূরী দু’জন [নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবূ বকর (রাঃ)] অবলম্বন করেছিলেন। এরূপ অবস্থায় রেখে তিনিও ইন্তেকাল করলেন। পরে (’উসমান -এর খিলাফাতকালে) মারওয়ান উক্ত ’ফাদাক’ ভূমিকে নিজের ব্যক্তিগত সম্পদে পরিণত করল। অতঃপর যখন ’উমার ইবনু ’আবদুল ’আযীয (রহঃ) খলীফাহ্ নিযুক্ত হলেন, তখন তিনি এতদসম্পর্কে বললেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা স্বীয় কন্যা ফাত্বিমাহ্ -কে দেননি, অতএব আমি দেখছি কোনো অবস্থাতেই তার মধ্যে আমারও ব্যক্তিগত কোনো অধিকার নেই। সুতরাং তিনি উপস্থিত (মারওয়ান ও ’উমাইয়াহ্-এর) বংশধরদের উদ্দেশে বললেন, আমি তোমাদেরকে সাক্ষ্য করে ঘোষণা করছি যে, আমি ’ফাদাক’ পুনরায় ঐ অবস্থায় ফেরত দিয়ে দিলাম, যে অবস্থায় তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বকর এবং ’উমার -এর সময়ে ছিল। (আবূ দাঊদ)[1]
عَن المغيرةِ قَالَ: إِنَّ عمَرَ بنَ عبد العزيزِ جَمَعَ بَنِي مَرْوَانَ حِينَ اسْتُخْلِفَ فَقَالَ: إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَتْ لَهُ فَدَكُ فَكَانَ يُنْفِقُ مِنْهَا وَيَعُودُ مِنْهَا عَلَى صَغِيرِ بَنِي هَاشِمٍ وَيُزَوِّجُ مِنْهَا أَيِّمَهُمْ وَإِنَّ فَاطِمَةَ سَأَلَتْهُ أَنْ يَجْعَلَهَا لَهَا فَأَبَى فَكَانَتْ كَذَلِكَ فِي حَيَاةَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي حَيَاتِهِ حَتَّى مَضَى لسبيلِه فَلَمَّا وُلّيَ أَبُو بكرٍ علم فِيهَا بِمَا عَمِلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي حَيَاتِهِ حَتَّى مَضَى لِسَبِيلِهِ فَلَمَّا أَنْ وُلِّيَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ عَمِلَ فِيهَا بِمِثْلِ مَا عَمِلَا حَتَّى مَضَى لِسَبِيلِهِ ثُمَّ اقْتَطَعَهَا مَرْوَانُ ثُمَّ صَارَتْ لِعُمَرَ بْنِ عَبْدِ الْعَزِيزِ فَرَأَيْتُ أَمْرًا مَنَعَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاطِمَةَ لَيْسَ لِي بِحَقٍّ وَإِنِّي أُشْهِدُكُمْ أَنِّي رَدَدْتُهَا عَلَى مَا كَانَتْ. يَعْنِي عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَبِي بَكْرٍ وعمَرَ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: (وَيَعُوْدُ مِنْهَا عَلٰى صَغِيْرِ بَنِىْ هَاشِمٍ) ফাদাকের অর্জিত মাল থেকে বানী হাশিমদের ইয়াতীমদের জন্য ব্যয় করতেন। অর্থাৎ বানী হাশিম-এর ছোট বাচ্চাদের জন্য সে মাল থেকে ব্যয় করতেন। আর যখন তাদের দেয়া মাল শেষ হয়ে যেতো তারা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে ফিরে আসলে তিনি আবার তা থেকেই তাদের দান করতেন।
(وَيُزَوِّجُ مِنْهَا أَيِّمَهُمْ) এ মাল দ্বারা স্বামীহীনদের বিবাহ দিতেন। অর্থাৎ কারো বিবাহের প্রয়োজন হলেই ঐ মাল থেকে বিবাহের ব্যয় মিটাতেন তথা বিবাহের ব্যবস্থা করতেন।
(حَتّٰى مَضٰى لِسَبِيْلِه) এভাবেই তিনি তার পথে চলে যান।
ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ উক্ত বাক্য দ্বারা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মৃত্যুর ইঙ্গিত করা হয়েছে। অর্থাৎ তাঁর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ঐ মাল উপরে বর্ণিত পন্থায় ব্যয় করা হতো।
(ثُمَّ اقْتَطَعَهَا مَرْوَانُ) অতঃপর মারওয়ান ইবনুল হাকাম তা বিভিন্ন অংশে বণ্টন করেন। অর্থাৎ ‘উসমান -এর খিলাফাতকালে মারওয়ান ফাদাকের ভূমি বিভিন্ন ভাগে বণ্টন করে এক ভাগ তার নিজের জন্য রাখেন। আর অন্যান্য অংশ তার অনুসারীদের মাঝে বণ্টন করেন।
(ثُمَّ صَارَتْ لِعُمَرَ بْنِ عَبْدِ الْعَزِيزِ) অতঃপর খিলাফাতের দায়িত্ব অথবা ফাদাকের কর্তৃত্ব ‘উমার ইবনু ‘আবদুল ‘আযীয-এর নিকট ফিরে আসে।
(فَرَأَيْتُ أَمْرًا مَنَعَه رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ فَاطِمَةَ) অতঃপর আমি দেখলাম ফাদাক এমন একটা ভূমি যা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কন্যা ফাতিমা (রাঃ)-কেও দেননি। অর্থাৎ ফাদাকের ভূমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কারো মাঝে বণ্টন না করে তা সাধারণ মুসলিমদের কল্যাণের জন্য রেখেছিলেন।
(لَيْسَ لِىْ بِحَقٍّ) তাতে আমার কোনো অধিকার নেই। অর্থাৎ উক্ত ভূমিতে কারো কোনো ব্যক্তিগত অধিকার নেই। যদিও তিনি খলীফাহ্ হোন না কেন।
(وَإِنِّىْ أُشْهِدُكُمْ أَنِّىْ رَدَدْتُهَا عَلٰى مَا كَانَتْ) আমি সাক্ষী রাখছি যে, আমি ঐ ভূমি পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে দিলাম। অর্থাৎ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আবূ বাকর এবং ‘উমার -এর খিলাফাতকালে উক্ত ভূমি থেকে অর্জিত সম্পদ যেভাবে ব্যয় করা হতো এখনও তা সেভাবেই ব্যয় করা হবে। এতে কারো ব্যক্তিগত কোনো অধিকার নেই। (মিরকাতুল মাফাতীহ; ‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৯৭০)