পরিচ্ছেদঃ ৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - নিরাপত্তা (আশ্রয়) প্রদান
৩৯৮২-[৬] নু’আয়ম ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একদিন (নাবূওয়াতের মিথ্যা দাবিদার) মুসায়লিমাহ্ কায্যাব-এর পক্ষ হতে দু’জন ব্যক্তি তাঁর নিকট আসলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদেরকে বললেন, আল্লাহর কসম! দূতকে হত্যা করার যদি বিধান থাকত, তাহলে এখনই আমি তোমাদের শিরশ্ছেদ করতাম। (আহমাদ, আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ نُعَيْمِ بْنِ مَسْعُودٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لِرَجُلَيْنِ جَاءَا مِنْ عِنْدِ مُسَيْلِمَةَ: «أَمَّا وَاللَّهِ لَوْلَا أَنَّ الرُّسُلَ لَا تُقْتَلُ لَضَرَبْتُ أَعْنَاقَكُمَا» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَأَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: (أَنَّ رَسُوْلَ اللّٰهِ ﷺ قَالَ لِرَجُلَيْنِ) তাদের দু’ ব্যক্তির একজন হলো- ‘আবদুল্লাহ বিন নাওয়াহাহ্। দ্বিতীয় জন হলো ইবনু উসাল। (مِنْ عِنْدِ مُسَيْلِمَةَ) মুসায়লিমাহ্ হলো নাবূওয়্যাতের দাবীতে প্রসিদ্ধ মিথ্যাবাদী।
(وَاللّٰهِ لَوْلَا أَنَّ الرُّسُلَ لَا تُقْتَلُ) তূরিবিশতী বলেনঃ ওটা এ কারণে যে, তারা যেভাবে চিঠি পৌঁছিয়ে দেয়ার দায়িত্বে নিয়োজিত অনুরূপ চিঠির জওয়াব পৌঁছিয়ে দেয়াও তাদের দায়িত্ব। তাই তাদের ওপর আবশ্যক হয়ে গেছে উভয় বিষয়কে সম্পন্ন করা। তাদের আটক বা হত্যা করা হলে তারা তাদের লক্ষ্য প্রত্যাখ্যানের মাধ্যমে বিশ্বাসঘাতকতার চিহ্নে চিহ্নিত হয়ে যাবে অথচ আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষের মাঝে এ থেকে সর্বাধিক দূরে ছিলেন। তাছাড়া দূতদের আসা যাওয়ার মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কল্যাণ রয়েছে। যখনই তাদেরকে বন্দী করা, অপছন্দনীয় উদ্দেশ্য নিয়ে তাদের সম্মুখীন হওয়া বৈধ ঘোষণা করা হবে তখন তা বিরোধী দু’টি দলের মাঝে যোগাযোগের উপায় রোধ হয়ে যাবে। আর এতে রয়েছে ফিতনা এবং বিশৃঙ্খলা, যা জ্ঞানবান ব্যক্তির কাছে গোপনীয় নয়।
(لَضَرَبْتُ أَعْنَاقَكُمَا) এটা তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদেরকে কেবল এজন্য বলেছেন যে, তারা তাঁর উপস্থিতিতে বলেছে, আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুসায়লিমাহ্ আল্লাহর রসূল। একমতে বলা হয়েছে, দূতদেরকে হত্যা করা বৈধ না হওয়ার বিধান আল্লাহ তা‘আলার অর্থাৎ- ‘‘আর মুশরিকদের কেউ যদি আপনার কাছে আশ্রয় চায় তাহলে আপনি তাকে আশ্রয় দিন’’- (সূরা আত্ তাওবাহ্ ৯ : ৫); এ বাণী থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
আবূ দাঊদ-এর বর্ণনায় আছে, মুসায়লিমাহ্-এর দূতদ্বয়কে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি বল? তারা জওয়াবে বলল, «نَقُولُ كَمَا قَالَ» অর্থাৎ- আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসায়লিমার দূতদ্বয়কে মুসায়লিমাহ্ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে দূতদ্বয় বলল, মুসায়লিমাহ্ যেমন বলে আমরাও তেমন বলি। অর্থাৎ- মুসায়লিমাহ্ আল্লাহর রসূল। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপস্থিতিতে এটা বলা দূতদ্বয়ের তরফ থেকে কুফরী ও ইসলাম থেকে বেরিয়ে যাওয়া।
মুসনাদে আহমাদে আছে- নু‘আয়ম বিন মাস্‘ঊদ আল আশজা‘ঈ থেকে বর্ণিত, নিশ্চয় তিনি বলেন, মিথ্যুক মুসায়লিমার পত্র যখন পাঠ করা হয়েছে তখন আমি তা শুনেছি, সে সময় আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রেরিত দূতদ্বয়কে বললেন, ‘‘তোমরা কি বল?’’ দূতদ্বয় বলল, আমরা ঐ রকম বলি যেমন মুসায়লিমাহ্ বলেছে। অতঃপর আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘আল্লাহর শপথ! দূতদেরকে হত্যা করা যায় না। এমনটি যদি না হতো তাহলে অবশ্যই আমি তোমাদের গর্দানকে উড়িয়ে দিতাম।’’ অত্র হাদীসে ঐ ব্যাপারে প্রমাণ আছে যে, কাফিরদের থেকে প্রেরিত দূতদেরকে হত্যা করা হারাম। যদিও তারা ইমামের উপস্থিতিতে কুফরীর বাক্য উচ্চারণ করে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৭৫৮)