হাদিসটি ইমেইলে পাঠাতে অনুগ্রহ করে নিচের ফর্মটি পুরন করুন
security code
৩৯৭০

পরিচ্ছেদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - যুদ্ধবন্দীদের বিধিমালা

৩৯৭০-[১১] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মক্কার কাফিরগণ যখন বদরে তাদের বন্দীদের মুক্তির জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট মুক্তিপণ পাঠাল, তখন (রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কন্যা) যায়নাব (রাঃ) তার স্বামী আবুল ’আস-এর মুক্তির জন্যও কিছু মাল পাঠালেন। তন্মধ্যে একটি হার ছিল যার মালিক ছিলেন খাদীজাহ্ (রাঃ)। আবুল ’আস-এর সাথে যায়নাব-এর বিয়ের সময় বিবি খাদীজাহ্ উপহার স্বরূপ হারটি যায়নাব (রাঃ)-কে দিয়েছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হারটি দেখে (বিবি খাদীজার স্মৃতিচারণে) অত্যন্ত আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লেন এবং সাহাবীগণকে বললেন, যদি তোমরা সমীচীন মনে কর তাহলে যায়নাবের কয়েদি (আবুল ’আস)-কে ছেড়ে দাও এবং যায়নাব যে সমস্ত ধন-সম্পদ পাঠিয়েছে তাও তাকে ফেরত দিয়ে দাও। এতে সাহাবীগণ সম্মতি প্রকাশ করলে, আবুল ’আস মুক্ত হয়ে গেল।

অবশ্য তাকে মুক্তি দেয়ার সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নিকট হতে এ অঙ্গীকার নিয়েছিলেন যে, যায়নাবকে মদীনায় তাঁর নিকট আসার পথে যেন বাধা সৃষ্টি না করে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যায়দ ইবনু হারিসাহ্ ও একজন আনসারীকে মক্কায় পাঠালেন এবং তাদেরকে বলে দিলেন, তোমরা মক্কার অনতিদূরে (প্রায় আট কিলোমিটার দূরে তান্’ঈম-এর নিকটবর্তী) ’’ইয়া’জাজ’’ নামক স্থানে অবস্থান করবে। যায়নাব সে পর্যন্ত এসে পৌঁছলে তোমরা উভয়ে তার সঙ্গী হবে এবং তাকে মদীনায় নিয়ে আসবে। (আহমাদ, আবূ দাঊদ)[1]

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: لَمَّا بَعَثَ أَهْلُ مَكَّةَ فِي فِدَاءِ أُسَرَائِهِمْ بَعَثَتْ زَيْنَبُ فِي فِدَاءِ أَبِي الْعَاصِ بِمَالٍ وَبَعَثَتْ فِيهِ بِقِلَادَةٍ لَهَا كَانَتْ عِنْدَ خَدِيجَةَ أَدْخَلَتْهَا بِهَا عَلَى أَبِي الْعَاصِ فَلَمَّا رَآهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَقَّ لَهَا رِقَّةً شَدِيدَةً وَقَالَ: «إِنْ رَأَيْتُمْ أَنْ تُطْلِقُوا لَهَا أَسِيرَهَا وَتَرُدُّوا عَلَيْهَا الَّذِي لَهَا» فَقَالُوا: نَعَمْ وَكَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَخَذَ عَلَيْهِ أَنْ يُخَلِّيَ سَبِيلَ زَيْنَبَ إِلَيْهِ وَبَعَثَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ زَيْدَ بْنَ حَارِثَةَ وَرَجُلًا مِنَ الْأَنْصَارِ فَقَالَ: «كونا ببطنِ يأحج حَتَّى تَمُرَّ بِكُمَا زَيْنَبُ فَتَصْحَبَاهَا حَتَّى تَأْتِيَا بهَا» . رَوَاهُ أَحْمد وَأَبُو دَاوُد

ব্যাখ্যা: (لَمَّا بَعَثَ أَهْلُ مَكَّةَ فِىْ فِدَاءِ أُسَرَائِهِمْ) অর্থাৎ- বদরের দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাদের ওপর বিজয় লাভ করলেন, অতঃপর তাদের কতককে হত্যা করলেন এবং কতককে বন্দী করলেন, আর তাদের থেকে মুক্তিপণ দাবী করলেন।

(رَقَّ لَهَا رِقَّةً شَدِيْدَةً) অর্থাৎ- যায়নাব-এর দূরত্ব ও একাকীত্বের কারণে তার প্রতি সদয় হলেন। খাদীজার যুগ ও তার সঙ্গীর কথা স্মরণ করলেন, কেননা হারটি খাদীজার গলায় ছিল।

(وَكَانَ النَّبِىُّ ﷺ أَخَذَ عَلَيْهِ أَنْ يُخَلِّىَ سَبِيلَ زَيْنَبَ إِلَيْهِ) অর্থাৎ- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবুল ‘আস-এর কাছ থেকে যায়নাব-কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে পাঠাতে এবং মদীনাতে হিজরত করার ব্যাপারে তাকে অনুমতি দিতে অঙ্গীকার গ্রহণ করলেন। কাযী বলেনঃ যায়নাব ছিল আবুল ‘আস-এর অধীনে, নবূওয়াতের পূর্বে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যায়নাব-কে আবুল ‘আস-এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করেছিলেন।

(بِبَطْنِ يَأْجَجَ) তান্‘ঈম-এর কাছাকাছি একটি স্থান। একমতে বলা হয়েছে, মসজিদে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর সামনে একটি স্থান। কাযী বলেনঃ হারাম অঞ্চলের আশ-পাশের উপত্যকাসমূহের অন্তর্ভুক্ত একটি উপত্যকা। আর উপত্যকা বলতে জমিনের নীচ স্থান। সীবাওয়াইহি বলেনঃ এটি মক্কার একটি স্থান।

(فَتَصْحَبَاهَا حَتّٰى تَأْتِيَا بهَا) অর্থাৎ- তাকে মদীনাতে সঙ্গে করে নিয়ে আসবে। আশরাফ বলেনঃ অত্র হাদীসে প্রমাণ আছে- কোনো মুক্তিপণ গ্রহণ ছাড়াই বন্দীর প্রতি দয়া করা বৈধ। আর ঐ ব্যাপারে প্রমাণ আছে যে, ফিতনার আশঙ্কা না থাকলে গায়র মাহরাম মহিলার সাথে পথে দুই বা ততোধিক পুরুষ প্রেরণ করার অধিকার ইমামে আ‘যামের আছে। কারী বলেনঃ আমি বলব, মহিলার সাথে মাহরাম পুরুষ থাকা অথবা নির্ভরযোগ্য মহিলা থাকা বৈধ হওয়ার কারণে দলীল গ্রহণের বিষয়টি বিতর্কিত। আর এটা মাহরাম ছাড়া সফর করা নিষিদ্ধ হওয়ার পূর্বের ঘটনা।

ইসাবাহ্ গ্রন্থে আছে, আবুল ‘আস হলো- রবী‘ বিন ‘আবদুল ‘উয্যা বিন ‘আব্দ শামস্ বিন ‘আব্দ মানাফ। তার মা হালাহ্ বিনতু খুওয়াইলিদ। আল্লাহর রসূলের কন্যা যায়নাব ছিল আবুল ‘আস বিন রবী‘-এর অধীনে। অতঃপর তিনি হিজরত করলেন আর আবুল ‘আস তার দীনের উপর থেকে গেল। ঐকমত্য পোষণ করা হয়েছে যে, আবুল ‘আস ব্যবসার উদ্দেশে শামের দিকে বের হলো, অতঃপর যখন সে মদীনার নিকটবর্তী হলো তখন কতিপয় মুসলিম তার দিকে বেরিয়ে যেতে, অতঃপর তার সাথে যা আছে তা গ্রহণ করতে এবং তাকে হত্যা করতে ইচ্ছা করল। অতঃপর এ সংবাদ যায়নাব-এর কাছে পৌঁছলে যায়নাব বলল, হে আল্লাহর রসূল! মুসলিম অঙ্গীকার কি এক অঙ্গীকার নয়? আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। তখন যায়নাব বললেন, আমি সাক্ষ্য দিলাম যে, আমি আবুল ‘আসকে আশ্রয় দিয়েছি। অতঃপর আল্লাহর রসূলের সাহাবীগণ তার কাছে গিয়ে তাকে বলল, হে আবুল ‘আস! তুমি কুরায়শ বংশের সম্মানিত স্থানে অবস্থান করছ, তুমি আল্লাহর রসূলের চাচাতো ভাই এখন তোমার কি ইসলাম গ্রহণের চিন্তা-ভাবনা আছে? ইসলাম গ্রহণ করলে তুমি মক্কাবাসীদের সম্পদ থেকে তোমার সাথে যা আছে তুমি তা গনীমাত হিসেবে লাভ করবে। আবুল ‘আস বলল, তোমরা যে ব্যাপারে আমাকে আদেশ করছ তা কতই না নিকৃষ্ট, তুচ্ছ বস্তুর কারণে আমার দীনকে বর্জন করতে, এ বলে আবুল ‘আস চলতে থাকল। পরিশেষে মক্কাতে আগমন করে প্রত্যেক অধিকারীর কাছে তার অধিকার পৌঁছিয়ে দিল। অতঃপর দাঁড়িয়ে বলল, হে মক্কাবাসী! আমি কি আমার দায়িত্ব পূর্ণ করেছি। তারা বলল, হে আল্লাহর রসূল! হ্যাঁ। তখন আবুল ‘আস বলল, নিঃসন্দেহে আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া ‘ইবাদাত পাওয়ার যোগ্য কেউ নেই, আর মুহাম্মাদ আল্লাহর রসূল! অতঃপর তিনি হিজরত করে মদীনায় আগমন করলে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথম বিবাহ অনুযায়ী যায়নাব-কে তার কাছে ফিরিয়ে দিলেন (মিরকাতুল মাফাতীহ)