পরিচ্ছেদঃ ১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - জনগণের প্রতি শাসকের সহনশীলতা প্রদর্শন করা
৩৭২৮-[৭] ’আমর ইবনু মুররাহ্(রহঃ) হতে বর্ণিত। একদিন তিনি মু’আবিয়াহ্ (রাঃ)-কে বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা মুসলিমদের মধ্যে যে ব্যক্তিকে কোনো কাজের দায়িত্বে নিযুক্ত করেন, আর সে তাদের প্রয়োজন, চাহিদা ও অভাব-অভিযোগের প্রতি পরোয়া করে না (গাফিল থাকে); আল্লাহ তা’আলাও তার প্রয়োজন, চাহিদা ও অভাব-অভিযোগ (মিটানো) থেকে আড়ালে থাকেন। অতঃপর মু’আবিয়াহ্ (রাঃ) মানুষের প্রয়োজন ও অভাব-অভিযোগ শোনার জন্য একজন লোক নিয়োগ করেন। (আবূ দাঊদ ও তিরমিযী)[1]
তিরমিযী’র অপর এক বর্ণনা ও আহমাদ-এর বর্ণনাতে আছে, আল্লাহ তা’আলা ঐ শ্রেণীর লোকের চাহিদা, প্রয়োজন ও অভাব মোচনের ব্যাপারে আকাশমন্ডলীর সমস্ত দরজা বন্ধ করে দিবেন।
عَنْ عَمْرِو بْنِ مُرَّةَ أَنَّهُ قَالَ لِمُعَاوِيَةَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: « (مَنْ وَلَّاهُ اللَّهُ شَيْئًا مِنْ أَمْرِ الْمُسْلِمِينَ فَاحْتَجَبَ دُونَ حَاجَتِهِمْ وَخَلَّتِهِمْ وَفَقْرِهِمُ احْتَجَبَ اللَّهُ دُونَ حَاجَتِهِ وَخَلَّتِهِ وَفَقْرِهِ» . فَجَعَلَ مُعَاوِيَةُ رَجُلًا عَلَى حَوَائِجِ النَّاسِ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالتِّرْمِذِيُّ وَفِي رِوَايَةٍ لَهُ وَلِأَحْمَدَ: «أَغْلَقَ اللَّهُ لَهُ أَبْوَابَ السَّمَاءِ دُونَ خَلَّتِهِ وَحَاجَّتِهِ وَمَسْكَنَتِهِ»
ব্যাখ্যা: (احْتَجَبَ اللّٰهُ دُوْنَ حَاجَتِه وَخَلَّتِه وَفَقْرِه) অর্থাৎ যদি কোনো নেতা তার অধিনস্থদের খোঁজখবর না নেয় তাহলে আল্লাহ তা‘আলাও তাকে তার ধর্মীয় এবং পার্থিব চাওয়া-পাওয়া পূর্ণ করবেন না, ফলে সে তার জরুরী প্রয়োজনগুলো পূর্ণ করার কোনো পথ খুঁজে পাবে না। এ বিষয়টির স্বপক্ষে আরো একটি হাদীস রয়েছে যা ইমাম ত্ববারানী ইবনু ‘উমার থেকে মারফূ‘ সূত্রে বর্ণনা করেছেন, مَنْ وَلِيَ شَيْئًا مِنْ أُمُورِ الْمُسْلِمِينَ لَمْ يَنْظُرِ اللّٰهُ فِي حَاجَتِهِ حَتّٰى يَنْظُرَ فِي حَوَائِجِهِمْ অর্থাৎ যে কেউ মুসলিমদের কোনো বিষয়ের দায়িত্বশীল হবেন আল্লাহ তার প্রয়োজন মিটাবেন না যতক্ষণ পর্যন্ত সে তাদের প্রয়োজন না মিটায়।
কাযী ‘ইয়ায বলেনঃ ‘নেতা তার অধিনস্থদের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে’ এ কথার অর্থ হলো যে গরীব, দুস্থ, নিঃস্বরা তার নিকট তাদের আবেদন নিয়ে আসতে চাইলে সে আসতে দিবে না বরং বাধার সৃষ্টি করবে এবং তাদের আবেদন মঞ্জুর না করে কঠিন করবে। ফলে আল্লাহ তা‘আলা ও তার জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবেন-এর অর্থ হলো আল্লাহ তার দু‘আ কবুল করবেন না তার সব স্বপ্ন ভেঙ্গে দিবেন।
হাদীসে উল্লেখিত তিনটি শব্দ الفقر، الخلة، الحاجة এ তিনটি শব্দের অর্থ প্রায় কাছাকাছি একটু সূক্ষ্ম পার্থক্য আর তা হলো حاجة বলা হয় যা প্রয়োজন তবে তা না হলে কোনো কাজই সম্ভব নয় এমন পর্যায়ভুক্ত না, الخلة-ও ঠিক তাই তবে একটু পার্থক্য হলো মাঝে মধ্যে الخلة আবশ্যকীয় ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় অর্থাৎ তা অর্জিত না হলে জীবনধারণই সম্ভব নয়। আর الفقر হচ্ছে যা অতি আবশ্যক অর্থাৎ তা না হলে জীবনধারণই সম্ভব নয়, এ শব্দটি فقاره শব্দ থেকে গৃহীত আর فقار অর্থ হলো মেরুদণ্ডের হাড়। মেরুদণ্ডবিহীন যেমন জীবন চলে না তেমনি فقر হচ্ছে এমন প্রয়োজন যা না হলে জীবন চলে না। এজন্য ফাকীরের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে الَّذِي لَا شَيْءَ لَه أَصْلا অর্থাৎ মূলত যার কিছু নেই। আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাকীরত্ব থেকে আশ্রয় চেয়েছেন। তবে এখানে সবচেয়ে স্পষ্ট কথা হলো শব্দ তিনটি «أَلْفَاظٌ مُتَقَارِبَةٌ» তথা পরস্পর নিকটবর্তী অর্থজ্ঞাপক শব্দাবলীর অন্তর্গত। বিষয়টিকে জোড়ালোভাবে তুলে ধরার জন্য এরূপ একই অর্থজ্ঞাপক একাধিক শব্দের প্রয়োগ করা হয়েছে। (‘আওনুল মা‘বুদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৯৪৬; তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১৩৩২; মিরকাতুল মাফাতীহ)