পরিচ্ছেদঃ ১১৬. রাফ‘উল ইয়াদাইন (সালাতে দু’ হাত উত্তোলন)
৭২১। সালিম (রহঃ) থেকে তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সালাত আরম্ভকালে নিজের দু’ হাত স্বীয় কাঁধ পর্যন্ত উঠাতে দেখেছি। অনুরূপভাবে রুকু’তে গমনকালে এবং রুকু’ থেকে মাথা উঠানোর পরও তাঁকে হাত উঠাতে দেখেছি। তবে তিনি দু’ সিজদার মাঝে হাত উঠাতেন না।[1]
সহীহ : বুখারী ও মুসলিম।
[1] বুখারী (অধ্যায়ঃ আযান, অনুঃ প্রথম তাকবীরে দু’ হাত উত্তোলন, হাঃ ৭৩৫), মুসলিম (অধ্যায়ঃ সালাত, অনুঃ কাঁধ পর্যন্ত হাত উঠানো মুস্তাহাব) উভয়ে ইবনু শিহাব সূত্রে।
-
মুখে নিয়্যাত পাঠ বিদ‘আতঃ
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকবীরে তাহরীমা ‘আল্লাহু আকবার’ বলে দু’ হাত উত্তোলন করে সালাত আরম্ভ করতেন। এর পূর্বে মুখে কোনে নিয়্যাতনামা পাঠ করতেন না। সুতরাং সালাত আরম্ভের পূর্বে মুখে উচ্চারণ করে নিয়্যাত পাঠ করা বিদ‘আত। নিম্নে এ বিষয়ে সংক্ষেপে আলোকপাত করা হলোঃ
১। মোল্লা ‘আলী ক্বারী হানাফী (রহঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ত্রিশ হাজার (ওয়াক্ত) সালাত আদায় করেছেন। তথাপি তাঁর থেকে এ কথা বর্ণিত নেই যে, আমি অমুক অমুক ওয়াক্ত সালাতে নিয়্যাত করছি। সুতরাং তাঁর এ নিয়্যাত না করাটাই সুন্নাত। যেমন তাঁর কোনো কাজ করাটা সুন্নাত। (জেনে রাখুন) শব্দ উচ্চারণ করে নিয়্যাত করা জায়িয নয়। কারণ এটি বিদ‘আত। সুতরাং যে কাজ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেননি তা যে করে সে বিদ‘আতী। (দেখুন, মিরকাত ১/৩৬, ৩৭)।
২। আব্দুল হাই লাখনৌভী (রহঃ) লিখেছেনঃ মুখে নিয়্যাত পাঠ করা বিদ‘আত। (দেখুন, সিরাতুল মুস্তাক্বীম)।
৩। আল্লামা ইবনুল হুমাম হানাফী (রহঃ) বলেনঃ হাদীসের কিছু হাফিয বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সহীহ ও যঈফ কোনো সনদেও এ কথা প্রমাণিত নেই য, তিনি সালাত আরম্ভ করার সময় বলতেন যে, আমি এই এই সালাত আদায় করছি। কোনো সাহাবী এবং তাবেঈ থেকেও প্রমাণিত নেই। বরং এ কথা বর্ণিত আছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আরম্ভের সময় কেবল তাক্ববীর বলতেন। তাই মুখে নিয়্যাত পাঠ করা বিদ‘আত। (দেখুন, ফাতহুল ক্বাদীর ১/৩৮৬, কাবীরী ২৫২ পৃঃ)।
৪। আব্দুল হাক্ব দেহলৌভী হানাফী (রহঃ) লিখেছেনঃ মুখে নিয়্যাত পাঠ করা না রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে, না সাহাবায়ি কিরাম থেকে, না তাবেঈ থেকে, কারো থেকেই কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাতে দাঁড়াতেন তখন শুধু আল্লাহু আকবার বলতেন। এর পূর্বে মুখে নিয়্যাত করার কোনো শব্দ হাদীসে বর্ণিত হয়নি। সেজন্য মুহাদ্দিসগণ মুখে নিয়্যাত পাঠ করাকে বিদ‘আত ও মাকরূহ বলেছেন। (দেখুন, ফাতহুল ক্বাদীর, মাদারিজুন নাবুওয়্যাত)।
৫। আল্লামা শামী হানাফী (রহঃ) বলেনঃ হিলয়্যাহতে একটা বাড়ী আছে যে, চার ইমাম থেকেও মুখে নিয়্যাত করা প্রমাণিত নেই- (দেখুন শামী ১/৩৮৬)। হানাফী ফিক্বাহ মুনয়্যাহতেও ঐরূপ আছে। (বাহরূর রায়িক ১/২৭৮)।
৬। আশরাফ আলী থানভী (রহঃ) লিখেছেনঃ মুসল্লী যে সালাত আদায় করবে তা স্থির সংকল্প করে নিবে। মুখে নিয়্যাত পাঠ করা কোনই আবশ্যকতা নেই। বরং মনে মনে একটু চিন্তা করে নেয়াই যথেষ্ট যে, আমি এই (উদাহরণস্বরূপ) যুহরের সালাত আদায় করছি। এতটুকু মনে নিয়ে আল্লাহু আকবার বলে হাত বাঁধলেই হয়ে যাবে। আর জনসমাজের যেমন নিয়্যাতনামা প্রচলিত আছে তা পাঠ করার কোনই আবশ্যকতা নেই। (দেখুন, বেহেশতি জেওর ২/১৭-১৮)।
৭। কিরামাত আলী জৌনপুরী হানাফী সাহেব লিখেছেনঃ অন্তরেই সালাতের নিয়্যাত করে নিবে অর্থাৎ মনে প্রাণে বুঝবে যে, আমি (যেমন ফজরের ফারয সালাদ আদায় করছি) এ জন্য মুখে নিয়্যাত পাঠের কোনই প্রয়োজন নেই। (দেখুন, রাহেনাজাত, পৃঃ ৯)।
৮। হানাফী ফিক্বাহ দুররে মুখতারে রয়েছেঃ নিয়্যাতনামা অর্থাৎ ‘নাওয়াতুন আন...’ পাঠ সম্পর্কে সহীহ হাদীস তো দূরের কথা কোনো যঈফ হাদীসেও খুঁজে পাওয়া যায় না। বিশিষ্ট চারজন ইমামের কোনো একজনও নিয়্যাতনামা পাঠ দ্বারা সালাত আদায় করতেন না। সারকথা হচ্ছে, হাদীস ও ফিক্বাহ শাস্ত্র মনস্থ করে এটাই জানা যায় যে, নিয়্যাত মুখে উচ্চারণ করার বস্তু নয়। নিয়্যাতের নামে মুখে মুখে কিছু বলা সুন্নাতের বিপরীত, কাজেই মুখে নিয়্যাত উচ্চারণ করা বিদ‘আত। (দেখুন, দুররে মুখতার ১/৪৯, হিদায়া ১/২২)।
সম্ভবতঃ এ কারণেই হানাফী ফিক্বাহর কোনো গ্রন্থে যেমন, হিদায়া, শারহু বিকায়া, কুদরি, ফাতহুল ক্বাদীর, নুরুল ইযাহ, দুররে মুখতার, মারাকিল ফারাহ, আল জাওহারুল নাইযিরাহ. রদ্দুর মুহতার, বাহরূর রায়িক, মুনয়্যাতুল মুসল্লী, গুনয়্যাতুল মুসতামলী, কানযুদ দাক্বায়িক, হাশিয়াহ, তাহতাভী প্রভৃতিতে সালাতের নিয়্যাতের কোন শব্দই খুঁজে পাওয়া যায় না। (দেখুন, সালাতে মুস্তাফা)।
৯। হাম্বলী ও মালিকী মাযহাবে ফাতাওয়াঃ মালিকী মাযহাব অনুসারীগণের মতে মুখে উচ্চারণ করে এরূপ নিয়্যাত করা মাকরূহ এবং হাম্বলীদের মতে বিদ‘আত। (দেখুন, মিরকাত ১/৩৬)।
১০। হাফিয ইবনুল কাইয়্যিম (রহঃ) বলেনঃ নিয়্যাত হচ্ছে সংকল্প করা। এর জায়গা মন ও হৃদয় যার সাথে মুখের কোনো সম্পর্ক নেই। এ জন্যই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর কোনো সাহাবী থেকেও নিয়্যাতের ব্যাপারে কোনো শব্দ পাওয়া যায় না। পাক হওয়ার এবং সালাত শুরু করার সময় নিয়্যাতের নামে যেসব শব্দ তৈরী করা হয়েছে তা হলো খুতে খুতে লোকদের ধোঁকা দেয়ার জন্য শায়ত্বানের কুমন্ত্রণা। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাতে দাঁড়াতেন তখন বলতেন ‘আল্লাহু আকবার’ এবং তার আগে কিছু বলতেন না। নিয়্যাতের শব্দ উচ্চারণ করতেন না। এ কথাও বলতেন না যে, অমুক সালাত পড়ছি ক্বিবলাহর দিকে মুখ করে, চার রাক‘আত ইমাম হয়ে কিংবা মুক্তাদী হয়ে। এ কথাও না যে, এটা আদায় করছি বা কাযা করছি কিংবা ফারজ সালাত পড়ছি। সুতরাং এসব বিদ‘আত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিশুদ্ধ সনদে কিংবা দুর্বল সনদে অথবা মুসনাদ মুরসাল সনদেও এরূপ (নিয়্যাতনামা) কখনো বর্ণিত হয়নি। তাঁর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো সাহাবী থেকেও এর কোনো প্রমাণ নেই। কোনো তাবেঈ এবং চার ইমামও (নিয়্যাতনামা) পড়াকে পছন্দ করেননি। (দেখুন, ইগাসাতুল লুহফান ১/১৩৬, যাদুল মা‘আদ ১/৫১)।
باب رَفْعِ الْيَدَيْنِ فِي الصَّلَاةِ
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ حَنْبَلٍ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ سَالِمٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ رَأَيْتُ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا اسْتَفْتَحَ الصَّلَاةَ رَفَعَ يَدَيْهِ حَتَّى يُحَاذِيَ مَنْكِبَيْهِ وَإِذَا أَرَادَ أَنْ يَرْكَعَ وَبَعْدَ مَا يَرْفَعُ رَأْسَهُ مِنَ الرُّكُوعِ - وَقَالَ سُفْيَانُ مَرَّةً وَإِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ . وَأَكْثَرُ مَا كَانَ يَقُولُ وَبَعْدَ مَا يَرْفَعُ رَأْسَهُ مِنَ الرُّكُوعِ - وَلَا يَرْفَعُ بَيْنَ السَّجْدَتَيْنِ .
- صحيح : ق