পরিচ্ছেদঃ ঝাড়ফুঁক ও তাবীয সংক্রান্ত হাদীস

(৩৭৯১) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কিছু সাহাবা আরবের কোন এক বসতিতে এলেন। কিন্তু সে খানকার বাসিন্দারা তাঁদেরকে মেহমানরূপে বরণ করল না (এবং কোন খাদ্যও পেশ করল না)। অতঃপর তাঁরা সেখানে থাকা অবস্থায় তাদের সর্দারকে (বিছুতে) দংশন করল। তারা বলল, ’তোমাদের কাছে কি কোন ওষুধ অথবা ঝাড়ফুঁককারী (ওঝা) আছে?’ তাঁরা বললেন, ’তোমরা আমাদেরকে মেহমানরূপে বরণ করলে না। সুতরাং আমরাও পারিশ্রমিক ছাড়া (ঝাড়ফুঁক) করব না।’ ফলে তারা এক পাল ছাগল পারিশ্রমিক নির্ধারিত করল।

একজন সাহাবী উম্মুল ক্বুরআন (সূরা ফাতিহা) পড়তে লাগলেন এবং থুথু জমা ক’রে (দংশনের জায়গায়) দিতে লাগলেন। সর্দার সুস্থ হয়ে উঠল। তারা ছাগলের পাল হাজির করল। তাঁরা বললেন, ’আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা না ক’রে গ্রহণ করব না।’ সুতরাং তাঁরা তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি হেসে বললেন, ’তোমাকে কিসে জানাল যে, ওটি ঝাড়ফুঁকের মন্ত্র! ছাগলগুলি গ্রহণ কর এবং আমার জন্য একটি ভাগ রেখো।’ (বুখারী ৫৭৩৬)

অন্য এক বর্ণনায় আছে, সাহাবী গিয়ে ’আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন’ পড়তে লাগলেন। ফলে সে যেন বাঁধন থেকে মুক্ত হল এবং সুস্থ হয়ে চলাফিরা করতে লাগল।

এই বর্ণনায় আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদেরকে বললেন, ’তোমরা ঠিক করেছ।’ (বুখারী ২২৭৬)

এক বর্ণনায় আছে, ’তোমরা যে সব জিনিসের উপর পারিশ্রমিক গ্রহণ কর,তার মধ্যে আল্লাহর কিতাব সবচেয়ে বেশি হকদার।’ (বুখারী ৫৭৩৭)

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ نَاسًا مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ ﷺ أَتَوْا عَلَى حَيٍّ مِنْ أَحْيَاءِ الْعَرَبِ فَلَمْ يَقْرُوهُمْ فَبَيْنَمَا هُمْ كَذٰلِكَ إِذْ لُدِغَ سَيِّدُ أُولَئِكَ فَقَالُوا هَلْ مَعَكُمْ مِنْ دَوَاءٍ أَوْ رَاقٍ فَقَالُوا إِنَّكُمْ لَمْ تَقْرُونَا وَلَا نَفْعَلُ حَتّٰـى تَجْعَلُوا لَنَا جُعْلًا فَجَعَلُوا لَهُمْ قَطِيعًا مِنْ الشَّاءِ فَجَعَلَ يَقْرَأُ بِأُمِّ الْقُرْآنِ وَيَجْمَعُ بُزَاقَهُ وَيَتْفِلُ فَبَرَأَ فَأَتَوْا بِالشَّاءِ فَقَالُوا لَا نَأْخُذُهُ حَتّٰـى نَسْأَلَ النَّبِيَّ ﷺ فَسَأَلُوهُ فَضَحِكَ وَقَالَ وَمَا أَدْرَاكَ أَنَّهَا رُقْيَةٌ خُذُوهَا وَاضْرِبُوا لِي بِسَهْمٍ

عن ابي سعيد الخدري رضي الله عنه ان ناسا من اصحاب النبي ﷺ اتوا على حي من احياء العرب فلم يقروهم فبينما هم كذلك اذ لدغ سيد اولىك فقالوا هل معكم من دواء او راق فقالوا انكم لم تقرونا ولا نفعل حتـى تجعلوا لنا جعلا فجعلوا لهم قطيعا من الشاء فجعل يقرا بام القران ويجمع بزاقه ويتفل فبرا فاتوا بالشاء فقالوا لا ناخذه حتـى نسال النبي ﷺ فسالوه فضحك وقال وما ادراك انها رقية خذوها واضربوا لي بسهم

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদীস সম্ভার
২৯/ দু‘আ ও যিকর

পরিচ্ছেদঃ ঝাড়ফুঁক ও তাবীয সংক্রান্ত হাদীস

(৩৭৯২) ঈসা বিন আব্দুর রহমান তাবেঈ বলেন, আমি সাহাবী আবূ মা’বাদ জুহানীর নিকট গেলাম। তখন তাঁর মুখমণ্ডল ও দেহে ফুলে ওঠা লাল লাল (একটা রোগ) হয়েছিল। আমি বললাম, ’আপনি কোন তাবীয বাঁধেন না কেন?’ তিনি বললেন, ’নাঊযু বিল্লাহি মিন যালিক (তার থেকে আল্লাহর পানাহ)! মৃত্যু তার চেয়ে বেশি নিকটবর্তী। আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি যা লটকাবে (বা দেহে ধারণ করবে), তাকে তার দিকেই সঁপে দেওয়া হবে।

عَنْ عِيسَى بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِى لَيْلَى قَالَ دَخَلْتُ عَلَى عَبْدِ اللهِ بْنِ عُكَيْمٍ أَبِى مَعْبَدٍ الْجُهَنِىِّ أَعُودُهُ وَبِهِ حُمْرَةٌ فَقُلْنَا أَلاَ تُعَلِّقُ شَيْئًا قَالَ الْمَوْتُ أَقْرَبُ مِنْ ذٰلِكَ قَالَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ تَعَلَّقَ شَيْئًا وُكِلَ إِلَيْهِ

عن عيسى بن عبد الرحمن بن ابى ليلى قال دخلت على عبد الله بن عكيم ابى معبد الجهنى اعوده وبه حمرة فقلنا الا تعلق شيىا قال الموت اقرب من ذلك قال النبى صلى الله عليه وسلم من تعلق شيىا وكل اليه

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদীস সম্ভার
২৯/ দু‘আ ও যিকর

পরিচ্ছেদঃ ঝাড়ফুঁক ও তাবীয সংক্রান্ত হাদীস

(৩৭৯৩) উক্ববাহ বিন আমের (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট (বাইআত করার উদ্দেশ্যে) ১০ জন লোক উপস্থিত হল। তিনি ন’জনের নিকট থেকে বাইয়াত নিলেন। আর মাত্র একজন লোকের নিকট হতে বাইআত নিলেন না। সকলে বলল, ’হে আল্লাহর রসূল! আপনি ন’জনের বাইআত গ্রহণ করলেন, কিন্তু এর করলেন না কেন?’ উত্তরে তিনি বললেন, ওর দেহে কবচ রয়েছে তাই। অতঃপর সে নিজ হাতে তা ছিঁড়ে ফেলল। সুতরাং তার নিকট থেকেও বাইআত নিলেন এবং বললেন, যে ব্যক্তি কবচ লটকায়, সে ব্যক্তি শিরক করে।

عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ الْجُهَنِيِّ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ أَقْبَلَ إِلَيْهِ رَهْطٌ فَبَايَعَ تِسْعَةً وَأَمْسَكَ عَنْ وَاحِدٍ فَقَالُوا يَا رَسُوْلَ اللهِ بَايَعْتَ تِسْعَةً وَتَرَكْتَ هٰذَا قَالَ إِنَّ عَلَيْهِ تَمِيمَةً فَأَدْخَلَ يَدَهُ فَقَطَعَهَا فَبَايَعَهُ وَقَالَ مَنْ عَلَّقَ تَمِيمَةً فَقَدْ أَشْرَكَ

عن عقبة بن عامر الجهني ان رسول الله ﷺ اقبل اليه رهط فبايع تسعة وامسك عن واحد فقالوا يا رسول الله بايعت تسعة وتركت هذا قال ان عليه تميمة فادخل يده فقطعها فبايعه وقال من علق تميمة فقد اشرك

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদীস সম্ভার
২৯/ দু‘আ ও যিকর

পরিচ্ছেদঃ ঝাড়ফুঁক ও তাবীয সংক্রান্ত হাদীস

(৩৭৯৪) ইবনে মসঊদ (রাঃ) এর পত্নী যয়নাব (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, ’’এক বুড়ি আমাদের বাড়ি আসা-যাওয়া করত এবং সে বাতবিসর্পরোগে ঝাড়-ফুঁক করত। আমাদের ছিল লম্বা খুরো-বিশিষ্ট খাট। (স্বামী) আব্দুল্লাহ বিন মসঊদ যখন বাড়িতে প্রবেশ করতেন, তখন গলা-সাড়া বা কোন আওয়াজ দিতেন। একদিন তিনি বাড়িতে এলেন। (এবং অভ্যাসমত বাড়ি প্রবেশের সময় গলা-সাড়া দিলেন।) বুড়ি তাঁর আওয়াজ শোনামাত্র লুকিয়ে গেল। এরপর তিনি আমার পাশে এসে বসলেন। তিনি আমার দেহ স্পর্শ করলে (গলায় ঝুলানো মন্ত্র-পড়া) সুতো তাঁর হাতে পড়ল। তিনি বলে উঠলেন, ’এটা কি?’ আমি বললাম, ’সুতো-পড়া; বাতবিসর্পরোগের জন্য ওতে মন্ত্র পড়া হয়েছে।’ একথা শুনে তিনি তা টেনে ছিঁড়ে ফেলে দিলেন এবং বললেন, ’ইবনে মসঊদের বংশধর তো শিরক থেকে মুক্ত। আমি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, ’’নিশ্চয়ই মন্ত্র-তন্ত্র, তাবীয-কবচ এবং যোগ-যাদু ব্যবহার করা শিরক।’’

যয়নাব (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, ’কিন্তু একদা আমি বাইরে বের হলাম। হঠাৎ করে আমাকে অমুক লোক দেখে নিল। অতঃপর আমার যে চোখটা ঐ লোকটির দিকে ছিল সেই চোখটায় পানি ঝরতে লাগল। এরপর যখনই আমি ঐ চোখে মন্ত্র পড়াই, তখনই পানি ঝরা বন্ধ হয়ে যায়। আর যখনই না পড়াই, তখনই পানি ঝরতে শুরু করে। (অতএব বুঝা গেল যে, মন্ত্রের প্রভাব আছে।)’

ইবনে মসঊদ (রাঃ) বললেন, ’’ওটা তো শয়তানের কারসাজি। যখন তুমি (মন্ত্র পড়িয়ে) ওর আনুগত্য কর, তখন সে ছেড়ে দেয় (এবং তোমার চোখে পানি আসে না)। আর যখনই তুমি তার আনুগত্য কর না, তখনই সে নিজ আঙ্গুল দ্বারা তোমার চোখে খোঁচা মারে (এবং তার ফলে তাতে পানি আসে; যাতে তুমি মন্ত্রকে বিশ্বাস কর এবং শির্কে লিপ্ত হয়ে পড়)। তবে যদি তুমি সেই কাজ করতে, যা আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেছেন, তাহলে তা তোমার জন্য উত্তম ও মঙ্গল হত এবং অধিকরূপে আরোগ্য লাভ করতে। আর তা এই যে, চোখে পানি ছিটাতে এবং বলতে,

أَذْهِبِ الْبَأْسَ رَبَّ النَّاسِ اِشْفِ أَنْتَ الشَّافِـيْ لَا شِفَاءَ إِلاَّ شِفَاؤُكَ شِفَاءً لَّا يُغَادِرُ سَقَمًا

উচ্চারণ: আযহিবিল বা’সা রব্বান-নাসি ইশফি আন্তাশ্ শাফী লা- শিফায়া ইল্লা শিফাউক শিফায়াল্ লাইউগদিরু সাক্বমা।

عَنِ ابْنِ أُخْتِ زَيْنَبَ امْرَأَةِ عَبْدِ اللَّهِ، عَنْ زَيْنَبَ قَالَتْ: كَانَتْ عَجُوزٌ تَدْخُلُ عَلَيْنَا تَرْقِي مِنَ الْحُمْرَةِ، وَكَانَ لَنَا سَرِيرٌ طَوِيلُ الْقَوَائِمِ، وَكَانَ عَبْدُ اللَّهِ إِذَا دَخَلَ تَنَحْنَحَ وَصَوَّتَ، فَدَخَلَ يَوْمًا فَلَمَّا سَمِعَتْ صَوْتَهُ احْتَجَبَتْ مِنْهُ، فَجَاءَ فَجَلَسَ إِلَى جَانِبِي فَمَسَّنِي فَوَجَدَ مَسَّ خَيْطٍ فَقَالَ: مَا هَذَا؟ فَقُلْتُ: رُقًى لِي فِيهِ مِنَ الْحُمْرَةِ فَجَذَبَهُ وَقَطَعَهُ فَرَمَى بِهِ وَقَالَ: لَقَدْ أَصْبَحَ آلُ عَبْدِ اللَّهِ أَغْنِيَاءَ عَنِ الشِّرْكِ، سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: إِنَّ الرُّقٰـى، وَالتَّمَائِمَ، وَالتِّوَلَةَ شِرْكٌ» ، قُلْتُ: فَإِنِّي خَرَجْتُ يَوْمًا فَأَبْصَرَنِي فُلَانٌ، فَدَمَعَتْ عَيْنِي الَّتِي تَلِيهِ، فَإِذَا رَقَيْتُهَا سَكَنَتْ دَمْعَتُهَا، وَإِذَا تَرَكْتُهَا دَمَعَتْ، قَالَ: ذَاكِ الشَّيْطَانُ، إِذَا أَطَعْتِهِ تَرَكَكِ، وَإِذَا عَصَيْتِهِ طَعَنَ بِإِصْبَعِهِ فِي عَيْنِكِ، وَلَكِنْ لَوْ فَعَلْتِ كَمَا فَعَلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ خَيْرًا لَكِ، وَأَجْدَرَ أَنْ تُشْفَيْنَ تَنْضَحِينَ فِي عَيْنِكِ الْمَاءَ وَتَقُولِينَ: «أَذْهِبِ الْبَاسْ رَبَّ النَّاسْ، اشْفِ أَنْتَ الشَّافِي لَا شِفَاءَ إِلَّا شِفَاؤُكَ شِفَاءً لَا يُغَادِرُ سَقَمًا

عن ابن اخت زينب امراة عبد الله، عن زينب قالت: كانت عجوز تدخل علينا ترقي من الحمرة، وكان لنا سرير طويل القواىم، وكان عبد الله اذا دخل تنحنح وصوت، فدخل يوما فلما سمعت صوته احتجبت منه، فجاء فجلس الى جانبي فمسني فوجد مس خيط فقال: ما هذا؟ فقلت: رقى لي فيه من الحمرة فجذبه وقطعه فرمى به وقال: لقد اصبح ال عبد الله اغنياء عن الشرك، سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: ان الرقـى، والتماىم، والتولة شرك» ، قلت: فاني خرجت يوما فابصرني فلان، فدمعت عيني التي تليه، فاذا رقيتها سكنت دمعتها، واذا تركتها دمعت، قال: ذاك الشيطان، اذا اطعته تركك، واذا عصيته طعن باصبعه في عينك، ولكن لو فعلت كما فعل رسول الله صلى الله عليه وسلم كان خيرا لك، واجدر ان تشفين تنضحين في عينك الماء وتقولين: «اذهب الباس رب الناس، اشف انت الشافي لا شفاء الا شفاوك شفاء لا يغادر سقما

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ যায়নাব (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
হাদীস সম্ভার
২৯/ দু‘আ ও যিকর
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৪ পর্যন্ত, সর্বমোট ৪ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে