পরিচ্ছেদঃ ডান-বাম ব্যবহার-বিধি
সমস্ত ভাল ও সম্মানজনক কাজকর্মে ডান হাত ব্যবহার করা বা ডান দিককে অগ্রাধিকার দেওয়া উত্তম; যথাঃ ওযূ, গোসল, তায়াম্মুম, পোশাক পরা, জুতা, মোজা, পায়জামা পরা, মসজিদে প্রবেশ করা, দাঁতন করা, সুরমা লাগানো, নখকাটা, গোঁফ কাটা, বগলের লোম তোলা, চুল কামানো, নামায থেকে সালাম ফেরা, পানাহার করা, মুসাফাহ করা, হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করা, পায়খানা থেকে বের হওয়া, কোন জিনিস লেনদেন করা ইত্যাদি। আর উক্ত কার্যাদির বিপরীত অন্যান্য কর্মসমূহে বাম হাত ব্যবহার বা বাম দিককে অগ্রাধিকার দেওয়া উত্তম। যেমন নাকঝাড়া, থুথু ফেলা, মসজিদ থেকে বের হওয়া, পোশাক, জুতা, মোজা, পায়জামা ইত্যাদি খোলা, পেশাব-পায়খানার পর ইস্তিঞ্জা (পানি বা ঢিল ব্যবহার) করা, ঘৃণিত কিছু স্পর্শ করা ইত্যাদি। মহান আল্লাহ বলেছেন,
فَأَمَّا مَنْ أُوْتِـيَ كِتَابَهُ بيَمِيْنِهِ فَيَقُوْلُ هَآؤُمُ اقْرَأُوْا كِتَابِيَهُ
অর্থাৎ, সুতরাং যাকে তার আমলনামা তার ডান হাতে দেওয়া হবে সে বলবে, এই নাও, আমার আমলনামা পড়ে দেখ; আমার পূর্ণ বিশ্বাস ছিল যে, আমাকে আমার হিসাবের সম্মুখীন হতে হবে। সুতরাং সে এক সন্তোষজনক জীবন লাভ করবে; সুউচ্চ জান্নাতে। যার ফলরাশি ঝুলে থাকবে নাগালের মধ্যে। (তাদেরকে বলা হবে) পানাহার কর তৃপ্তির সাথে, তোমরা অতীত দিনে যা করেছিলে তার বিনিময়ে। কিন্তু যার আমলনামা তার বাম হাতে দেওয়া হবে, সে বলবে, হায়! আমাকে যদি দেওয়াই না হত আমার আমলনামা। এবং আমি যদি না জানতাম আমার হিসাব। হায়! আমার মৃত্যুই যদি আমার শেষ হত! আমার ধন-সম্পদ আমার কোন কাজেই আসল না। আমার ক্ষমতাও অপসৃত হয়েছে। (সূরা হা-ক্ক্বাহ ১৯) তিনি বলেছেন,
فَأصْحَابُ الْمَيْمَنَةِ، مَا أَصْحَابُ الْمَيْمَنَةِ، وَأَصْحَابُ الْمَشْئَمَةِ، مَا أصْحَابُ المَشْئَمَةِ
অর্থাৎ, ডান হাত-ওয়ালারা; কত ভাগ্যবান ডান হাত-ওয়ালারা! আর বাম হাত-ওয়ালারা; কত হতভাগ্য বাম হাত-ওয়ালারা! (সূরা ওয়াক্বিআহ ৮-৯)
(৩৫৯৯) আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ’রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমস্ত কাজে (যেমন) ওযূ করা, মাথা আঁচড়ানো ও জুতা পরা (প্রভৃতি সমস্ত ভাল) কাজে ডান দিক থেকে শুরু করা পছন্দ করতেন।’ (বুখারী ও মুসলিম)
وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا قَالَتْ : كَانَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ يُعْجِبُهُ التَّيَمُّنُ في شَأنِهِ كُلِّهِ : في طُهُورِهِ وَتَرَجُّلِهِ وَتَنَعُّلِهِ متفقٌ عَلَيْهِ
পরিচ্ছেদঃ ডান-বাম ব্যবহার-বিধি
(৩৬০০) উক্ত রাবী (রাযিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ’রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ডান হাত তাঁর ওযূ ও আহারের জন্য ব্যবহার হত এবং বাম হাত তাঁর পেশাব-পায়খানা ও নোংরা স্পর্শ করার সব ক্ষেত্রে ব্যবহার হত।’
وَعَنها قَالَتْ : كَانَتْ يَدُ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ اَلْيُمْنٰـى لِطُهُوْرِهِ وَطَعَامِهِ وَكَانَتِ الْيُسْرٰى لِـخَلَائِهِ وَمَا كَانَ مِنْ أَذًى حديث صحيح رواه أَبُو داود وغيره بإسنادٍ صحيحٍ
পরিচ্ছেদঃ ডান-বাম ব্যবহার-বিধি
(৩৬০১) উম্মে আত্বিয়াহ (রাযিয়াল্লাহু আনহা) কর্তৃক বর্ণিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় কন্যা যায়নাবের (লাশ) গোসল দেওয়ার সময় তাদের (মহিলাদেরকে) আদেশ করলেন যে, তোমরা ওর ডান দিক থেকে ও ওযূর অঙ্গসমূহ থেকে গোসল আরম্ভ কর।
وَعَن أُمِّ عَطِيَّةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا : أنَّ النَّبيَّ ﷺ قَالَ لَهُنَّ فِي غَسْلِ ابْنَتِهِ زَيْنَبَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا اِبْدَأنَ بِمَيَامِنِهَا وَمَوَاضِعِ الوُضُوءِ مِنْهَا متفقٌ عَلَيْهِ
পরিচ্ছেদঃ ডান-বাম ব্যবহার-বিধি
(৩৬০২) আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কেউ যখন জুতা পরবে, তখন সে যেন ডান পা দিয়ে শুরু করে। আর যখন খুলবে, তখন সে যেন বাম পা দিয়ে শুরু করে। ডান পায়ের জুতা যেন আগে পরা হয় এবং পরে খোলা হয়।
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ أنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ إِذَا انْتَعَلَ أحَدُكُمْ فَلْيَبْدَأْ بِالْيُمْنَى وَإِذَا نَزَعَ فَلْيَبْدأْ بِالشِّمَالِ لِتَكُنْ اليُمْنَى أوَّلَهُمَا تُنْعَلُ وَآخِرُهُمَا تُنْزَعُ متفقٌ عَلَيْهِ
পরিচ্ছেদঃ ডান-বাম ব্যবহার-বিধি
(৩৬০৩) আয়েশা (রাঃ) বলেন, ’আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ডান হাত তাঁর পবিত্রতা ও খাবারের জন্য ছিল এবং তাঁর বাম হাত ছিল প্রস্রাব-পায়খানা ও ঘৃণিত জিনিসের জন্য।’
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ كَانَتْ يَدُ رَسُولِ اللهِ ﷺ الْيُمْنَى لِطُهُورِهِ وَطَعَامِهِ وَكَانَتْ يَدُهُ الْيُسْرَى لِخَلاَئِهِ وَمَا كَانَ مِنْ أَذًى
পরিচ্ছেদঃ ডান-বাম ব্যবহার-বিধি
(৩৬০৪) হাফস্বাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, ’রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানাহার ও কাপড় পরার ক্ষেত্রে স্বীয় ডান হাত কাজে লাগাতেন এবং তাছাড়া অন্যান্য (নোংরা স্পর্শ ইত্যাদি) কাজে বাম হাত লাগাতেন।’
وَعَن حَفصَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا : أنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ كَانَ يَجعَلُ يَمِينَهُ لطَعَامِهِ وَشَرَابِهِ وَثِيَابِهِ وَيَجْعَلُ يَسَارَهُ لِمَا سِوَى ذٰلِكَ رواه أَبُو داود
পরিচ্ছেদঃ ডান-বাম ব্যবহার-বিধি
(৩৬০৫) আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা কাপড় পরিধান করার সময় ও ওযূ করার সময় তোমাদের ডান দিক থেকে আরম্ভ কর।
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ أنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ إِذَا لَبِسْتُمْ وَإِذَا تَوَضَّأتُمْ فَابْدَأُوا بِأَيَامِنِكُمْ حديث صحيح رواه أَبُو داود
পরিচ্ছেদঃ ডান-বাম ব্যবহার-বিধি
(৩৬০৬) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিনায় আগমন করলেন। তারপর জামরায় এসে কাঁকর মারলেন। তারপর পুনরায় মিনায় নিজ ডেরায় ফিরে গেলেন এবং কুরবানীর পশু যবেহ করলেন। তারপর নাপিতকে নিজ মাথার ডান দিকে ইশারা ক’রে বললেন, নাও। তারপর বামদিকে (ইশারা করে মাথা নেড়া করলেন)। তারপর মাথার চুল জনগণের মাঝে বিতরণ করতে লাগলেন। (বুখারী ১৭১, মুসলিম ৩২১২-৩২১৫)
অন্য বর্ণনায় আছে, যখন তিনি জামরায় কাঁকর মারলেন এবং কুরবানী পশু নহর (যবেহ) করলেন এবং মাথা মুণ্ডন করলেন, সেই সময় তিনি নাপিতকে মাথার ডান দিকটা বাড়িয়ে দিলেন। সে সেদিকটি মুণ্ডন করল। তারপর তিনি আবূ ত্বালহা আনসারী (রাঃ) কে ডেকে (চুলগুলি) তাকে দিলেন। অতঃপর বাম পার্শ্ব নাপিতকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, মুণ্ডন কর।’’ সুতরাং সে সেদিকটা মুণ্ডন করে দিল। অতঃপর তিনি আবূ ত্বালহাকে চুলগুলি দিয়ে দিলেন এবং বললেন, জনগণের মাঝে ওগুলি বন্টন করে দাও।
وَعَن أَنَسٍ أنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ أَتَى مِنىً فَأتَى الْجَمْرَةَ فَرَمَاهَا ثُمَّ أتَى مَنْزِلَهُ بِمِنَىً وَنَحَرَ ثُمَّ قَالَ لِلحَلاَّقِ خُذْ وأشَارَ إِلَى جَانِبهِ الأَيْمَنِ، ثُمَّ الأَيْسَرِ، ثُمَّ جَعَلَ يُعْطِيهِ النَّاسَ متفقٌ عَلَيْهِ
وَفِي رِوَايَةٍ : لَمَّا رَمَى الجَمْرَةَ وَنَحَرَ نُسُكَهُ وَحَلَقَ نَاوَلَ الحَلاَّقَ شِقَّهُ الأَيْمَنَ فَحَلَقَهُ ثُمَّ دَعَا أَبَا طَلْحَةَ الأنْصَارِيَّ فَأعْطَاهُ إيَّاهُ ثُمَّ نَاوَلَهُ الشِّقَّ الأَيْسَرَ فَقَالَ اِحْلِقْ فَحَلَقَهُ فَأعْطَاهُ أَبَا طَلْحَةَ فَقَالَ اِقْسِمْهُ بَيْنَ النَّاسِ