পরিচ্ছেদঃ সহনশীলতা, ধীর-স্থিরতা ও কোমলতার গুরুত্ব
আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَالْكَاظِمِيْنَ الْغَيْظَ وَالْعَافِيْنَ عَنِ النَّاسِ وَاللهُ يُحِبُّ المُحْسِنِيْنَ
অর্থাৎ, (সেই ধর্মভীরুদের জন্য বেহেশত প্রস্তুত রাখা হয়েছে, যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় দান করে,) এবং ক্রোধ সংবরণ করে ও মানুষকে ক্ষমা ক’রে থাকে। আর আল্লাহ (বিশুদ্ধচিত্ত) সৎকর্মশীলদেরকে ভালবাসেন। (সূরা আলে ইমরান ১৩৪)
আল্লাহ তাআলা বলেন,
خُذِ الْعَفْوَ وَأْمُرْ بِالعُرْفِ وَأعْرِضْ عَنِ الْـجَاهِلِيْنَ
অর্থাৎ, তুমি ক্ষমাশীলতার নীতি অবলম্বন কর, সৎকাজের নির্দেশ দাও এবং মূর্খদেরকে এড়িয়ে চল। (সূরা আ’রাফ ১৯৯)
আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَلاَ تَسْتَوِي الْحَسَنَةُ وَلاَ السَّيِّئَةُ ادْفَعْ بِالَّتِي هِيَ أحْسَنُ فَإذَا الَّذِي بَيْنَكَ وَبَيْنَهُ عَدَاوَةٌ كَأنَّهُ وَلِيٌّ حَمِيمٌ وَمَا يُلَقَّاهَا إِلاَّ الَّذِينَ صَبَرُوا وَمَا يُلَقَّاهَا إِلاَّ ذُو حَظٍّ عَظِيمٍ
অর্থাৎ, ভাল ও মন্দ সমান হতে পারে না। উৎকৃষ্ট দ্বারা মন্দ প্রতিহত কর; তাহলে যাদের সাথে তোমার শত্রুতা আছে, সে হয়ে যাবে অন্তরঙ্গ বন্ধুর মত। এ চরিত্রের অধিকারী কেবল তারাই হয় যারা ধৈর্যশীল, এ চরিত্রের অধিকারী তারাই হয়, যারা মহাভাগ্যবান। যদি শয়তানের কুমন্ত্রণা তোমাকে প্ররোচিত করে, তবে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা কর। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। (সূরা হা-মীম সিজদা ৩৪-৩৬)
আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَلَـمَنْ صَبَرَ وَغَفَرَ إنَّ ذَلِكَ لَمِنْ عَزْمِ الْأُمُوْرِ
অর্থাৎ, অবশ্যই যে ধৈর্য ধারণ করে এবং ক্ষমা করে, নিশ্চয় তা দৃঢ়-সংকল্পের কাজ। (সূরা শূরা ৪৩)
(৩৪৫৩) ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশাজ্জ্ আব্দুল কায়েসকে বলেছেন, নিশ্চয় তোমার মধ্যে এমন দু’টি স্বভাব রয়েছে যা আল্লাহ পছন্দ করেন; সহনশীলতা ও চিন্তা-ভাবনা ক’রে কাজ করা।
وَعَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ أَشَجِّ عَبْدِ القَيْسِ إِنَّ فِيكَ خَصْلَتَيْنِ يُحِبُّهُمَا اللهُ : الْحِلْمُ وَالأنَاةُ رواه مسلم
পরিচ্ছেদঃ সহনশীলতা, ধীর-স্থিরতা ও কোমলতার গুরুত্ব
(৩৪৫৪) আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ কৃপাময়। তিনি সকল বিষয়ে নম্রতা ও কৃপা পছন্দ করেন। (বুখারী ৬৯২৭)
মুসলিম শরীফের বর্ণনায় তিনি বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ কৃপাময়। তিনি নম্রতা পছন্দ করেন। আর নম্রতার উপর যা প্রদান করেন তা কঠোরতার উপর বরং এ ব্যতীত অন্য কিছুর উপর প্রদান করেন না। (মুসলিম ৬৭৬৬)
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ قال رسول الله ﷺ إِنَّ اللهَ رَفِيقٌ يُحِبُّ الرِّفْقَ فِي الْأَمْرِ كُلِّهِ رواه البخاري
وفي رواية مسلم إنَّ اللهَ رَفِيقٌ يُحِبُّ الرِّفقَ وَيُعْطِي عَلَى الرِّفقِ مَا لاَ يُعْطِي عَلَى العُنْفِ وَمَا لاَ يُعْطِي عَلَى مَا سِوَاهُ
পরিচ্ছেদঃ সহনশীলতা, ধীর-স্থিরতা ও কোমলতার গুরুত্ব
(৩৪৫৫) আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নম্রতা যে বিষয়ে থাকে সে বিষয়কে তা সৌন্দর্যমন্ডিত (মনোহর) করে তোলে। আর যে বিষয় থেকে তা তুলে নেওয়া হয়, সে বিষয়কে সৌন্দর্যহীন করে ফেলে।
عَنْ عَائِشَةَ عَنِ النَّبِىِّ ﷺ قَالَ إِنَّ الرِّفْقَ لاَ يَكُونُ فِى شَىْءٍ إِلاَّ زَانَهُ وَلاَ يُنْزَعُ مِنْ شَىْءٍ إِلاَّ شَانَهُ
পরিচ্ছেদঃ সহনশীলতা, ধীর-স্থিরতা ও কোমলতার গুরুত্ব
(৩৪৫৬) জারীর বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে নম্রতা থেকে বঞ্চিত, সে সকল মঙ্গল থেকে বঞ্চিত।
عَنْ جَرِيرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَنْ حُرِمَ الرِّفْقَ حُرِمَ الْخَيْرَ أَوْ مَنْ يُحْرَمِ الرِّفْقَ يُحْرَمِ الْخَيْرَ
পরিচ্ছেদঃ সহনশীলতা, ধীর-স্থিরতা ও কোমলতার গুরুত্ব
(৩৪৫৭) ইবনে মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি কি তোমাদেরকে এমন লোকের কথা বলে দেব না, যে জাহান্নামের জন্য অথবা জাহান্নাম যার জন্য হারাম হবে? প্রত্যেক জনপ্রিয়, সরল, বিনম্র ও অকুটিল লোকের জন্য জাহান্নাম হারাম।
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَلاَ أُخْبِرُكُمْ بِمَنْ يَحْرُمُ عَلَى النَّارِ أَوْ بِمَنْ تَحْرُمُ عَلَيْهِ النَّارُ ؟ عَلَى كُلِّ قَرِيبٍ هَيِّنٍ سَهْلٍ
পরিচ্ছেদঃ সহনশীলতা, ধীর-স্থিরতা ও কোমলতার গুরুত্ব
(৩৪৫৮) আয়েয বিন আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নিকৃষ্ট রাখাল হল সেই, যে রাখালিতে বড় কঠোর।
عَائِذَ بْنَ عَمْرٍو قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِنَّ شَرَّ الرِّعَاءِ الْحُطَمَةُ
পরিচ্ছেদঃ সহনশীলতা, ধীর-স্থিরতা ও কোমলতার গুরুত্ব
(৩৪৫৯) আবূ হুরাইরা (রাঃ) বলেন, এক বেদুঈন মসজিদের ভিতরে প্রস্রাব করে দিল। সুতরাং লোকেরা তাকে ধমক দেওয়ার জন্য উঠে দাঁড়াল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ওকে ছেড়ে দাও এবং প্রস্রাবের উপর এক বালতি পানি ঢেলে দাও। কেননা তোমাদেরকে সহজ নীতি অবলম্বন করার জন্য পাঠানো হয়েছে, কঠোর নীতি অবলম্বন করার জন্য পাঠানো হয়নি।
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ : بَالَ أعْرَابيٌّ فِي المَسجدِ فَقَامَ النَّاسُ إِلَيْهِ لِيَقَعُوا فِيهِ فَقَالَ النَّبِيُّ ﷺدَعُوهُ وَأرِيقُوا عَلَى بَوْلِهِ سَجْلاً مِنْ مَاءٍ أَوْ ذَنُوباً مِنْ مَاءٍ فَإنَّمَا بُعِثْتُمْ مُيَسِّرِينَ وَلَم تُبْعَثُوا مُعَسِّرِينَ رواه البخاري
পরিচ্ছেদঃ সহনশীলতা, ধীর-স্থিরতা ও কোমলতার গুরুত্ব
(৩৪৬০) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ’’তোমরা সহজ কর, কঠিন করো না এবং (লোকেদেরকে) সুসংবাদ দাও। তাদের মধ্যে ঘৃণা সৃষ্টি করো না।’’ (বুখারী ৬৯, মুসলিম ৪৬২৬)
وَعَن أَنَسٍ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ يَسِّرُوا وَلاَ تُعَسِّرُوا وَبَشِّرُوا وَلاَ تُنَفِّرُوا متفقٌ عَلَيْهِ
পরিচ্ছেদঃ সহনশীলতা, ধীর-স্থিরতা ও কোমলতার গুরুত্ব
(৩৪৬১) আবূ হুরাইরা (রাঃ) বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলল, ’আপনি আমাকে কিছু অসিয়ত করুন!’ তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম), তুমি রাগাম্বিত হয়ো না। সে ব্যক্তি এ কথাটি কয়েকবার বলল। তিনি (প্রত্যেক বারেই একই কথা) বললেন, তুমি রাগান্বিত হয়ো না।
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ أنَّ رَجُلاً قَالَ لِلنَّبِيِّ ﷺ أَوْصِنِي قَالَ لاَ تَغْضَبْ فَرَدَّدَ مِرَاراً قَالَ لاَ تَغْضَبْ رواه البخاري
পরিচ্ছেদঃ সহনশীলতা, ধীর-স্থিরতা ও কোমলতার গুরুত্ব
(৩৪৬২)আবূ য়্যা’লা শাদ্দাদ ইবনে আওস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মহান আল্লাহ প্রতিটি কাজকে উত্তমরূপে (অথবা অনুগ্রহের সাথে) সম্পাদন করাটাকে ফরয করে দিয়েছেন। সুতরাং তোমরা যখন (কাউকে) হত্যা করবে, তখন ভালভাবে হত্যা করো এবং যখন (পশু) জবাই করবে, তখন ভালভালে জবাই করো। প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত, সে যেন নিজ ছুরি ধারাল করে নেয় এবং যবেহযোগ্য পশুকে আরাম দেয়। (অর্থাৎ জবাই-এর কাজ দ্রুত সম্পন্ন করে।)
وَعَن أَبي يَعلَى شَدَّادِ بنِ أَوسٍ عَن رَسُولِ اللهِ ﷺ قَالَ إنَّ الله كَتَبَ الإحْسَانَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ فَإذَا قَتَلْتُم فَأحْسِنُوا القِتْلَة وَإِذَا ذَبَحْتُمْ فَأحْسِنُوا الذِّبْحَةَ وَليُحِدَّ أَحَدُكُمْ شَفْرَتَه وَلْيُرِح ذَبِيحَتَهُ رواه مسلم
পরিচ্ছেদঃ সহনশীলতা, ধীর-স্থিরতা ও কোমলতার গুরুত্ব
(৩৪৬৩) আয়েশা (রাঃ) বলেন, ’রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে যখনই দু’টি কাজের মধ্যে স্বাধীনতা দেওয়া হত, তখনই তিনি সে দু’টির মধ্যে সহজ কাজটি গ্রহণ করতেন; যদি সে কাজটি গর্হিত না হত। কিন্তু তা গর্হিত কাজ হলে তিনি তা থেকে সকলের চেয়ে বেশি দূরে থাকতেন। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের জন্য কখনই কোন বিষয়ে প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি। কিন্তু (কেউ) আল্লাহর হারামকৃত কাজ ক’রে ফেললে তিনি কেবলমাত্র আল্লাহর জন্য প্রতিশোধ নিতেন।’
وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا قَالَتْ : مَا خُيِّرَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ بَيْنَ أمْرَيْنِ قَطُّ إِلاَّ أَخَذَ أيْسَرَهُمَا مَا لَمْ يَكُنْ إثماً فَإنْ كَانَ إثماً كَانَ أبْعَدَ النَّاسِ مِنْهُ وَمَا انْتَقَمَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ لِنَفْسِهِ في شَيْءٍ قَطُّ، إِلاَّ أن تُنْتَهَكَ حُرْمَةُ الله فَيَنْتَقِمَ لِلهِ تَعَالَى متفقٌ عَلَيْهِ
পরিচ্ছেদঃ সহনশীলতা, ধীর-স্থিরতা ও কোমলতার গুরুত্ব
(৩৪৬৪) সা’দ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আখেরাতের কাজ ছাড়া প্রত্যেক কাজে ধীরতা অবলম্বন করা বাঞ্ছনীয়।
عن سَعْدٍ عَنِ النَّبِىِّ ﷺ قَالَ التُّؤَدَةُ فِى كُلِّ شَىْءٍ إِلاَّ فِى عَمَلِ الآخِرَةِ