পরিচ্ছেদঃ মহিলাদের কৃত্রিম রূপচর্চা
নকল চুল বা পরচুলা লাগানো, উল্কি উৎকীর্ণ করা (চামড়ায় ছুঁচ ফুটিয়ে দিয়ে তাতে রং ঢেলে নঙা আঁকা বা নাম লেখা) সৌন্দর্যের জন্য দাঁত ঘষে সরু করা বা দাঁতের মাঝে ফাঁক সৃষ্টি করা নিষিদ্ধ।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
إِنْ يَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِهِ إِلاَّ إِنَاثاً وَإِنْ يَدْعُونَ إِلاَّ شَيْطَاناً مَرِيْداً لَعَنَهُ اللهُ وَقَالَ لأَتَّخِذَنَّ مِنْ عِبَادِكَ نَصِيباً مَفْرُوضاً وَلأُضِلَّنَّهُمْ وَلأُمَنِّيَنَّهُمْ وَلآمُرَنَّهُمْ فَلَيُبَتِّكُنَّ آذَانَ الأَنْعَامِ وَلآمُرَنَّهُمْ فَلَيُغَيِّرُنَّ خَلْقَ اللهِ
অর্থাৎ, তাঁর (আল্লাহর) পরিবর্তে তারা কেবল দেবীদের পূজা করে এবং তারা কেবল বিদ্রোহী শয়তানের পূজা করে। আল্লাহ তাকে (শয়তানকে) অভিসম্পাত করেছেন এবং সে (শয়তান) বলেছে, ’আমি তোমার দাসদের এক নির্দিষ্ট অংশকে (নিজের দলে) গ্রহণ করবই এবং তাদেরকে পথভ্রষ্ট করবই; তাদের হৃদয়ে মিথ্যা বাসনার সৃষ্টি করবই, আমি তাদেরকে নিশ্চয় নির্দেশ দেব, ফলে তারা পশুর কর্ণচ্ছেদ করবেই এবং তাদেরকে নিশ্চয় নির্দেশ দেব, ফলে তারা আল্লাহর সৃষ্টি বিকৃত করবেই।’ (আর যে আল্লাহর পরিবর্তে শয়তানকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করবে, নিশ্চয় সে প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।) (সূরা নিসা ১১৭-১১৯)
(৩৩৮০) আসমা (রাঃ) হতে বর্ণিত, এক মহিলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে জিজ্ঞাসা করল, ’হে আল্লাহর রসূল! আমার মেয়ে এক প্রকার চর্মরোগে আক্রান্ত হয়েছে। ফলে তার মাথার চুল ঝরে গেছে। আর আমি তার বিয়েও দিয়েছি। এখন কি আমি তার মাথায় পরচুলা লাগিয়ে দেব?’ তিনি বললেন, যে পরচুলা লাগিয়ে দেয় এবং যার লাগানো হয় উভয় মহিলাকে আল্লাহ অভিসম্পাত করুন বা করেছেন।
অন্য বর্ণনায় আছে, যে মহিলা পরচুলা লাগিয়ে দেয় এবং যে লাগাতে বলে (তাদের উভয়কে আল্লাহ অভিসম্পাত করুন বা করেছেন।)
وَعَنْ أَسمَاءَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا : أَنَّ امْرَأَةً سَأَلَتِ النَّبيَّ ﷺ فَقَالَتْ : يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنَّ ابْنَتِي أَصَابَتْهَا الحَصْبَةُ، فَتَمَرَّقَ شَعْرُهَا وَإِنِّي زَوَّجْتُهَا أَفَأَصِلُ فِيهِ ؟ فَقَالَ لَعَنَ اللهُ الوَاصِلَةَ وَالمَوْصُولَةَ متفق عليه وفي روايةٍ الوَاصِلَةَ والمُسْتوْصِلَةَ
পরিচ্ছেদঃ মহিলাদের কৃত্রিম রূপচর্চা
(৩৩৮১) আয়েশা (রাঃ) হতেও উক্তরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
-
পরিচ্ছেদঃ মহিলাদের কৃত্রিম রূপচর্চা
(৩৩৮২) হুমাইদ ইবনে আব্দুর রাহমান (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি হজ্জ করার বছরে মুআবিয়া (রাঃ) কে মিম্বরে দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছেন—ঐ সময়ে তিনি জনৈক দেহরক্ষীর হাত থেকে এক গোছা চুল নিজ হাতে নিয়ে বললেন, ’হে মদীনাবাসীগণ! তোমাদের আলেমগণ কোথায়? আমি রসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এরূপ জিনিস (ব্যবহার) নিষেধ করতে শুনেছি। তিনি বলতেন, বনী ইসরাঈল তখনই ধ্বংস হয়েছিল, যখন তাদের মহিলারা এই জিনিস ব্যবহার করতে আরম্ভ করেছিল।
وَعَنْ حُميدِ بنِ عَبدِ الرَّحْمَانِ : أَنَّهُ سَمِعَ مُعَاوِيَةَ عامَ حَجَّ عَلَى المِنْبَرِ وَتَنَاوَلَ قُصَّةً مِنْ شَعْرٍ كَانَتْ فِي يَدِ حَرَسِيٍّ فَقَالَ : يَا أَهْلَ المَدِينَةِ أَيْنَ عُلَمَاؤُكُمْ سَمِعْتُ النَّبِيَّ ﷺ يَنْهَى عَنْ مِثْلِ هَذِهِ وَيَقُولُ إِنَّمَا هَلَكَتْ بَنُو إِسْرَائِيلَ حِينَ اتَّخَذَهَا نِسَاؤُهُمْ متفق عليه
পরিচ্ছেদঃ মহিলাদের কৃত্রিম রূপচর্চা
(৩৩৮৩) সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িব কর্তৃক বর্ণিত, মুআবিয়া মদীনায় এসে আমাদের মাঝে ভাষণ দিলেন। আর (তারই মাঝে) এক গোছা পরচুলা বের করে বললেন, ’ইয়াহুদীরা ছাড়া অন্য কোন (মুসলিম) ব্যক্তি এ জিনিস ব্যবহার করে বলে আমার ধারণা ছিল না। আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এই (পরচুলা ব্যবহারের) খবর পৌঁছলে তিনি এর নাম দিয়েছিলেন, ’জালিয়াতি!’
عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيَّبِ قَالَ قَدِمَ مُعَاوِيَةُ الْمَدِينَةَ فَخَطَبَنَا وَأَخْرَجَ كُبَّةً مِنْ شَعَرٍ فَقَالَ مَا كُنْتُ أُرَى أَنَّ أَحَدًا يَفْعَلُهُ إِلاَّ الْيَهُودَ إِنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ بَلَغَهُ فَسَمَّاهُ الزُّورَ
পরিচ্ছেদঃ মহিলাদের কৃত্রিম রূপচর্চা
(৩৩৮৪) নাসাঈর বর্ণনায় আছে,
أَيُّمَا اِمْرَأْةٍ زَادَتْ فِي رَأْسِهَا شَعْرًا لَيْسَ مِنْهُ فَإِنَّهُ زُوْر تَزِيْدُ فِيْهِ
যে নারী তার মাথায় এমন চুল বাড়তি লাগায় যা তার মাথার নয়, সে তার মাথায় জালিয়াতি সংযোগ করে।
-
পরিচ্ছেদঃ মহিলাদের কৃত্রিম রূপচর্চা
(৩৩৮৫) ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরচুলা যে মহিলা লাগিয়ে দেয় এবং যে পরচুলা লাগাতে বলে, আর যে মহিলা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে উল্কি উৎকীর্ণ করে ও যে উল্কি উৎকীর্ণ করতে বলে তাদেরকে অভিশাপ করেছেন।
وعَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا : أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ لَعَنَ الوَاصِلَةَ وَالمُسْتَوْصِلَةَ وَالوَاشِمَةَ وَالمُسْتَوشِمَةَ
পরিচ্ছেদঃ মহিলাদের কৃত্রিম রূপচর্চা
(৩৩৮৬) আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, ’আল্লাহর অভিশাপ হোক সেই সব নারীদের উপর, যারা দেহাঙ্গে উল্কি উৎকীর্ণ করে এবং যারা উৎকীর্ণ করায় এবং সে সব নারীদের উপর, যারা ভ্রূ চেঁছে সরু করে, যারা সৌন্দর্যের মানসে দাঁতের মাঝে ফাঁক সৃষ্টি করে, যারা আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে পরিবর্তন আনে।’ জনৈক মহিলা এ ব্যাপারে তাঁর (ইবনে মাসঊদের) প্রতিবাদ করলে তিনি বললেন, ’আমি কি তাকে অভিসম্পাত করব না, যাকে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিসম্পাত করেছেন এবং তা আল্লাহর কিতাবে আছে? আল্লাহ বলেছেন, রসূল যে বিধান তোমাদেরকে দিয়েছেন তা গ্রহণ কর, আর যা থেকে নিষেধ করেছেন, তা থেকে বিরত থাক।
وَعَنِ ابنِ مَسعُودٍ قَالَ : لَعَنَ اللهُ الوَاشِمَاتِ وَالمُسْتَوشِمَاتِ وَالمُتَنَمِّصَاتِ وَالمُتَفَلِّجَاتِ لِلْحُسْنِ، المُغَيِّرَاتِ خَلْقَ اللهِ فَقَالَتْ لَهُ امْرَأَةٌ فِي ذَلِكَ فَقَالَ : وَمَا لِي لاَ أَلْعَنُ مَنْ لَعَنَهُ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ وَهُوَ فِي كِتَابِ اللهِ ؟ قالَ اللهُ تَعَالَى وَمَا آتَاكُمُ الرَسُوْلُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا متفق عليه
পরিচ্ছেদঃ মহিলাদের কৃত্রিম রূপচর্চা
(৩৩৮৭) আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দুই প্রকার জাহান্নামী লোক আমি (এখন পর্যন্ত) প্রত্যক্ষ করিনি (অর্থাৎ, পরে তাদের আবির্ভাব ঘটবে)- (১) এমন এক সম্প্রদায় যাদের কাছে গরুর লেজের মত চাবুক থাকবে, যা দিয়ে তারা জনগণকে প্রহার করবে। (২) এমন এক শ্রেণীর মহিলা, যারা (এমন নগ্ন) পোশাক পরবে যে, (বাস্তবে) উলঙ্গ থাকবে, (পর পুরুষকে) নিজেদের প্রতি আকর্ষণ করবে ও নিজেরাও (পর পুরুষের প্রতি) আকৃষ্ট হবে। তাদের মাথা হবে উটের হেলে যাওয়া কুঁজের মত। এ ধরনের মহিলারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং তার সুগন্ধও পাবে না। অথচ জান্নাতের সুগন্ধ এত এত দূরত্বের পথ থেকে পাওয়া যাবে। (মুসলিম ৫৭০৪, ৭৩৭৩)
مَائِلاَت مُمِيلاَت এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, তারা আল্লাহর আনুগত্য এবং যা হিফাযত করা দরকার তার হিফাযতের পথ থেকে বিচ্যুত থাকবে। আর তারা অপরকে তাদের ঐ নিন্দনীয় কর্ম শিক্ষা দেবে। অথবা তারা হেলে-দুলে অহংকারের সাথে চলাফিরা করবে এবং নিজেদের কাঁধ বাঁকা করবে। অথবা তারা বেশ্যাদের মত টেরা করে চুলের সিঁথি কাটবে এবং অপরের সিঁথিও অনুরূপ টেরা ক’রে কেটে দেবে।
‘তাদের মাথা হবে উটের হিলে যাওয়া কুঁজের মত’ অর্থাৎ, মাথার চুলের সাথে (পরচুলা বা বস্ত্রখণ্ডর) টেসেল বেঁধে বড় করে খোঁপা বাঁধবে। (এরা সকলে জাহান্নামী হবে।)
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ صِنْفَانِ مِنْ أَهْلِ النَّارِ لَمْ أَرَهُمَا : قَومٌ مَعَهُمْ سِيَاطٌ كَأَذْنَابِ البَقَرِ يَضْرِبُونَ بِهَا النَّاسَ وَنِسَاءٌ كَاسِيَاتٌ عَارِيَاتٌ مُمِيلاَتٌ مَائِلاَتٌ رُؤُوسُهُنَّ كَأَسْنِمَةِ البُخْتِ المائِلَةِ لاَ يَدْخُلْنَ الجَنَّةَ وَلاَ يَجِدْنَ رِيحَهَا وَإِنَّ رِيحَهَا لَيُوجَدُ مِنْ مَسِيرَةِ كَذَا وَكذَا رواه مسلم
পরিচ্ছেদঃ মহিলাদের কৃত্রিম রূপচর্চা
(৩৩৮৮) আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার শেষ যামানার উম্মতের মধ্যে কিছু এমন লোক হবে যারা ঘরের মত জিন্ (মোটর গাড়ি) তে সওয়ার হয়ে মসজিদের দরজায় দরজায় নামবে। (গাড়ি করে নামায পড়তে আসবে।) আর তাদের মহিলারা হবে অর্ধনগ্না; যাদের মাথা কৃশ উটের কুঁজের মতো (খোঁপা) হবে। তোমরা তাদেরকে অভিশাপ করো। কারণ, তারা অভিশপ্তা!
وَعَنْ عَبْدِ اللهِ بْنَ عَمْرٍو قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ سَيَكُونُ فِي آخِرِ أُمَّتِي رِجَالٌ يَرْكَبُونَ عَلَى السُّرُوجِ كَأَشْبَاهِ الرِّجَالِ يَنْزِلُونَ عَلَى أَبْوَابِ الْمَسْجِدِ نِسَاؤُهُمْ كَاسِيَاتٌ عَارِيَاتٌ عَلَى رُءُوسِهِمْ كَأَسْنِمَةِ الْبُخْتِ الْعِجَافِ الْعَنُوهُنَّ فَإِنَّهُنَّ مَلْعُونَاتٌ