পরিচ্ছেদঃ পান-পাত্রের বিবরণ
সোনা-রূপা ছাড়া সমস্ত পবিত্র পানপাত্রে পান করা জায়েয। আর বিনা পাত্রে ও হাত না লাগিয়ে সরাসরি নদী ইত্যাদির পানিতে মুখ লাগিয়ে পান করা বৈধ এবং পানাহার, ওযূ তথা সমস্ত কাজে সোনা-রূপার পাত্র ব্যবহার হারাম।
(৩১৩৮) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ’একবার নামাযের সময় উপস্থিত হলে যাঁদের বাড়ি কাছে ছিল, তাঁরা (ওযূ করার জন্য) বাড়ি গেলেন। আর কিছু লোক থেকে গেলেন (তাঁদের কোন ওযূর ব্যবস্থা ছিল না)। সুতরাং আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে একটি পাথরের পাত্রে পানি আনা হল। পাত্রটি এত ছোট ছিল যে, তার মধ্যে তাঁর মুঠি খোলাও মুশকিল ছিল। তা থেকেই সমস্ত লোকে ওযূ করলেন।’ (আনাসকে উপস্থিত) লোকেরা জিজ্ঞাসা করল, ’আপনারা কতজন ছিলেন?’ তিনি বললেন, ’আশিজনেরও বেশি।’ (বুখারী ১৯৫, এটি বুখারীর বর্ণনা)
বুখারীর অন্য এক বর্ণনায় এবং মুসলিমের বর্ণনায় আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি পানির পাত্র চাইলেন। সুতরাং তাঁর জন্য প্রশস্ত একটি অগভীর (চিত্রে) পেয়ালা আনা হল, যাতে সামান্য পানি ছিল। তারপর তিনি স্বীয় আঙ্গুলগুলি ঐ পানিতে রাখলেন। আনাস (রাঃ) বললেন, ’আমি তাঁর আঙ্গুলসমুহের ফাঁক দিয়ে পানির ঝর্ণাধারা প্রবাহিত হতে দেখছিলাম। অনুমান ক’রে দেখলাম, ওযূকারীদের সংখ্যা প্রায় সত্তর থেকে আশিজনের মাঝামাঝি ছিল।’ (বুখারী ২০০, মুসলিম ৬০৮০)
وَعَن أَنَسٍ قَالَ : حَضَرَتِ الصَّلاَةُ فَقَامَ مَن كَانَ قَريبَ الدَّارِ إِلَى أهْلِهِ وبَقِيَ قَوْمٌ فَأُتِيَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ بِمَخْضَبٍ مِنْ حِجَارَةٍ فَصَغُرَ المَخْضَبُ أنْ يَبْسُطَ فِيهِ كَفَّهُ فَتَوَضَّأَ القَوْمُ كُلُّهُمْ قَالُوا : كَمْ كُنْتُمْ ؟ قَالَ : ثَمَانِينَ وَزِيَادَةً متفق عَلَيْهِ هذه رواية البخاري
وفي رواية لَهُ ولمسلم : أَنَّ النَّبيَّ ﷺ دَعَا بِإِنَاءٍ مِنْ مَاءٍ فَأُتِيَ بِقَدَحٍ رَحْرَاحٍ فِيهِ شَيْءٌ مِنْ ماءٍ فَوَضَعَ أصابعَهُ فِيهِ قَالَ أنسٌ : فَجَعلْتُ أنْظُرُ إِلَى الماءِ يَنْبُعُ مِنْ بَيْن أصَابِعِهِ فَحَزَرْتُ مَنْ تَوضَّأ مَا بَيْنَ السَّبْعِينَ إِلَى الثَّمَانينَ
পরিচ্ছেদঃ পান-পাত্রের বিবরণ
(৩১৩৯) আব্দুল্লাহ ইবনে যায়দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ’নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার আমাদের নিকট এলেন। আমরা তাঁকে পিতলের একটি পাত্রে পানি দিলাম, তিনি (তা দিয়ে) ওযূ করলেন।’
وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ زَيدٍ قَالَ : أتَانَا النَّبِيُّ ﷺ فَأَخْرَجْنَا لَهُ مَاءً في تَوْرٍ مِنْ صُفْر فَتَوَضَّأَ رواه البخاري
পরিচ্ছেদঃ পান-পাত্রের বিবরণ
(৩১৪০)জাবের (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক আনসারীর নিকট গেলেন। আর তাঁর সঙ্গে একজন সাহাবীও ছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি তোমার মশকে রাতের বাসী পানি থাকে, তাহলে নিয়ে এসো; নচেৎ সরাসরি পানিতে মুখ লাগিয়ে পান ক’রে নেব।
وَعَن جَابِرٍ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ دَخَلَ عَلَى رَجُلٍ مِن الأَنْصَارِ وَمَعَهُ صَاحِبٌ لَهُ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إنْ كَانَ عِنْدَكَ مَاءٌ بَاتَ هذِهِ اللَّيْلَةَ في شَنَّةٍ وَإلاَّ كَرَعْنَا رواه البخاري
পরিচ্ছেদঃ পান-পাত্রের বিবরণ
(৩১৪১) হুযাইফা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে পাতলা ও মোটা রেশমী কাপড় পরতে ও সোনা-রূপার পাত্রে পান করতে নিষেধ করেছেন। আর তিনি বলেছেন, তা হল তাদের (কাফেরদের) জন্য দুনিয়ায় এবং তোমাদের (মুসলিমদের) জন্য পরকালে।
وَعَن حُذَيفَةَ قَالَ : إنَّ النَّبيَّ ﷺ نَهَانَا عَنِ الحَرِيرِ وَالدِّيبَاجِ وَالشُّربِ فِي آنِيَةِ الذَّهَبِ وَالفِضَّةِ وَقَالَ هِيَ لَهُمْ فِي الدُّنْيَا وَهِيَ لَكُمْ فِي الآخِرَةِ متفقٌ عَلَيْهِ
পরিচ্ছেদঃ পান-পাত্রের বিবরণ
(৩১৪২) উম্মে সালামাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি রূপার পাত্রে পান করে, সে আসলে নিজ উদরে জাহান্নামের আগুন ঢকঢক্ করে পান করে।
মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় আছে, যে ব্যক্তি সোনা-রূপার পাত্রে পানাহার করে।
তাঁর অন্য এক বর্ণনায় আছে, যে ব্যক্তি সোনা অথবা রূপার পাত্রে পান করে, সে আসলে নিজ উদরে জাহান্নামের আগুন ঢকঢক্ ক’রে পান করে।
وَعَن أُمِّ سَلَمَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا : أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ اَلَّذِيْ يَشْرَبُ فِي آنِيَةِ الفِضَّةِ إنَّمَا يُجَرْجِرُ في بَطْنِهِ نَارَ جَهَنَّمَ متفقٌ عَلَيْهِ وفي رواية لمسلم إنَّ الَّذِي يَأكُلُ أَوْ يَشْرَبُ في آنِيَةِ الفِضَّةِ وَالذَّهَ وفي رواية لَهُ مَنْ شَرِبَ في إناءٍ مِنْ ذَهَبٍ أَوْ فِضَّةٍ فَإنَّمَا يُجَرْجِرُ في بَطْنِهِ نَارَاً مِنْ جَهَنَّم
পরিচ্ছেদঃ পান-পাত্রের বিবরণ
(৩১৪৩)একদা আবূ সা’লাবাহ খুশানী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, ’আমরা আহলে কিতাবদের পাশাপাশি বাস করি। আর তারা তাদের পাত্রে শূকর রান্না করে এবং মদ পান করে। (এখন আমরা কি তাদের পাত্রে পানাহার করতে পারি?) উত্তরে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি তোমরা তা ছাড়া অন্য পাত্র পাও, তাহলে তাতেই পানাহার কর। আর যদি তা ছাড়া অন্য পাত্র না পাও, তাহলে তা ধুয়ে নাও এবং তাতে পানাহার কর।
عَنْ أَبِى ثَعْلَبَةَ الْخُشَنِىِّ أَنَّهُ سَأَلَ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ إِنَّا نُجَاوِرُ أَهْلَ الْكِتَابِ وَهُمْ يَطْبُخُونَ فِى قُدُورِهِمُ الْخِنْزِيرَ وَيَشْرَبُونَ فِى آنِيَتِهِمُ الْخَمْرَ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِنْ وَجَدْتُمْ غَيْرَهَا فَكُلُوا فِيهَا وَاشْرَبُوا وَإِنْ لَمْ تَجِدُوا غَيْرَهَا فَارْحَضُوهَا بِالْمَاءِ وَكُلُوا وَاشْرَبُوا
পরিচ্ছেদঃ পান-পাত্রের বিবরণ
(৩১৪৪) আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন তোমাদের কারো পানীয় দ্রব্যে মাছি পড়ে যাবে, তখন তাকে সম্পূর্ণ ডুবিয়ে দেবে। তারপর তাকে বাইরে নিক্ষেপ করবে। কারণ, তার দুটি ডানার মধ্যে একটিতে রোগজীবাণু আছে আর অপরটিতে আছে রোগমুক্তি। (পানীয় বস্তুতে পড়ে যাওয়া অবস্থায়) মাছি যে ডানাতে রোগজীবাণু আছে সেটিকে ডুবিয়ে দিয়ে নিজেকে বাঁচাতে চেষ্টা করে। অতএব তা সম্পূর্ণ ডুবিয়ে দেওয়ার পর নিক্ষেপ করা উচিত।
عَنْ أَبِـيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ إِذَا وَقَعَ الذُّبَابُ فِي إِنَاءِ أَحَدِكُمْ فَلْيَغْمِسْهُ كُلَّهُ ثُمَّ لِيَطْرَحْهُ فَإِنَّ فِي أَحَدِ جَنَاحَيْهِ شِفَاءً وَفِي الْآخَرِ دَاءً
পরিচ্ছেদঃ পান-পাত্রের বিবরণ
(৩১৪৫) জাবের (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস রাখে সে যেন কখনই সেই ভোজ-মজলিসে না বসে যাতে মদ্য পরিবেশিত হয়।
وَعَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْه عَن النَّبِي صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : ’’ وَمن كَانَ يُؤمن بِاللَّه وَالْيَوْم الآخر فَلاَ يجلس عَلَى مائدةٍ يُدارُ عَلَيْهَا الْخمر
পরিচ্ছেদঃ পান-পাত্রের বিবরণ
(৩১৪৬) আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি হাতে মাংসের গন্ধ ও চর্বি না ধুয়ে তা নিয়েই ঘুমায়, অতঃপর কোন বিপদ ঘটে, তাহলে সে যেন নিজেকে ছাড়া আর কাউকে দোষারোপ না করে।
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَنْ نَامَ وَفِي يَدِهِ غَمَرٌ وَلَمْ يَغْسِلْهُ فَأَصَابَهُ شَيْءٌ فَلَا يَلُومَنَّ إِلَّا نَفْسَهُ
পরিচ্ছেদঃ পান-পাত্রের বিবরণ
(৩১৪৭)আবূ আইয়ূব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ’’আমার উম্মতের খিলালকারিগণ উত্তম (বা প্রশংসনীয়)। (সিলসিলাহ সহীহাহ ২৫৬৭) ইবনে উমার বলেন, ’যে খিলাল ত্যাগ করে, তার দাঁত দুর্বল হয়ে যায়। (ত্বাবারানীর কাবীর, ইরওয়াউল গালীল ১৯৭৪)
عَنْ أَبِـيْ أَيُّوبَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَبَّذَا الْمُتَخَلِّلُونَ
পরিচ্ছেদঃ পান-পাত্রের বিবরণ
(৩১৪৮) ইবনে উমার (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, একদা আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এক ব্যক্তি ঢেকুর তুললে তিনি তাকে বললেন, আমাদের নিকট তোমার ঢেকুর তোলা বন্ধ কর। দুনিয়ায় যে অধিক পরিতৃপ্ত হয়, কিয়ামতে সে অধিক ক্ষুধার্ত হবে। (তিরমিযী ২৪৭৮, ইবনে মাজাহ ৩৩৫০, হাসান সহীহ)
আবূ জুহাইফা (রাঃ) বলেন, একদা মাংস-রুটির সারীদ খেয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে ঢেকুর তুললে তিনি তাঁকে বললেন, ওহে! আমাদের নিকট তোমার ঢেকুর তোলা বন্ধ কর। কারণ, দুনিয়ায় যে অধিক পরিতৃপ্ত হয়, কিয়ামতে সে অধিক ক্ষুধার্ত হবে।
এ হাদীস শোনার পর তিনি মরণকাল পর্যন্ত কোনদিন পেট পুরে খানা খাননি। তিনি রাতের খাবার খেলে, দুপুরের খাবার খেতেন না এবং দুপুরের খাবার খেলে আর রাতের খাবার খেতেন না। (আল-ইস্তিআব ৪/১৬২০, উসুদুল গাবাহ ৪/৪০০)
عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: تَجَشَّأَ رَجُلٌ عِنْدَ النَّبِىِّ ﷺفَقَالَ كُفَّ جُشَاءَكَ عَنَّا فَإِنَّ أَطْوَلَكُمْ جُوعًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَكْثَرُكُمْ شِبَعًا فِى دَارِ الدُّنْيَا
পরিচ্ছেদঃ পান-পাত্রের বিবরণ
(৩১৪৯) আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ’কিয়ামতে বান্দাকে নিয়ামত সম্পর্কে সর্বপ্রথম যে প্রশ্ন করা হবে, তা হল এই যে, আমি কি তোমার শরীরকে সুস্থ রাখিনি এবং ঠাণ্ডা পানি দিয়ে পিপাসামুক্ত করিনি?
عن أبي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ أَوَّلَ مَا يُسْأَلُ عَنْهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَعْنِى الْعَبْدَ مِنَ النَّعِيمِ أَنْ يُقَالَ لَهُ أَلَمْ نُصِحَّ لَكَ جِسْمَكَ وَنُرْوِيكَ مِنَ الْمَاءِ الْبَارِدِ