পরিচ্ছেদঃ রসূল (ﷺ) এর বংশধরের প্রতি শ্রদ্ধা রাখা এবং তাঁদের মাহাত্ম্যের বিবরণ
আল্লাহ তাআলা বলেন,
إِنَّمَا يُرِيْدُ اللهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَـيْـتِ وَيُـطَـهِّـرَكُمْ تَـطْـهِـيْـرًا
অর্থাৎ, হে নবী-পরিবার! আল্লাহ তো কেবল তোমাদের মধ্য থেকে অপবিত্রতা দূর করতে চান এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে চান। (সূরা আহ্যাব ৩৩)
তিনি আরো বলেন,
وَمَنْ يُّعَظِّمْ شَعَائِرَ اللهِ فَإِنَّهَا مِنْ تَقْوَى الْقُلُوْبِ
অর্থাৎ, কেউ আল্লাহর (দ্বীনের) প্রতীকসমূহের সম্মান করলে এটা তো তার হৃদয়ের সংযমশীলতারই বহিঃপ্রকাশ। (সূরা হজ্জ্ব ৩২)
(২৮৭৩) ইয়াযীদ ইবনে হাইয়ান বলেন, আমি, হুস্বাইন ইবনে সাবরাহ ও আমর ইবনে মুসলিম যায়দ ইবনে আরক্বামের নিকট গেলাম । যখন আমরা তাঁর পাশে বসলাম, তখন হুস্বাইন তাঁকে বললেন, ’হে যায়দ! আপনি প্রভূত কল্যাণপ্রাপ্ত হয়েছেন; আপনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখেছেন, তাঁর হাদীস শুনেছেন, তাঁর সাথে থেকে যুদ্ধ করেছেন এবং তাঁর পিছনে নামায পড়েছেন। হে যায়দ! আপনি প্রভূত কল্যাণপ্রাপ্ত হয়েছেন। আপনি আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কোন কথা শুনান, যা আপনি (স্বয়ং) তাঁর নিকট থেকে শুনেছেন।’ তিনি বললেন, ’হে ভাতিজা! আল্লাহর কসম! আমি বৃদ্ধ হয়ে গেছি এবং (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে) আমার যে যুগটা কেটেছে, তাও যথেষ্ট পুরানো হয়ে গেছে। (ফলে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যে কথা আমার স্মরণে ছিল, তার কিছু ভুলে গেছি। সুতরাং আমি যা বলব, তা গ্রহণ কর এবং যা বর্ণনা করব না, তার জন্য আমাকে বাধ্য করো না।’ অতঃপর তিনি বললেন, ’একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝে মক্কা ও মদীনার মধ্যে ’খুম’ নামক ঝর্ণার নিকটে খুতবাহ দেওয়ার জন্য দাঁড়ালেন। তিনি সর্বাগ্রে আল্লাহর প্রশংসা করলেন এবং ওয়ায করলেন ও উপদেশ দিলেন।
অতঃপর বললেন, ’’আম্মা বা’দ। হে লোকেরা! শোনো, আমি একজন মানুষ মাত্র, শীঘ্রই (আমার নিকট) আমার প্রতিপালকের দূত আসবেন এবং আমি (আল্লাহর নিকট যাওয়ার জন্য) তাঁর ডাকে সাড়া দেব। আমি তোমাদের মাঝে দু’টি ভারী (গুরুত্বপূর্ণ) বস্তু ছেড়ে যাচ্ছি। তার মধ্যে একটি আল্লাহর কিতাব, যাতে হিদায়াত ও আলো রয়েছে। সুতরাং তোমরা আল্লাহর কিতাবকে গ্রহণ কর এবং তা মযবুত ক’রে ধারণ কর।’’ সুতরাং তিনি আল্লাহর কিতাবের উপর (আমল করার প্রতি) উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত করলেন। অতঃপর বললেন, ’’(আর দ্বিতীয় বস্তুটি হচ্ছে,) আমার পরিবার; আমি তোমাদেরকে আমার পরিবারের ব্যাপারে আল্লাহর স্মরণ দিচ্ছি। আমি তোমাদেরকে আমার পরিবারের ব্যাপারে আল্লাহর স্মরণ দিচ্ছি।’’ তারপর হুস্বাইন তাঁকে বললেন, ’রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর পরিবার কারা? হে যায়দ! তাঁর স্ত্রীরা কি তাঁর পরিবারভুক্ত নন?’ তিনি (যায়দ) বললেন, ’(নিঃসন্দেহে) স্ত্রীরা তাঁর পরিবারভুক্ত। কিন্তু তাঁর পরিবার (বলতে) তাঁরা, যাঁদের উপর তাঁর (মৃত্যুর) পর সাদকাহ হারাম করা হয়েছে।’ হুস্বাইন জিজ্ঞেস করলেন, ’তাঁরা কারা?’ যায়দ জবাব দিলেন, ’তাঁরা হচ্ছেন আলীর পরিবার, আক্বীলের পরিবার, জা’ফরের পরিবার এবং আব্বাসের পরিবার।’ হুস্বাইন বললেন, ’এদের সকলের প্রতি সাদকাহ হারাম করা হয়েছে?’ তিনি বললেন, ’হ্যাঁ।’
অন্য এক বর্ণনায় আছে, শোনো, আমি তোমাদের মাঝে দু’টি ভারী (গুরুত্বপূর্ণ) জিনিস ছেড়ে যাচ্ছি। তার মধ্যে একটি হল আল্লাহর কিতাব; আর তা আল্লাহর রশি। যে ব্যক্তি তার অনুসরণ করবে, সে সঠিক পথে থাকবে এবং যে তা পরিহার করবে, সে ভ্রষ্টতায় থাকবে।
عنْ يَزِيْدَ بنِ حَيَّانَ قَالَ : انْطَلَقْتُ أنَا وحُصَيْنُ بْنُ سَبْرَة وَعَمْرُو ابنُ مُسْلِم إِلٰـى زَيْدِ بْنِ أرقَمَ فَلَمَّا جَلسْنَا إِلَيْهِ قَالَ لَهُ حُصَيْن : لَقَدْ لقِيتَ يَا زَيْدُ خَيْراً كَثِيراً رَأيْتَ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ وَسَمِعتَ حَدِيثَهُ وغَزوْتَ مَعَهُ وَصَلَّيْتَ خَلْفَهُ : لَقَدْ لَقِيتَ يَا زَيْدُ خَيْراً كَثيراً حَدِّثْنَا يَا زَيْدُ مَا سَمِعْتَ مِنْ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ قَالَ : يَا ابْنَ أخِي وَاللهِ لقد كَبِرَتْ سِنِّي وَقَدُمَ عَهدِي وَنَسِيتُ بَعْضَ الَّذِي كُنْتُ أعِي مِنْ رَسُوْلِ الله ﷺ فَمَا حَدَّثْتُكُمْ فَاقْبَلُوا وَمَا لاَ فَلاَ تُكَلِّفُونيهِ ثُمَّ قَالَ: قَامَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ يَوماً فِينَا خَطِيباً بمَاءٍ يُدْعَى خُمَّاً بَيْنَ مَكَّةَ وَالمَدِينَةِ فَحَمِدَ الله وَأثْنَى عَلَيهِ وَوعظَ وَذَكَّرَ ثُمَّ قَالَ أمَّا بَعدُ ألاَ أَيُّهَا النَّاسُ فَإنَّمَا أنَا بَشَرٌ يُوشِكَ أنْ يَأتِي رَسُوْلُ ربِّي فَأُجِيبَ وَأنَا تَارِكٌ فِيكُم ثَقَلَيْنِ : أوَّلُهُمَا كِتَابُ اللهِ فِيهِ الهُدَى وَالنُّورُ فَخُذُوا بِكِتَابِ الله وَاسْتَمْسِكُوا بِهِ فَحَثَّ عَلَى كِتَابِ الله وَرَغَّبَ فِيهِ ثُمَّ قَالَ وَأهْلُ بَيْتِي أُذكِّرُكُمُ اللهَ في أهلِ بَيْتي أُذَكِّرُكُمُ الله في أَهلِ بَيتي فَقَالَ لَهُ حُصَيْنٌ : وَمَنْ أهْلُ بَيتهِ يَا زَيْدُ أَلَيْسَ نِسَاؤُهُ مِنْ أهْلِ بَيْتِهِ ؟ قَالَ : نِسَاؤُهُ مِنْ أهْلِ بَيتهِ وَلكِنْ أهْلُ بَيتِهِ مَنْ حُرِمَ الصَّدَقَةَ بَعدَهُ قَالَ : وَمَنْ هُمْ ؟ قَالَ : هُمْ آلُ عَلِيٍّ وَآلُ عَقِيلٍ وَآلُ جَعفَرَ وآلُ عَبَّاسٍ قَالَ : كُلُّ هَؤُلاَءِ حُرِمَ الصَّدَقَةَ ؟ قَالَ : نَعَمْ رواه مسلم وفي رواية ألاَ وَإنّي تَارِكٌ فِيكُمْ ثَقَليْنِ : أحَدُهُما كِتَابُ الله وَهُوَ حَبْلُ الله، مَنِ اتَّبَعَهُ كَانَ عَلَى الهُدَى وَمَنْ تَرَكَهُ كَانَ عَلَى ضَلالَة
পরিচ্ছেদঃ রসূল (ﷺ) এর বংশধরের প্রতি শ্রদ্ধা রাখা এবং তাঁদের মাহাত্ম্যের বিবরণ
(২৮৭৪) যায়দ বিন আরকাম (রাঃ) বলেন, বিদায়ী হজ্জে ’গাদীরে খুম’ নামক জায়গায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন,
كَأَنِّي قَدْ دُعِيتُ فَأَجَبْتُ إِنِّي قَدْ تَرَكْتُ فِيكُمُ الثَّقَلَيْنِ أَحَدُهُمَا أَكْبَرُ مِنَ الآخَرِ : كِتَابُ اللهِ وَعِتْرَتِي أَهْلُ بَيْتِي فَانْظُرُوا كَيْفَ تَخْلُفُونِي فِيهِمَا فَإِنَّهُمَا لَنْ يَتَفَرَّقَا حَتَى يَرِدَا عَلَيَّ الْحَوْضَ
যেন আমি আহূত হয়েছি এবং সাড়া দিয়েছি। আমি তোমাদের মাঝে দু’টি ভারী জিনিস ছেড়ে যাচ্ছি, একটি অপরটি অপেক্ষা অধিক বড়; আল্লাহর কিতাব ও আমার বংশধর, আহলে বায়ত। সুতরাং খেয়াল রেখো, কীভাবে তাদের ব্যাপারে আমার প্রতিনিধিত্ব করবে। হওযে আমার কাছে না আসা পর্যন্ত উভয়ে পৃথক হবে না।
-
পরিচ্ছেদঃ রসূল (ﷺ) এর বংশধরের প্রতি শ্রদ্ধা রাখা এবং তাঁদের মাহাত্ম্যের বিবরণ
(২৮৭৫) জাবের (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আরাফার দিন খুতবায়) বলেছেন, ’হে লোক সকল! অবশ্যই আমি তোমাদের মাঝে এমন জিনিস ছেড়ে যাচ্ছি; যদি তা ধারণ ক’রে থাকো, তবে কখনই তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না; আর তা হল, আল্লাহর কিতাব এবং আমার আহলে বায়ত।’ (তিরমিযী ৩৭৮৬)
অন্য বর্ণনায় আছে, ’আল্লাহর কিতাব ও আমার সুন্নাহ।’ (হাকেম ৩১৮-৩১৯, সহীহ তারগীব ৩৬)
عَنْ جَابِرِ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّى قَدْ تَرَكْتُ فِيكُمْ مَا إِنْ أَخَذْتُمْ بِهِ لَنْ تَضِلُّوا : كِتَابَ اللهِ وَعِتْرَتِى : أَهْلَ بَيْتِى
পরিচ্ছেদঃ রসূল (ﷺ) এর বংশধরের প্রতি শ্রদ্ধা রাখা এবং তাঁদের মাহাত্ম্যের বিবরণ
(২৮৭৬) ইবনে উমার (রাঃ) আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) থেকে মাওকূফ সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, তোমরা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি তাঁর পরিবারবর্গের মাধ্যমে সম্মান প্রদর্শন কর।
وَعَنْ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا عَن أَبِـيْ بَكرٍ الصِّدِّيقِ - مَوقُوفاً عَلَيهِ - أنَّهُ قَالَ : ارْقَبُوا مُحَمداً ﷺ في أهْلِ بَيْتِهِ رواه البخاري
পরিচ্ছেদঃ রসূল (ﷺ) এর বংশধরের প্রতি শ্রদ্ধা রাখা এবং তাঁদের মাহাত্ম্যের বিবরণ
(২৮৭৭) ওয়াসিলাহ বিন আসক্বা’ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ ইসমাঈলের বংশধর থেকে কিনানাকে মনোনীত করেছেন। ক্বুরাইশকে মনোনীত করেছেন কিনানা থেকে। বানী হাশেমকে মনোনীত করেছেন ক্বুরাইশ থেকে। আর আমাকে মনোনীত করেছেন বানী হাশেম থেকে।
عَنْ وَاثِلَةَ بْنِ الْأَسْقَعِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ يَقُوْلُ إِنَّ اللهَ اصْطَفَى كِنَانَةَ مِنْ وَلَدِ إِسْمَاعِيلَ وَاصْطَفَى قُرَيْشًا مِنْ كِنَانَةَ وَاصْطَفَى مِنْ قُرَيْشٍ بَنِى هَاشِمٍ وَاصْطَفَانِى مِنْ بَنِى هَاشِمٍ
পরিচ্ছেদঃ রসূল (ﷺ) এর বংশধরের প্রতি শ্রদ্ধা রাখা এবং তাঁদের মাহাত্ম্যের বিবরণ
(২৮৭৮) আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল মুত্তালিব। মহান আল্লাহ সৃষ্টি রচনা ক’রে আমাকে সৃষ্টির সেরা (মানুষের) দলভুক্ত করেছেন। সৃষ্টিকে (আরব ও আজম) দুই দলে বিভক্ত করেছেন এবং আমাকে উত্তম দলে স্থান দিয়েছেন। তিনি বিভিন্ন গোত্র সৃষ্টি করেছেন এবং আমাকে সর্বশ্রেষ্ঠ গোত্রে জন্ম দিয়েছেন। বিভিন্ন বাড়ি সৃষ্টি করেছেন এবং আমাকে সর্বশ্রেষ্ঠ বাড়িতে প্রেরণ করেছেন। সুতরাং আমি বাড়ির দিক দিয়ে তোমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ এবং ব্যক্তির দিক দিয়েও তোমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ।
عَنِ الْعَبَّاسِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ أَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ إِنَّ اللهَ خَلَقَ الْخَلْقَ فَجَعَلَنِي فِي خَيْرِ خَلْقِهِ وَجَعَلَهُمْ فِرْقَتَيْنِ فَجَعَلَنِي فِي خَيْرِ فِرْقَةٍ وَخَلَقَ الْقَبَائِلَ فَجَعَلَنِي فِي خَيْرِ قَبِيلَةٍ وَجَعَلَهُمْ بُيُوتًا فَجَعَلَنِي فِي خَيْرِهِمْ بَيْتًا فَأَنَا خَيْرُكُمْ بَيْتًا وَخَيْرُكُمْ نَفْسًا