পরিচ্ছেদঃ ফাতেমা (রাঃ) এর মাহাত্ম্য
(২৮৬৮) হুযাইফা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার নিকট এক ফিরিশতা আসমান থেকে অবতরণ করে আমাকে সালাম দিয়েছেন, যিনি ইতিপূর্বে কোনদিন অবতরণ করেননি। তিনি আমাকে সুসংবাদ দিয়েছেন যে, হাসান ও হুসাইন জান্নাতী যুবকদের সর্দার এবং ফাতেমা জান্নাতী মহিলাদের সর্দার।
عَنْ حُذَيْفَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ أتانِي مَلَكٌ فَسَلَّمَ عَلَيَّ نَزَلَ مِنَ السَّماءِ لَمْ يَنْزِلْ قَبْلَهَا فَبَشَّرَنِـيْ أنَّ الْـحَسَنَ والْـحُسَيْـنَ سَيِّدَا شَبَابِ أهْلِ الْـجَنَّةِ وأنَّ فاطِمَةَ سَيِّدَةُ نِسَاءِ أهْلِ الْـجَنَّةِ
পরিচ্ছেদঃ ফাতেমা (রাঃ) এর মাহাত্ম্য
(২৮৬৯) আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, ’আকার-আচরণ ও কথাবার্তায় ফাতেমা (কার্রামাল্লাহু অজহাহা) ছাড়া অন্য কাউকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সদৃশ দেখিনি। ফাতেমা তাঁর কাছে এলে তিনি তার দিকে উঠে যেতেন, স্বাগত জানাতেন, তার হাত ধরতেন, তাকে চুমা দিতেন এবং তাঁর বসার জায়গায় বসাতেন। আর তিনি তাঁর কাছে এলে সে তাঁর দিকে উঠে যেত, স্বাগত জানাত, তাঁর হাত ধরত, তাঁকে চুমা দিত এবং তার বসার জায়গায় বসাত।’
عَنْ عَائِشَةَ بِنْتِ طَلْحَةَ عَنْ أُمِّ الْمُؤْمِنِينَ عَائِشَةَ رضى الله عنها أَنَّهَا قَالَتْ مَا رَأَيْتُ أَحَدًا كَانَ أَشْبَهَ سَمْتًا وَهَدْيًا وَدَلاًّ - وَقَالَ الْحَسَنُ حَدِيثًا وَكَلاَمًا وَلَمْ يَذْكُرِ الْحَسَنُ السَّمْتَ وَالْهَدْىَ وَالدَّلَّ - بِرَسُوْلِ اللهِ ﷺ مِنْ فَاطِمَةَ كَرَّمَ اللهُ وَجْهَهَا كَانَتْ إِذَا دَخَلَتْ عَلَيْهِ قَامَ إِلَيْهَا فَأَخَذَ بِيَدِهَا وَقَبَّلَهَا وَأَجْلَسَهَا فِى مَجْلِسِهِ وَكَانَ إِذَا دَخَلَ عَلَيْهَا قَامَتْ إِلَيْهِ فَأَخَذَتْ بِيَدِهِ فَقَبَّلَتْهُ وَأَجْلَسَتْهُ فِى مَجْلِسِهَا
পরিচ্ছেদঃ ফাতেমা (রাঃ) এর মাহাত্ম্য
(২৮৭০) মিসওয়ার বিন মাখরামাহ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, একদা আলী (রাঃ) আবূ জাহলের কন্যাকে বিবাহের পয়গাম দিলে ফাতেমা শুনে আববার কাছে এসে বললেন, ’আপনার গোষ্ঠী মনে করে যে, আপনি আপনার মেয়েদের স্বার্থে রাগ দেখান না। এই আলী আবূ জাহলের মেয়েকে বিয়ে করতে চায়!’ এ কথা শুনে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঠে দাঁড়ালেন এবং কালেমা শাহাদত পড়ে বললেন, ’’অতঃপর বলি যে, আমি আবুল আস বিন রাবীকে (মেয়ে) বিবাহ দিয়েছি, সে আমাকে কথা দিয়ে কথা সত্য প্রমাণ করেছে। আর ফাতেমা আমার দেহের টুকরা। আমি তার খারাপ লাগাকে অপছন্দ করি। আল্লাহর কসম! আল্লাহর রসূলের বেটি ও আল্লাহর দুশমনের বেটি একই ব্যক্তির কাছে একত্র হতে পারে না।’’ সুতরাং এর পর আলী (রাঃ) ঐ পয়গাম প্রত্যাহার ক’রে নেন। (বুখারী ৩৭২৯)
অন্য বর্ণনায় আছে, আমার মেয়ে আমার দেহের টুকরা। তাকে যা উদ্বিগ্ন করে, আমাকেও তাই উদ্বিগ্ন করে। তাকে যা কষ্ট দেয়, আমাকেও তাই কষ্ট দেয়। (মুসলিম ৬৪৬০)
عَنْ الْمِسْوَرِ بْنِ مَخْرَمَةَ قَالَ إِنَّ عَلِيًّا خَطَبَ بِنْتَ أَبِـيْ جَهْلٍ فَسَمِعَتْ بِذٰلِكَ فَاطِمَةُ فَأَتَتْ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ فَقَالَتْ يَزْعُمُ قَوْمُكَ أَنَّكَ لَا تَغْضَبُ لِبَنَاتِكَ وَهٰذَا عَلِيٌّ نَاكِحٌ بِنْتَ أَبِـيْ جَهْلٍ فَقَامَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ فَسَمِعْتُهُ حِينَ تَشَهَّدَ يَقُوْلُ أَمَّا بَعْدُ أَنْكَحْتُ أَبَا الْعَاصِ بْنَ الرَّبِيعِ فَحَدَّثَنِي وَصَدَقَنِي وَإِنَّ فَاطِمَةَ بَضْعَةٌ مِنِّي وَإِنِّي أَكْرَهُ أَنْ يَسُوءَهَا وَاللهِ لَا تَجْتَمِعُ بِنْتُ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ وَبِنْتُ عَدُوِّ اللهِ عِنْدَ رَجُلٍ وَاحِدٍ، فَتَرَكَ عَلِيٌّ الْخِطْبَةَ
وفي رواية فَإِنَّمَا ابْنَتِى بَضْعَةٌ مِنِّى يَرِيبُنِى مَا رَابَهَا وَيُؤْذِينِى مَا آذَاهَا
পরিচ্ছেদঃ ফাতেমা (রাঃ) এর মাহাত্ম্য
(২৮৭১) ইবনে মাসঊদ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, হিজরতের পূর্বে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কা’বাগৃহের পাশে নামায পড়ছিলেন। আবূ জাহ্ল ও তার কিছু সাথী সেখানে বসে ছিল। গতকাল উট যবাই হয়েছিল। আবূ জাহ্ল বলল, ’অমুক গোত্রের উটনীর (গর্ভাশয়) ফুলটা নিয়ে এসে মুহাম্মাদের ঘাড়ে কে রাখতে পারবে?’ এ কথা শুনে সম্প্রদায়ের সব চাইতে বেশি হতভাগা লোকটি উঠে গিয়ে ফুলটি নিয়ে এল। অতঃপর যখনই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদায় গেলেন, তখনই সে সেটাকে তাঁর ঘাড়ে চাপিয়ে দিল! আর তা দেখে ওরা একে অন্যের গায়ে ঢলাঢলি ক’রে হাসতে শুরু করল। সেখানে এমন কেউ ছিল না, যে সেটাকে তাঁর ঘাড় থেকে সরিয়ে দেবে।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদাতেই থাকলেন। অতঃপর কোন একজন তা দেখে নিজে কিছু করতে না পেরে নবী-কন্যা ফাতেমাকে গিয়ে খবর দিল। কিশোরী ফাতেমা আববার এমন বিপদের কথা শুনে ছুটে এসে তা তাঁর ঘাড় হতে সরিয়ে ফেললেন এবং তাদের উদ্দেশ্যে গালাগালি করলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায শেষ করে উচ্চস্বরে ঐ দৃষ্কৃতীদের জন্য বদ্দুআ করলেন এবং তা কবুলও হয়ে গেল।
عَنْ ابْنِ مَسْعُودٍ قَالَ بَيْنَمَا رَسُوْلُ اللهِ ﷺ يُصَلِّى عِنْدَ الْبَيْتِ وَأَبُو جَهْلٍ وَأَصْحَابٌ لَهُ جُلُوسٌ وَقَدْ نُحِرَتْ جَزُورٌ بِالأَمْسِ فَقَالَ أَبُو جَهْلٍ أَيُّكُمْ يَقُومُ إِلٰـى سَلاَ جَزُورِ بَنِى فُلاَنٍ فَيَأْخُذُهُ فَيَضَعُهُ فِى كَتِفَىْ مُحَمَّدٍ إِذَا سَجَدَ فَانْبَعَثَ أَشْقَى الْقَوْمِ فَأَخَذَهُ فَلَمَّا سَجَدَ النَّبِىُّ ﷺ وَضَعَهُ بَيْنَ كَتِفَيْهِ قَالَ فَاسْتَضْحَكُوا وَجَعَلَ بَعْضُهُمْ يَمِيلُ عَلَى بَعْضٍ وَأَنَا قَائِمٌ أَنْظُرُ لَوْ كَانَتْ لِـىْ مَنَعَةٌ طَرَحْتُهُ عَنْ ظَهْرِ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ وَالنَّبِىُّ ﷺ سَاجِدٌ مَا يَرْفَعُ رَأْسَهُ حَتّٰـى انْطَلَقَ إِنْسَانٌ فَأَخْبَرَ فَاطِمَةَ فَجَاءَتْ وَهِىَ جُوَيْرِيَةُ فَطَرَحَتْهُ عَنْهُ ثُمَّ أَقْبَلَتْ عَلَيْهِمْ تَشْتِمُهُمْ فَلَمَّا قَضَى النَّبِىُّ ﷺ صَلاَتَهُ رَفَعَ صَوْتَهُ ثُمَّ دَعَا عَلَيْهِمْ
পরিচ্ছেদঃ ফাতেমা (রাঃ) এর মাহাত্ম্য
(২৮৭২) আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রীরা সকলেই তাঁর কাছে ছিল। ইত্যবসরে ফাতেমা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) হেটে (আমাদের নিকট) এল। তার চলন এবং আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চলনের মধ্যে কোন পার্থক্য ছিল না। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দেখে স্বাগত জানালেন এবং বললেন, ’আমার কন্যার শুভাগমন হোক।’ অতঃপর তিনি তাকে নিজের ডান অথবা বাম পাশে বসালেন। তারপর তিনি তাকে কানে কানে গোপনে কিছু বললেন। ফাতেমা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) জোরেশোরে কাঁদতে আরম্ভ করল। সুতরাং তিনি তার অস্থিরতা দেখে পুনর্বার তাকে কানে কানে কিছু বললেন। ফলে (এবার) সে হাসতে লাগল। (আয়েশা বলেন,) অতঃপর আমি ফাতেমাকে বললাম, ’রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রীদের মাঝে (তাদেরকে বাদ দিয়ে) তোমাকে গোপনে কিছু বলার জন্য বেছে নেওয়া সত্ত্বেও তুমি কাঁদছ?’ তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন উঠে গেলেন, তখন আমি তাকে বললাম, ’রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাকে কী বললেন?’ সে বলল, ’আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর গোপন কথা প্রকাশ করব না।’
অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকাল করলে আমি ফাতেমাকে বললাম, ’তোমার প্রতি আমার অধিকার রয়েছে। তাই আমি তোমাকে কসম দিয়ে বলছি যে, তুমি আমাকে বল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাকে কী বলেছিলেন?’ সে বলল, ’এখন বলতে কোন অসুবিধা নেই।’ আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমবারে কানাকানি করার সময় আমাকে সংবাদ দিয়েছিলেন যে, ’’জিবরীল (আঃ) প্রত্যেক বছর একবার (অথবা দু’বার) ক’রে কুরআন শোনান। কিন্তু এখন তিনি দু’বার শুনালেন। সুতরাং আমি বুঝতে পারছি যে, আমার মৃত্যু সন্নিকটে। সুতরাং তুমি (হে ফাতেমা!) আল্লাহকে ভয় করো এবং ধৈর্য ধারণ করো। কেননা, আমি তোমার জন্য উত্তম অগ্রগামী।’’ সুতরাং আমি (এ কথা শুনে) কেঁদে ফেললাম, যা তুমি দেখলে। অতঃপর তিনি আমার অস্থিরতা দেখে দ্বিতীয়বার কানে কানে বললেন, ’’হে ফাতেমা! তুমি কি এটা পছন্দ কর না যে, মু’মিন নারীদের তুমি সর্দার হবে অথবা এই উম্মতের নারীদের সর্দার হবে?’’ সুতরাং (এমন সুসংবাদ শুনে) আমি হাসলাম, যা তুমি দেখলে।’
وَ عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا قَالَتْ : كُنَّ أَزْوَاجُ النَّبيِّ ﷺ عِنْدَهُ فَأقْبَلَتْ فَاطِمَةُ رَضِيَ اللهُ عَنهَا تَمْشِي مَا تُخْطِئُ مِشيتُهَا مِنْ مشْيَةِ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ شَيْئاً فَلَمَّا رَآهَا رَحَّبَ بِهَا وَقَالَ مَرْحَباً بابْنَتِي ثُمَّ أجْلَسَهَا عَنْ يَمِينِهِ أَوْ عَنْ شِمَالِهِ ثُمَّ سَارَّهَا فَبَكتْ بُكَاءً شَدِيداً فَلَمَّا رَأَى جَزَعَهَا سَارَّهَا الثَّانِيَةَ فَضَحِكَتْ فَقُلتُ لَهَا : خَصَّكِ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مِنْ بَيْنِ نِسَائِهِ بِالسِّرَارِ ثُمَّ أنْتِ تَبْكِينَ فَلَمَّا قَامَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ سَألْتُهَا : مَا قَالَ لَكِ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ ؟ قَالَتْ : مَا كُنْتُ لأُفْشِي عَلَى رَسُوْلِ اللهِ ﷺ سِرَّهُ فَلَمَّا تُوُفِّيَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ قُلْتُ : عَزَمْتُ عَلَيْكِ بِمَا لِي عَلَيْكِ مِنَ الحَقِّ لَمَا حَدَّثْتِنِي مَا قَالَ لَكِ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ ؟ فَقَالَتْ : أمَّا الآنَ فَنَعَمْ أمَّا حِيْنَ سَارَّنِي في المَرَّةِ الأُولَى فَأَخْبَرَنِي أَنَّ جِبْريلَ كَانَ يُعَارِضُهُ القُرآنَ فِي كُلِّ سَنَةٍ مَرَّةً أَوْ مَرَّتَيْنِ وَأنَّهُ عَارَضَهُ الآنَ مَرَّتَيْنِ وَإنِّي لا أُرَى الأجَلَ إِلاَّ قَدِ اقْتَرَبَ فَاتَّقِي اللهَ وَاصْبِرِي فَإِنَّهُ نِعْمَ السَّلَفُ أنَا لَكِ فَبَكَيْتُ بُكَائِي الَّذِي رَأيْتِ فَلَمَّا رَأى جَزَعِي سَارَّنِي الثَّانِيَةَ فَقَالَ يَا فَاطِمَةُ أمَا تَرْضَيْنَ أنْ تَكُونِي سَيِّدَةَ نِسَاءِ المُؤُمِنِينَ أَوْ سَيَّدَةَ نِساءِ هذِهِ الأُمَّةِ ؟ فَضَحِكتُ ضَحِكِي الَّذِي رَأيْتِ متفقٌ عَلَيْهِ وهذا لفظ مسلم