পরিচ্ছেদঃ খাদীজা (রাঃ) এর মাহাত্ম্য
(২৮৫৮) মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রথম স্ত্রী খাদীজা (রাঃ), তিনিই নবুঅতের শুরুতে সান্ত্বনা দিয়ে সাহস দিয়েছিলেন, তিনি বলেছিলেন, ’কক্ষনো না। আপনি সুসংবাদ নিন। আল্লাহর কসম! আল্লাহ আপনাকে কখনই লাঞ্ছিত করবেন না। আল্লাহর কসম! আপনি তো আত্মীয়তার বন্ধন বজায় রাখেন, সত্য কথা বলেন, (অপরের) বোঝা বইয়ে দেন, মেহমানের খাতির করেন এবং বিপদগ্রস্তকে সাহায্য করেন।’ অতঃপর স্ত্রী খাদীজা (রাঃ) মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নিয়ে তাঁর চাচাতো ভাই অরাকা বিন নাওফালের নিকট উপস্থিত হলেন। তিনি ছিলেন একজন বয়োবৃদ্ধ অন্ধ। তিনি জাহেলিয়াতের যুগে খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তাওরাত-ইঞ্জীল তিনি লিখতে-পড়তে জানতেন। আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে হিরা গুহার সমস্ত ঘটনা খুলে বললেন। অরাকা বললেন, ’ইনি তো সেই নামূস (ফিরিশতা জিবরীল), যিনি মূসার নিকট অবতীর্ণ হতেন। হায়! যেদিন আপনাকে আপনার স্বজাতি দেশ থেকে বের করে দেবে, সেদিন যদি আমি জীবিত ও যুবক থাকতাম।’
এ কথা শুনে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ’’তারা কি আমাকে দেশ থেকে বহিষ্কার করবে?’’ অরাকা বললেন, ’হ্যাঁ। আপনার মতো যে কেউই এ সত্য আনয়ন করেছেন, তিনিই নির্যাতিত হয়েছেন। আমি যদি সেই সময় পর্যন্ত জীবিত থাকি, তাহলে আপনার সর্বপ্রকার সহযোগিতা করব।’ কিন্তু এর অল্পকাল পরেই অরাকা মৃত্যুবরণ করেন।
كَلاَّ أَبْشِرْ فَوَاللهِ لاَ يُخْزِيكَ اللهُ أَبَدًا وَاللهِ إِنَّكَ لَتَصِلُ الرَّحِمَ وَتَصْدُقُ الْحَدِيثَ وَتَحْمِلُ الْكَلَّ وَتَكْسِبُ الْمَعْدُومَ وَتَقْرِى الضَّيْفَ وَتُعِينُ عَلَى نَوَائِبِ الْحَقِّ فَانْطَلَقَتْ بِهِ خَدِيجَةُ حَتّٰـى أَتَتْ بِهِ وَرَقَةَ بْنَ نَوْفَلِ بْنِ أَسَدِ بْنِ عَبْدِ الْعُزَّى وَهُوَ ابْنُ عَمِّ خَدِيجَةَ أَخِى أَبِيهَا وَكَانَ امْرَأً تَنَصَّرَ فِى الْجَاهِلِيَّةِ وَكَانَ يَكْتُبُ الْكِتَابَ الْعَرَبِىَّ وَيَكْتُبُ مِنَ الإِنْجِيلِ بِالْعَرَبِيَّةِ مَا شَاءَ اللهُ أَنْ يَكْتُبَ وَكَانَ شَيْخًا كَبِيرًا قَدْ عَمِىَ فَقَالَتْ لَهُ خَدِيجَةُ أَىْ عَمِّ اسْمَعْ مِنِ ابْنِ أَخِيكَ قَالَ وَرَقَةُ بْنُ نَوْفَلٍ يَا ابْنَ أَخِى مَاذَا تَرَى فَأَخْبَرَهُ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ خَبَرَ مَا رَآهُ فَقَالَ لَهُ وَرَقَةُ هٰذَا النَّامُوسُ الَّذِى أُنْزِلَ عَلَى مُوسَى ﷺ يَا لَيْتَنِى فِيهَا جَذَعًا يَا لَيْتَنِى أَكُونُ حَيًّا حِينَ يُخْرِجُكَ قَوْمُكَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ أَوَمُخْرِجِىَّ هُمْ قَالَ وَرَقَةُ نَعَمْ لَمْ يَأْتِ رَجُلٌ قَطُّ بِمَا جِئْتَ بِهِ إِلاَّ عُودِىَ وَإِنْ يُدْرِكْنِى يَوْمُكَ أَنْصُرْكَ نَصْرًا مُؤَزَّرًا
পরিচ্ছেদঃ খাদীজা (রাঃ) এর মাহাত্ম্য
(২৮৫৯) আবূ হুরাইরা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, একদা জিবরীল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললেন, ’হে আল্লাহর রসূল! এই যে খাদীজা আপনার নিকট আসছে, তার সাথে আছে একটি পাত্র, তাতে আছে ব্যঞ্জন বা খাদ্য বা পানীয়। সুতরাং সে এলে আপনি তাকে তার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে এবং আমার পক্ষ থেকে সালাম জানান। আর তাকে জান্নাতে (তার জন্য) ফাঁপা মুক্তা নির্মিত একটি অট্টালিকার সুসংবাদ দান করুন; যেখানে কোন হট্টগোল ও ক্লান্তি থাকবে না।
عَنْ أَبِـيْ هُرَيْرَةَ قَالَ أَتَى جِبْرِيلُ النَّبِىَّ ﷺ فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ هَذِهِ خَدِيجَةُ قَدْ أَتَتْكَ مَعَهَا إِنَاءٌ فِيهِ إِدَامٌ أَوْ طَعَامٌ أَوْ شَرَابٌ فَإِذَا هِىَ أَتَتْكَ فَاقْرَأْ عَلَيْهَا السَّلاَمَ مِنْ رَبِّهَا عَزَّ وَجَلَّ وَمِنِّى وَبَشِّرْهَا بِبَيْتٍ فِى الْجَنَّةِ مِنْ قَصَبٍ لاَ صَخَبَ فِيهِ وَلاَ نَصَبَ قَالَ أَبُو بَكْرٍ فِى رِوَايَتِهِ عَنْ أَبِـىْ هُرَيْرَةَ وَلَمْ يَقُلْ سَمِعْتُ وَلَمْ يَقُلْ فِى الْحَدِيثِ وَمِنِّى
পরিচ্ছেদঃ খাদীজা (রাঃ) এর মাহাত্ম্য
(২৮৬০) আব্দুল্লাহ ইবনে আবূ আওফা (রাঃ) হতে বর্ণিত, আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাদীজা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) কে জান্নাতে (তাঁর জন্য) ফাঁপা মুক্তা নির্মিত একটি অট্টালিকার সুসংবাদ দান করেছেন; যেখানে কোন হট্টগোল ও ক্লান্তি থাকবে না।
عَنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ أَبِى أَوْفَى قَالَ: بَشَّرَ النَّبِيُّ ﷺ خَدِيجَةَ بِبَيْتٍ مِنْ قَصَبٍ لَا صَخَبَ فِيهِ وَلَا نَصَبَ
পরিচ্ছেদঃ খাদীজা (রাঃ) এর মাহাত্ম্য
(২৮৬১) আয়েশা (রাঃ) বলেন, খাদীজা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-র প্রতি আমার যতটা ঈর্ষা হতো, ততটা ঈর্ষা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অপর কোন স্ত্রীর প্রতি হতো না। অথচ আমি তাঁকে কখনো দেখিনি। কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিকাংশ সময় তাঁর কথা আলোচনা করতেন এবং যখনই তিনি ছাগল যবাই করতেন, তখনই তার বিভিন্ন অঙ্গ কেটে খাদীজার বান্ধবীদের জন্য উপহারস্বরূপ পাঠাতেন।
আমি তাঁকে মাঝে মধ্যে (রসিকতা ছলে) বলতাম, ’মনে হয় যেন দুনিয়াতে খাদীজা ছাড়া আর কোন মেয়েই নেই।’ তখন তিনি (তাঁর প্রশংসা করে) বলতেন, ’’সে এই রকম ছিল, ঐ রকম ছিল। আর তাঁর থেকেই আমার সন্তান-সন্তুতি।
অন্য এক বর্ণনায় আছে, ’নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বকরী যবাই করতেন, তখন খাদীজার বান্ধবীদের নিকট এতটা পরিমাণে মাংস পাঠাতেন, যা তাদের জন্য যথেষ্ট হত।’
অন্য এক বর্ণনায় আছে, ’নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বকরী যবাই করতেন, তখন বলতেন, খাদীজার বান্ধবীদের নিকট এই মাংস পাঠিয়ে দাও।
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ مَا غِرْتُ عَلَى أَحَدٍ مِنْ نِسَاءِ النَّبِيِّ ﷺ مَا غِرْتُ عَلَى خَدِيجَةَ وَمَا رَأَيْتُهَا وَلَكِنْ كَأَنَّ النَّبِـيَّ ﷺ يُكْثِرُ ذِكْرَهَا وَرُبَّمَا ذَبَحَ الشَّاةَ ثُمَّ يُقَطِّعُهَا أَعْضَاءً ثُمَّ يَبْعَثُهَا فِي صَدَائِقِ خَدِيجَةَ فَرُبَّمَا قُلْتُ لَهُ كَأَنَّهُ لَمْ يَكُنْ فِي الدُّنْيَا امْرَأَةٌ إِلَّا خَدِيجَةُ فَيَقُوْلُ إِنَّهَا كَانَتْ وَكَانَتْ وَكَانَ لِي مِنْهَا وَلَدٌ
পরিচ্ছেদঃ খাদীজা (রাঃ) এর মাহাত্ম্য
(২৮৬২) আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, ’একদা খাদীজার বোন হালা বিনতে খুআইলিদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসার অনুমতি চাইল। তিনি খাদীজার অনুমতি চাওয়ার কথা স্মরণ করলেন, সুতরাং তিনি আনন্দবোধ করলেন এবং বললেন, আল্লাহ! হালা বিনতে খুআইলিদ?
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتِ اسْتَأْذَنَتْ هَالَةُ بِنْتُ خُوَيْلِدٍ أُخْتُ خَدِيجَةَ عَلَى رَسُوْلِ اللهِ ﷺ فَعَرَفَ اسْتِئْذَانَ خَدِيجَةَ فَارْتَاحَ لِذٰلِكَ فَقَالَ اللَّهُمَّ هَالَةُ بِنْتُ خُوَيْلِدٍ
পরিচ্ছেদঃ খাদীজা (রাঃ) এর মাহাত্ম্য
(২৮৬৩) আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আমাকে) বলেছেন, ’’আমি (বিবাহের পূর্বে) তোমাকে দু-দুবার স্বপ্নে দেখেছি। দেখলাম তুমি এক খণ্ড রেশমবস্ত্রের মধ্যে রয়েছ। আর আমাকে কেউ বলছে, ’এ হল তোমার স্ত্রী।’ আমি কাপড় সরিয়ে দেখি, সে তো তুমিই। তারপর ভাবলাম, যদি এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়, তাহলে তিনি তা বাস্তবায়ন করবেন।
عَنْ عَائِشَةَ أَنَّهَا قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ أُرِيتُكِ فِى الْمَنَامِ ثَلاَثَ لَيَالٍ جَاءَنِى بِكِ الْمَلَكُ فِى سَرَقَةٍ مِنْ حَرِيرٍ فَيَقُوْلُ هَذِهِ امْرَأَتُكَ فَأَكْشِفُ عَنْ وَجْهِكِ فَإِذَا أَنْتِ هِىَ فَأَقُولُ إِنْ يَكُ هٰذَا مِنْ عِنْدِ اللهِ يُمْضِهِ