পরিচ্ছেদঃ মহানবী (ﷺ) এর ক্ষমাশীলতা
(২৭৮৫) আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত, তিনি একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললেন, ’আপনার উপর কি উহুদের দিনের চেয়েও কঠিন দিন এসেছে?’ তিনি বললেন, ’আমি তোমার কওম থেকে বহু কষ্ট পেয়েছি এবং সবচেয়ে বেশি কষ্ট আক্বাবার দিন পেয়েছি, যেদিন আমি নিজেকে ইবনে আবদে ইয়ালীল ইবনে আব্দে কুলাল (ত্বায়েফের এক বড় সর্দার) এর উপর (ইসলামের দিকে আহবান করার জন্য) পেশ করেছিলাম। সে আমার দাওয়াত গ্রহণ করল না। সুতরাং আমি চিন্তিত হয়ে চলতে শুরু করলাম। তারপর ’ক্বারনুস সাআলিব’ (বর্তমানে সাইল কাবীর) নামক স্থানে পৌঁছলে সেখানে কিছু স্বস্তি অনুভব করলাম। আমি (আকাশের দিকে) মাথা উঠিয়ে দেখতে পেলাম যে, একটা মেঘখণ্ড আমার উপর ছায়া করে আছে। অতঃপর গভীর দৃষ্টিতে দেখলাম, তাতে জিবরীল (আঃ) রয়েছেন। তিনি আমাকে ডেকে বললেন, ’আপনার কউম আপনাকে যে কথা বলেছে এবং তারা আপনাকে যে জবাব দিয়েছে, তা সবই মহান আল্লাহ শুনেছেন।
অতঃপর তিনি আপনার নিকট পর্বতমালার ফিরিশতাকে পাঠিয়েছেন, যেন আপনি তাঁকে তাদের (ত্বায়েফবাসীদের) ব্যাপারে যা ইচ্ছা আদেশ দেন।’ অতঃপর পর্বতমালার ফিরিশতা আমাকে আওয়াজ দিলেন এবং আমাকে সালাম দিয়ে বললেন, ’হে মুহাম্মাদ! আপনার কওম আপনাকে যা বলেছে, তা (সবই) মহান আল্লাহ শুনেছেন। আমি হচ্ছি পর্বতমালার ফিরিশতা। আমার প্রভু আমাকে আপনার নিকট পাঠিয়েছেন, যেন আপনি আমাকে তাদের ব্যাপারে (কোন) নির্দেশ দেন। সুতরাং আপনি কী চান? আপনি চাইলে, আমি (মক্কার) বড় বড় পাহাড় দু’টিকে তাদের উপর চাপিয়ে দেব।’ (এ কথা শুনে) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, (এমন কাজ করবেন না) বরং আমি আশা করছি যে, মহান আল্লাহ তাদের পৃষ্ঠদেশ থেকে এমন লোকের আবির্ভাব ঘটাবেন, যারা এক আল্লাহর উপাসনা করবে এবং তাঁর সাথে কোন জিনিসকে শরীক করবে না।
عن عَائِشَةَ أَنَّهَا قَالَتْ لِرَسُوْلِ اللهِ ﷺ يَا رَسُوْلَ اللهِ هَلْ أَتَى عَلَيْكَ يَوْمٌ كَانَ أَشَدَّ مِنْ يَوْمِ أُحُدٍ فَقَالَ لَقَدْ لَقِيتُ مِنْ قَوْمِكِ وَكَانَ أَشَدَّ مَا لَقِيتُ مِنْهُمْ يَوْمَ الْعَقَبَةِ إِذْ عَرَضْتُ نَفْسِى عَلَى ابْنِ عَبْدِ يَالِيلَ بْنِ عَبْدِ كُلاَلٍ فَلَمْ يُجِبْنِى إِلٰـى مَا أَرَدْتُ فَانْطَلَقْتُ وَأَنَا مَهْمُومٌ عَلٰى وَجْهِى فَلَمْ أَسْتَفِقْ إِلاَّ بِقَرْنِ الثَّعَالِبِ فَرَفَعْتُ رَأْسِى فَإِذَا أَنَا بِسَحَابَةٍ قَدْ أَظَلَّتْنِى فَنَظَرْتُ فَإِذَا فِيهَا جِبْرِيلُ فَنَادَانِى فَقَالَ إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ قَدْ سَمِعَ قَوْلَ قَوْمِكَ لَكَ وَمَا رَدُّوا عَلَيْكَ وَقَدْ بَعَثَ إِلَيْكَ مَلَكَ الْجِبَالِ لِتَأْمُرَهُ بِمَا شِئْتَ فِيهِمْ قَالَ فَنَادَانِى مَلَكُ الْجِبَالِ وَسَلَّمَ عَلَىَّ ثُمَّ قَالَ يَا مُحَمَّدُ إِنَّ اللهَ قَدْ سَمِعَ قَوْلَ قَوْمِكَ لَكَ وَأَنَا مَلَكُ الْجِبَالِ وَقَدْ بَعَثَنِى رَبُّكَ إِلَيْكَ لِتَأْمُرَنِى بِأَمْرِكَ فَمَا شِئْتَ إِنْ شِئْتَ أَنْ أُطْبِقَ عَلَيْهِمُ الأَخْشَبَيْنِ فَقَالَ لَهُ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ بَلْ أَرْجُو أَنْ يُخْرِجَ اللهُ مِنْ أَصْلاَبِهِمْ مَنْ يَعْبُدُ اللهَ وَحْدَهُ لاَ يُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا
পরিচ্ছেদঃ মহানবী (ﷺ) এর ক্ষমাশীলতা
(২৭৮৬) আবূ হুরাইরা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, তুফাইল বিন আমর দাওসী ইসলামে দীক্ষেত হলেন। অতঃপর তিনি ফিরে গিয়ে নিজ গোত্রের লোককে ইসলামের দিকে আহবান করলেন। তাঁর আহবানে সাড়া দিয়ে তাঁর আববা ও স্ত্রী ইসলাম গ্রহণ করলেন। বাকী লোকেরা ঈমান আনতে অস্বীকার করল। তিনি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন, ’হে আল্লাহর রসূল! দাওস গোত্র অবাধ্য, তারা ইসলাম গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছে। আপনি তাদের উপর বদ্দুআ করুন।’ এ কথার পর লোকেরা ভাবল যে, তিনি এবার তাদের উপর বদ্দুআ করবেন। কিন্তু তিনি দু’আ করে বললেন, ’হে আল্লাহ! তুমি দাওস গোত্রকে হেদায়াত কর এবং তাদেরকে (আমার নিকট) আনয়ন কর।’
عَنْ أَبِـىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَدِمَ الطُّفَيْلُ وَأَصْحَابُهُ فَقَالُوا يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنَّ دَوْسًا قَدْ كَفَرَتْ وَأَبَتْ فَادْعُ اللهَ عَلَيْهَا فَقِيلَ هَلَكَتْ دَوْسٌ فَقَالَ اللَّهُمَّ اهْدِ دَوْسًا وَائْتِ بِهِمْ
পরিচ্ছেদঃ মহানবী (ﷺ) এর ক্ষমাশীলতা
(২৭৮৭) আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) বলেন, হুনাইন যুদ্ধের গনিমতের মাল বন্টনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছু লোককে (তাদেরকে আকৃষ্ট করার জন্য) প্রাধান্য দিলেন (অর্থাৎ, অন্য লোকের তুলনায় তাদেরকে বেশী মাল দিলেন)। সুতরাং তিনি আক্বরা’ বিন হাবেসকে একশত উট দিলেন এবং উয়াইনা বিন হিস্নকেও তারই মতো দিলেন। অনুরূপ আরবের আরো কিছু সম্ভান্ত মানুষকেও সেদিন (মাল) বন্টনে প্রাধান্য দিলেন। (এ দেখে) একটি লোক বলল, ’আল্লাহর কসম! এই বন্টনে ইনসাফ করা হয়নি এবং এতে আল্লাহর সন্তোষ লাভের ইচ্ছা রাখা হয়নি!’
আমি (ইবনে মাসউদ) বললাম, ’আল্লাহর কসম! নিশ্চয় আমি এই সংবাদ আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পৌঁছে দেব।’ অতএব আমি তাঁর কাছে এসে সেই সংবাদ দিলাম, যা সে বলল। ফলে তাঁর চেহারা পরিবর্তিত হয়ে এমনকি লালবর্ণ হয়ে গেল। অতঃপর তিনি বললেন, ’যদি আল্লাহ ও তাঁর রসূল ইনসাফ না করেন, তাহলে আর কে ইনসাফ করবে? আল্লাহ মূসাকে রহম করুন, তাঁকে এর চেয়ে বেশী কষ্ট দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি ধৈর্য ধারণ করেছিলেন।’ অবশেষে আমি (মনে মনে) বললাম যে, ’আমি এর পরে কোন কথা তাঁর কাছে পৌঁছাব না।’
عَنْ عَبْدِ اللهِ قَالَ لَمَّا كَانَ يَوْمُ حُنَيْنٍ آثَرَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ نَاسًا فِى الْقِسْمَةِ فَأَعْطَى الأَقْرَعَ بْنَ حَابِسٍ مِائَةً مِنَ الإِبِلِ وَأَعْطَى عُيَيْنَةَ مِثْلَ ذٰلِكَ وَأَعْطَى أُنَاسًا مِنْ أَشْرَافِ الْعَرَبِ وَآثَرَهُمْ يَوْمَئِذٍ فِى الْقِسْمَةِ فَقَالَ رَجُلٌ وَاللهِ إِنَّ هَذِهِ لَقِسْمَةٌ مَا عُدِلَ فِيهَا وَمَا أُرِيدَ فِيهَا وَجْهُ اللهِ قَالَ فَقُلْتُ وَاللهِ لأُخْبِرَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ - قَالَ - فَأَتَيْتُهُ فَأَخْبَرْتُهُ بِمَا قَالَ قَالَ فَتَغَيَّرَ وَجْهُهُ حَتّٰـى كَانَ كَالصِّرْفِ ثُمَّ قَالَ فَمَنْ يَعْدِلُ إِنْ لَمْ يَعْدِلِ اللهُ وَرَسُوْلُهُ قَالَ ثُمَّ قَالَ يَرْحَمُ اللهُ مُوسَى قَدْ أُوذِىَ بِأَكْثَرَ مِنْ هٰذَا فَصَبَرَ
পরিচ্ছেদঃ মহানবী (ﷺ) এর ক্ষমাশীলতা
(২৭৮৮) জাবের (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুনাইন থেকে ফেরার পথে জিইর্রানাতে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিলালের কাপড় থেকে নিয়ে চাঁদি বিতরণ করছিলেন। এক ব্যক্তি বলে উঠল, ’হে মুহাম্মাদ! আপনি ন্যায়ভাবে বন্টন করুন। ঐ বন্টন ন্যায্য হচ্ছে না!’ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার এ কথা শুনে বললেন, ’দূর হতভাগা! আমি ন্যায্য বন্টন না করলে আর কে করবে? ইনসাফ না করলে আমি ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত হব।’ উমার (রাঃ) বললেন, ’আমাকে অনুমতি দিন। আমি ঐ মুনাফিকের গর্দানটি উড়িয়ে দিই।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ’ওর কিছু সহচর আছে, যারা কুরআন পড়ে। কিন্তু কুরআন তাদের কণ্ঠনালী পার হয় না। তারা ইসলাম থেকে ঐভাবে বের হয়ে যাবে, যেভাবে তীর শিকার ভেদ করে বের হয়ে যায়।’
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ أَتَى رَجُلٌ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ بِالْجِعْرَانَةِ مُنْصَرَفَهُ مِنْ حُنَيْنٍ وَفِى ثَوْبِ بِلاَلٍ فِضَّةٌ وَرَسُوْلُ اللهِ ﷺ يَقْبِضُ مِنْهَا يُعْطِى النَّاسَ فَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ اعْدِلْ قَالَ وَيْلَكَ وَمَنْ يَعْدِلُ إِذَا لَمْ أَكُنْ أَعْدِلُ لَقَدْ خِبْتَ وَخَسِرْتَ إِنْ لَمْ أَكُنْ أَعْدِلُ فَقَالَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ رضى الله عنه دَعْنِى يَا رَسُوْلَ اللهِ فَأَقْتُلَ هٰذَا الْمُنَافِقَ فَقَالَ مَعَاذَ اللهِ أَنْ يَتَحَدَّثَ النَّاسُ أَنِّى أَقْتُلُ أَصْحَابِى إِنَّ هٰذَا وَأَصْحَابَهُ يَقْرَءُونَ الْقُرْآنَ لاَ يُجَاوِزُ حَنَاجِرَهُمْ يَمْرُقُونَ مِنْهُ كَمَا يَمْرُقُ السَّهْمُ مِنَ الرَّمِيَّةِ
পরিচ্ছেদঃ মহানবী (ﷺ) এর ক্ষমাশীলতা
(২৭৮৯) আবূ মূসা (রাঃ) বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পাশে ছিলাম তখন তিনি মক্কা-মদীনার মাঝে জিইর্রানাতে অবস্থান করছিলেন। তাঁর সাথে ছিলেন বিলাল। ইতি মধ্যে এক বেদুঈন ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলল, ’হে মুহাম্মাদ! আপনি আমাকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা কি পালন করবেন না?’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ’’সুসংবাদ নাও।’’ বেদুঈন তাঁকে বলল, ’আপনি আমাকে সুসংবাদ বহুবার বলেছেন।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাগান্বিত অবস্থায় আবূ মূসা ও বিলালের দিকে ফিরে বললেন, ’’এ তো সুসংবাদ রদ্দ করে দিল, তোমরা তা গ্রহণ কর।’’
তাঁরা বললেন, ’হে আল্লাহর রসূল! আমরা তা গ্রহণ করলাম।’ অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি পাত্রে পানি আনতে বললেন। অতঃপর তিনি তাতে নিজ দুই হাত ও চেহারা ধুলেন এবং কুলি ক’রে (কুলির পানি) তাতে দিলেন। তারপর বললেন, ’এ থেকে পান কর এবং তোমাদের চেহারা ও বুকে ঢেলে নাও এবং সুসংবাদ গ্রহণ কর।’
তাঁরা পাত্রটি নিয়ে তাই করলেন, যা করতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদেরকে আদেশ করেছিলেন। পর্দার আড়াল থেকে উম্মে সালামাহ ডাক দিয়ে বললেন, ’তোমাদের পাত্রে যা আছে, তার কিছু তোমাদের আম্মার জন্য বাঁচিয়ে রাখ।’ সুতরাং তাঁরা তাঁর জন্য কিছু অবশিষ্ট রাখলেন।
عَنْ أَبِى مُوسَى قَالَ كُنْتُ عِنْدَ النَّبِىِّ ﷺ وَهُوَ نَازِلٌ بِالْجِعْرَانَةِ بَيْنَ مَكَّةَ وَالْمَدِينَةِ وَمَعَهُ بِلاَلٌ فَأَتَى رَسُوْلَ اللهِ ﷺ رَجُلٌ أَعْرَابِىٌّ فَقَالَ أَلاَ تُنْجِزُ لِـىْ يَا مُحَمَّدُ مَا وَعَدْتَنِى فَقَالَ لَهُ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ أَبْشِرْ فَقَالَ لَهُ الأَعْرَابِىُّ أَكْثَرْتَ عَلَىَّ مِنْ أَبْشِرْ فَأَقْبَلَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ عَلَى أَبِى مُوسَى وَبِلاَلٍ كَهَيْئَةِ الْغَضْبَانِ فَقَالَ إِنَّ هٰذَا قَدْ رَدَّ الْبُشْرَى فَاقْبَلاَ أَنْتُمَا فَقَالاَ قَبِلْنَا يَا رَسُوْلَ اللهِ ثُمَّ دَعَا رَسُوْلُ اللهِ ﷺ بِقَدَحٍ فِيهِ مَاءٌ فَغَسَلَ يَدَيْهِ وَوَجْهَهُ فِيهِ وَمَجَّ فِيهِ ثُمَّ قَالَ اشْرَبَا مِنْهُ وَأَفْرِغَا عَلَى وُجُوهِكُمَا وَنُحُورِكُمَا وَأَبْشِرَا فَأَخَذَا الْقَدَحَ فَفَعَلاَ مَا أَمَرَهُمَا بِهِ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ فَنَادَتْهُمَا أُمُّ سَلَمَةَ مِنْ وَرَاءِ السِّتْرِ أَفْضِلاَ لأُمِّكُمَا مِمَّا فِى إِنَائِكُمَا فَأَفْضَلاَ لَهَا مِنْهُ طَائِفَةً
পরিচ্ছেদঃ মহানবী (ﷺ) এর ক্ষমাশীলতা
(২৭৯০) আবূ হুরাইরা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তির নিকট ঋণী ছিলেন। তার নিকট থেকে একটি উটের বাচ্চা ধার নিয়েছিলেন। লোকটি ঋণ আদায় করতে এসে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে কর্কশ ভাষায় কটু কথা শোনাতে শুরু করে দিল। তা দেখে সাহাবাগণ তাকে (ধমক দিয়ে) বাধা দিতে চেষ্টা করলেন। কিন্তু মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হকদারের কথা বলার অধিকার আছে। তোমরা ওর ঋণ শোধ করে দাও। ওর জন্য একটি উট ক্রয় কর।
সুতরাং তার জন্য উট কিনতে যাওয়া হল। অথবা তাঁর নিকট যখন সদকার উট এল তখন তিনি ঐ লোকটির উটের বাচ্চা পরিশোধ করতে সাহাবাকে আদেশ করলেন। বলা হল, ’উটগুলোর মধ্যে সবগুলোই বড় বড় উট রয়েছে, উটের কোন বাচ্চা ওদের মধ্যে নেই।’ তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ঐ বড় উটই দিয়ে দাও। কারণ, তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি শ্রেষ্ঠ যে (ঋণ) পরিশোধের ব্যাপারে উত্তম।
عَنْ أَبِـىْ هُرَيْرَةَ قَالَ كَانَ لِرَجُلٍ عَلَى رَسُوْلِ اللهِ ﷺ حَقٌّ فَأَغْلَظَ لَهُ فَهَمَّ بِهِ أَصْحَابُ النَّبِىِّ ﷺ فَقَالَ النَّبِىُّ ﷺ إِنَّ لِصَاحِبِ الْحَقِّ مَقَالاً فَقَالَ لَهُمُ اشْتَرُوا لَهُ سِنًّا فَأَعْطُوهُ إِيَّاهُ فَقَالُوا إِنَّا لاَ نَجِدُ إِلاَّ سِنًّا هُوَ خَيْرٌ مِنْ سِنِّهِ قَالَ فَاشْتَرُوهُ فَأَعْطُوهُ إِيَّاهُ فَإِنَّ مِنْ خَيْرِكُمْ أَوْ خَيْرَكُمْ أَحْسَنُكُمْ قَضَاءً
পরিচ্ছেদঃ মহানবী (ﷺ) এর ক্ষমাশীলতা
(২৭৯১) আনাস (রাঃ) বলেন, (একদা) আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে পথ চলছিলাম। সে সময় তাঁর উপর মোটা পেড়ে একখানি নাজরানী চাদর ছিল। অতঃপর পথে এক বেদুঈনের সঙ্গে দেখা হল। সে তাঁর চাদর ধরে খুব জোরে টান দিল। আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাঁধের এক পাশে দেখলাম যে, খুব জোরে টানার কারণে চাদরের পাড়ের দাগ পড়ে গেছে। পুনরায় সে বলল, ’ওহে মুহাম্মাদ! তোমার নিকট আল্লাহর যে মাল আছে, তা থেকে আমাকে দেওয়ার আদেশ কর।’ তিনি তার দিকে মুখ ফিরিয়ে হাসলেন। অতঃপর তাকে (কিছু মাল) দেওয়ার নির্দেশ দিলেন।
عَنْ أَنَسٍ بْنِ مَالِكٍ قَالَ كُنْتُ أَمْشِى مَعَ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ وَعَلَيْهِ رِدَاءٌ نَجْرَانِىٌّ غَلِيظُ الْحَاشِيَةِ فَأَدْرَكَهُ أَعْرَابِىٌّ فَجَبَذَهُ بِرِدَائِهِ جَبْذَةً شَدِيدَةً نَظَرْتُ إِلٰـى صَفْحَةِ عُنُقِ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ وَقَدْ أَثَّرَتْ بِهَا حَاشِيَةُ الرِّدَاءِ مِنْ شِدَّةِ جَبْذَتِهِ ثُمَّ قَالَ يَا مُحَمَّدُ مُرْ لِـىْ مِنْ مَالِ اللهِ الَّذِى عِنْدَكَ فَالْتَفَتَ إِلَيْهِ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ فَضَحِكَ ثُمَّ أَمَرَ لَهُ بِعَطَاءٍ
পরিচ্ছেদঃ মহানবী (ﷺ) এর ক্ষমাশীলতা
(২৭৯২) আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর করতল অপেক্ষা অধিকতর কোমল কোন রেশমবস্ত্র কখনো স্পর্শ করিনি এবং সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দেহের সুগন্ধি অপেক্ষা অধিকতর সুগন্ধ কখনো আঘ্রাণ করিনি। আমি দশ বছর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খিদমত করেছি, কিন্তু কখনো তিনি আমার উপর ’উঃ’ বলেননি। যা আমি স্বেচ্ছায় করেছি তার উপর তিনি আমাকে বলেননি যে, ’তা কেন করলে?’ আর যা করিনি তার জন্যও বলেননি যে, ’কেন করলে না?
عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ مَا مَسِسْتُ حَرِيرًا وَلَا دِيبَاجًا أَلْيَنَ مِنْ كَفِّ النَّبِيِّ ﷺ وَلَا شَمِمْتُ رِيحًا قَطُّ أَوْ عَرْفًا قَطُّ أَطْيَبَ مِنْ رِيحِ أَوْ عَرْفِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ خَدَمْتُ النَّبِيَّ ﷺ عَشْرَ سِنِينَ فَمَا قَالَ لِي أُفٍّ وَلَا لِمَ صَنَعْتَ وَلَا أَلَّا صَنَعْتَ؟
পরিচ্ছেদঃ মহানবী (ﷺ) এর ক্ষমাশীলতা
(২৭৯৩) আনাস (রাঃ) আরো বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকেদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর চরিত্রের মানুষ ছিলেন। একদা তিনি কোন প্রয়োজনে আমাকে পাঠালেন। আমি বললাম, ’আল্লাহর কসম! আমি যাব না।’ অথচ আমার মনে ছিল আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে কাজের আদেশ দিয়েছেন, তার জন্য আমি যাব। সুতরাং আমি বের হলাম। এক সময় কিছু শিশুদের পাশ দিয়ে পার হলাম। তারা বাজারে খেলা করছিল। (আমি সেখানে দাঁড়িয়ে খেলা দেখতে লাগলাম অথবা তাদের সাথে খেলতে লাগলাম।) ইতি মধ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার পিছন দিক থেকে এসে আমার ঘাড়ে ধরলেন। আমি তাঁর দিকে তাকিয়ে দেখলাম, তিনি হাসছেন। তিনি বললেন, হে উনাইস! আমি তোমাকে যেখানে যেতে আদেশ করেছিলাম, সেখানে গিয়েছিলে? আমি বললাম, ’এখন যাচ্ছি হে আল্লাহর রসূল!
عَنْ أَنَسٍ قاَلَ: كَانَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مِنْ أَحْسَنِ النَّاسِ خُلُقًا فَأَرْسَلَنِى يَوْمًا لِحَاجَةٍ فَقُلْتُ وَاللهِ لاَ أَذْهَبُ وَفِى نَفْسِى أَنْ أَذْهَبَ لِمَا أَمَرَنِى بِهِ نَبِىُّ اللهِ ﷺ فَخَرَجْتُ حَتّٰـى أَمُرَّ عَلَى صِبْيَانٍ وَهُمْ يَلْعَبُونَ فِى السُّوقِ فَإِذَا رَسُوْلُ اللهِ ﷺ قَدْ قَبَضَ بِقَفَاىَ مِنْ وَرَائِى قَالَ فَنَظَرْتُ إِلَيْهِ وَهُوَ يَضْحَكُ فَقَالَ يَا أُنَيْسُ أَذَهَبْتَ حَيْثُ أَمَرْتُكَ قَالَ قُلْتُ نَعَمْ أَنَا أَذْهَبُ يَا رَسُوْلَ اللهِ
পরিচ্ছেদঃ মহানবী (ﷺ) এর ক্ষমাশীলতা
(২৭৯৪)আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) বলেন, এক ব্যক্তি এসে জিজ্ঞাসা করল, ’হে আল্লাহর রসূল! আমরা চাকরকে কতবার ক্ষমা করব?’ উত্তর না দিয়ে তিনি চুপ থাকলেন। সে আবার জিজ্ঞাসা করলে তিনি আবারও চুপ থাকলেন। তৃতীয়বারে তিনি বললেন, তোমরা তাকে প্রত্যহ ৭০ বার ক্ষমা কর।
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو قال: جَاءَ رَجُلٌ إِلٰـى النَّبِىِّ ﷺ فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ كَمْ نَعْفُو عَنِ الْخَادِمِ فَصَمَتَ ثُمَّ أَعَادَ عَلَيْهِ الْكَلاَمَ فَصَمَتَ فَلَمَّا كَانَ فِى الثَّالِثَةِ قَالَ اعْفُوا عَنْهُ فِى كُلِّ يَوْمٍ سَبْعِينَ مَرَّةً
পরিচ্ছেদঃ মহানবী (ﷺ) এর ক্ষমাশীলতা
(২৭৯৫) সালমান (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (হে আল্লাহ!) আমার উম্মতের যে ব্যক্তিকে রাগান্বিত হয়ে আমি কোন গালি দিয়েছি অথবা অভিশাপ করেছি, তুমি কিয়ামতে তার জন্য রহমত বা দু’আর রূপ দান করো। কারণ আমি একজন আদম-সন্তান, আমি রাগান্বিত হই, যেমন তারা রাগান্বিত হয়। (আর তুমি তো আমাকে বিশ্বজাহানের জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছ।)
عَنْ سَلْمَانَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ أَيُّمَا رَجُلٍ مِنْ أُمَّتِى سَبَبْتُهُ سَبَّةً أَوْ لَعَنْتُهُ لَعْنَةً فِى غَضَبِى - فَإِنَّمَا أَنَا مِنْ وَلَدِ آدَمَ أَغْضَبُ كَمَا يَغْضَبُونَ وَإِنَّمَا بَعَثَنِى رَحْمَةً لِلْعَالَمِينَ - فَاجْعَلْهَا عَلَيْهِمْ صَلاَةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ