পরিচ্ছেদঃ মহানবী (ﷺ) এর মহানুভবতা ও স্নেহশীলতা
(২৭৬৮) জাবের (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ’’আমার ও তোমাদের উদাহরণ ঐ ব্যক্তির মতো, যে আগুন প্রজ্বলিত করল। অতঃপর তাতে উচ্চুঙ্গ ও পতঙ্গ পড়তে আরম্ভ করল, আর সে ব্যক্তি তা হতে তাদেরকে বাধা দিতে লাগল। আমিও তোমাদের কোমর ধরে তোমাদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাচ্ছি, আর তোমরা আমার হাত থেকে ছুটে গিয়ে (জাহান্নামের আগুনে) পতিত হচ্ছ।
عَنْ جَابِرٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَثَلِى وَمَثَلُكُمْ كَمَثَلِ رَجُلٍ أَوْقَدَ نَارًا فَجَعَلَ الْجَنَادِبُ وَالْفَرَاشُ يَقَعْنَ فِيهَا وَهُوَ يَذُبُّهُنَّ عَنْهَا وَأَنَا آخِذٌ بِحُجَزِكُمْ عَنِ النَّارِ وَأَنْتُمْ تَفَلَّتُونَ مِنْ يَدِى
পরিচ্ছেদঃ মহানবী (ﷺ) এর মহানুভবতা ও স্নেহশীলতা
(২৭৬৯) শাদ্দাদ বিন আওস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, অবশ্যই আল্লাহ প্রত্যেক বস্তুর উপর অনুগ্রহ লিপিবদ্ধ (জরুরী) করেছেন। সুতরাং যখন (জিহাদ বা হদ্দে) হত্যা কর, তখন উত্তমরূপে অনুগ্রহের সাথে হত্যা কর এবং যখন যবেহ কর, তখন উত্তমরূপে অনুগ্রহের সাথে যবেহ কর। তোমাদের উচিত, ছুরিকে ধারালো করা এবং বধ্য পশুকে আরাম দেওয়া।
عَنْ شَدَّادِ بْنِ أَوْسٍ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ قَالَ إِنَّ اللهَ كَتَبَ الإِحْسَانَ عَلٰى كُلِّ شَىْءٍ فَإِذَا قَتَلْتُمْ فَأَحْسِنُوا الْقِتْلَةَ وَإِذَا ذَبَحْتُمْ فَأَحْسِنُوا الذَّبْحَ وَلْيُحِدَّ أَحَدُكُمْ شَفْرَتَهُ فَلْيُرِحْ ذَبِيحَتَهُ
পরিচ্ছেদঃ মহানবী (ﷺ) এর মহানুভবতা ও স্নেহশীলতা
(২৭৭০) আনাস (রাঃ) বলেন, একজন ইহুদী কিশোর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খিদমত করত। সে পীড়িত হলে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দেখা করতে এলেন এবং তার শিথানে বসে বললেন, ’’ইসলাম গ্রহণ কর (তুমি মুসলিম হয়ে যাও)।’’ তাঁর এই কথা শুনে সে তার পিতার দিকে (তার মত জানতে) দৃষ্টিপাত করল। তার পিতা তার নিকটেই বসে ছিল। সে বলল, ’আবুল কাসেম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথা তুমি মেনে নাও। ফলে কিশোরটি মুসলিম হয়ে গেল। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই বলতে বলতে বের হয়ে গেলেন, সেই আল্লাহর সকল প্রশংসা, যিনি ওকে জাহান্নাম থেকে বাঁচিয়ে নিলেন।’’ তারপর কিশোরটি মারা গেলে তিনি সকলের উদ্দেশ্যে বললেন, ’’তোমরা তোমাদের এক সাথীর উপর (জানাযার) নামায পড়।
عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ كَانَ غُلَامٌ يَهُودِيٌّ يَخْدُمُ النَّبِيَّ ﷺ فَمَرِضَ فَأَتَاهُ النَّبِيُّ ﷺ يَعُودُهُ فَقَعَدَ عِنْدَ رَأْسِهِ فَقَالَ لَهُ أَسْلِمْ فَنَظَرَ إِلٰـى أَبِيهِ وَهُوَ عِنْدَهُ فَقَالَ لَهُ أَطِعْ أَبَا الْقَاسِمِ ﷺ فَأَسْلَمَ فَخَرَجَ النَّبِيُّ ﷺ وَهُوَ يَقُوْلُ الْحَمْدُ لِلهِ الَّذِي أَنْقَذَهُ مِنْ النَّارِ
পরিচ্ছেদঃ মহানবী (ﷺ) এর মহানুভবতা ও স্নেহশীলতা
(২৭৭১) আবূ কাতাদা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি নামায পড়তে দাঁড়াই এবং আমার ইচ্ছা হয় তা দীর্ঘ করি। অতঃপর আমি শিশুর কান্নার আওয়াজ শুনি। ফলে আমি তার মায়ের কষ্ট হওয়াটা অপছন্দ মনে ক’রে নামায সংক্ষিপ্ত করি।
عَنْ أَبِي قَتَادَةَ عَنْ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ إِنِّي لَأَقُومُ فِي الصَّلَاةِ أُرِيدُ أَنْ أُطَوِّلَ فِيهَا فَأَسْمَعُ بُكَاءَ الصَّبِيِّ فَأَتَجَوَّزُ فِي صَلَاتِي كَرَاهِيَةَ أَنْ أَشُقَّ عَلٰى أُمِّهِ
পরিচ্ছেদঃ মহানবী (ﷺ) এর মহানুভবতা ও স্নেহশীলতা
(২৭৭২) আবূদ দারদা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তুমি কি পছন্দ কর, তোমার হৃদয় নরম হোক এবং তোমার প্রয়োজন পূরণ হোক? এতীমের প্রতি দয়া প্রদর্শন কর, তার মাথায় (সস্নেহে) হাত বুলাও, তাকে তোমার নিজের খাবার খাওয়াও, তাহলে তোমার হৃদয় নরম হবে এবং তোমার প্রয়োজন পূরণ হবে।
عَنْ أبي الدَّرْداءِ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ أَتُحِبُّ أنْ يَلِينَ قَلْبُكَ وتُدْرِكَ حاجَتَكَ ارْحَمِ اليَتِيمَ وامْسَحْ رَأسَهُ وأطْعِمْهُ مِنْ طَعامِكَ يَلِنْ قَلْبُكَ وتُدْرِكْ حَاجَتَكَ
পরিচ্ছেদঃ মহানবী (ﷺ) এর মহানুভবতা ও স্নেহশীলতা
(২৭৭৩) উম্মে বুজাইদ (রাঃ) বর্ণিত, তিনি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললেন, ’হে আল্লাহর রসূল, স্বাল্লাল্লাহু আলাইক! অনেক সময় মিসকীন আমার দরজায় দাঁড়ায়, কিন্তু আমি তাকে দেওয়ার মতো কোন জিনিস পাই না।’ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি একটি পোড়া খুর ছাড়া দেওয়ার মত আর কিছু না পাও, তাহলে তার হাতে তাই দিয়েই বিদায় দাও।
عَنْ أُمِّ بُجَيْدٍ قَالَتْ: يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْكَ إِنَّ الْمِسْكِينَ لَيَقُومُ عَلٰى بَابِى فَمَا أَجِدُ لَهُ شَيْئًا أُعْطِيهِ إِيَّاهُ فَقَالَ لَهَا رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِنْ لَمْ تَجِدِى لَهُ شَيْئًا تُعْطِينَهُ إِيَّاهُ إِلاَّ ظِلْفًا مُحْرَقًا فَادْفَعِيهِ إِلَيْهِ فِى يَدِهِ
পরিচ্ছেদঃ মহানবী (ﷺ) এর মহানুভবতা ও স্নেহশীলতা
(২৭৭৪) মালিক বিন হুওয়াইরিস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা প্রায় সমবয়স্ক কতিপয় নব যুবক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বিশ দিন অবস্থান করলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত দয়ালু ও স্নেহপরবশ ছিলেন। তাই তিনি ধারণা করলেন যে, আমরা আমাদের পরিবারের কাছে ফিরে যাবার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠেছি। সেহেতু তিনি আমাদেরকে প্রশ্ন করলেন যে, আমরা আমাদের পরিবারে কাকে ছেড়ে এসেছি? সুতরাং আমরা তাঁকে জানালাম। আর তিনি ছিলেন বিনম্র দয়াশীল। তিনি বললেন, তোমরা তোমাদের পরিবারের কাছে ফিরে যাও এবং তাদের মাঝেই বসবাস কর। তাদেরকে শিক্ষা দান কর এবং তাদেরকে (ভাল কাজের) আদেশ দাও। অমুক নামায অমুক সময়ে পড়। অমুক নামায অমুক সময়ে পড়। সুতরাং যখন নামাযের সময় হবে, তখন তোমাদের মধ্যে কেউ একজন আযান দেবে এবং তোমাদের মধ্যে যে বড় সে ইমামতি করবে।
عَنْ مَالِكِ بْنِ الْحُوَيْرِثِ قَالَ أَتَيْنَا رَسُوْلَ اللهِ ﷺ وَنَحْنُ شَبَبَةٌ مُتَقَارِبُونَ فَأَقَمْنَا عِنْدَهُ عِشْرِينَ لَيْلَةً وَكَانَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ رَحِيمًا رَقِيقًا فَظَنَّ أَنَّا قَدِ اشْتَقْنَا أَهْلَنَا فَسَأَلَنَا عَنْ مَنْ تَرَكْنَا مِنْ أَهْلِنَا فَأَخْبَرْنَاهُ فَقَالَ ارْجِعُوا إِلٰـى أَهْلِيكُمْ فَأَقِيمُوا فِيهِمْ وَعَلِّمُوهُمْ وَمُرُوهُمْ فَإِذَا حَضَرَتِ الصَّلاَةُ فَلْيُؤَذِّنْ لَكُمْ أَحَدُكُمْ ثُمَّ لْيَؤُمَّكُمْ أَكْبَرُكُمْ
পরিচ্ছেদঃ মহানবী (ﷺ) এর মহানুভবতা ও স্নেহশীলতা
(২৭৭৫) আবূ হুরাইরা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা তোমাদের সওয়ারীর পিঠকে (বক্তৃতার) মেম্বর বানিয়ে নেওয়া থেকে বিরত হও। যেহেতু আল্লাহ তা কেবল তোমাদেরকে দূর দেশে পৌঁছে দেওয়ার জন্য তোমাদের অধীনস্থ করে দিয়েছেন; যেথায় প্রাণান্তকর কষ্ট ব্যতীত তোমরা পৌঁছতে পারতে না। তিনি তোমাদের জন্য মাটি সৃষ্টি করেছেন, তার উপর দাঁড়িয়ে প্রয়োজন সারো।
عَنْ أَبِـىْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِىِّ ﷺ قَالَ إِيَّاكُمْ أَنْ تَتَّخِذُوا ظُهُورَ دَوَابِّكُمْ مَنَابِرَ فَإِنَّ اللهَ إِنَّمَا سَخَّرَهَا لَكُمْ لِتُبَلِّغَكُمْ إِلٰـى بَلَدٍ لَمْ تَكُونُوا بَالِغِيهِ إِلاَّ بِشِقِّ الأَنْفُسِ وَجَعَلَ لَكُمُ الأَرْضَ فَعَلَيْهَا فَاقْضُوا حَاجَتَكُمْ
পরিচ্ছেদঃ মহানবী (ﷺ) এর মহানুভবতা ও স্নেহশীলতা
(২৭৭৬) মুআয বিন আনাস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এই পশুগুলি আরোহণ কর (কষ্ট) থেকে নিরাপদ রাখা অবস্থায় এবং (নেমে) বর্জন কর নিরাপদ করে। আর তাদেরকে চেয়ার বানিয়ে নিয়ো না।
عَنْ مُعَاذِ بْنِ أَنَسٍ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ ارْكَبُوا هَذِهِ الدَّوَابَّ سَالِمَةً وَابْتَدِعُوهَا سَالِمَةً وَلَا تَتَّخِذُوهَا كَرَاسِيّ
পরিচ্ছেদঃ মহানবী (ﷺ) এর মহানুভবতা ও স্নেহশীলতা
(২৭৭৭) আবূ হুরাইরা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন তোমাদের কোন ব্যক্তির খাদেম (দাস-দাসী) তার নিকট খাবার নিয়ে আসে, তখন যদি তাকে নিজ সঙ্গে (খেতে) না বসায়, তাহলে সে যেন তাকে (কমপক্ষে তার হাতে) এক খাবল বা দু’ খাবল অথবা এক গ্রাস বা দু’ গ্রাস (ঐ খাবার থেকে) তুলে দেয়। কেননা, সে (খাদেম) তা পাক (করার যাবতীয় কষ্ট বরণ) করেছে।
عَنْ أَبِـيْ هُرَيْرَةَ عَنْ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ إِذَا أَتَى أَحَدَكُمْ خَادِمُهُ بِطَعَامِهِ فَإِنْ لَمْ يُجْلِسْهُ مَعَهُ فَلْيُنَاوِلْهُ أُكْلَةً أَوْ أُكْلَتَيْنِ أَوْ لُقْمَةً أَوْ لُقْمَتَيْنِ فَإِنَّهُ وَلِيَ حَرَّهُ وَعِلَاجَهُ
পরিচ্ছেদঃ মহানবী (ﷺ) এর মহানুভবতা ও স্নেহশীলতা
(২৭৭৮) আবূ যার (রাঃ) বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে (দাস-দাসীদের ব্যাপারে) বলেছেন, ওরা তোমাদের ভাই স্বরূপ এবং তোমাদের সেবক। আল্লাহ ওদেরকে তোমাদের মালিকানাধীন করেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তির ভাইকে আল্লাহ তার মালিকানাধীন করেছেন, সে ব্যক্তি যেন তাকে (দাসকে) তাই খাওয়ায়; যা সে নিজে খায় এবং তাই পরায় যা সে নিজে পরে। আর তোমরা ওদেরকে এমন কাজের ভার দিয়ো না, যা করতে ওরা সক্ষম নয়। পরন্তু যদি তোমরা এমন দুঃসাধ্য কাজের ভার দিয়েই ফেল, তাহলে তোমরা ওদের সহযোগিতা কর।
عَنْ أَبِيْ ذَرٍّ قَالَ: قَالَ لَهُ النَّبِىُّ ﷺ إِنَّكَ امْرُؤٌ فِيكَ جَاهِلِيَّةٌ إِخْوَانُكُمْ وَخَوَلُكُمْ جَعَلَهُمُ اللهُ تَحْتَ أَيْدِيكُمْ فَمَنْ كَانَ أَخُوهُ تَحْتَ يَدَيْهِ فَلْيُطْعِمْهُ مِمَّا يَأْكُلُ وَلْيُلْبِسْهُ مِمَّا يَلْبَسُ وَلاَ تُكَلِّفُوهُمْ مَا يَغْلِبُهُمْ فَإِنْ كَلَّفْتُمُوهُمْ فَأَعِينُوهُمْ عَلَيْهِ
পরিচ্ছেদঃ মহানবী (ﷺ) এর মহানুভবতা ও স্নেহশীলতা
(২৭৭৯) ইবনে আব্বাস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর অভিশাপ তার উপর, যে কোন অন্ধকে পথচ্যুত করে।
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ النَّبِـيَّ ﷺ قَالَ وَلَعَنَ اللهُ مَنْ كَمَهَ الْأَعْمَى عَنْ السَّبِيلِ
পরিচ্ছেদঃ মহানবী (ﷺ) এর মহানুভবতা ও স্নেহশীলতা
(২৭৮০) আবূ মূসা আশআরী (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ’’বৃদ্ধ মুসলিম, কুরআনে অতিরঞ্জনকারী ও অবহেলাকারী নয় এমন হাফেয এবং ন্যায়পরায়ণ বাদশাকে সম্মান প্রদর্শন করলে এক প্রকার আল্লাহকেই সম্মান প্রদর্শন করা হয়।’’ (আবূ দাঊদ ৪৮৪৫, আল-আদাবুল মুফরাদ ৩৫৭, বাইহাক্বী ২৫৭৩)
عَنْ أَبِى مُوسَى الأَشْعَرِىِّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِنَّ مِنْ إِجْلاَلِ اللهِ إِكْرَامَ ذِى الشَّيْبَةِ الْمُسْلِمِ وَحَامِلِ الْقُرْآنِ غَيْرِ الْغَالِى فِيهِ وَالْجَافِى عَنْهُ وَإِكْرَامَ ذِى السُّلْطَانِ الْمُقْسِطِ
পরিচ্ছেদঃ মহানবী (ﷺ) এর মহানুভবতা ও স্নেহশীলতা
(২৭৮১) আবূ উমামা (রাঃ) বলেন, একদা এক যুবক আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলল, ’হে আল্লাহ রসূল! আপনি আমাকে ব্যভিচার করার অনুমতি দিন!’
এ কথা শুনে লোকেরা তাকে ধমক দিয়ে বলল, ’থামো, থামো! (এ কী বলছ তুমি?)’
কিন্তু মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ’’আমার কাছে এসো।’’
সে তাঁর কাছে এসে বসলে তিনি তাঁকে বললেন, ’’তুমি কি নিজ মায়ের জন্য তা পছন্দ কর?’’
সে বলল, ’না, আল্লাহর কসম! আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য কুরবান করুন।’
তিনি বললেন, ’’তাহলে লোকেরাও তো তাদের মায়েদের জন্য তা পছন্দ করে না।’’
অতঃপর তিনি বললেন, ’’তাহলে তুমি কি তোমার মেয়ের জন্য তা পছন্দ কর?’’
সে বলল, ’না, আল্লাহর কসম! আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য কুরবান করুন।’
তিনি বললেন, ’’তাহলে লোকেরাও তো তাদের মেয়েদের জন্য তা পছন্দ করে না।’’
অতঃপর তিনি বললেন, ’’তাহলে তুমি কি তোমার বোনের জন্য তা পছন্দ কর?’’
সে বলল, ’না, আল্লাহর কসম! আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য কুরবান করুন।’
তিনি বললেন, ’’তাহলে লোকেরাও তো তাদের বোনেদের জন্য তা পছন্দ করে না।’’
অতঃপর তিনি বললেন, ’’তাহলে তুমি কি তোমার ফুফুর জন্য তা পছন্দ কর?’’
সে বলল, ’না, আল্লাহর কসম! আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য কুরবান করুন।’
তিনি বললেন, ’’তাহলে লোকেরাও তো তাদের ফুফুদের জন্য তা পছন্দ করে না।’’
অতঃপর তিনি বললেন, ’’তাহলে তুমি কি তোমার খালার জন্য তা পছন্দ কর?’’
সে বলল, ’না, আল্লাহর কসম! আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য কুরবান করুন।’
তিনি বললেন, ’’তাহলে লোকেরাও তো তাদের খালাদের জন্য তা পছন্দ করে না।’’
অতঃপর তিনি তার বুকে হাত রাখলেন এবং তার জন্য দু’আ ক’রে বললেন, হে আল্লাহ! তুমি ওর গোনাহ মাফ করে দাও, ওর হৃদয়কে পবিত্র করে দাও এবং ওকে ব্যভিচার থেকে রক্ষা কর।
বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর সেই যুবক আর ব্যভিচারের দিকে ভ্রূক্ষেপও করেনি।
عَنْ أَبِـيْ أُمَامَةَ قَالَ إِنَّ فَتًى شَابًّا أَتَى النَّبِيَّ ﷺ فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ ائْذَنْ لِي بِالزِّنَا فَأَقْبَلَ الْقَوْمُ عَلَيْهِ فَزَجَرُوهُ قَالُوا مَهْ مَهْ فَقَالَ ادْنُهْ فَدَنَا مِنْهُ قَرِيبًا قَالَ فَجَلَسَ قَالَ أَتُحِبُّهُ لِأُمِّكَ قَالَ لَا وَاللهِ جَعَلَنِي اللهُ فِدَاءَكَ قَالَ وَلَا النَّاسُ يُحِبُّونَهُ لِأُمَّهَاتِهِمْ قَالَ أَفَتُحِبُّهُ لِابْنَتِكَ قَالَ لَا وَاللهِ يَا رَسُوْلَ اللهِ جَعَلَنِي اللهُ فِدَاءَكَ قَالَ وَلَا النَّاسُ يُحِبُّونَهُ لِبَنَاتِهِمْ قَالَ أَفَتُحِبُّهُ لِأُخْتِكَ قَالَ لَا وَاللهِ جَعَلَنِي اللهُ فِدَاءَكَ قَالَ وَلَا النَّاسُ يُحِبُّونَهُ لِأَخَوَاتِهِمْ قَالَ أَفَتُحِبُّهُ لِعَمَّتِكَ قَالَ لَا وَاللهِ جَعَلَنِي اللهُ فِدَاءَكَ قَالَ وَلَا النَّاسُ يُحِبُّونَهُ لِعَمَّاتِهِمْ قَالَ أَفَتُحِبُّهُ لِخَالَتِكَ قَالَ لَا وَاللهِ جَعَلَنِي اللهُ فِدَاءَكَ قَالَ وَلَا النَّاسُ يُحِبُّونَهُ لِخَالَاتِهِمْ قَالَ فَوَضَعَ يَدَهُ عَلَيْهِ وَقَالَ اللَّهُمَّ اغْفِرْ ذَنْبَهُ وَطَهِّرْ قَلْبَهُ وَحَصِّنْ فَرْجَهُ فَلَمْ يَكُنْ بَعْدُ ذٰلِكَ الْفَتَى يَلْتَفِتُ إِلٰـى شَيْءٍ
পরিচ্ছেদঃ মহানবী (ﷺ) এর মহানুভবতা ও স্নেহশীলতা
(২৭৮২) সালামাহ বিন স্বাখর বায়াযবী বলেন, আমি এমন পুরুষ ছিলাম, যে স্ত্রী-সহবাস বেশি করে। আমার মনে হয় না যে, আমি যতটা পারতাম ততটা অন্য কেউ পারত। সুতরাং রমযান প্রবেশ করলে আমি স্ত্রীর সাথে ’যিহার’ করলাম, যাতে রমযান পার হয়ে যায় (এবং দিনে সহবাসে লিপ্ত না হয়ে পড়ি)। একদা রাত্রে সে আমার সাথে কথা বলছিল, এমন সময় তার দেহের এমন কিছু অংশ আমার জন্য খুলে গেল, যার ফলে আমি তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়লাম এবং সঙ্গম করে ফেললাম। অতঃপর সকাল হলে আমি আমার গোত্রের লোকেদেরকে আমার খবর বললাম। আমি তাদেরকে বললাম, ’আমার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে (ফতোয়া) জিজ্ঞাসা কর।’
তারা বলল, ’আমরা তা পারব না। কারণ আল্লাহ আযযা অজাল্ল কুরআন অবতীর্ণ করবেন অথবা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পক্ষ থেকে কোন উক্তি করা হবে, অতঃপর তার লজ্জা আমাদের ঘাড়ে থেকে যাবে। বরং আমরা তোমার অপরাধ তোমাকেই সোপর্দ করছি। তুমিই গিয়ে তোমার নিজের ব্যাপার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে উল্লেখ কর।’
সুতরাং আমি বের হলাম এবং তাঁর কাছে এসে আমার খবর খুলে বললাম।
তিনি বললেন, ’’তুমিই এ কাজ করেছ?’’
আমি বললাম, ’জী, আমিই এ কাজ করে ফেলেছি। আর এই যে আমিই আল্লাহর ফায়সালা মেনে নিতে ধৈর্যধারণ করব হে আল্লাহর রসূল!’
তিনি বললেন, ’’তাহলে একটি গর্দান (ক্রীতদাস) স্বাধীন কর।’’
আমি বললাম, ’সেই সত্তার শপথ, যিনি আপনাকে সত্য-সহ প্রেরণ করেছেন! এই সকালে আমি আমার নিজের এই গর্দান ছাড়া অন্য কিছুর মালিক নই।’
তিনি বললেন, ’’তাহলে একটানা দুই মাস রোযা রাখো।’’
আমি বললাম, ’হে আল্লাহর রসূল! আমার উপর যে মসীবত এল, তা কি রোযা ছাড়া অন্য কিছুর কারণে এল?’
তিনি বললেন, ’’তাহলে ষাটজন মিসকীনকে সাদকা কর অথবা অন্নদান কর।’’
আমি বললাম, ’সেই সত্তার শপথ, যিনি আপনাকে সত্য-সহ প্রেরণ করেছেন! গত রাত্রে আমাদের রাতের খাবারও ছিল না!’
তিনি বললেন, ’’তাহলে বানী যুরাইকের সাদকা-ওয়ালার কাছে যাও এবং তাকে বল, তোমাকে সাদকা দেবে। অতঃপর তুমি তা থেকে ষাটজন মিসকীন খাইয়ে দাও এবং অবশিষ্টাংশ দ্বারা তুমি উপকৃত হও।’’
সুতরাং আমি আমার গোত্রের লোকেদের কাছে ফিরে এলাম এবং বললাম, ’তোমাদের কাছে সংকীর্ণতা ও খারাপ রায় পেলাম। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট পেলাম প্রশস্ততা ও ভালো রায়। তিনি তোমাদেরকে আমার জন্য সাদকা দিতে আদেশ করেছেন। সুতরাং আমাকে তা দাও।’
عَنْ سَلَمَةَ بْنِ صَخْرٍ الْبَيَاضِىِّ قَالَ كُنْتُ امْرَأً أُصِيبُ مِنَ النِّسَاءِ مَا لاَ يُصِيبُ غَيْرِى فَلَمَّا دَخَلَ شَهْرُ رَمَضَانَ خِفْتُ أَنْ أُصِيبَ مِنَ امْرَأَتِى شَيْئًا يُتَابَعُ بِى حَتّٰـى أُصْبِحَ فَظَاهَرْتُ مِنْهَا حَتّٰـى يَنْسَلِخَ شَهْرُ رَمَضَانَ فَبَيْنَمَا هِىَ تَخْدُمُنِى ذَاتَ لَيْلَةٍ إِذْ تَكَشَّفَ لِـىْ مِنْهَا شَىْءٌ فَلَمْ أَلْبَثْ أَنْ نَزَوْتُ عَلَيْهَا فَلَمَّا أَصْبَحْتُ خَرَجْتُ إِلٰـى قَوْمِى فَأَخْبَرْتُهُمُ الْخَبَرَ وَقُلْتُ امْشُوا مَعِى إِلٰـى رَسُوْلِ اللهِ ﷺ قَالُوا لاَ وَاللهِ فَانْطَلَقْتُ إِلٰـى النَّبِىِّ ﷺ فَأَخْبَرْتُهُ فَقَالَ أَنْتَ بِذَاكَ يَا سَلَمَةُ قُلْتُ أَنَا بِذَاكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ مَرَّتَيْنِ وَأَنَا صَابِرٌ لأَمْرِ اللهِ فَاحْكُمْ فِىَّ مَا أَرَاكَ اللهُ قَالَ حَرِّرْ رَقَبَةً قُلْتُ وَالَّذِى بَعَثَكَ بِالْحَقِّ مَا أَمْلِكُ رَقَبَةً غَيْرَهَا وَضَرَبْتُ صَفْحَةَ رَقَبَتِى قَالَ فَصُمْ شَهْرَيْنِ مُتَتَابِعَيْنِ قَالَ وَهَلْ أُصِبْتُ الَّذِى أُصِبْتُ إِلاَّ مِنَ الصِّيَامِ قَالَ فَأَطْعِمْ وَسْقًا مِنْ تَمْرٍ بَيْنَ سِتِّينَ مِسْكِينًا قُلْتُ وَالَّذِى بَعَثَكَ بِالْحَقِّ لَقَدْ بِتْنَا وَحْشَيْنِ مَا لَنَا طَعَامٌ قَالَ فَانْطَلِقْ إِلٰـى صَاحِبِ صَدَقَةِ بَنِى زُرَيْقٍ فَلْيَدْفَعْهَا إِلَيْكَ فَأَطْعِمْ سِتِّينَ مِسْكِينًا وَسْقًا مِنْ تَمْرٍ وَكُلْ أَنْتَ وَعِيَالُكَ بَقِيَّتَهَا فَرَجَعْتُ إِلٰـى قَوْمِى فَقُلْتُ وَجَدْتُ عِنْدَكُمُ الضِّيقَ وَسُوءَ الرَّأْىِ وَوَجَدْتُ عِنْدَ النَّبِىِّ ﷺ السَّعَةَ وَحُسْنَ الرَّأْىِ وَقَدْ أَمَرَنِى - أَوْ أَمَرَ لِـىْ – بِصَدَقَتِكُمْ