পরিচ্ছেদঃ জানাযার স্বলাতে যে সব দু‘আ পড়া হয়
জানাযার নামাযে চার তকবীর বলবে। প্রথম তকবীরের পর ’আউযু বিল্লাহ’ পড়ে সূরা ফাতিহা পড়বে। অতঃপর দ্বিতীয় তকবীর বলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি দরূদ পড়বে। বলবে, ’আল্লাহুম্মা স্বাল্লি আলা মুহাম্মাদ, অআলা আ-লি মুহাম্মাদ।’ উত্তম হল ’কামা স্বাল্লাইতা আলা ইবরা-হীমা অ আলা আ-লি ইবরা-হীম, ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ’ পর্যন্ত পুরো পড়া। অধিকাংশ সাধারণ লোকের মত শুধু (সূরা আহযাবের ৫৬) এই আয়াতটি ’ইন্নাল্লাহা অমালাইকাতাহু ইউস্বাল্লুনা আলান নবী’ যেন না পড়ে। কারণ, এইটুকু পড়েই যথেষ্ট করলে নামায শুদ্ধ হবে না।
অতঃপর তৃতীয় তকবীর বলে মৃতের এবং সকল মুসলিমের জন্য যে সমস্ত দু’আ পড়বে সে সম্পর্কিত একাধিক হাদীস আমি পরবর্তীতে বর্ণনা করব--ইনশাআল্লাহু তাআলা। পুনরায় চতুর্থ তকবীর বলবে এবং দু’আ করবে। এখানে সর্বোত্তম দু’আর মধ্যে এটি একটি, ’আল্লা-হুম্মা লা তাহরিমনা আজরাহু অলা তাফতিন্না বা’দাহ, অগফির লানা অ লাহ।’
চতুর্থ তকবীরের পর লম্বা দু’আ করা পছন্দনীয়, অথচ অধিকাংশ লোকের এর বিপরীত অভ্যাস রয়েছে। এ ব্যাপারে ইবনে আবী আওফা (রাঃ) হতে প্রমাণিত আছে, যা পরবর্তীতে উল্লেখ করব-ইনশাআল্লাহু তাআলা।
পক্ষান্তরে তৃতীয় তকবীরের পর যে দু’আগুলি প্রমাণিত আছে তার মধ্যে কিছু নিম্নরূপঃ
(১৩২৫) আবূ আব্দুর রহমান আওফ ইবনে মালিক (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক জানাযায় নামায পড়লেন। আমি তাঁর দু’আ মুখস্থ ক’রে ফেললাম। সে দু’আ হল এইঃ
আল্লা-হুম্মাগফির লাহু অরহামহু অআ-ফিহী অ’ফু আনহু অআকরিম নুযুলাহু অঅসসি’ মুদখালাহু, অগসিলহু বিলমা-ই অসসালজি অল-বারাদ। অনাক্কিহী মিনাল খাত্বায়্যা কামা নাক্কইতাস সাউবাল আবয়্যায্বা মিনাদ দানাস। অ আবদিলহু দা-রান খাইরাম মিন দা-রিহী অ আহলান খাইরাম মিন আহলিহী অযাওজান খাইরাম মিন যাওজিহ। অ আদখিলহুল জান্নাতা অ আইযহু মিন আযা-বিল ক্বাবরি অমিন আযা-বিন্নার।
অর্থ- হে আল্লাহ! তুমি ওকে ক্ষমা করে দাও এবং ওকে রহম কর। ওকে নিরাপত্তা দাও এবং মার্জনা ক’রে দাও, ওর মেহেমানী সম্মানজনক কর এবং ওর প্রবেশস্থল প্রশস্ত কর। ওকে তুমি পানি, বরফ ও শিলাবৃষ্টি দ্বারা ধৌত করে দাও এবং ওকে গোনাহ থেকে এমন পরিষ্কার কর, যেমন তুমি সাদা কাপড় ময়লা থেকে পরিষ্কার করেছ। আর ওকে তুমি ওর ঘর অপেক্ষা উৎকৃষ্ট ঘর, ওর পরিবার অপেক্ষা উত্তম পরিবার, ওর জুড়ী অপেক্ষা উৎকৃষ্ট জুড়ী দান কর। ওকে জান্নাতে প্রবেশ করাও এবং কবর ও দোযখের আযাব থেকে রেহাই দাও।
(বর্ণনাকারী সাহাবী আউফ বিন মালিক (রাঃ) বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যখন এই দু’আ বলতে শুনলাম) তখন আমি এই কামনা করলাম যে, যদি আমি এই মাইয়্যেত হতাম! (মুসলিম ২২৭৬-২২৭৮, নাসাঈ ১৯৮৩)
عَن أَبي عَبدِ الرَّحمَانِ عَوفِ بنِ مَالِكٍ قَالَ : صَلَّى رَسُولُ اللهِ ﷺ عَلَى جَنازَةٍ فَحَفِظْتُ مِنْ دُعَائِهِ وَهُوَ يَقُولُ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ وَارْحَمْهُ وَعَافِهِ وَاعْفُ عَنْهُ وَأكْرِمْ نُزُلَهُ وَوَسِّعْ مُدْخَلَهُ وَاغْسِلْهُ بِالمَاءِ وَالثَّلْجِ وَالبَرَدِ وَنَقِّهِ مِن الخَطَايَا كَمَا نَقَّيْتَ الثَّوْبَ الأَبْيَضَ مِنَ الدَّنَس وَأَبدِلْهُ دَاراً خَيْراً مِنْ دَارِهِ وَأَهْلاً خَيراً مِنْ أَهْلِهِ وَزَوْجَاً خَيْراً مِنْ زَوْجِهِ وَأَدْخِلهُ الجَنَّةَ وَأَعِذْهُ مِنْ عَذَابِ القَبْرِ وَمِنْ عَذَابِ النَّارِحَتَّى تَمَنَّيتُ أَنْ أَكُونَ أنَا ذَلِكَ الْمَيِّت رواه مسلم
পরিচ্ছেদঃ জানাযার স্বলাতে যে সব দু‘আ পড়া হয়
(১৩২৬) আবূ হুরাইরা (রাঃ) আবূ কাতাদাহ (রাঃ) এবং আবূ ইব্রাহীম আশহালী (রাঃ) তাঁর পিতা হতে যিনি সাহাবী ছিলেন বর্ণনা করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক জানাযার নামায পড়ার সময় এই দু’আ পড়লেন,
’আল্লা-হুম্মাগফির লিহাইয়িনা অমাইয়িতিনা অস্বাগীরিনা অকাবীরিনা অযাকারিনা অউনসা-না অ শা-হিদিনা অগা-য়িবিনা, আল্লা-হুম্মা মান আহয়্যাইতাহু মিন্না ফাআহয়িহি আলাল ইসলাম, অমান তাওয়াফফাইতাহু মিন্না ফাতাওয়াফফাহু আলাল ঈমান, আল্লা-হুম্মা লা তাহরিমনা আজরাহ, অলা তাফতিন্না বা’দাহ।
অর্থ- হে আল্লাহ! আমাদের জীবিত-মৃত, ছোট-বড়, পুরুষ ও নারী, উপস্থিত ও অনুপস্থিতকে ক্ষমা ক’রে দাও। হে আল্লাহ! আমাদের মধ্যে যাকে তুমি জীবিত রাখবে তাকে ইসলামের উপর জীবিত রাখ এবং যাকে মরণ দিবে তাকে ঈমানের উপর মরণ দাও। হে আল্লাহ! ওর সওয়াব থেকে আমাদেরকে বঞ্চিত করো না এবং ওর পরে আমাদেরকে ফিতনায় ফেলো না।
(তিরমিযী ১০২৪ আবূ হুরাইরা ও আশহালী হতে, আবূ দাউদ ৩২০৩ আবূ হুরাইরা ও আবূ ক্বাতাদাহ হতে। হাকেম বলেছেন, আবূ হুরাইরার হাদীস বুখারী ও মুসলিমের শর্তে সহীহ। তিরমিযী বলেন, বুখারী বলেছেন, এ হাদীসের সবচেয়ে সহীহ বর্ণনা হল আশহালীর বর্ণনা। বুখারী বলেন, এ বিষয়ে সবচেয়ে সহীহ হল আওফ বিন মালেকের হাদীস। নাসাঈ ১৯৮৬, ইবনে মাজাহ ১৪৯৮)
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ وَأَبِي قَتَادَةَ وَأَبِي إِبرَاهِيمَ الأَشهَلِي، عَنْ أَبِيهِ – وَأَبُوهُ صَحَابيٌّ، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ: أنَّهُ صَلَّى عَلَى جَنَازَةٍ فَقَالَ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِحَيِّنَا وَمَيِّتِنَا وَصَغِيرنَا وَكَبيرنَا وَذَكَرِنَا وَأُنْثَانَا وشَاهِدنَا وَغَائِبِنَا اللَّهُمَّ مَنْ أحْيَيْتَهُ مِنَّا فَأحْيِهِ عَلَى الإسْلاَمِ وَمَنْ تَوَفَّيْتَهُ مِنَّا فَتَوفَّهُ عَلَى الإيمَان اللَّهُمَّ لاَ تَحْرِمْنَا أجْرَهُ وَلاَ تَفْتِنَّا بَعدَهُ رواه الترمذي من رواية أَبِي هُرَيرَةَ والأشهلي ورواه أَبُو داود من رواية أَبِي هُرَيرَةَ وأبي قتادة قَالَ الحاكمحديث أَبِي هُرَيرَةَ صحيح عَلَى شرط البخاري ومسلم قَالَ الترمذيقَالَ البخاري : أصَحُّ رواياتِ هَذَا الحديث رواية الأشْهَلِيِّ قَالَ البخاري : وأصح شيء في هَذَا الباب حديث عَوْفِ ابن مَالِكٍ
পরিচ্ছেদঃ জানাযার স্বলাতে যে সব দু‘আ পড়া হয়
(১৩২৭) আবূ হুরাইরা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, যখন তোমরা মৃতের জানাযা পড়বে, তখন তার জন্য আন্তরিকতার সাথে দু’আ করো।
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ : سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ يَقُولُإِذَا صَلَّيْتُمْ عَلَى المَيِّتِ فَأَخْلِصُوا لَهُ الدُّعاء
পরিচ্ছেদঃ জানাযার স্বলাতে যে সব দু‘আ পড়া হয়
(১৩২৮) ওয়াসেলাহ ইবনে আসকা’ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে এক মুসলিম ব্যক্তির জানাযার নামায পড়ালেন। সুতরাং আমি তাঁকে এই দু’আটি বলতে শুনলাম,
’আল্লা-হুম্মা ইন্না ফুলা-নাবনা ফুলা-নিন ফী যিম্মাতিকা অহাবলি জিওয়ারিক, ফাক্বিহী ফিতনাতাল ক্বাবরি অ আযা-বান্নার, অ আন্তা আহলুল অফা-ই অলহামদ, ফাগফির লাহু অরহামহু ইন্নাকা আনতাল গাফূরুর রাহীম।’
অর্থঃ হে আল্লাহ! নিশ্চয় অমুকের পুত্র অমুক তোমার দায়িত্বে এবং তোমার আমানতে। অতএব ওকে তুমি কবর ও দোযখের আযাব থেকে রক্ষা কর। তুমি প্রতিশ্রুতি পালনকারী ও প্রশংসার পাত্র। সুতরাং ওকে তুমি মাফ করে দাও এবং ওর প্রতি দয়া কর। নিঃসন্দেহে তুমিই মহাক্ষমাশীল অতি দয়াবান।
وَعَنْ وَاثِلَة بنِ الأَسْقَعِ قَالَ : صَلَّى بِنَا رَسُولُ اللهِ ﷺ عَلَى رَجُلٍ مِنَ المُسْلِمِينَ فَسَمِعْتُهُ يَقُولُ اللَّهُمَّ إنَّ فُلانَ ابْنَ فُلانٍ فِي ذِمَتِّكَ وَحَبْلِ جِوَارِكَ فَقِهِ فِتْنَةَ القَبْرِ وَعذَابَ النَّار وَأنْتَ أهْلُ الوَفَاءِ وَالحَمْدِ ؛ اللَّهُمَّ فَاغْفِرْ لَهُ وَارْحَمْهُ إنَّكَ أنْتَ الغَفُورُ الرَّحيمُ رواه أَبُو داود
পরিচ্ছেদঃ জানাযার স্বলাতে যে সব দু‘আ পড়া হয়
(১৩২৯) আব্দুল্লাহ ইবনে আবী আওফা (রাঃ) তাঁর এক মেয়ের জানাযায় চার তাকবীর দিলেন। অতঃপর তিনি চতুর্থ তাকবীরের পর দুই তাকবীরের মধ্যস্থলে যতটা সময় লাগে ততক্ষণ দাঁড়িয়ে তার (কন্যার) জন্য ক্ষমা প্রার্থনা ও দু’আ করলেন। তারপর তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই রকমই করতেন।
অন্য এক বর্ণনায় আছে, তিনি চার তাকবীর বলার পর কিছুক্ষণ থেমে গেলেন, এমনকি আমি ধারণা করলাম যে, তিনি পাঁচ তাকবীর বলবেন। অতঃপর তিনি তাঁর ডানে ও বামে সালাম ফিরলেন। তারপর তিনি যখন নামায শেষ করলেন, তখন আমরা তাঁকে বললাম, এ কী!? তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে যা করতে দেখেছি, তার চেয়ে বেশী করব না অথবা ’রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ রকমই করেছেন।
وَعَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ أبي أَوْفى رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا : أنَّهُ كَبَّرَ عَلَى جَنَازَةِ ابْنَةٍ لَهُ أرْبَعَ تَكْبِيرَاتٍ فَقَامَ بَعْدَ الرَّابِعَةِ كَقَدْرِ مَا بَيْنَ التَّكْبِيرَتَيْنِ يَسْتَغْفِرُ لَهَا وَيَدْعُو، ثُمَّ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ ﷺ يَصْنَعُ هكَذَا
وَفِيْ رِوَايَةٍ : كَبَّرَ أرْبَعاً فَمَكَثَ سَاعَةً حَتَّى ظَنَنْتُ أنَّهُ سَيُكَبِّرُ خَمْساً ثُمَّ سَلَّمَ عَنْ يَمينِهِ وَعَنْ شِمَالِهِ فَلَمَّا انْصَرَفَ قُلْنَا لَهُ : مَا هَذَا ؟ فَقَالَ : إنِّي لاَ أَزيدُكُمْ عَلَى مَا رَأَيْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ يَصْنَعُ أَوْ : هَكَذَا صَنَعَ رَسُولُ اللهِ ﷺ رواه الحاكم وَقَالَ حَدِيْثٌ صحيح