পরিচ্ছেদঃ রমযানের সিয়াম ফরয, তার ফযীলত ও আনুষঙ্গিক জ্ঞাতব্য বিষয়াবলী
মহান আল্লাহ বলেন,
یٰۤاَیُّھَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا كُتِبَ عَلَیْكُمُ الصِّیَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَی الَّذِیْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَﰆﺫ اَیَّامًا مَّعْدُوْدٰتٍﺚ فَمَنْ كَانَ مِنْكُمْ مَّرِیْضًا اَوْ عَلٰی سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ اَیَّامٍ اُخَرَﺚ وَعَلَی الَّذِیْنَ یُطِیْقُوْنَهٗ فِدْیَةٌ طَعَامُ مِسْكِیْنٍﺚ فَمَنْ تَطَوَّعَ خَیْرًا فَھُوَ خَیْرٌ لَّهٗﺚ وَاَنْ تَصُوْمُوْا خَیْرٌ لَّكُمْ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَﰇ شَھْرُ رَمَضَانَ الَّذِیْۤ اُنْزِلَ فِیْهِ الْقُرْاٰنُ ھُدًی لِّلنَّاسِ وَبَیِّنٰتٍ مِّنَ الْھُدٰی وَالْفُرْقَانِﺆ فَمَنْ شَھِدَ مِنْكُمُ الشَّھْرَ فَلْیَصُمْهُﺚ وَمَنْ كَانَ مَرِیْضًا اَوْ عَلٰی سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ اَیَّامٍ اُخَرَﺚ
অর্থাৎ, হে বিশ্বাসিগণ! তোমাদের জন্য সিয়ামের (সিয়ামের) বিধান দেওয়া হল, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীগণকে দেওয়া হয়েছিল, যাতে তোমরা সংযমশীল হতে পার। (সিয়াম) নির্দিষ্ট কয়েক দিনের জন্য। তোমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে বা সফর অবস্থায় থাকলে অন্য দিনে এ সংখ্যা পূরণ করে নেবে। আর যারা সিয়াম রাখার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও সিয়াম রাখতে চায় না (যারা সিয়াম রাখতে অক্ষম) তারা এর পরিবর্তে একজন মিসকীনকে খাদ্য দান করবে। পরন্তু যে ব্যক্তি খুশীর সাথে সৎকর্ম করে, তা তার জন্য কল্যাণকর হয়। আর যদি তোমরা সিয়াম রাখ, তাহলে তা তোমাদের জন্য বিশেষ কল্যাণপ্রসূ; যদি তোমরা উপলব্ধি করতে পার। রমযান মাস, এতে মানুষের দিশারী এবং সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারীরূপে কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে। অতএব তোমাদের মধ্যে যে কেউ এ মাস পাবে, সে যেন এ মাসে অবশ্যই সিয়াম পালন করে। আর যে অসুস্থ অথবা মুসাফির থাকে, তাকে অন্য দিনে এ সংখ্যা পূরণ করতে হবে। (সূরা বাক্বারাহ-০২:১৮৩- ১৮৫)
(১০৩৯) আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মহান আল্লাহ বলেন, আদম সন্তানের প্রতিটি সৎকর্ম তার জন্যই; কিন্তু রোযা স্বতন্ত্র, তা আমারই জন্য, আর আমিই তার প্রতিদান দেব। সিয়াম ঢালস্বরূপ অতএব তোমাদের কেউ যেন সিয়ামের দিনে অশ্লীল না বলে এবং হৈ-হট্টগোল না করে। আর যদি কেউ তাকে গালি-গালাজ করে অথবা তার সাথে লড়াই-ঝগড়া করে, তাহলে সে যেন বলে, ’আমি সিয়াম রেখেছি।’
সেই মহান সত্তার শপথ! যার হাতে মুহাম্মাদের জীবন আছে, নিঃসন্দেহে রোযাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর কাছে মৃগনাভির সুগন্ধ অপেক্ষা বেশী উৎকৃষ্ট। রোযাদারের জন্য দু’টি আনন্দময় মূহূর্ত রয়েছে, তখন সে আনন্দিত হয়; (১) যখন সে ইফতার করে (ইফতারের জন্য সে আনন্দিত হয়)। আর (২) যখন সে তার প্রতিপালকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে, স্বীয় সিয়ামের জন্য সে আনন্দিত হবে। (বুখারী ১৯০৪, মুসলিম ২৭৬২, এই শব্দগুলি বুখারীর)
বুখারীর অন্য বর্ণনায় আছে, সে (সিয়াম পালনকারী) পানাহার ও যৌনাচার বর্জন করে একমাত্র আমারই জন্য। সিয়াম আমার জন্যই। আর আমি নিজে তার পুরস্কার দেব। আর প্রত্যেক নেকী দশগুণ বর্ধিত হয়। (বুখারী ১৮৯৪)
মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, আদম সন্তানের প্রত্যেক সৎকর্ম কয়েকগুণ বর্ধিত করা হয়। একটি নেকী দশগুণ থেকে নিয়ে সাতশত গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। মহান আল্লাহ বলেন, কিন্তু রোযা ছাড়া। কেননা, তা আমার উদ্দেশ্যে (পালিত) হয়। আর আমি নিজেই তার পুরস্কার দেব। সে পানাহার ও কাম প্রবৃত্তি আমার (সন্তুষ্টি অর্জনের) উদ্দেশ্যেই বর্জন করে। রোযাদারের জন্য দু’টি আনন্দময় মুহূর্ত রয়েছে। একটি আনন্দ হল ইফতারের সময়, আর অপরটি তার প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাৎকালে। আর নিশ্চয় তার মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মৃগনাভির সুগন্ধ অপেক্ষা অধিক উৎকৃষ্ট।
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ قَالَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ : كُلُّ عَمَلِ ابْنِ آدَمَ لَهُ إِلاَّ الصِّيَام فَإِنَّهُ لِي وَأَنَا أَجْزِي بِهِ وَالصِّيَامُ جُنَّةٌ، فَإِذَا كَانَ يَومُ صَوْمِ أَحَدِكُمْ فَلاَ يَرْفُثْ وَلاَ يَصْخَبْ فَإِنْ سَابَّهُ أَحَدٌ أَوْ قَاتَلَهُ فَلْيَقُلْ: إنِّي صَائِمٌ وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لَخُلُوْفُ فَمِ الصَّائِمِ أَطْيَبُ عِنْدَ اللهِ مِنْ رِيحِ المِسْكِ لِلصَّائِمِ فَرْحَتَانِ
وَفِيْ رِوَايَةٍ لمسلمكُلُّ عَمَلِ ابْنِ آدَمَ يُضَاعَفُ اَلْحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا إِلَى سَبْعِمِئَةِ ضِعْفٍ قَالَ الله تَعَالَى: إِلاَّ الصَّوْمَ فَإِنَّهُ لِي وَأنَا أَجْزِي بِهِ؛ يَدَعُ شَهْوَتَهُ وَطَعَامَهُ مِنْ أَجْلِي لِلصَّائِمِ فَرْحَتَانِ: فَرْحَةٌ عِنْدَ فِطْرِهِ وَفَرْحَةٌ عِنْدَ لِقَاءِ رَبِّهِ وَلَخُلُوفُ فِيهِ أَطْيَبُ عِنْدَ اللهِ مِنْ رِيحِ المِسْكِ
পরিচ্ছেদঃ রমযানের সিয়াম ফরয, তার ফযীলত ও আনুষঙ্গিক জ্ঞাতব্য বিষয়াবলী
(১০৪০) উক্ত রাবী (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় জোড়া বস্তু ব্যয় করে, তাকে জান্নাতের দরজাসমূহ থেকে ডাকা হবে, হে আল্লাহর বান্দাহ! এ দরজাটি উত্তম (এদিকে এস)। সুতরাং যে নামাযীদের দলভুক্ত হবে, তাকে নামাযের দরজা থেকে ডাক দেওয়া হবে। আর যে মুজাহিদদের দলভুক্ত হবে তাকে জিহাদের দরজা থেকে ডাকা হবে। যে সিয়াম পালনকারী দের দলভুক্ত হবে, তাকে ’রাইয়ান’ নামক দরজা থেকে আহবান করা হবে। আর দাতাকে দানের দরজা থেকে ডাকা হবে।
এ সব শুনে আবূ বকর (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমার মাতা-পিতা আপনার জন্য কুরবান হোক, যাকে ডাকা হবে, তার ঐ সকল দরজার তো কোন প্রয়োজন নেই। (কেননা মুখ্য উদ্দেশ্য হল, কোনভাবে জান্নাতে প্রবেশ করা।) কিন্তু এমন কেউ হবে কি, যাকে উক্ত সকল দরজাসমূহ থেকে ডাকা হবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আর আশা করি, তুমি তাদের দলভুক্ত হবে।
وَعَنْه : أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ قَالَ مَنْ أَنْفَقَ زَوْجَيْنِ فِي سَبِيلِ اللهِ نُودِيَ مِنْ أَبْوَابِ الجَنَّةِ يَا عَبْدَ اللهِ هَذَا خَيرٌ فَمَنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ الصَّلاَةِ دُعِيَ مِنْ بَابِ الصَّلاَةِ وَمَنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ الجِهَادِ دُعِيَ مِنْ بَابِ الجِهَادِ وَمَنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ الصِّيَامِ دُعِيَ مِنْ بَابِ الرَّيَّانِ وَمَنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ الصَّدَقَةِ دُعِيَ مِنْ بَابِ الصَّدَقَةِقَالَ أَبُو بَكْرٍ بِأَبي أَنْتَ وَأُمِّي يَا رَسُولَ اللهِ مَا عَلَى مَنْ دُعِيَ مِنْ تِلْكَ الأَبْوَابِ مِنْ ضَرورةٍ فَهَلْ يُدْعَى أَحَدٌ مِنْ تِلْكَ الأَبوَابِ كُلِّهَا ؟ فَقَالَ نَعَمْ وَأَرْجُو أنْ تَكُونَ مِنْهُمْ متفقٌ عليه
পরিচ্ছেদঃ রমযানের সিয়াম ফরয, তার ফযীলত ও আনুষঙ্গিক জ্ঞাতব্য বিষয়াবলী
(১০৪১) সাহল ইবনে সা’দ (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জান্নাতের মধ্যে এমন একটি দরজা আছে, যার নাম হল ’রাইয়ান’; সেখান দিয়ে কেবল সিয়াম পালনকারী গণই কিয়ামতের দিনে প্রবেশ করবে। তারা ছাড়া আর কেউ সেদিক দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। ঘোষণা করা হবে, সিয়াম পালনকারীরা কোথায়? তখন তারা দণ্ডায়মান হবে। (এবং ঐ দরজা দিয়ে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে) তারপর যখন তাদের সর্বশেষ ব্যক্তি প্রবেশ করবে, তখন দরজাটি বন্ধ করে দেওয়া হবে। আর সেখান দিয়ে আর কেউ প্রবেশ করতে পারবে না।
وَ عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ إنَّ في الجَنَّةِ بَاباً يُقَالُ لَهُ : الرَّيَّانُ يَدْخُلُ مِنْهُ الصَّائِمُونَ يَومَ القِيَامَةِ لاَ يَدْخُلُ مِنْهُ أحدٌ غَيْرُهُمْ يقال : أيْنَ الصَّائِمُونَ ؟ فَيَقُومُونَ لاَ يَدخُلُ مِنْهُ أَحَدٌ غَيْرُهُمْ فَإذَا دَخَلُوا أُغْلِقَ فَلَمْ يَدْخُلْ مِنْهُ أَحَدٌ متفقٌ عليه
পরিচ্ছেদঃ রমযানের সিয়াম ফরয, তার ফযীলত ও আনুষঙ্গিক জ্ঞাতব্য বিষয়াবলী
(১০৪২) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে (অর্থাৎ, জিহাদকালীন বা প্রভুর সন্তুষ্টি অর্জনকল্পে) একদিন সিয়াম রাখবে, আল্লাহ ঐ একদিন সিয়ামের বিনিময়ে তার চেহারাকে জাহান্নাম হতে সত্তর বছর (পরিমাণ পথ) দূরে রাখবেন।
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدْرِي ﷺ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ مَا مِنْ عَبْدٍ يَصُومُ يَوْماً فِي سَبِيلِ اللهِ إِلاَّ بَاعَدَ اللهُ بِذَلِكَ اليَوْمِ وَجْهَهُ عَنِ النَّارِ سَبْعِينَ خَرِيفَاً متفقٌ عَلَيْهِ
পরিচ্ছেদঃ রমযানের সিয়াম ফরয, তার ফযীলত ও আনুষঙ্গিক জ্ঞাতব্য বিষয়াবলী
(১০৪৩) আবূ হুরাইরা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈমান সহকারে নেকীর আশায় রমযানের সিয়াম পালন করে, তার অতীতের গুনাহসমূহ ক্ষমা ক’রে দেওয়া হয়।
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ مَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيمَاناً وَاحْتِسَاباً غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ متفقٌ عليه