পরিচ্ছেদঃ ভিক্ষাবৃত্তি থেকে দূরে থাকা এবং অপরকে দান করার প্রতি উৎসাহ দেওয়া প্রসঙ্গে
(৯৯৯) আবূ আব্দুল্লাহ যুবাইর ইবনে আওয়াম (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কারো রশি নিয়ে পাহাড় যাওয়া এবং কাঠের বোঝা পিঠে করে বয়ে আনা ও তা বিক্রি করা, যার দ্বারা আল্লাহ তার চেহারাকে (অপমান থেকে) বাঁচান, লোকেদের কাছে এসে ভিক্ষা করার চেয়ে উত্তম; চাহে তারা তাকে দিক বা না দিক।
وَعَن أَبِي عَبدِ اللهِ الزُبَيرِ بنِ العَوَّامِ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ لأَنْ يَأخُذَ أحَدُكُمْ أحبُلَهُ ثُمَّ يَأتِيَ الجَبَلَ فَيَأْتِيَ بحُزمَةٍ مِنْ حَطَبٍ عَلَى ظَهْرِهِ فَيَبِيعَهَا فَيكُفَّ اللهُ بِهَا وَجْهَهُ خَيْرٌ لَهُ مِنْ أنْ يَسْألَ النَّاسَ أعْطَوْهُ أَوْ مَنَعُوهُرواه البخاري
পরিচ্ছেদঃ ভিক্ষাবৃত্তি থেকে দূরে থাকা এবং অপরকে দান করার প্রতি উৎসাহ দেওয়া প্রসঙ্গে
(১০০০) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কারো রশি নিয়ে কাঠ সংগ্রহ করে পিঠে করে বয়ে আনা, কোন লোকের কাছে এসে ভিক্ষা করার চেয়ে অনেক ভাল; চাহে সে দিক বা না দিক।
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ لأَنْ يَحْتَطِبَ أحَدُكُمْ حُزْمَةً عَلَى ظَهْرِهِ خَيْرٌ لَهُ مِنْ أنْ يَسْألَ أَحَداً فَيُعْطِيَهُ أَوْ يَمْنَعَهُ متفقٌ عليه
পরিচ্ছেদঃ ভিক্ষাবৃত্তি থেকে দূরে থাকা এবং অপরকে দান করার প্রতি উৎসাহ দেওয়া প্রসঙ্গে
(১০০১) হাকীম বিন হিযাম (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন উঁচু (দাতা) হাত নিচু (গ্রহীতা) হাত অপেক্ষা উত্তম। তাদের মাধ্যমে ব্যয় করা আরম্ভ কর যাদের তুমি প্রতিপালন করছ। সবচেয়ে উত্তম হল সেই দান, যার পর সচ্ছলতা অবশিষ্ট থাকে (অর্থাৎ যে দানের পর অভাব না আসে।) আর যে ব্যক্তি (যাচ্ঞা হতে) পবিত্র থাকার চেষ্টা করবে, আল্লাহ তাকে পবিত্র রাখবেন এবং যে ব্যক্তি অমুখাপেক্ষী থাকার চেষ্টা করবে, আল্লাহ তাকে অমুখাপেক্ষী (অভাবমুক্ত) রাখবেন।
عَنْ حَكِيمِ بْنِ حِزَامٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ الْيَدُ الْعُلْيَا خَيْرٌ مِنْ الْيَدِ السُّفْلَى وَابْدَأْ بِمَنْ تَعُولُ وَخَيْرُ الصَّدَقَةِ عَنْ ظَهْرِ غِنًى وَمَنْ يَسْتَعْفِفْ يُعِفَّهُ اللهُ وَمَنْ يَسْتَغْنِ يُغْنِهِ اللهُ
পরিচ্ছেদঃ ভিক্ষাবৃত্তি থেকে দূরে থাকা এবং অপরকে দান করার প্রতি উৎসাহ দেওয়া প্রসঙ্গে
(১০০২) আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আনসারদের কিছু লোক যাচ্ঞা করলে তিনি তাদেরকে দান করলেন। তারা আবার চাইলে আবারও দান করলেন। পরিশেষে তাঁর নিকট যা ছিল তা নিঃশেষ হয়ে গেলে তিনি বললেন, আমার নিকট যে মঙ্গল থাকবে, আমি তা তোমাদেরকে না দিয়ে কখনই জমা করে রাখব না। তবে যে ব্যক্তি (যাচ্ঞা থেকে) পবিত্র থাকতে চেষ্টা করবে, আল্লাহ তাকে পবিত্র রাখবেন, যে ব্যক্তি (অপরের) অমুখাপেক্ষী থাকতে চেষ্টা করবে, আল্লাহ তাকে (সকল থেকে) অমুখাপেক্ষী করে দেবেন এবং যে ব্যক্তি ধৈর্য ধরতে চেষ্টা করবে, আল্লাহ তাকে ধৈর্য ধরতে সাহায্য করবেন। আর ধৈর্যের চেয়ে অধিক উত্তম ও ব্যাপক দান কাউকে দেওয়া হয়নি।
عَنْ أَبِى سَعِيدٍ الْخُدْرِىِّ أَنَّ نَاسًا مِنَ الأَنْصَارِ سَأَلُوا رَسُولَ اللهِ ﷺ فَأَعْطَاهُمْ ثُمَّ سَأَلُوهُ فَأَعْطَاهُمْ حَتَّى إِذَا نَفِدَ مَا عِنْدَهُ قَالَ مَا يَكُنْ عِنْدِى مِنْ خَيْرٍ فَلَنْ أَدَّخِرَهُ عَنْكُمْ وَمَنْ يَسْتَعْفِفْ يُعِفَّهُ اللهُ وَمَنْ يَسْتَغْنِ يُغْنِهِ اللهُ وَمَنْ يَصْبِرْ يُصَبِّرْهُ اللهُ وَمَا أُعْطِىَ أَحَدٌ مِنْ عَطَاءٍ خَيْرٌ وَأَوْسَعُ مِنَ الصَّبْرِ
পরিচ্ছেদঃ ভিক্ষাবৃত্তি থেকে দূরে থাকা এবং অপরকে দান করার প্রতি উৎসাহ দেওয়া প্রসঙ্গে
(১০০৩) ইবনে মাসঊদ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তির অভাব আসে এবং সেই অভাবের কথা মানুষের কাছে জানায়, তার অভাব দূর করা হয় না। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি তার অভাবের কথা আল্লাহর কাছে জানায়, আল্লাহ তাকে সত্বর অভাব দূর করেন; সত্বর মৃত্যু অথবা সত্বর ধনবত্তা দিয়ে।
عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ مَنْ أَصَابَتْهُ فَاقَةٌ فَأَنْزَلَهَا بِالنَّاسِ لَمْ تُسَدَّ فَاقَتُهُ وَمَنْ أَنْزَلَهَا بِاللهِ أَوْشَكَ اللهُ لَهُ بِالْغِنَى إِمَّا بِمَوْتٍ عَاجِلٍ أَوْ غِنًى عَاجِلٍ
পরিচ্ছেদঃ ভিক্ষাবৃত্তি থেকে দূরে থাকা এবং অপরকে দান করার প্রতি উৎসাহ দেওয়া প্রসঙ্গে
(১০০৪) ইবনে উমার (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের মধ্যে কেউ যাচ্ঞা করতে থাকলে পরিশেষে যখন সে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে তখন তার মুখমণ্ডলে এক টুকরাও মাংস থাকবে না।
عن عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ ﷺ مَا يَزَالُ الرَّجُلُ يَسْأَلُ النَّاسَ حَتَّى يَأْتِيَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لَيْسَ فِي وَجْهِهِ مُزْعَةُ لَحْمٍ
পরিচ্ছেদঃ ভিক্ষাবৃত্তি থেকে দূরে থাকা এবং অপরকে দান করার প্রতি উৎসাহ দেওয়া প্রসঙ্গে
(১০০৫) উক্ত ইবনে উমার (রাঃ) হতেই বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যাচনা হল কিয়ামতের দিন যাচনাকারীর মুখের ক্ষত-স্বরূপ।
وعنه قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ الْمَسْأَلَةُ كُدُوحٌ فِي وَجْهِ صَاحِبِهَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ
পরিচ্ছেদঃ ভিক্ষাবৃত্তি থেকে দূরে থাকা এবং অপরকে দান করার প্রতি উৎসাহ দেওয়া প্রসঙ্গে
(১০০৬) ইমরান বিন হুস্বাইন কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, অভাবমুক্ত মানুষের যাচনা কিয়ামতের দিন তার মুখমণ্ডলে কলঙ্কের ছাপ হবে।
عَنْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ مَسْأَلَةُ الْغَنِيِّ شَيْنٌ فِي وَجْهِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
পরিচ্ছেদঃ ভিক্ষাবৃত্তি থেকে দূরে থাকা এবং অপরকে দান করার প্রতি উৎসাহ দেওয়া প্রসঙ্গে
(১০০৭) হুবশী বিন জুনাদাহ (রাঃ) বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, যে ব্যক্তি অভাব না থাকা সত্ত্বেও যাচনা করে (খেলো), সে ব্যক্তি যেন জাহান্নামের অঙ্গার খেলো।
عَنْ حُبْشِيِّ بْنِ جُنَادَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ مَنْ سَأَلَ مِن غَيْرِ فَقْرٍ فَكَأَنَّمَا يَأْكُلُ الْجَمْرَ
পরিচ্ছেদঃ ভিক্ষাবৃত্তি থেকে দূরে থাকা এবং অপরকে দান করার প্রতি উৎসাহ দেওয়া প্রসঙ্গে
(১০০৮) আবূ হুরাইরা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি নিজ মাল বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্যে লোকেদের নিকট যাচনা করে, প্রকৃতপক্ষে সে (দোযখের) অঙ্গার যাচ্ঞা করে। চাহে সে কম করুক অথবা বেশী।
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ مَنْ سَأَلَ النَّاسَ أَمْوَالَهُمْ تَكَثُّرًا فَإِنَّمَا يَسْأَلُ جَمْرًا فَلْيَسْتَقِلَّ أَوْ لِيَسْتَكْثِرْ
পরিচ্ছেদঃ ভিক্ষাবৃত্তি থেকে দূরে থাকা এবং অপরকে দান করার প্রতি উৎসাহ দেওয়া প্রসঙ্গে
(১০০৯) আব্দুর রহমান বিন আউফ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তিনটি বিষয় এমন রয়েছে—সেই সত্তার কসম যার হাতে আমার প্রাণ আছে—যদি আমি (সেগুলির বাস্তবতার উপরে) শপথ করি (তাহলে অযথা হবে না।) দান করার ফলে মাল কমে যায় না। সুতরাং তোমরা দান কর। যে কোনও বান্দা কারো অন্যায়কে ক্ষমা করে দেবে তার বিনিময়ে আল্লাহ কিয়ামতের দিন সে বান্দার ইজ্জত বৃদ্ধি করবেন। আর যে বান্দা যাচ্ঞার দরজা খুলবে আল্লাহ তার জন্য অভাবের দরজা খুলে দেবেন।
عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَوْفٍ قَالَ: إِنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ قَالَ ثَلَاثٌ وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ إِنْ كُنْتُ لَحَالِفًا عَلَيْهِنَّ لَا يَنْقُصُ مَالٌ مِنْ صَدَقَةٍ فَتَصَدَّقُوا وَلَا يَعْفُو عَبْدٌ عَنْ مَظْلَمَةٍ يَبْتَغِي بِهَا وَجْهَ اللهِ إِلَّا رَفَعَهُ اللهُ بِهَا و قَالَ أَبُو سَعِيدٍ مَوْلَى بَنِي هَاشِمٍ إِلَّا زَادَهُ اللهُ بِهَا عِزًّا يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَا يَفْتَحُ عَبْدٌ بَابَ مَسْأَلَةٍ إِلَّا فَتَحَ اللهُ عَلَيْهِ بَابَ فَقْرٍ
পরিচ্ছেদঃ ভিক্ষাবৃত্তি থেকে দূরে থাকা এবং অপরকে দান করার প্রতি উৎসাহ দেওয়া প্রসঙ্গে
(১০১০) ইবনে আব্বাস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যাচ্ঞাকারী যদি যাচ্ঞায় কি শাস্তি আছে তা জানত, তাহলে সে যাচ্ঞা করত না।
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ لَوْ يَعْلَمُ صَاحِبُ الْمَسْأَلَةِ مَا لَهُ فِيهَا لَمْ يَسْأَلْ
পরিচ্ছেদঃ ভিক্ষাবৃত্তি থেকে দূরে থাকা এবং অপরকে দান করার প্রতি উৎসাহ দেওয়া প্রসঙ্গে
(১০১১) আবূ হুরাইরা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ নাছোড়-বান্দা হয়ে ভিক্ষাকারীকে ঘৃণা বাসেন।
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ إنّ اللهَ تَعَالى إِنَّ اللهَ تَعَالى يَبْغُضُ السَّائِلَ الْمُلْحِفَ
পরিচ্ছেদঃ ভিক্ষাবৃত্তি থেকে দূরে থাকা এবং অপরকে দান করার প্রতি উৎসাহ দেওয়া প্রসঙ্গে
(১০১২) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাআলা যখন কোন বান্দার উপর কোন সম্পদ দান করেন, তখন তিনি তার চিহ্ন ঐ বান্দার উপর দেখা যাক—তা পছন্দ করেন। তিনি অভাব ও দীনতা প্রকাশ করাকে অপছন্দ করেন। নাছোড়-বান্দা হয়ে যাচ্ঞাকারীকে ঘৃণা করেন এবং লজ্জাশীল ও যাচ্ঞা করে না এমন পবিত্র মানুষকে তিনি ভালোবাসেন।
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ إنّ الله تعالى إذا أنْعَمْ على عَبْدٍ نِعْمَةً يُحِبُّ أنْ يَرَى أثَرَ النِّعْمَةِ علَيْهِ وَيَكْرَهُ الْبُؤْسَ والتَّباؤُسَ ويُبْغِضُ السَّائِلَ المُلْحِفَ ويحِبُّ الحَيَّ العَفيفَ المُتَعفّفَ
পরিচ্ছেদঃ ভিক্ষাবৃত্তি থেকে দূরে থাকা এবং অপরকে দান করার প্রতি উৎসাহ দেওয়া প্রসঙ্গে
(১০১৩) আওফ বিন মালিক আশজাঈ (রাঃ) বলেন, একদা আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে নয়, আট, বা সাত জন ছিলাম। তিনি বললেন, তোমরা কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাতে বায়াত করবে না? এ কথা তিনি তিনবার বললেন। সুতরাং আমরা আমাদের হাত বাড়িয়ে দিলাম এবং বললাম, ’আপনার হাতে বায়াত করলাম, কিন্তু কোন্ কথার উপর বায়াত হে আল্লাহর রসূল?’ তিনি বললেন, তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক করো না। পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় কর। আনুগত্য কর (নিঃশব্দে কিছু বললেন) এবং লোকের কাছে কোন কিছু চেয়ো না।
বর্ণনাকারী বলেন, আমি দেখেছি যে, তাঁদের কারো কারো হাত থেকে চাবুক পড়ে গেলে তা তুলে দেওয়ার জন্য কাউকে বলতেন না। (বরং সওয়ারী থেকে নিজে নেমে গিয়ে তা তুলে নিতেন।)
عَوْفِ بْنِ مَالِكِ الْأَشْجَعِي قَالَ كُنَّا عِنْدَ رَسُولِ اللهِ ﷺ تِسْعَةً أَوْ ثَمَانِيَةً أَوْ سَبْعَةً فَقَالَ أَلاَ تُبَايِعُونَ رَسُولَ اللهِ ثلاثاً قَالَ فَبَسَطْنَا أَيْدِيَنَا وَقُلْنَا قَدْ بَايَعْنَاكَ يَا رَسُولَ اللهِ فَعَلاَمَ نُبَايِعُكَ قَالَ عَلَى أَنْ تَعْبُدُوا اللهَ وَلاَ تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا وَالصَّلَوَاتِ الْخَمْسِ وَتُطِيعُوا - وَأَسَرَّ كَلِمَةً خَفِيَّةً - وَلاَ تَسْأَلُوا النَّاسَ شَيْئًا فَلَقَدْ رَأَيْتُ بَعْضَ أُولَئِكَ النَّفَرِ يَسْقُطُ سَوْطُ أَحَدِهِمْ فَمَا يَسْأَلُ أَحَدًا يُنَاوِلُهُ إِيَّاهُ
পরিচ্ছেদঃ ভিক্ষাবৃত্তি থেকে দূরে থাকা এবং অপরকে দান করার প্রতি উৎসাহ দেওয়া প্রসঙ্গে
(১০১৪) সাওবান (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি এ কথার নিশ্চয়তা দেবে যে, সে লোকের নিকট কিছু চাইবে না, আমি তার জন্য বেহেশতের নিশ্চয়তা দিব।
عَنْ ثَوْبَانَ قَالَ وَكَانَ ثَوْبَانُ مَوْلَى رَسُولِ اللهِ ﷺ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ مَنْ تَكَفَّلَ لِى أَنْ لاَ يَسْأَلَ النَّاسَ شَيْئًا وَأَتَكَفَّلَ لَهُ بِالْجَنَّةِ فَقَالَ ثَوْبَانُ أَنَا فَكَانَ لاَ يَسْأَلُ أَحَدًا شَيْئًا
পরিচ্ছেদঃ ভিক্ষাবৃত্তি থেকে দূরে থাকা এবং অপরকে দান করার প্রতি উৎসাহ দেওয়া প্রসঙ্গে
(১০১৫) আবূ যার (রাঃ) বলেন, আমাকে আমার বন্ধু সাতটি কাজের অসিয়ত করে গেছেন; (১) আমি যেন মিসকীনদেরকে ভালোবাসি, তাদের নিকটবর্তী হই (বসি), (২) আমার থেকে যারা নিম্নমানের তাদের প্রতি লক্ষ্য (করে উপদেশ বা সান্ত্বনা গ্রহণ) করি ও আমার থেকে যে ঊর্ধ্বে তার প্রতি লক্ষ্য না করি, (৩) আমার প্রতি অন্যায় করা হলেও আমি আত্মীয়তার বন্ধন বজায় রাখি, (৪) বেশী বেশী ’লা হাউলা অলা ক্বুউওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ বলি, (৫) তিক্ত হলেও যেন হক কথা বলি (৬) আল্লাহর ব্যাপারে কোন নিন্দুকের নিন্দা-ভয় যেন আমাকে না ধরে এবং (৭) লোকেদের কাছে যেন কিছু না চাই।
عَنْ أَبِي ذَرٍّ رَضِي اللهُ تَعَالَى عَنْهُ قَالَ : أَوْصَانِي خَلِيلِي ﷺ بِسَبْعٍ بِحُبِّ الْمَسَاكِينِ وَأَنْ أَدْنُوَ مِنْهُمْ وَأَنْ أَنْظُرَ إِلَى مَنْ هُوَ أَسْفَلُ مِنِّي وَلا أَنْظُرُ إِلَى مَنْ هُوَ فَوْقِي وَأَنْ أَصِلَ رَحِمِي وَإِنْ جَفَانِي وَأَنْ أُكْثِرَ مِنْ لا حَوْلَ وَلا قُوَّةَ إِلا بِاللهِ وَأَنْ أَتَكَلَّمَ بِمُرِّ الْحَقِّ وَلا تَأْخُذُنِي فِي اللهِ لَوْمَةُ لائِمٍ وَأَنْ لا أَسْأَلَ النَّاسَ شَيْئًا
পরিচ্ছেদঃ ভিক্ষাবৃত্তি থেকে দূরে থাকা এবং অপরকে দান করার প্রতি উৎসাহ দেওয়া প্রসঙ্গে
(১০১৬) একদা হাকীম বিন হিযাম (রাঃ) তিন তিনবার আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে যাচ্ঞা করলে তিনি তাঁকে প্রত্যেক বারেই দান করলেন। শেষবারে তিনি বললেন, ওহে হাকীম! এই মাল তরোতাজা মিষ্টি (ফলের মত)। সুতরাং যে তা নিজের প্রয়োজন মত গ্রহণ করবে, তাকে তাতে বরকত দান করা হবে। পক্ষান্তরে যে মনে লোভ রেখে তা গ্রহণ করবে, তাকে তাতে বরকত দেওয়া হবে না। তার অবস্থা হবে সেই ব্যক্তির মত, যে খাবে অথচ তৃপ্ত হবে না। আর উপুড়হস্ত চিতহস্ত অপেক্ষা উত্তম। এই কথার পর হাকীম কসম খেয়ে বলেছিলেন যে, তিনি এরপর আর কারো কাছে কিছু চাইবেন না। করেছিলেনও তাই এমনকি তিনি দুনিয়া থেকে পৃথক হয়ে গেলেন।
أَنَّ حَكِيمَ بْنَ حِزَامٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: سَأَلْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَعْطَانِي ثُمَّ سَأَلْتُهُ فَأَعْطَانِي ثُمَّ سَأَلْتُهُ فَأَعْطَانِي ثُمَّ قَالَ: يَا حَكِيمُ إِنَّ هَذَا المَالَ خَضِرَةٌ حُلْوَةٌ فَمَنْ أَخَذَهُ بِسَخَاوَةِ نَفْسٍ بُورِكَ لَهُ فِيهِ وَمَنْ أَخَذَهُ بِإِشْرَافِ نَفْسٍ لَمْ يُبَارَكْ لَهُ فِيهِ كَالَّذِي يَأْكُلُ وَلاَ يَشْبَعُ اليَدُ العُلْيَا خَيْرٌ مِنَ اليَدِ السُّفْلَى قَالَ حَكِيمٌ: فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، وَالَّذِي بَعَثَكَ بِالحَقِّ لاَ أَرْزَأُ أَحَدًا بَعْدَكَ شَيْئًا حَتَّى أُفَارِقَ الدُّنْيَا
পরিচ্ছেদঃ ভিক্ষাবৃত্তি থেকে দূরে থাকা এবং অপরকে দান করার প্রতি উৎসাহ দেওয়া প্রসঙ্গে
(১০১৭) কাবীসাহ বিন মুখারিক হিলালী (রাঃ) বলেন, একবার এক অর্থদণ্ডর দায়িত্ব আমার ঘাড়ে থাকলে আমি সে ব্যাপারে সাহায্য নিতে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এলাম। তিনি বললেন, তুমি আমাদের কাছে থাকো। সাদকার মাল এলে তোমাকে তা দিয়ে সাহায্য করব।
অতঃপর তিনি বললেন, হে কাবীসাহ! তিন ব্যক্তি ছাড়া আর কারো জন্য চাওয়া বৈধ নয়;
(১) যে ব্যক্তি অর্থদণ্ড পড়বে (কারো দিয়াত বা জরিমানা দেওয়ার যামিন হবে), তার জন্য চাওয়া হালাল। অতঃপর তা পরিশোধ হয়ে গেলে সে চাওয়া বন্ধ করবে।
(২) যে ব্যক্তি দুর্যোগগ্রস্ত হবে এবং তার মাল ধ্বংস হয়ে যাবে, তার জন্য ততক্ষণ পর্যন্ত চাওয়া বৈধ, যতক্ষণ তার সচ্ছল অবস্থা ফিরে না এসেছে।
(৩) যে ব্যক্তি অভাবী হয়ে পড়বে এবং তার গোত্রের তিনজন জ্ঞানী লোক এ কথার সাক্ষ্য দেবে যে, অমুক অভাবী, তখন তার জন্য চাওয়া বৈধ।
আর এ ছাড়া হে কাবীসাহ অন্য লোকের জন্য চেয়ে (মেগে) খাওয়া হারাম। সে মাল খেলে হারাম খাওয়া হবে।
عَنْ قَبِيصَةَ بْنِ مُخَارِقٍ الْهِلاَلِىِّ قَالَ تَحَمَّلْتُ حَمَالَةً فَأَتَيْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ أَسْأَلُهُ فِيهَا فَقَالَ أَقِمْ حَتَّى تَأْتِيَنَا الصَّدَقَةُ فَنَأْمُرَ لَكَ بِهَا قَالَ ثُمَّ قَالَ يَا قَبِيصَةُ إِنَّ الْمَسْأَلَةَ لاَ تَحِلُّ إِلاَّ لأَحَدِ ثَلاَثَةٍ رَجُلٍ تَحَمَّلَ حَمَالَةً فَحَلَّتْ لَهُ الْمَسْأَلَةُ حَتَّى يُصِيبَهَا ثُمَّ يُمْسِكُ وَرَجُلٍ أَصَابَتْهُ جَائِحَةٌ اجْتَاحَتْ مَالَهُ فَحَلَّتْ لَهُ الْمَسْأَلَةُ حَتَّى يُصِيبَ قِوَامًا مِنْ عَيْشٍ - أَوْ قَالَ سِدَادًا مِنْ عَيْشٍ وَرَجُلٍ أَصَابَتْهُ فَاقَةٌ حَتَّى يَقُومَ ثَلاَثَةٌ مِنْ ذَوِى الْحِجَا مِنْ قَوْمِهِ لَقَدْ أَصَابَتْ فُلاَنًا فَاقَةٌ فَحَلَّتْ لَهُ الْمَسْأَلَةُ حَتَّى يُصِيبَ قِوَامًا مِنْ عَيْشٍ- أَوْ قَالَ سِدَادًا مِنْ عَيْشٍ- فَمَا سِوَاهُنَّ مِنَ الْمَسْأَلَةِ يَا قَبِيصَةُ سُحْتًا يَأْكُلُهَا صَاحِبُهَا سُحْتًا
পরিচ্ছেদঃ ভিক্ষাবৃত্তি থেকে দূরে থাকা এবং অপরকে দান করার প্রতি উৎসাহ দেওয়া প্রসঙ্গে
(১০১৮) আনাস বিন মালিক কর্তৃক বর্ণিত, একদা এক আনসারী ব্যক্তি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট চাইতে এল। তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার বাড়িতে কি কিছুই নেই? লোকটি বলল, অবশ্যই আছে। জিনপোশের একটি কাপড়; যার অর্ধেক পরি ও অর্ধেক বিছাই। আর একটি বড় পাত্র; যাতে পানি পান করি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, নিয়ে এস সে দুটিকে। লোকটি সে দুটিকে হাযির করলে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা হাতে নিয়ে বললেন, এ দুটিকে কে কিনবে?
এক ব্যক্তি বলল, আমি এক দিরহাম দিয়ে কিনব। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কে এক দিরহাম থেকে বেশী দেবে? এ কথা তিনি ২ অথবা ৩ বার বললেন। তারপর এক ব্যক্তি বলল, আমি ২ দিরহাম দিয়ে কিনব। তিনি ২ দিরহামের বিনিময়ে ঐ জিনিস দুটিকে বিক্রয় করে দিলেন। অতঃপর ঐ দিরহাম আনসারীকে দিয়ে বললেন, এর মধ্যে এক দিরহাম দিয়ে তুমি খাবার কিনে তোমার পরিবারকে দাও। আর অপর একটি দিরহাম দিয়ে একটি কুড়াল কিনে নিয়ে আমার কাছে এস।
লোকটি তাই করল। কুড়ালটি নিয়ে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে এসে উপস্থিত হল। তিনি নিজ হাতে তাতে একটি কাঠের বাঁট লাগিয়ে দিয়ে বললেন, যাও এটা দিয়ে কাঠ কাট এবং তা বিক্রয় কর। আর যেন আমি পনের দিন তোমাকে না দেখতে পাই।
লোকটি নির্দেশমত চলে গিয়ে কাঠ কেটে বিক্রয় করতে লাগল। অতঃপর একদিন সে তাঁর কাছে উপস্থিত হল। তখন সে ১০ দিরহামের মালিক। সে তার কিছু দিয়ে কাপড় কিনল এবং কিছু দিয়ে খাবার। আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন, কিয়ামতের দিন তোমার চেহারায় কালো দাগ নিয়ে উপস্থিত হওয়া থেকে এটা তোমার জন্য উত্তম। আসলে তিন ব্যক্তি ছাড়া অপর কারো জন্য চাওয়া (ভিক্ষা করা) বৈধ নয়; (১) অত্যন্ত অভাবী, (২) চূড়ান্ত দেনা বা জরিমানা দায়ে আবদ্ধ অথবা (৩) পীড়াদায়ক (খুনীর) রক্তপণের জন্য দায়ী ব্যক্তি।
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ أَنَّ رَجُلاً مِنَ الأَنْصَارِ أَتَى النَّبِىَّ ﷺ يَسْأَلُهُ فَقَالَ أَمَا فِى بَيْتِكَ شَىْءٌ قَالَ بَلَى حِلْسٌ نَلْبَسُ بَعْضَهُ وَنَبْسُطُ بَعْضَهُ وَقَعْبٌ نَشْرَبُ فِيهِ مِنَ الْمَاءِ قَالَ ائْتِنِى بِهِمَا فَأَتَاهُ بِهِمَا فَأَخَذَهُمَا رَسُولُ اللهِ ﷺ بِيَدِهِ وَقَالَ مَنْ يَشْتَرِى هَذَيْنِ قَالَ رَجُلٌ أَنَا آخُذُهُمَا بِدِرْهَمٍ قَالَ مَنْ يَزِيدُ عَلَى دِرْهَمٍ مَرَّتَيْنِ أَوْ ثَلاَثًا قَالَ رَجُلٌ أَنَا آخُذُهُمَا بِدِرْهَمَيْنِ فَأَعْطَاهُمَا إِيَّاهُ وَأَخَذَ الدِّرْهَمَيْنِ وَأَعْطَاهُمَا الأَنْصَارِىَّ وَقَالَ اشْتَرِ بِأَحَدِهِمَا طَعَامًا فَانْبِذْهُ إِلَى أَهْلِكَ وَاشْتَرِ بِالآخَرِ قَدُومًا فَأْتِنِى بِهِ فَأَتَاهُ بِهِ فَشَدَّ فِيهِ رَسُولُ اللهِ ﷺ عُودًا بِيَدِهِ ثُمَّ قَالَ لَهُ اذْهَبْ فَاحْتَطِبْ وَبِعْ وَلاَ أَرَيَنَّكَ خَمْسَةَ عَشَرَ يَوْمًا فَذَهَبَ الرَّجُلُ يَحْتَطِبُ وَيَبِيعُ فَجَاءَ وَقَدْ أَصَابَ عَشَرَةَ دَرَاهِمَ فَاشْتَرَى بِبَعْضِهَا ثَوْبًا وَبِبَعْضِهَا طَعَامًا فَقَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ هَذَا خَيْرٌ لَكَ مِنْ أَنْ تَجِىءَ الْمَسْأَلَةُ نُكْتَةً فِى وَجْهِكَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِنَّ الْمَسْأَلَةَ لاَ تَصْلُحُ إِلاَّ لِثَلاَثَةٍ لِذِى فَقْرٍ مُدْقِعٍ أَوْ لِذِى غُرْمٍ مُفْظِعٍ أَوْ لِذِى دَمٍ مُوجِعٍ