পরিচ্ছেদঃ ১৮৬. তাশাহ্হুদের মধ্যে ইশারা করা
৯৮৭। ’আলী ইবনু ’আবদুর রহমান আল-মু’আবী (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) আমাকে সালাতের মধ্যে নুড়ি পাথর দিয়ে অনর্থক নাড়াচাড়া করতে দেখলেন। অতঃপর যখন তার সালাত শেষ হলো তিনি আমাকে এরূপ করতে নিষেধ করলেন এবং বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে যা করতেন তুমিও তাই করবে। আমি বললাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে কি করতেন? তিনি বললেন, সালাতরত অবস্থায় তিনি যখন বসতেন তখন তাঁর ডান হাতের তালু ডান উরুর উপর রাখতেন এবং সব আঙ্গুল বন্ধ করে রাখতেন আর বৃদ্ধাঙ্গুলির পাশের (শাহাদাত) অঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করতেন, আর বাম হাতের তালু বাম পায়ের উরুর উপর রাখতেন।[1]
সহীহ : মুসলিম।
-
মাসআলাহ : তাশাহহুদে আঙ্গুল উত্তোলন ও নাড়ানো
(১) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাম হাতের তালু বাম হাঁটুর উপর বিছিয়ে দিতেন এবং ডান হাতের সবগুলো আঙ্গুল মুষ্ঠিবদ্ধ করে তর্জনী দ্বারা কিবলার দিকে ইঙ্গিত করতেন এবং এর দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেন। [মুসলিম, আবূ ‘আওয়ানাহ ও ইবনু খুযাইমাহ। হাদীসটি হুমাইদী স্বীয় মুসনাদে- (১৩১/১) এবং আবূ ই‘য়ালা (২৭৫/১) ইবনু ‘উমার থেকে সহীহ সনদে এ বর্ধিত অংশটুকু বর্ণনা করেন যে, ‘‘এটি শয়তানকে আঘাতকারী, কেউ যেন এমনটি করতে না ভুলে, (এই বলে) হুমাইদী স্বীয় অঙ্গুলি খাড়া করলেন, হুমাইদী বলেন, মুসলিম ইবনু আবূ মারইয়াম বলেছেন, আমাকে জনৈক ব্যক্তি বর্ণনা করেছেন যে, তিনি স্বপ্নে নাবীগণকে সিরিয়ার এক গীর্জায় স্বাকারে সালাত আদায় অবস্থায় এমনটি করতে দেখেছেন (এই বলেন) হুমাইদী স্বীয় অঙ্গুলি উঠান।’’ আলবানী (রহঃ) বলেন, এটি একটি দুষ্প্রাপ্য অজানা উপকারী তথ্য, এর সানাদ ঐ ব্যক্তিটি পর্যন্ত সহীহ]
(২) অঙ্গুলি দ্বারা ইঙ্গিত করা কালে কখনও তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বৃদ্ধাঙ্গুলিকে মধ্যমার উপর রাখতেন। (মুসলিম ও আবূ ‘আওয়ানাহ)
(৩) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো উক্ত অঙ্গুলিদ্বয় দ্বারা গোলাকৃতি করতেন এবং অঙ্গুলি উঠিয়ে নাড়ানো পূর্বক দু‘আ করতেন। [আবূ দাউদ, নাসায়ী, ইবনুল জারুদ ‘আল-মুনতাক্বা’ (২০৮), ইবনু খুযাইমাহ (১/৮৬/১-২), সহীহ ইবনু হিব্বান (৪৮৫) সহীহ সনদে। ইবনু মুলাক্বিন একে সহীহ বলেছেন (২৮/২)। অঙ্গুলি নাড়ানোর হাদীসের পক্ষে ইবনু ‘আদীতে সাক্ষ্যমূলক বর্ণনা বিদ্যমান রয়েছে (২৮৭/১)। ‘উসমান ইবনু মুকসিম বর্ণনাকারী সম্পর্কে বলেন, তিনি এমন পর্যায়ের যঈফ রাবী যার হাদীস লিখা যাবে। হাদীসের শব্দ ‘এর মাধ্যমে দু‘আ করতেন’ এর মর্ম সম্পর্কে ইমাম ত্বাহাবী বলেন, এতে এ কথার প্রমাণ রয়েছে যে, এটি সালাতের শেষাংশে ছিল]
(৪) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনঃ এটি (তর্জনী) শয়তানের বিরুদ্ধে লোহা অপেক্ষা কঠিন। [আহমাদ, বাযযার, আবূ জা‘ফার, বাখতূরী ‘আল-আমলী’ (৬০/১), ত্বাবারানী ‘আদ্দু‘আ’ (ক্বাফ৭৩/১), ‘আবদুল গনী মাক্বসিদী ‘আস-সুনান’ (১২/২) হাসান সনদে, রুইয়ানী তার মুসনাদ (২৪৯/২) এবং বায়হাক্বী]
(৫) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীগণ (এটা পরিত্যাগের উপরে) একে অপরকে জবাবদিহি করতেন অর্থাৎ অঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করার বেলায় তারা এমনটি করতেন। [ইবনু আবূ শায়বাহ (২/১২৩/২) হাসান সনদে]
(৬) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উভয় তাশাহহুদেই এই ‘আমল করতেন। (নাসায়ী ও বায়হাক্বী সহীহ সনদে)
(৭) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে দুই অঙ্গুলি দিয়ে দু‘আ করতে দেখে বললেনঃ একটি দিয়ে কর, একটি দিয়ে কর এবং তর্জনী দ্বারা ইঙ্গিত করলেন। [ইবনু আবূ শায়বাহ (১২/৪০/১, ২/১২৩/২), নাসায়ী, ইমাম হাকিম একে সহীহ প্রমাণ করেছেন এবং ইমাম যাহাবী তাঁর সাথে একমত পোষণ করেছেন এবং এর সাক্ষ্যমূলক বর্ণনা ইবনু আবূ শায়বাহর নিকট রয়েছে]
এ সম্পর্কে বিভিন্ন মত ও পর্যালোচনাঃ
ইমাম নাববী বলেনঃ তাশাহহুদের ‘ইল্লাল্লাহু’ বলার সময় ইশারা করতে হবে। সুবুলুস সালাম প্রণেতা বলেনঃ বায়হাক্বীর বর্ণনানুসারে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ বলার সময় এরূপ করতে হবে। আল্লামা ত্বীবী ইবনু ‘উমার বর্ণিত একটি হাদীসের বরাত দিয়ে বলেনঃ ‘ইল্লাল্লাহু’ বলার সময় ইশারা করতে হবে, যাতে কথায় ও কাজে তাওহীদের সামঞ্জস্য হয়ে যায়। মোল্লা ‘আলী ক্বারী হানফী বলেনঃ হানাফী মতে ‘লা ইলাহা’ বলার সময় তর্জনী আঙ্গুল তুলতে হবে এবং ‘ইল্লাল্লাহু’ বলার সময় তা রেখে দিতে হবে। আল্লামা ‘আবদুর রহমান মুবারকপুরী বলেনঃ ঐসব মতের কোনটারই প্রমাণে আমি কোন সহীহ হাদীস পাইনি। (দেখুন, তুহফাতুল আহওয়াযী ১/২৪২)
উল্লেখ্য, শাফিঈদের মতেঃ ‘ইল্লাল্লাহু’ বলার সময় আঙ্গুল দিয়ে একবার ইশারা করতে হবে। মালিকীদের মতেঃ আত্তাহিয়্যাতুর শুরু থেকে সালাম পর্যন্ত আঙ্গুলটিকে ডানে ও বামে নাড়াতে হবে। আর হাম্বালীদের মতেঃ যখন আল্লাহর নাম উচ্চারণ হবে তখন আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করবে, কিন্তু তা নাড়াবে না। (দেখুন, ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৭০, আইনী তুহফা)
সালাতুর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গ্রন্থে রয়েছেঃ তাশাহহুদের বৈঠকের সময় বাম হাতের আঙ্গুলগুলো বাম হাঁটুর প্রান্ত বরাবর কিবলামুখী ও স্বাভাবিক অবস্থায় থাকবে এবং ডান হাত ৫৩-এর ন্যায় মুষ্টিবদ্ধ থাকবে এবং শাহাদাত অঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করবে- (মুসলিম, মিশকাত হা/৯০৬, ৯০৭)। সালাম ফিরানোর আগ পর্যন্ত ইশারা করতে থাকবে- (মুসলিম, মিশকাত হা/৯০৭-৯০৮, আবূ দাউদ, নাসাঈ, দারিমী)। ইশারার সময় আঙ্গুল সামান্য হেলিয়ে উঁচু রাখা যায়- (নাসাঈ হা/১২৭৫)। একটানা নাড়াতে গেলে এমন দ্রুত নাড়ানো উচিত নয়, যা পাশের মুসল্লীর দৃষ্টি কেড়ে নেয়- (মুত্তাঃ মিশকাত হা/৭৫৭, মিরআত ১/৬৬৯)। ‘আশহাদু’ বলার সময় আঙ্গুল উঠাবে ও ‘ইল্লাল্লা-হু’ বলার সময় আঙ্গুল নামাবে’ বলে যে কথা চালু আছে তার কোন ভিত্তি নেই- (তাহক্বীক্ব মিশকাত অনুঃ ‘তাশাহহুদ’ হা/৯০৬, টিকা নং ২)। মুসল্লীর নযর ইশারা বরাবর থাকবে। তার বাইরে যাবে না- (আহমাদ, আবূ দাউদ, মিশকাত হা/৯১১, ৯১২, ৯১৭)।
* হাফিয ইবনুল ক্বাইয়্যিম (রহঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাশাহহুদের জন্য বসতেন, তখন বাম ঊরূর উপর বাম হাত এবং ডান ঊরূর উপর ডান হাত রাখতেন। ডান হাতের শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা কিবলার দিকে ইংগিত করতে থাকতেন। এ সময় আঙ্গুলটি পুরোপুরি দাঁড় করাতেন না, আবার নিচু করেও রাখতেন না, বরং উপরের দিকে ঈষৎ উঠিয়ে রাখতেন এবং নাড়াতে থাকতেন। বুড়ো আঙ্গুল মধ্যমার উপর রেখে একটা বৃত্তের মতো বানাতেন আর শাহাদাত আঙ্গুল (তর্জনী) উঁচিয়ে দু‘আ করতে থাকতেন এবং সেটির দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে রাখতেন। এ সময় বাম ঊরূর উপর বাম হাত বিছিয়ে রাখতেন। (দেখুন, যাদুল মা‘আদ)
তিনি দুই সিজদার মাঝখানের বৈঠকেও অনুরূপ করতেন। তিনি শাহাদাত অঙ্গুলি উপরের দিকে উঠিয়ে দু‘আ পড়তে থাকতেন এবং সেটিকে নাড়াতেন। এ হাদীস বর্ণনা করেছেন ওয়ায়িল ইবনু হুজর (রাঃ)।
আবূ দাউদে ‘আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইর থেকে এ সম্পর্কে যে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে, তাতে ‘আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইর (রাঃ) বলেনঃ ‘‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু‘আ পড়ার সময় শাহাদাত অঙ্গুলি দিয়ে ইশারা করতে থাকতেন, নাড়াতেন না।’’
এই ‘নাড়াতেন না’ কথাটি পরবর্তীতে কেউ (কোন বর্ণনাকারী) বাড়িয়ে বলেছেন বলে মনে হয়। কারণ এ কথাটুকুর বিশুদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ইমাম মুসলিম তাঁর সহীহ গ্রন্থেও ‘আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইর (রাঃ)-এর সূত্রে হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন। তাতে তিনি এই বর্ধিতাংশ অর্থাৎ ‘নাড়াতেন না’ কথাটি উল্লেখ করেননি। বরং তাতে তিনি এভাবে বলেছেনঃ ‘‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাতে বসতেন তখন বাম হাতের তালু বাম হাঁটুর উপর রাখতেন। ডান হাত ডান উরূর উপর রাখতেন এবং তর্জনী দিয়ে ইশারা করতেন।’’ আবূ দাউদের হাদীসে যে ‘নাড়াতেন না’ কথাটি আছে, সেটা এখানে নেই। তাছাড়া আবূ দাউদের হাদীসের এই ‘নাড়াতেন না’ কথাটি যে সালাতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য সে কথা বলা হয়নি। এক্ষেত্রে ওয়ায়িল ইবনু হুজর (রাঃ)-এর হাদীস মজবুত ও অগ্রাধিকার পাওয়ার যোগ্য। তাছাড়া আবূ হাতিম তাঁর সহীহ সংকলনে বলেছেন, এটি সহীহ হাদীস।
* শায়খ ‘আবদুল ‘আযীয বিন বায (রহঃ) বলেনঃ মুসল্লীর জন্য সুন্নাত হচ্ছে তাশাহহুদের সময় ডান হাতের অঙ্গুলিগুলো মুষ্ঠিবদ্ধ করবে এবং দু‘আকালে তাওহীদের ইশারা স্বরূপ তর্জনী অঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করবে ও হালকাভাবে নাড়াবে। (দেখুন, ফাতাওয়াহ শায়খ বিন বায, ১১/১৮৫)
* শায়খ সালিহ আল-উসাইমিন (রহঃ) বলেছেনঃ তর্জনী আঙ্গুল নাড়ানো শুধুমাত্র দু‘আর সময় হবে। পুরো তাশাহহুদে নয়। যেমনটি হাদীসে এসেছেঃ ‘‘তিনি তা নাড়াতেন ও দু‘আ করতেন।’’- (ফাতহুর রব্বানী-৩/১৪৭, সানাদ হাসান)। এর কারণ হচ্ছেঃ দু‘আ আল্লাহর কাছেই করা হয়। আর মহান আল্লাহ আসমানে আছেন। তাই তাঁকে আহবান করার সময় উপরে আঙ্গুল উঠিয়ে ইশারা করবে। আল্লাহ বলেনঃ ‘‘তোমরা কি নিরাপদে আছো সেই সত্ত্বা থেকে যিনি আসমানে আছেন...’’- (সূরাহ মুলক : আয়াত ১৬-১৭)। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমরা কি আমাকে আমানতদার মনে কর না? অথচ যিনি আসমানে আছেন আমি তাঁর আমানতদার’’- (বুখারী ও মুসলিম)। এ কারণে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হাজ্জে খুত্ববাহ্ প্রদান করে বলেন, ‘‘আমি কি পৌঁছিয়েছি?’’ তাঁরা বললেন, হ্যাঁ। তিনি আসমানের দিকে আঙ্গুল উঠালেন এবং লোকদের দিকে আঙ্গুলটিকে ঘুরাতে থাকলেন এবং বললেন, ‘‘হে আল্লাহ! তুমি সাক্ষী থেকো।’’ এর দ্বারা প্রমাণিত হয় আল্লাহ সকল বস্ত্তর উপরে অবস্থান করেন। এ বিষয়টি বিবেক যুক্তি ও ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে সুষ্পষ্ট ও সুপ্রমাণিত। এ ভিত্তিতে আপনি যখনই আল্লাহ তা‘আলাকে ডাকবেন তাঁর কাছে দু‘আ করবেন, তখনই আসমানের দিকে তর্জনী আঙ্গুল দ্বারা ইঙ্গিত করবেন এবং তা নাড়াবেন। আর অন্য অবস্থায় তা স্থির রাখবেন।
এখন আমারা অনুসন্ধান করি তাশাহহুদে দু‘আর স্থানগুলোঃ (১) আসসালামু ‘আলাইকা আইয়্যুহান্নাবিয়্যু ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। (২) আসসালামু ‘আলাইনা ওয়া ‘আলা ‘ইবাদিল্লাহিস্ সলিহীন। (৩) আল্লাহুম্মা সল্লি ‘আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলি মুহাম্মাদ। (৪) আল্লাহুম্মা বারিক ‘আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলি মুহাম্মাদ। (৫) আ‘উযুবিল্লাহি মিন ‘আযাবি জাহান্নাম। (৬) ওয়া মিন ‘আযাবিল ক্বাবরি। (৭) ওয়া মিন ফিতনাতিল মাহ্ইয়া ওয়াল মামাত। (৮) ওয়া মিন ফিতনাতিল মাসীহিদ্ দাজ্জাল। এ আটটি স্থানে আঙ্গুল নাড়াবে এবং তা আকাশের দিকে উত্থিত করবে। এগুলো ছাড়া অন্য কোন দু‘আ পাঠ করলেও আঙ্গুল উপরে উঠাবে। কেননা দু‘আ করলেই আঙ্গুল উপরে উঠাবে। (দেখুন, ফাতাওয়াহ আরকানুল ইসলাম, ২৫৪ নং প্রশ্নের জবাব)
* শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেনঃ সুন্নাত হলো সালাম ফিরানো পর্যন্ত আঙ্গুলের ইঙ্গিত ও দু‘আ চালু রাখা, কেননা দু‘আর ক্ষেত্র সালামের পূর্বে, এটি ইমাম মালিক ও অন্যান্যদের গৃহিত মতও বটে। ইমাম আহমাদকে জিজ্ঞেস করা হলো, সালাতে কি মুসল্লী ব্যক্তি স্বীয় অঙ্গুলি দ্বারা ইঙ্গিত করবে? উত্তরে তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, কঠিনভাবে। এটি ইবনু হানি স্বীয় মাসায়িলি আনিল ইমাম আহমাদ গ্রন্থে (৮০ পৃষ্ঠায়) উল্লেখ করেছেন।
আমি বলতে চাইঃ এত্থেকে প্রমাণিত হয় যে, তাশাহহুদে আঙ্গুলি নাড়ানো নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সুসাব্যস্ত সুন্নাত। যার উপরে ইমাম আহমাদ ও অন্যান্য হাদীসের ইমামগণ আমল করেছেন। অতএব যেসব লোকেরা এ ধারণা পোষণ করেন যে, এটি সালাতের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ অনর্থক কাজ এবং এ কারণে সাব্যস্ত সুন্নাত জানা সত্ত্বেও অঙ্গুলি নাড়ায় না- উপরন্তু আরবী বাকভঙ্গির বিপরীত ব্যাখ্যার অপচেষ্টা চালায় যা ইমামগণের বুঝেরও বিপরীত, তারা যেন আল্লাহকে ভয় করে। আরও আশ্চর্যের বিষয় এই যে, তাদের কেউ এই মাসআলাটি ব্যতীত অন্যান্য বিষয়ে হাদীস বিরোধী কথায় ইমামের সাফাই গায় এই যুক্তিতে যে, ইমামের ভুল ধরা তাকে দোষারোপ ও অসম্মান করার নামান্তর। কিন্তু এক্ষেত্রে তারা সে কথা ভুলে গিয়ে এই সুসাব্যস্ত ও প্রমাণিত হাদীস পরিত্যাগ করে এবং এর উপর ‘আমলকারীদেরকে বিদ্রূপ করে। অথচ সে জানুক বা না জানুক তার এ বিদ্রূপ ঐসব ইমামদেরকেও জড়াচ্ছে যাদের বেলায় তার অভ্যাস হলো বাত্বিল দ্বারা হলেও তাদের সাফাই গাওয়া। বস্ত্তত এক্ষেত্রে তাঁরা (ঐসব ইমামগণ) সুন্নাত সম্মত কথাই বলেছেন। বরং তার এ বিদ্রূপ স্বয়ং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত গড়াচ্ছে। কেননা তিনিই তো আমাদের নিকট এটি নিয়ে এসেছেন। অতএব এটিকে কটাক্ষ করা মুলতঃ তাঁকে কটাক্ষ করাই নামান্তর। আর ইঙ্গিত করার পরেই আঙ্গুল নামিয়ে ফেলা অথবা ‘লা’ বলে উঠানো এবং ‘ইল্লাল্লাহু’ বলে নামানো- হাদীসে এগুলোর কোনই প্রমাণ নেই। বরং (‘‘নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আঙ্গুল উঠিয়ে তা নাড়ানোর মাধ্যমে দু‘আ করতেন’’- সহীহ সনদে বর্ণিত) এ হাদীসের বক্তব্য অনুযায়ী তা হাদীস বিরোধী কাজ। এমনিভাবে যে হাদীসে আছে যে, তিনি অঙ্গুলি নাড়াতেন না- এ হাদীস সনদের দিক থেকে সাব্যস্ত নয়। যেমন আমি তা যঈফ আবূ দাউদে তদন্ত সাপেক্ষে প্রমাণ করেছি। আর যদি সাব্যস্ত ধরেও নেয়া হয় তথাপি এটি হচ্ছে না বোধক। হাঁ বাচক না বাচকের উপর প্রাধান্যযোগ্য- যা আলিম সমাজে জানা-শুনা বিষয়। সুতরাং অস্বীকারকারীদের কোন প্রমাণ অবশিষ্ট থাকলো না। (দেখুন, সিফাতু সালাতিন্ নাবী- সাঃ)
باب الإِشَارَةِ فِي التَّشَهُّدِ
حَدَّثَنَا الْقَعْنَبِيُّ، عَنْ مَالِكٍ، عَنْ مُسْلِمِ بْنِ أَبِي مَرْيَمَ، عَنْ عَلِيِّ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ الْمُعَاوِيِّ، قَالَ رَآنِي عَبْدُ اللهِ بْنُ عُمَرَ وَأَنَا أَعْبَثُ بِالْحَصَى فِي الصَّلَاةِ فَلَمَّا انْصَرَفَ نَهَانِي وَقَالَ اصْنَعْ كَمَا كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَصْنَعُ . فَقُلْتُ وَكَيْفَ كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَصْنَعُ قَالَ كَانَ إِذَا جَلَسَ فِي الصَّلَاةِ وَضَعَ كَفَّهُ الْيُمْنَى عَلَى فَخِذِهِ الْيُمْنَى وَقَبَضَ أَصَابِعَهُ كُلَّهَا وَأَشَارَ بِأُصْبُعِهِ الَّتِي تَلِي الإِبْهَامَ وَوَضَعَ كَفَّهُ الْيُسْرَى عَلَى فَخِذِهِ الْيُسْرَى .
- صحيح : م
’Abd al-Rahman al-Mu’awl said:
‘Abd Allah b. ‘Umar saw me playing with pebbles during prayer. When he finished his prayer, he forbade me (to do so) and said: Do as the Apostle (ﷺ) used to do. I asked him: How would the Messenger of Allah(ﷺ) do? He said: When he sat during the prayer (for reciting the tashahhud), he placed his right hand on his right thigh, and clenched all his fingers, and pointed with the finger which is adjacent to the thumb, and he placed his left hand on his left thigh.
পরিচ্ছেদঃ ১৮৬. তাশাহ্হুদের মধ্যে ইশারা করা
৯৮৮। ’আমির ইবনু ’আবদুল্লাহ (রহঃ) তার পিতা ’আবদুল্লাহ ইবনুয যুবাইর (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে (তাশাহহুদ) বৈঠকে তাঁর বাম পা ডান উরু ও নলার নীচে রাখতেন এবং ডান পা বিছিয়ে দিতেন, বাম হাত বাম হাটুর উপর এবং ডান হাত ডান উরুর উপর রাখতেন ও (শাহাদাত) আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করতেন। বর্ণনাকারী ’আফফান বলেন, ’আবদুল ওয়াহিদ ইবনু যিয়াদ আমাদেরকে শাহাদাত আঙুল দ্বারা ইশারা করে দেখিয়েছেন।[1]
সহীহ : মুসলিম।
باب الإِشَارَةِ فِي التَّشَهُّدِ
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ الرَّحِيمِ الْبَزَّازُ، حَدَّثَنَا عَفَّانُ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَاحِدِ بْنُ زِيَادٍ، حَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ حَكِيمٍ، حَدَّثَنَا عَامِرُ بْنُ عَبْدِ اللهِ بْنِ الزُّبَيْرِ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا قَعَدَ فِي الصَّلَاةِ جَعَلَ قَدَمَهُ الْيُسْرَى تَحْتَ فَخِذِهِ الْيُمْنَى وَسَاقِهِ وَفَرَشَ قَدَمَهُ الْيُمْنَى وَوَضَعَ يَدَهُ الْيُسْرَى عَلَى رُكْبَتِهِ الْيُسْرَى وَوَضَعَ يَدَهُ الْيُمْنَى عَلَى فَخِذِهِ الْيُمْنَى وَأَشَارَ بِأُصْبُعِهِ . وَأَرَانَا عَبْدُ الْوَاحِدِ وَأَشَارَ بِالسَّبَّابَةِ
- صحيح : م
‘Abd Allah b. al-Zubair said:
When the Messenger of Allah(ﷺ) sat during the prayer( at the tashahhud), he placed his left foot under his right thigh and shin and spread his right foot and placed his left hand on his left knee and placed his right hand on his right thigh, and he pointed with his forefinger.
পরিচ্ছেদঃ ১৮৬. তাশাহ্হুদের মধ্যে ইশারা করা
৯৮৯। ’আবদুল্লাহ ইবনুয যুবাইর (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে দু’আ পাঠকালে আঙুল দ্বারা ইশারা করতেন, অবশ্য আঙুল নাড়তেন না।
দুর্বল।
ইবনু জুরাইজ বলেন, ’আমর ইবনু দীনারের বর্ণনায় একথাও আছে যে, ’আমির তাকে জানান যে, তার পিতা ’আবদুল্লাহ (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দু’আর সময় আঙুল দ্বারা ইশারা করতে দেখেছেন এবং তখন তিনি তাঁর বাম হাত বাম উরুর উপর রাখতেন।[1]
সহীহ।
باب الإِشَارَةِ فِي التَّشَهُّدِ
حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ الْحَسَنِ الْمِصِّيصِيُّ، حَدَّثَنَا حَجَّاجٌ، عَنِ ابْنِ جُرَيْجٍ، عَنْ زِيَادٍ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ عَجْلَانَ، عَنْ عَامِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ، عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ الزُّبَيْرِ، أَنَّهُ ذَكَرَ أَنَّ النَّبِيَّ صلي الله عليه وسلم كَانَ يُشِيرُ بِأُصْبُعِهِ إِذَا دَعَا وَلَا يُحَرِّكُهَا
- ضعيف
قَالَ ابْنُ جُرَيْجٍ وَزَادَ عَمْرُو بْنُ دِينَارٍ قَالَ أَخْبَرَنِي عَامِرٌ عَنْ أَبِيهِ أَنَّهُ رَأَى النَّبِيَّ صلي الله عليه وسلم يَدْعُو كَذَلِكَ وَيَتَحَامَلُ النَّبِيُّ صلي الله عليه وسلم بِيَدِهِ الْيُسْرَى عَلَى فَخِذِهِ الْيُسْرَى
- صحيح
Narrated Abdullah ibn az-Zubayr:
The Prophet (ﷺ) used to point with his finger (at the end of the tashahhud) and he would not move it.
Ibn Juraij said: "And 'Amr bin Dinar added: 'He (Ziyad) said: "'Amir informed me from his father that he saw the Prophet (ﷺ) supplicating like that. And the Prophet (ﷺ) would brace himself with his left hand on his left knee.
পরিচ্ছেদঃ ১৮৬. তাশাহ্হুদের মধ্যে ইশারা করা
৯৯০। ’আমির ইবনু ’আবদুল্লাহ ইবনুয যুবাইর (রহঃ) তার পিতার সূত্রে এ হাদীসটি বর্ণনা করে বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দৃষ্টি (শাহাদাত আঙুলের) ইশারাকে অতিক্রম করতো না। আর হাজ্জাজ বর্ণিত হাদীসটি অধিক পরিপূর্ণ।[1]
হাসান সহীহ।
باب الإِشَارَةِ فِي التَّشَهُّدِ
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا يَحْيَى، حَدَّثَنَا ابْنُ عَجْلَانَ، عَنْ عَامِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ الزُّبَيْرِ، عَنْ أَبِيهِ، بِهَذَا الْحَدِيثِ قَالَ لَا يُجَاوِزُ بَصَرُهُ إِشَارَتَهُ . وَحَدِيثُ حَجَّاجٍ أَتَمُّ .
- حسن صحيح
‘Abd Allah b. al-Zubair narrated the above mentioned tradition on the authority of his father saying:
He kept his look fixed on the finger he was pointing.
পরিচ্ছেদঃ ১৮৬. তাশাহ্হুদের মধ্যে ইশারা করা
৯৯১। মালিক ইবনু নুমাইর আল-খুযাঈ (রহঃ) তার পিতা হতে বর্ণনা করে যে, তিনি বলেছেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সালাতে তাঁর ডান হাত ডান উরুর উপর রেখে শাহাদাত আঙুল অর্ধনমিত অবস্থায় উচিয়ে রাখতে দেখেছি। [1]
দুর্বল।
باب الإِشَارَةِ فِي التَّشَهُّدِ
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللهِ بْنُ مُحَمَّدٍ النُّفَيْلِيُّ، حَدَّثَنَا عُثْمَانُ، - يَعْنِي ابْنَ عَبْدِ الرَّحْمَنِ - حَدَّثَنَا عِصَامُ بْنُ قُدَامَةَ، - مِنْ بَنِي بُجَيْلَةَ - عَنْ مَالِكِ بْنِ نُمَيْرٍ الْخُزَاعِيِّ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ رَأَيْتُ النَّبِيَّ صلي الله عليه وسلم وَاضِعًا ذِرَاعَهُ الْيُمْنَى عَلَى فَخِذِهِ الْيُمْنَى رَافِعًا أُصْبُعَهُ السَّبَّابَةَ قَدْ حَنَاهَا شَيْئًا
- ضعيف
Narrated AbuMalik Numayr al-Khuza'i:
I saw the Prophet (peace be upon him placing his right hand on his right thigh and raising his forefinger curving it a little.