পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - জান্নাত ও জান্নাতবাসীদের বিবরণ
৫৬১২-[১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: “আমি আমার পুণ্যবান বান্দাদের জন্য এমন সব জিনিস প্রস্তুত রেখেছি, যা কক্ষনো কোন হৃদয় চিন্তাও করেনি।’ (তিনি বললেন) এর সত্যতা প্রমাণে তোমরা ইচ্ছা করলে এ আয়াতটি তিলাওয়াত করতে পার। এছাড়াও তাদের জন্য চক্ষু শীতলকারী আনন্দদায়ক যে সকল সামগ্রী গোপন রাখা হয়েছে কোন প্রাণীরই তার খবর নেই”(সূরাহ্ আস্ সিজদাহ্ ৩২: ১৭)। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب صفةالجنة وَأَهْلهَا)
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: قَالَ اللَّهُ تَعَالَى: أَعْدَدْتُ لِعِبَادِيَ الصَّالِحِينَ مَا لَا عَيْنٌ رَأَتْ وَلَا أُذُنٌ سَمِعَتْ وَلَا خَطَرَ عَلَى قَلْبِ بشر. واقرؤوا إِنْ شِئْتُمْ: (فَلَا تَعْلَمُ نَفْسٌ مَا أُخْفِيَ لَهُمْ مِنْ قُرَّة عين) مُتَّفق عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (3244) و مسلم (2 / 2824)، (7132) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) - মু'মিনদেরকে জান্নাতের সুসংবাদ দান করেছেন যে, আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন তাঁর সৎ বান্দাদের জন্য জান্নাতে এমন সব বস্তু প্রস্তুত করে রেখেছেন, যা মানুষের চক্ষু কখনো অবলোকন করেনি। মানুষের কর্ণ কখনো শুনেনি এবং মানুষ কখনো তা নিয়ে কল্পনাও করেনি। তাই তিনি বলেছেন, (فَلَا تَعْلَمُ نَفْسٌ مَا أُخْفِيَ لَهُمْ مِنْ قُرَّة عين) অর্থাৎ চক্ষু শীতকারী আনন্দায়ক যে সমস্ত বস্তু তাদের জন্য গোপন রাখা হয়েছে তা কোন আত্মা জানে না। (তুহফাতুল আহওয়াযী হা. ৩১৯৭)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - জান্নাত ও জান্নাতবাসীদের বিবরণ
৫৬১৩-[২] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: জান্নাতে একটি চাবুক রাখা পরিমাণ স্থান গোটা দুনিয়া ও তার মধ্যে যা কিছু আছে, তা থেকে উত্তম। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب صفةالجنة وَأَهْلهَا)
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَوْضِعُ سَوْطٍ فِي الْجَنَّةِ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (2796 ، 6568) و مسلم (لم اجدہ) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জান্নাতের চাবুক সমপরিমাণ ক্ষুদ্রতম জায়গা সারা দুনিয়ার অপেক্ষায় অনেক উত্তম। কেননা দুনিয়ার সুখ-শান্তি আরাম-আয়েশ অস্থায়ী, পক্ষান্তরে জান্নাতের সুখ-শান্তি আরাম আয়েশ চিরস্থায়ী বিধায় এই মর্যাদার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)।
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - জান্নাত ও জান্নাতবাসীদের বিবরণ
৫৬১৪-[৩] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আল্লাহর পথে এক সকাল এবং এক সন্ধ্যা কাটানো দুনিয়া ও তার সকল সম্পদ থেকে উত্তম। যদি জান্নাতবাসিনী কোন নারী (হুর) পৃথিবীর দিকে উঁকি দেয়, তবে সমগ্র জগৎটা (তার রূপের ছটায়) আলোকিত হয়ে যাবে এবং আসমান ও জমিনের মধ্যবর্তী স্থানসমূহ সুগন্ধিতে মোহিত করে ফেলবে। এমনকি তাদের (হুরদের) মাথার ওড়নাও গোটা দুনিয়া এবং সম্পদরাশি থেকে উত্তম। (বুখারী)
الفصل الاول (بَاب صفةالجنة وَأَهْلهَا)
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «غَدْوَةٌ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَوْ رَوْحَةٌ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا وَلَوْ أَنَّ امْرَأَةً مِنْ نِسَاءِ أَهْلِ الْجَنَّةِ اطَّلَعت إِلى الأَرْض لَأَضَاءَتْ مابينهما وَلَمَلَأَتْ مَا بَيْنَهُمَا رِيحًا وَلَنَصِيفُهَا عَلَى رَأْسِهَا خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا» . رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ
رواہ البخاری (2796) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের ফযীলত বর্ণনা করেছেন। মুহাদ্দিসগণ বলেন, (غَدْوَةٌ) শব্দটি দিনের প্রথমাংশ বুঝানোর জন্য ব্যবহৃত হয়েছে, আর (رَوْحَةٌ) শব্দটি দিনের শেষাংশ বুঝানোর জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন, আল্লাহর রাস্তায় এক সকাল ও এক বিকাল ব্যয় করা সমগ্র দুনিয়ার চেয়ে অনেক উত্তম। এই অতিবাহিত করাটা আল্লাহর রাস্তায় সন্তুষ্টির উদ্দেশ্য জিহাদ, হিজরত হতে পারে। এরপর উক্ত হাদীসে জান্নাতের হুরদের অপরূপ সৌন্দর্যের বর্ণনা দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, যদি ঐ সকল হুরেরা পৃথিবীতে একবার উঁকি মারতো তাহলে পুরো পৃথিবীতে আলোকিত হয়ে যেত।
ইমাম আযহারী (রহিমাহুল্লাহ) (نَصِيفٌ) শব্দের অর্থ (خِمَارٌ) (ওড়না) যা হুরেরা পাগড়ীর মতো পেঁচিয়ে রাখবে তাও পুরো দুনিয়া থেকে অনেক উত্তম হবে। (ফাতহুল বারী হা. ৬৫৬৮)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - জান্নাত ও জান্নাতবাসীদের বিবরণ
৫৬১৫-[8] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: জান্নাতে এমন একটি বিশাল গাছ আছে (’তূবা’ নামক) যদি কোন বাহন তার ছায়ায় একশত বছরও পরিভ্রমণ করে, তবুও তার শেষ প্রান্ত পর্যন্ত পৌছতে পারবে না। জান্নাতে তোমাদের কারো একটি ধনুকের সমান স্থানও এর চেয়ে উত্তম, যার উপর সূর্য উদিত হয় এবং অস্ত যায়। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب صفةالجنة وَأَهْلهَا)
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِن فِي الْجَنَّةِ شَجَرَةً يَسِيرُ الرَّاكِبُ فِي ظِلِّهَا مِائَةَ عَامٍ لَا يَقْطَعُهَا وَلَقَابَ قَوْسِ أَحَدِكُمْ فِي الْجَنَّةِ خَيْرٌ مِمَّا طَلَعَتْ عَلَيْهِ الشَّمْسُ أَو تغرب» . مُتَّفق عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (3252) ومسلم (6 / 2826)، (7136) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: ইমাম ইবনু জাওযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) মু'মিনদেরকে সুসংবাদ দান করেছেন, জান্নাতের ‘তূবা' নামক উক্ত গাছের বর্ণনার মাধ্যমে। তিনি (সা.) বলেছেন, উক্ত গাছের ছায়ায় একজন উন্নতমানের ঘোড়সওয়ারী একশত বছর অতিক্রম করেও তা শেষ করতে পারবে না। ইমাম ইবনু হাজার ‘আসকালানী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, অনুরূপ হাদীস ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল, ইমাম তবারানী ও ইবনু হিব্বান (রহিমাহুমুল্লাহ)-ও বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, 'ছায়া” দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ঐ ছায়া যা সকাল থেকে নিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত সূর্যের কিরণের মুকাবেলা করে মানুষকে প্রশান্তি দেয়।
(مِمَّا طَلَعَتْ عَلَيْهِ الشَّمْسُ) যার উপর সূর্য উদিত হয় তার চেয়ে জান্নাতের চাবুক পরিমাণ জায়গা অনেক উত্তম। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো পৃথিবীতে যা আছে তা তার চেয়ে অনেক উত্তম। (ফাতহুল বারী হা. ৬৫৫৩)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - জান্নাত ও জান্নাতবাসীদের বিবরণ
৫৬১৬-[৫] আবূ মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: জান্নাতে মু’মিনদের জন্য মুক্তা দ্বারা তৈরি একটি তাঁবু থাকবে, যার মাঝে ফাঁকা হবে। তার প্রশস্ততা, অন্য বর্ণনায় তার দৈর্ঘ্য ষাট মাইল। তার প্রত্যেক কোণে থাকবে তার পরিমাণ। এক কোণের লোক অন্য কোণের লোককে দেখতে পাবে না। ঈমানদারগণ তাদের কাছে যাতায়াত করবে। দু’টি জান্নাত হবে রৌপ্যের, তার ভিতরের পাত্র ও অন্যান্য সামগ্রী হবে রৌপ্যের এবং অপর দুটি জান্নাত হবে স্বর্ণের। যার পাত্র ও ভিতরের সব জিনিস হবে সোনার। আর ’আদন জান্নাত’ জান্নাতবাসী এবং তাদের প্রভুর দিদার লাভের মাঝখানে আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বের আভা ছাড়া আর কোন আড়াল থাকবে না। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب صفةالجنة وَأَهْلهَا)
وَعَنْ أَبِي مُوسَى قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ لِلْمُؤْمِنِ فِي الْجَنَّةِ لَخَيْمَةً مِنْ لُؤْلُؤَةٍ وَاحِدَةٍ مُجَوَّفَةٍ عَرْضُهَا وَفِي رِوَايَةٍ: طُولُهَا سِتُّونَ مِيلًا فِي كُلِّ زَاوِيَةٍ مِنْهَا أَهْلٌ مَا يَرَوْنَ الْآخَرِينَ يَطُوفُ عَلَيْهِم المؤمنُ وجنَّتانِ من فضةٍ آنيتهما مَا فِيهِمَا وَجَنَّتَانِ مِنْ ذَهَبٍ آنِيَتُهُمَا وَمَا فِيهِمَا وَمَا بينَ أَنْ يَنْظُرُوا إِلَى رَبِّهِمْ إِلَّا رِدَاءُ الْكِبْرِيَاءِ على وجههِ فِي جنَّة عدْنٍ . مُتَّفق عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (3243) و مسلم (23 / 2838)، (7158) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: জান্নাতে মু'মিনদের জন্য মুক্তা দ্বারা তৈরি একটি তাঁবু থাকবে যার প্রশস্ততা বা দৈর্ঘ্য ষাট মাইল হবে। উক্ত তাবুর প্রতিটি প্রান্তের জন্য আলাদা আলাদা অধিবাসী থাকবে। মুমিনদের জন্য বিশেষ দুটি স্বর্ণের জান্নাত থাকবে যার ভিতরের সকল জিনিস হবে স্বর্ণের আরো দুটি জান্নাত থাকবে রূপার তার ভিতরের পান পাত্র ও অন্যান্য সামগ্রী হবে রূপার।
ইমাম বায়হাক্কী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, কুরআন ও সুন্নাহ প্রমাণ বহন করে যে, মু'মিনদের জন্য চারটি জান্নাত হবে, কেননা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সূরা আর রহমানে বলেছেন, (وَ لِمَنۡ خَافَ مَقَامَ رَبِّهٖ جَنَّتٰنِ) “আর যে তার প্রতিপালকের সামনে হাজির হওয়ার ভয় রাখে তার জন্য আছে দুটো বাগান”- (সূরাহ্ আর রহমান ৫৫ : ৪৬)। এরপর একটু পরে তিনি আবার বলেন (وَ مِنۡ دُوۡنِهِمَا جَنَّتٰنِ) “এ দুটো বাগান ছাড়াও আরো দুটি বাগান আছে”- (সূরা আর রহমান ৫৫ : ৬২)।
সারাংশে আমরা বলব যে, প্রথম দুটি জান্নাত হবে যারা অগ্রে প্রবেশ করবে তাদের জন্য। যারা তাদের সাথে প্রবেশ করবে তারা উঁচু মর্যাদার অধিকারী হবে। আর পরে দুটি জান্নাত হতে পারে যারা জান্নাতে প্রবেশ করবে তাদের জন্য। যারা প্রবেশ করবে তারা একটু নীচু মর্যাদার অধিকারী হবে। (তুহফাতুল আহওয়াযী হা. ২৫২৮)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - জান্নাত ও জান্নাতবাসীদের বিবরণ
৫৬১৭-[৬] ’উবাদাহ্ ইবনুস সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: জান্নাতের স্তর হবে একশটি প্রত্যেক দুই স্তরের মাঝখানের দূরত্ব হবে আসমান ও জমিনের দূরেত্বের পরিমাণ। জান্নাতুল ফিরদাউসের স্তর হবে সর্বোপরি। তা হতেই প্রবাহিত হয় ঝরনাধারা এবং তার উপরেই রয়েছে মহান প্রভুর ’আরশ’। অতএব তোমরা যখনই আল্লাহ তা’আলার কাছে প্রার্থনা করবে, তখন ফিরদাউস জান্নাতই চাইবে। (তিরমিযী)
الفصل الاول (بَاب صفةالجنة وَأَهْلهَا)
وَعَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «فِي الْجَنَّةِ مائةُ درجةٍ مَا بينَ كلِّ دَرَجَتَيْنِ كَمَا بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ وَالْفِرْدَوْسُ أَعْلَاهَا دَرَجَةً مِنْهَا تُفَجَّرُ أَنْهَارُ الْجَنَّةِ الْأَرْبَعَةُ وَمِنْ فَوْقِهَا يَكُونُ الْعَرْشُ فَإِذَا سَأَلْتُمُ اللَّهَ فَاسْأَلُوهُ الْفِرْدَوْسَ» رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَلَمْ أَجِدْهُ فِي الصَّحِيحَيْنِ وَلَا فِي كِتَابِ الْحُمَيْدِيِّ
اسنادہ صحیح ، رواہ الترمذی (2531) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: জান্নাতের স্তর হবে একশত, প্রতিটি দুই স্তরের মাঝখানের ব্যবধান হবে আসমান ও জমিনের দূরত্বের ন্যায়। মুহাদ্দিসগণ বলেন, এর দ্বারা আধিক্যতা বুঝানো উদ্দেশ্য। কেননা সুনানে বায়হাকীতে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে মারফু সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, জান্নাতের স্তরের সংখ্যা কুরআনের আয়াতের সংখ্যার ন্যায়। অতএব কুরআনের ধারক বাহক যে জান্নাতে প্রবেশ করবে তার উপরে আর কোন স্তর নেই। মুহাদ্দিসগণ বলেন, জান্নাতের সর্বোচ্চ স্তরের নাম হলো জান্নাতুল ফিরদাউস, যার অধিকারী হবেন নবীগণ ও বিশেষ মু'মিনবর্গ। আর জান্নাতের নহর হবে চারটি। যথা: ১) পানির নহর, ২) দুধের শরাবের নহর, ৩) মধুর শরাবের নহর, ৪) মদের নহর। (শারহুন নাবাবী হা, ২৮২৬, তুহফাতুল আহওয়াযী হা. ২৫৩১)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - জান্নাত ও জান্নাতবাসীদের বিবরণ
৫৬১৮-[৭] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: জান্নাতে একটি বাজার আছে। জান্নাতবাসীগণ সপ্তাহের প্রত্যেক জুমু’আর দিন সেখানে একত্রিত হবে। তখন উত্তরী বাতাস প্রবাহিত হবে এবং তা তাদের মুখমণ্ডলে ও কাপড়চোপড়ে সুগন্ধি নিক্ষেপ করবে, ফলে তাদের রূপ-সৌন্দর্য আরো অধিক বৃদ্ধি পাবে। অতঃপর যখন তারা বর্ধিত সুগন্ধি ও সৌন্দর্য অবস্থায় নিজেদের স্ত্রীদের কাছে যাবে, তখন স্ত্রীগণ তাদেরকে বলবে, আল্লাহর শপথ! তোমরা তো আমাদের অবর্তমানে সুগন্ধি ও সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে ফেলেছ। তার উত্তরে তারা বলবে, আল্লাহ শপথ! আমাদের অনুপস্থিতিতে তোমাদের রূপ-সৌন্দর্যও বৃদ্ধি পেয়েছে। (মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب صفةالجنة وَأَهْلهَا)
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ فِي الْجَنَّةِ لَسُوقًا يَأْتُونَهَا كُلَّ جُمُعَةٍ فَتَهُبُّ رِيحُ الشَّمَالِ فَتَحْثُو فِي وُجوهِهم وثيابِهم فيزدادونَ حُسنا وجمالاً فيرجعونَ إِلى أَهْليهمْ وَقَدِ ازْدَادُوا حُسُنًا وَجَمَالًا فَيَقُولُ لَهُمْ أَهْلُوهُمْ وَاللَّهِ لَقَدِ ازْدَدْتُمْ بَعْدَنَا حُسْنًا وَجَمَالًا فَيَقُولُونَ وَأَنْتُم واللَّهِ لقدِ ازددتم حسنا وجمالا»
رواہ مسلم (13 / 2833)، (7146) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (إِنَّ فِي الْجَنَّةِ لَسُوقًا) জান্নাতে একটি বাজার থাকবে উক্ত বাজার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো সৌন্দর্য ও কমনীয়তা বৃদ্ধির কেন্দ্র। যেখানে জান্নাতবাসীরা একত্রিত হবেন। আর সেখানে বিভিন্ন ধরনের হৃদয়গ্রাহী, মনোরম ও সুশ্রী আকৃতি-প্রকৃতি প্রতিচ্ছবি উপস্থিত থাকবে। আর প্রত্যেক জান্নাতী তাঁর পছন্দ মতে যে আকৃতি ধারণের ইচ্ছা করবে তা অবলম্বন করতে পারবে।
(كُلَّ جُمُعَةٍ) “প্রত্যেক জুমু'আর দিন”, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, প্রতি সপ্তাহে একদিন লোকজন একত্রিত হবেন। আর সপ্তাহ দ্বারাও পৃথিবীর মতো সপ্তাহ উদ্দেশ্য নয়। ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, বাজার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো জান্নাতীদের একত্রিত হওয়ার স্থান, তারা সেখানে প্রতি জুমু'আর একদিন একত্রিত হবে।
জান্নাতীরা জান্নাতে ‘আলিমদেরকে ভালোবাসবে এবং তাদের নিকট বিভিন্ন প্রয়োজনে মুখাপেক্ষী হবে এবং প্রতি জুমু'আর দিন তারা আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলবেন, তোমাদের যা ইচ্ছা চাও তারা তাদের মন মতো বিভিন্ন জিনিস চাইবে তিনি তাদেরকে তাই প্রদান করবেন।
(رِيحُ الشَّمَالِ) ‘উত্তরী হাওয়া’ এ হাওয়া যেহেতু উত্তরদিক থেকে প্রবাহিত হয় তাই তাকে উত্তরী হাওয়া বলে। সাধারণত শীতপ্রধান দেশসমূহে লোহিত সাগরের উপর দিয়ে এই হাওয়া বয়ে যায় এবং যথেষ্ট ঠাণ্ডা হয়, ঠিক অনুরূপভাবে জান্নাতেও উত্তরী হাওয়া বইবে যা জান্নাতীদের শরীরকে আরামদায়ক ও প্রশান্তিময় করে দিবে। (শারহুন নাবাবী হা. ২৮৩৪)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - জান্নাত ও জান্নাতবাসীদের বিবরণ
৫৬১৯-[৮] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: প্রথম যে দল জান্নাতে প্রবেশ করবে, পূর্ণিমা রজনির চাঁদের মতো (উজ্জ্বল ও সুন্দর) রূপ ধারণ করেই তারা প্রবেশ করবে। আর পরবর্তী তাদের যে দল যাবে, তারা হবে আকাশের সমুজ্বল তারকার মতো উদ্দীপ্ত, জান্নাতবাসী সকলের অন্তর এক লোকের অন্তরের মতো হবে। তাদের মধ্যে কোন ঝগড়া থাকবে না এবং কোন হিংসা-বিদ্বেষও থাকবে না। তাদের প্রত্যেকের জন্য হুরি ’ঈন থেকে দু’ দু’জন স্ত্রী থাকবে। সৌন্দর্যের কারণে তাদের হাড় ও মাংসের উপর থেকে নলার ভিতরের মজ্জা দেখা যাবে। তারা সকাল-সন্ধ্যা আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনায় ব্যস্ত থাকবে। তারা কখনো রোগাগ্রস্ত হবে না। তাদের পেশাব হবে না, পায়খানাও করবে না, থুথু ফেলবে না, নাক দিয়ে শ্লেষ্মা ঝরবে না। তাদের পাত্রসমূহ হবে সোনা-রূপার। আর তাদের চিরুনি হবে স্বর্ণের এবং তাদের ধুনীর জ্বালানি হবে আগরের, তাদের গায়ের ঘর্ম হবে কস্তুরীর মতো (সুগন্ধি)। তাদের স্বভাব হবে এক লোকের মতো, শারীরিক গঠন অবয়বে হবে তাদের পিতা আদাম ’আলায়হিস সালাম -এর ন্যায়, উচ্চতায় ষাট গজ লম্বা। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب صفةالجنة وَأَهْلهَا)
وَعَن أبي هُرَيْرَة قا ل: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ أَوَّلَ زُمْرَةٍ يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ عَلَى صُورَةِ الْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ كَأَشَدِّ كَوْكَبٍ دُرِّيٍّ فِي السَّمَاءِ إِضَاءَةً قُلُوبُهُمْ عَلَى قَلْبِ رَجُلٍ وَاحِدٍ لَا اخْتِلَافَ بَيْنَهُمْ وَلَا تَبَاغُضَ لِكُلِّ امْرِئٍ مِنْهُمْ زَوْجَتَانِ مِنَ الْحُورِ الْعِينِ يُرَى مُخُّ سُوقِهِنَّ مِنْ وَرَاءِ الْعَظْمِ وَاللَّحْمِ مِنَ الْحُسْنِ يُسَبِّحُونَ اللَّهَ بُكْرَةً وَعَشِيًّا لَا يَسْقَمُونُ وَلَا يَبُولُونَ وَلَا يَتَغَوَّطُونَ وَلَا يَتْفُلُونَ وَلَا يَتَمَخَّطُونَ آنِيَتُهُمُ الذَّهَبُ وَالْفِضَّةُ وَأَمْشَاطُهُمُ الذَّهَبُ وَوَقُودُ مَجَامِرِهِمُ الْأَلُوَّةُ وَرَشْحُهُمُ الْمِسْكُ عَلَى خُلُقِ رَجُلٍ وَاحِدٍ عَلَى صُورَةِ أَبِيهِمْ آدَمَ ستونَ ذِرَاعا فِي السَّمَاء. رَوَاهُ مُسلم
متفق علیہ ، رواہ البخاری (3245 ۔ 3246 ، 3254) و مسلم (16 ، 15 / 2834)، (7147 و 7149) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: মুহাদ্দিসগণ বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর উক্ত হাদীস থেকে প্রতীয়মান হয় যে, সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশকারী দলটি পূর্ণিমা রজনীর চাঁদের ন্যায় উজ্জ্বল ও সুন্দর রূপ ধারণ করে প্রবেশ করবে। এরপরে যারা প্রবেশ করবে তাদের চেহারা আকাশের সমুজ্জ্বল তারকার ন্যায় চমকাবে এবং হাদীস থেকে জানা যায় যে, জান্নাতে কোন প্রকার দলাদলি ও হিংসা বিদ্বেষ থাকবে না। আর জান্নাতে কোন প্রকার রোগব্যাধি কষ্ট-ক্লেশ কিছুই থাকবে না। জান্নাতবাসীরা সেখানে অনাবিল সুখ-শান্তি ভোগ করবে। (ফাতহুল বারী হা. ৩২৪২)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - জান্নাত ও জান্নাতবাসীদের বিবরণ
৫৬২০-[৯] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: জান্নাতবাসীগণ সেখানে আহার করবে, সেখানে পান করবে কিন্তু তারা থুথু ফেলবে না, মল-মূত্র ত্যাগ করবে না এবং তাদের নাক থেকে শ্লেষ্মা ঝরবে না। সাহাবীগণ প্রশ্ন করলেন, এমতাবস্থায় তাদের খাদ্যের পরিণতি কি হবে? তিনি (সা.) বললেন, ঢেকুর এবং মিশকের মতো সুগন্ধি ঘামের দ্বারা নিঃশেষ হয়ে যাবে। আল্লাহর পবিত্রতা ও প্রশংসা তাদের অন্তরে এমনভাবে ঢেলে দেয়া হবে যেমন শ্বাস-নিঃশ্বাস অনবরত চলছে। (মুসিলম)
الفصل الاول (بَاب صفةالجنة وَأَهْلهَا)
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ أَهْلَ الْجَنَّةِ يَأْكُلُونَ فِيهَا وَيَشْرَبُونَ ولايتفلون ولايبولون وَلَا يَتَغَوَّطُونَ وَلَا يَتَمَخَّطُونَ» . قَالُوا: فَمَا بَالُ الطَّعَامِ؟ قَالَ: «جُشَاءٌ وَرَشْحٌ كَرَشْحِ الْمِسْكِ يُلْهَمُونَ التَّسْبِيحَ وَالتَّحْمِيدَ كَمَا تُلْهَمُونَ النَّفَسَ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
رواہ مسلم (18 / 2835)، (7152) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: জান্নাতবাসীগণ যেখানে খাবার-দাবার ও পানাহার করবে ও বিভিন্ন প্রকারের নিআমাত তারা সেখানে ভোগ করবে। তাদের সেখানে কোন প্রকারের পেশাব-পায়খানার প্রয়োজন হবে না। তাদের খাবারসমূহ ঢেকুর ও মিশকের ন্যায় সুগন্ধি ঘামের মাধ্যমে নিঃশেষ হয়ে যাবে। তারা সেখানে অবিরাম আল্লাহর তাসবীহ ও প্রশংসা করতে থাকবে। ঢেকুরের মাধ্যমে জান্নাতীদের খাবার নিঃশেষ হয়ে যাবে, এর হিকমাত হলো আল্লাহ রাব্বুল আলামীন উক্ত ঢেকুরের মাধ্যমে জান্নাতবাসীদের নিত্য প্রয়োজনীয় পেশাব পায়খানার বেগ মিটিয়ে দিবেন যাতে করে জান্নাতের মতো পবিত্র স্থান অপবিত্র না হয়ে যায়। (শারহুন নাবাবী হা. ২৮৩৫)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - জান্নাত ও জান্নাতবাসীদের বিবরণ
৫৬২১-[১০] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: যে লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে, সে সেখানে সুখে-স্বচ্ছন্দে আয়েশের মধ্যে ডুবে থাকবে, কোন প্রকারের দুশ্চিন্তা ও দুর্ভাবনা তাকে পাবে না এবং তার পোশাক-পরিচ্ছদ ময়লা বা পুরাতন হবে না, আর তার যৌবনও নিঃশেষ হবে না। (মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب صفةالجنة وَأَهْلهَا)
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ يَنْعَمُ وَلَا يَبْأَسُ وَلَا تَبْلَى ثِيَابُهُ وَلَا يفْنى شبابُه» . رَوَاهُ مُسلم
رواہ مسلم (21 / 2836)، (7156) ۔
(صَحِيح)
সহীহ: মুসলিম ২১-(২৮৩৬), মুসনাদে আহমাদ ৮৮১৩, সহীহুল জামি ৬৬০৮, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ৩৭৪৪, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ ১০৮৬, আবূ ইয়া'লা ৬৪২৮, দারিমী ২৮১৯।
ব্যাখ্যা: জান্নাতবাসীদের কোন প্রকার কষ্ট-ক্লেশ থাকবে না এবং তাদের কাপড় কখনো পুরাতন হবে না এবং তাদের যৌবন কখনো শেষ হবে না। ইমাম কাযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, জান্নাত হলো স্থায়ী ঘর ও স্থায়ী বাসস্থান। পরিবর্তন কিংবা পুরাতন জান্নাতে থাকবে না। তার নিআমাতরাজি অস্বীকারকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না। কেননা জান্নাতটা দুনিয়ার মতো বিশৃঙ্খল ও অশান্তির ঘর নয়। (ফাতহুল বারী হা. ৩২৫৬)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - জান্নাত ও জান্নাতবাসীদের বিবরণ
৫৬২২-[১১] ও ৫৬২৩-[১২] আবূ সাঈদ ও আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: জান্নাতবাসী জান্নাতে প্রবেশ করার পর একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা দিবেন, তোমরা সর্বদা সুস্থ থাকবে, আর কখনো রোগগ্রস্ত হবে না। তোমরা সর্বদা জীবিত থাকবে আর কখনো মৃত্যুবরণ করবে না। তোমরা সর্বদা যুবক থাকবে, আর কখনো বার্ধক্যে উপনীত হবে না এবং সর্বদা আরাম-আয়েশে থাকবে, আর কখনো হতাশ ও দুশ্চিন্তা তোমাদেরকে পাবে না। (মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب صفةالجنة وَأَهْلهَا)
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ وَأَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: يُنَادِي مُنَادٍ: إِنَّ لَكُمْ أَنْ تَصِحُّوا فَلَا تَسْقَمُوا أَبَدًا وَإِنَّ لَكُمْ أَنْ تَحْيَوْا فَلَا تَمُوتُوا أَبَدًا وَإِنَّ لَكُمْ أَنْ تَشِبُّوا فَلَا تَهْرَمُوا أَبَدًا وَإِنَّ لَكُمْ أَنْ تَنْعَمُوا فَلَا تَبْأَسُوا أبدا رَوَاهُ مُسلم
رواہ مسلم (22 / 2837)، (7157) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: জান্নাতে একজন ঘোষক জান্নাতবাসীদের উদ্দেশ্য করে বলবে, তোমরা চিরসুস্থ হয়ে যাও আর কখনো অসুস্থ হবে না। তোমরা চিরঞ্জীব হয়ে যাও আর কখনো মরবে না। তোমাদের যৌবনকাল চিরস্থায়ী হবে, আর কখনো বার্ধক্যে উপনীত হবে না। তোমরা চিরস্থায়ী নি'আমাতে ডুবে থাক কখনো নৈরাশ হবে না। ইমাম ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এই আহ্বান জান্নাতবাসীদেরকে অনেক আনন্দ ও প্রফুল্লতায় ভাসিয়ে দিবে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - জান্নাত ও জান্নাতবাসীদের বিবরণ
৫৬২২-[১১] ও ৫৬২৩-[১২] আবূ সাঈদ ও আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: জান্নাতবাসী জান্নাতে প্রবেশ করার পর একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা দিবেন, তোমরা সর্বদা সুস্থ থাকবে, আর কখনো রোগগ্রস্ত হবে না। তোমরা সর্বদা জীবিত থাকবে আর কখনো মৃত্যুবরণ করবে না। তোমরা সর্বদা যুবক থাকবে, আর কখনো বার্ধক্যে উপনীত হবে না এবং সর্বদা আরাম-আয়েশে থাকবে, আর কখনো হতাশ ও দুশ্চিন্তা তোমাদেরকে পাবে না। (মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب صفةالجنة وَأَهْلهَا)
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ وَأَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: يُنَادِي مُنَادٍ: إِنَّ لَكُمْ أَنْ تَصِحُّوا فَلَا تَسْقَمُوا أَبَدًا وَإِنَّ لَكُمْ أَنْ تَحْيَوْا فَلَا تَمُوتُوا أَبَدًا وَإِنَّ لَكُمْ أَنْ تَشِبُّوا فَلَا تَهْرَمُوا أَبَدًا وَإِنَّ لَكُمْ أَنْ تَنْعَمُوا فَلَا تَبْأَسُوا أبدا رَوَاهُ مُسلم
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - জান্নাত ও জান্নাতবাসীদের বিবরণ
৫৬২৪-[১৩] আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: নিশ্চয় জান্নাতবাসীগণ তাদের ঊর্ধ্বের বালাখানার অধিবাসীদেরকে এমনিভাবে দেখতে পাবে, যেমনিভাবে আকাশের পূর্ব কিংবা পশ্চিম দিগন্তে তোমরা একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র দেখতে পাও। তাদের মধ্যে মর্যাদার ব্যবধানের কারণে এরূপ হবে। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! তা তো হবে আম্বিয়ায়ে কিরামদেরই স্থান, অন্যেরা তো সেখানে পৌছতে পারবে না। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, না, বরং সে সত্তার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ! যে সমস্ত লোকেরা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং রাসূলগণের সত্যতা স্বীকার করবে তারাও সেখানে পৌছতে সক্ষম হবে। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب صفةالجنة وَأَهْلهَا)
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيُّ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِنَّ أَهْلَ الْجَنَّةِ يَتَرَاءَوْنَ أَهْلَ الْغُرَفِ مِنْ فَوْقِهِمْ كَمَا تَتَرَاءَوْنَ الْكَوْكَبَ الدُّرِّيَّ الْغَابِرَ فِي الْأُفُقِ مِنَ الْمَشْرِقِ أَو الْمَغْرِبِ لِتَفَاضُلِ مَا بَيْنَهُمْ» قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ تِلْكَ مَنَازِلُ الْأَنْبِيَاءِ لَا يَبْلُغُهَا غَيْرُهُمْ قَالَ: «بَلَى وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ رِجَالٌ آمَنُوا باللَّهِ وصدَّقوا الْمُرْسلين» . مُتَّفق عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (3256) و مسلم (11 / 2831)، (7144) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: জান্নাতবাসীরা তাদের উপরস্থ বালাখানার বাসিন্দাদেরকে এমনিভাবে দেখতে পাবে যেমনিভাবে আকাশের পূর্ব কিংবা পশ্চিম দিগন্তে উজ্জ্বল নক্ষত্র দেখা যায়। মুহাদ্দিসগণ বলেন, তাদের মধ্যে মর্যাদার পার্থক্যের কারণে এরূপ অবস্থা হবে। প্রত্যেক ঐ সকল ব্যক্তি যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছে এবং রাসূলগণকে সত্যায়ন করেছে তারা উপরোক্ত মর্যাদার অধিকারী হবে। (শারহুন নাবাবী ১৭ খণ্ড, হা. ২৮৩১/১১)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - জান্নাত ও জান্নাতবাসীদের বিবরণ
৫৬২৫-[১৪] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: এমন একদল লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে, যাদের অন্তঃকরণ হবে পাখিদের অন্তরের মতো। (মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب صفةالجنة وَأَهْلهَا)
وَعَن أبي هُرَيْرَة قا ل: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَدْخُلُ الْجَنَّةَ أَقْوَامٌ أَفْئِدَتُهُمْ مِثْلُ أَفْئِدَةِ الطَّيْرِ» . رَوَاهُ مُسلم
رواہ مسلم (27 / 2840)، (7162) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: এমন একদল লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে যাদের অন্তর হবে পাখির অন্তরের ন্যায়। তাদের অন্তরকে পাখির অন্তরের সাথে তুলনা করার কারণ হলো পাখিদের অন্তর কোমল এবং ভীতু ও পরস্পর শত্রুতা হতে সম্পূর্ণ মুক্ত এবং আল্লাহর প্রতি পূর্ণ নির্ভরশীল হয়, উপরোক্ত জান্নাতীরা ঠিক অনুরূপ হবে। সর্বমোট কথা হলো তাদের অন্তর খুবই কোমল ও মমতাময় হবে। (শারুহুন নাবাবী হা, ২৮৪০)।
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - জান্নাত ও জান্নাতবাসীদের বিবরণ
৫৬২৬-[১৫] আবূ সাঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আল্লাহ তা’আলা জান্নাতবাসীদেরকে লক্ষ্য করে বলবেন, হে জান্নাতবাসীগণ! উত্তরে তারা বলবেন, ’আমরা উপস্থিত, সৌভাগ্য তোমার কাছ থেকে অর্জিত এবং যাবতীয় কল্যাণ তোমারই হাতে।” তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, তোমরা কি সন্তুষ্ট? তারা উত্তরে বলবে, কেন সন্তুষ্ট হব না, হে আমাদের প্রভু! অথচ আপনি আমাদেরকে এমন জিনিস দান করেছেন যা আপনার সৃষ্ট জগতের কাউকেও দান করেননি। তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, আমি কি তা অপেক্ষাও উত্তম জিনিস তোমাদেরকে দান করব না? তারা বলবে, হে প্রভু! তা অপেক্ষা উত্তম কিছু আর কি হতে পারে?
অতঃপর আল্লাহ তা’আলা বলবেন, আমি তোমাদের ওপর আমার সন্তুষ্টি দান করছি, অতএব এরপর তোমাদের ওপর আর কখনো আমি অসন্তুষ্ট হব না। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب صفةالجنة وَأَهْلهَا)
وَعَن أبي سعيد قا ل: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى يَقُولُ لِأَهْلِ الْجَنَّةِ يَا أهلَ الجنةِ فيقولونَ لَبَّيْكَ رَبَّنَا وَسَعْدَيْكَ وَالْخَيْرُ كُلُّهُ فِي يَدَيْكَ فَيَقُولُ: هَلْ رَضِيتُمْ؟ فَيَقُولُونَ: وَمَا لَنَا لَا نَرْضَى يَا رَبِّ وَقَدْ أَعْطَيْتَنَا مَا لَمْ تُعْطِ أَحَدًا مِنْ خَلْقِكَ؟ فَيَقُولُ أَلَا أُعْطِيكُمْ أَفْضَلَ مِنْ ذَلِكَ؟ فَيَقُولُونَ: يَا رَبِّ وَأَيُّ شَيْءٍ أَفْضَلُ مِنْ ذَلِكَ؟ فَيَقُولُ: أُحِلُّ عَلَيْكُمْ رِضْوَانِي فَلَا أَسْخَطُ عَلَيْكُمْ بَعْدَهُ أَبَدًا . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (6549) و مسلم (9 / 2829)، (7140) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: জান্নাতবাসীদের সাথে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন জান্নাতে কথা বলবেন। এরপর তারা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনকে উদ্দেশ্য করে বলবেন, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা উপস্থিত। এরপর তিনি তাদেরকে জান্নাতে যে নি'আমাতরাজি প্রদান করেছেন তা পেয়ে তারা সন্তুষ্ট কিনা এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করবেন। তারা বলবে, আমরা কি আপনার নাশোকর বান্দা যে, আমরা তা স্বীকার করব না। আপনি তো আমাদের অসংখ্য নি'আমাত দান করেছেন যা আমরা কখনো কল্পনাও করেনি। তারপর আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন জান্নাতবাসীদেরকে উদ্দেশ্য করে বলবেন, আজ থেকে তোমাদের জন্য আমার সন্তুষ্টি চিরঅবধারিত হয়ে গেল আমি আর কখনো তোমাদের প্রতি রাগ করব না। ইমাম ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, সবচেয়ে বড় নি'আমাত হবে আল্লাহর দর্শন। (ফাতহুল বারী ১৩ খণ্ড, হা. ৭৫১৮, শারহুন নাবাবী ১৭ খণ্ড, হা. ২৮২৯/৯)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - জান্নাত ও জান্নাতবাসীদের বিবরণ
৫৬২৭-[১৬] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: তোমাদের মধ্যে যে লোক জান্নাতে সবচেয়ে নিম্নমানের হবে তাকে বলা হবে, তুমি তোমার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ কর। তখন সে আগ্রহ প্রকাশ করবে, আরো আগ্রহ প্রকাশ করবে (বার বার)। তখন আল্লাহ তা’আলা তাকে প্রশ্ন করবেন, তোমার আকাঙ্ক্ষা শেষ হয়েছে কি? সে বলবে, হ্যাঁ। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা বলবেন, তুমি যতটুকু আশা-আকাঙ্ক্ষা করেছ তা এবং তার সমপরিমাণ (দ্বিগুণ) তোমাকে দেয়া হলো। (মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب صفةالجنة وَأَهْلهَا)
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: إِنَّ أَدْنَى مَقْعَدِ أَحَدِكُمْ مِنَ الْجَنَّةِ أَنْ يَقُولَ لَهُ: تَمَنَّ فَيَتَمَنَّى وَيَتَمَنَّى فَيَقُولُ لَهُ: هَلْ تَمَنَّيْتَ؟ فَيَقُولُ نَعَمْ فَيَقُولُ لَهُ: فَإِنَّ لَكَ مَا تَمَنَّيْتَ ومثلَه معَه . رَوَاهُ مُسلم
رواہ مسلم (301 / 182)، (453) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: জান্নাতের সর্বাপেক্ষা নিম্নমানের ব্যক্তিকেও তার আকাক্ষা অনুযায়ী নি'আমাতরাজি দেয়া হবে। সে বারবার আকাক্ষা করবে, পরিশেষে তাকে বলা হবে আরো চাও। এরপর বলা হবে, তুমি যতটুকু আশা-আকাঙ্ক্ষা করেছ তা এবং তার সমপরিমাণ দ্বিগুণ তোমাকে দেয়া হবে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - জান্নাত ও জান্নাতবাসীদের বিবরণ
৫৬২৮-[১৭] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: সায়হান, জায়হান, ফুরাত ও নীল- এ সকল নদীগুলো জান্নাতের নহর। (মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب صفةالجنة وَأَهْلهَا)
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «سَيْحَانُ وَجَيْحَانُ وَالْفُرَاتُ وَالنِّيلُ كُلٌّ من أنهارِ الْجنَّة» . رَوَاهُ مُسلم
رواہ مسلم (26 / 2839)، (7161) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: সায়হান ও জায়হান অধিকাংশ মুহাদ্দিসগণের মতে এশিয়ার খুরাসান এলাকায় অবস্থিত। ফুরাত ‘ইরাকের কুফা নগরীর পাশ দিয়ে প্রবাহিত নদী এবং নীল মিসরের প্রসিদ্ধ নদী। প্রকৃতপক্ষে নবীগণ এ সমস্ত নদীর পানি পান করেছেন। অথবা জান্নাতের নহরসমূহের সাথে এগুলোর সদৃশ থাকার কারণে এগুলোকে জান্নাতী নদী বলা হয়েছে। (শারহুন নাবাবী ১৭শ খণ্ড, হা. ২৮৩৯/২৬)।
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - জান্নাত ও জান্নাতবাসীদের বিবরণ
৫৬২৯-[১৮] ’উতবাহ্ ইবনু গযওয়ান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমাদের সম্মুখে [রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর হাদীস] বর্ণনা করা হয় যে, যদি জাহান্নামের উপরের প্রান্ত থেকে একটি পাথর নিক্ষেপ করা হয়, তা সত্তর বছরেও জাহান্নামের গভীর তলদেশ পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে না। আল্লাহ শপথ! জাহান্নামের এই গভীরতা (কাফির-মুশরিক, জিন্ ও মানব দ্বারা) পরিপূর্ণ করা হবে এবং তাও বর্ণনা করা হয় যে, জান্নাতের দরজার উভয় কপাটের মধ্যবর্তী স্থান চল্লিশ বছরের দূরত্ব হবে। নিশ্চয় একদিন এমন আসবে যে, (তার অধিবাসী দ্বারা) তাও ভরপুর হয়ে যাবে। (মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب صفةالجنة وَأَهْلهَا)
وَعَنْ عُتْبَةَ بْنِ غَزْوَانَ قَالَ: ذُكِرَ لَنَا أَنَّ الْحَجَرَ يُلْقَى مِنْ شَفَةِ جَهَنَّمَ فَيَهْوِي فِيهَا سَبْعِينَ خَرِيفًا لَا يُدْرِكُ لَهَا قَعْرًا وَاللَّهِ لَتُمْلَأَنَّ وَلَقَدْ ذُكِرَ لَنَا أَنَّ مَا بَيْنَ مِصْرَاعَيْنِ مِنْ مَصَارِيعِ الْجَنَّةِ مَسِيرَةُ أَرْبَعِينَ سَنَةً وَلَيَأْتِيَنَّ عَلَيْهَا يَوْمٌ وَهُوَ كَظِيظٌ مِنَ الزحام . رَوَاهُ مُسلم
رواہ مسلم (14 / 2967)، (7435) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীসে জাহান্নামের গভীরতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে, জাহান্নামের গভীরতার কোন সীমা নেই। যদি একটি পাথরকে নিক্ষেপ করা হয় তাহলে তা সত্তর বছরও জাহান্নামের গভীর তলদেশ পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে না। অতএব এই সুবিশাল জাহান্নামকে কাফির-মুশরিক, জিন্ ও মানব দ্বারা পরিপূর্ণ করা হবে। অনুরূপভাবে উক্ত হাদীসে জান্নাতের প্রশস্ততার কথা উল্লেখ করা হয়েছে যে, জান্নাত এত সুবিশাল হবে তার দৈর্ঘ্যের কোন কুল-কিনারা পাওয়া যাবে না। আর বলা হয়েছে যে, জান্নাতের দরজার দুই কপাটের ব্যবধান হবে চল্লিশ বছরের দূরত্বের ন্যায়। আর বলা হয়েছে যে, জান্নাত একদিন তার অধিবাসীদের মাধ্যমে পরিপূর্ণ হয়ে যাবে এবং তাতে এক প্রকার ভিড় জমবে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)