পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - কিয়ামত নিকটবর্তী হওয়া এবং যে ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করল তখন হতেই তার কিয়ামত সংঘটিত হয়ে গেল।
কিয়ামতকে (السَّاعَةِ) অর্থেও ব্যবহৃত হয়, যেহেতু তা হঠাৎ সংঘটিত হবে। আর তা মুহূর্তের মধ্যে সংঘটিত হবে যদিও তা দীর্ঘসময় ধরে হওয়া সম্ভব। আল্লামাহ্ তুরিবিশতী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, (السَّاعَةِ) দ্বারা সময়ের একটি অংশকে বুঝায় এবং কিয়ামত অর্থেও ব্যবহৃত হয়। আল্লাহর কিতাব ও রাসূল (সা.) -এর সুন্নাতে শব্দটি তিনটি প্রকারে বিভক্ত হয়ে ব্যবহৃত হয়েছে। প্রথমত (الْكُبْرَى) কিয়ামতে কুবরা বলতে সমস্ত মানুষকে হিসাবের জন্য পুনরুত্থান করাকে বুঝানো হয়েছে। দ্বিতীয়ত (الْوُسْطَى) বা মধ্যম কিয়ামত বলতে শিঙ্গা ফুৎকারের মাধ্যমে মৃত্যুকে বুঝানো হয়েছে এবং (الصُّغرَى) বা ছোট কিয়ামত বলতে মৃত্যুকে বুঝানো হয়েছে।
তাই কিয়ামত বলতে উক্ত তিন প্রকারকে বুঝানো হয়েছে অথবা শুধু মৃত্যুকে বুঝানো হয়েছে। আল্লাহর সর্বাধিক ভালো জানেন।
৫৫০৯-[১] শু’বাহ্ (রহিমাহুল্লাহ) কতাদাহ্ (রহিমাহুল্লাহ) থেকে, তিনি আনাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আমি ও কিয়ামত এ দুটি অঙ্গুলির মতো প্রেরিত হয়েছি। শু’বাহ্ (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আমি কতাদাহ্-কে বলতে শুনেছি, তিনি এ হাদীসটি ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলেছেন, যেমন মধ্যমা ও তর্জনী (শাহাদাত) অঙ্গুলির মাঝে একটি অন্যটি হতে কিছু বর্ধিত। অতঃপর শু’বাহ (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আমি বলতে পারি না, এ ব্যাখ্যাটি কি কতাদাহ (রহিমাহুল্লাহ) আনাস (রাঃ) হতে শুনে বলেছেন, নাকি কতাদাহ্ নিজেই বলেছেন। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول ( بَابُ قُرْبِ السَّاعَةِ وَأَنَّ مَنْ مَاتَ فَقَدْ قَامَت قِيَامَته)
عَن شعبةَ عَن قَتَادَة عَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «بُعِثْتُ أَنَا وَالسَّاعَةُ كَهَاتَيْنِ» . قَالَ شُعْبَةُ: وَسَمِعْتُ قَتَادَةَ يَقُولُ فِي قَصَصِهِ كفصل إِحْدَاهُمَا عَلَى الْأُخْرَى فَلَا أَدْرِي أَذَكَرَهُ عَنْ أنس أَو قَالَه قَتَادَة؟ مُتَّفق عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (6504) و مسلم (133 / 2951)، (7404) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: (بُعِثْتُ أَنَا وَالسَّاعَةُ كَهَاتَيْنِ) আমি প্রেরিত হয়েছি এবং কিয়ামত হাতের দুই আঙ্গুলের ন্যায় কাছাকাছি সময়ে। কাযী ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আমার দুনিয়ার আগমন এবং কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার ব্যবধান খুবই কাছাকাছি। যেমন হাতের দুই আঙ্গুলের মধ্যে দূরত্বের ব্যবধান। অর্থাৎ শাহাদাত অঙ্গুলি ও মধ্যমা অঙ্গুলির মধ্যে যতটুকু ব্যবধান ততটুকু।
অথবা এর মর্ম হচ্ছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর আবির্ভাব এবং কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার দাবী করার মাঝে কোন ব্যবধান নেই। যেমন হাতের দুই আঙ্গুলের মঝে কোন কিছুর ব্যবধান নেই।
মিরক্বাত ভাষ্যকার আরেকটি মতামত দিয়েছেন, আর তা হলো রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর শারী'আত কিয়ামতের সাথে সংলগ্ন। কিয়ামতের পূর্বে ইসলাম ছাড়া অন্য কোন শারী'আত দ্বারা পৃথক করা
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - কিয়ামত নিকটবর্তী হওয়া এবং যে ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করল তখন হতেই তার কিয়ামত সংঘটিত হয়ে গেল।
৫৫১০-[২] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী (সা.) -কে বলতে শুনেছি। [নবী (সা.) বলেছেন] মৃত্যুর একমাস পূর্বে বলেন, তোমরা আমাকে প্রশ্ন করছ কিয়ামত কখন হবে? অথচ তা একমাত্র আল্লাহই জানেন। আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি। বর্তমানে এই ভূপৃষ্ঠে যে ব্যক্তিই বেঁচে আছে, একশত বছর অতিবাহিত হওয়া পর্যন্ত তাদের কেউই জীবিত থাকবে না। (মুসলিম)
الفصل الاول ( بَابُ قُرْبِ السَّاعَةِ وَأَنَّ مَنْ مَاتَ فَقَدْ قَامَت قِيَامَته)
وَعَن جَابر قا ل: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ قَبْلَ أَنْ يَمُوتَ بِشَهْرٍ: «تَسْأَلُونِي عَنِ السَّاعَةِ؟ وَإِنَّمَا عِلْمُهَا عِنْدَ اللَّهِ وَأُقْسِمُ بِاللَّهِ مَا عَلَى الْأَرْضِ مِنْ نَفْسٍ مَنْفُوسَةٍ يَأْتِي عَلَيْهَا مِائَةُ سَنَةٍ وَهِيَ حَيَّةٌ يَوْمَئِذٍ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
رواہ مسلم (218 / 2538)، (6481) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (أُقْسِمُ بِاللَّهِ) আল্লাহর শপথ করে বলছি, তোমরা আমাকে কিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছ? এর জ্ঞান তো একমাত্র আল্লাহর নিকট রয়েছে। আর আমি যা জানি তা হচ্ছে কিয়ামতে সুগরা। এরপর তিনি বলেন, (مَا عَلَى الْأَرْضِ مِنْ نَفْسٍ مَنْفُوسَةٍ) অর্থাৎ যারা পৃথিবীতে এখন বসবাস করছে একশত বছর অতিবাহিত হওয়ার পর তাদের একটি প্রাণীও জীবিত থাকবে না। এর মাধ্যমে নবী (সা.) তার সাহাবীদের উদ্দেশ্য করেছেন। অর্থাৎ সাহাবীদের কেউ বেঁচে থাকবে না। রাসূলুল্লাহ (সা.) অধিকাংশের উপর ভিত্তি করে এ কথা বলেছেন। যদিও কয়েকজন সাহাবী জীবিত ছিলেন। যেমন, আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) এবং সালমান (রাঃ)। সবচেয়ে সঠিক কথা হলো, রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর এই হাদীস বর্ণনার পর থেকে ১০০ বছর পর কোন সাহাবী আর বেঁচে থাকবে না। বাস্তবেও তাই হয়েছে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - কিয়ামত নিকটবর্তী হওয়া এবং যে ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করল তখন হতেই তার কিয়ামত সংঘটিত হয়ে গেল।
৫৫১১-[৩] আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) নবী (সা.) হতে বর্ণনা করেন। তিনি (সা.) বলেছেন: আজ যারা ভূপৃষ্ঠে বেঁচে আছে, একশত বছর অতিবাহিত হতেই তাদের কেউ জীবিত থাকবে না। (মুসলিম)
الفصل الاول ( بَابُ قُرْبِ السَّاعَةِ وَأَنَّ مَنْ مَاتَ فَقَدْ قَامَت قِيَامَته)
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا يَأْتِي مِائَةُ سَنَةٍ وَعَلَى الْأَرْضِ نَفْسٌ مَنْفُوسَةٌ الْيَوْمَ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
رواہ مسلم (219 / 2539)، (6485) ۔
(صَحِيح)
ব্যাখ্যা: (نَفْسٌ مَنْفُوسَةٌ الْيَوْمَ) অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সময়কাল থেকে পরবর্তী একশত বছর পর, পৃথিবীতে কোন সাহাবী অবশিষ্ট থাকবে না। এর অর্থ এটা নয় যে, কোন মানুষই বেঁচে থাকবে না। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; তুহফাতুল আহওয়াযী ৬ষ্ঠ খণ্ড, হা. ৬৫৫০)
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - কিয়ামত নিকটবর্তী হওয়া এবং যে ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করল তখন হতেই তার কিয়ামত সংঘটিত হয়ে গেল।
৫৫১২-[৪] ’আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, অনেক বেদুঈন লোকই নবী (সা.) -এর নিকট এসে প্রশ্ন করত, কিয়ামত কখন হবে? তখন তিনি (সা.) তাদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠের প্রতি দৃষ্টি দিয়ে বলতেন, এই বালকটি যদি জীবিত থাকে, তবে বৃদ্ধ হওয়ার আগেই তোমাদের ওপর কিয়ামত ঘটে যাবে। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول ( بَابُ قُرْبِ السَّاعَةِ وَأَنَّ مَنْ مَاتَ فَقَدْ قَامَت قِيَامَته)
وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: كَانَ رِجَالٌ مِنَ الْأَعْرَابِ يَأْتُونَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَيَسْأَلُونَهُ عَنِ السَّاعَةِ فَكَانَ يَنْظُرُ إِلَى أصغرِهم فَيَقُول: «إِنْ يَعِشْ هَذَا لَا يُدْرِكْهُ الْهَرَمُ حَتَّى تَقُومَ عَلَيْكُمْ سَاعَتُكُمْ» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (6511) و مسلم (136 / 2952)، (7409) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: (يَسْأَلُونَهُ عَنِ السَّاعَةِ) রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর নিকট প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে লোকজন এসে কিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করত। একদিন নবী (সা.) তাদের মধ্যে বয়সে সবচেয়ে ছোট ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে বললেন, এই ব্যক্তি যদি বেঁচে থাকে, তার বার্ধক্যকাল পৌছার আগেই তোমাদের ওপর কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবে। তথা কিয়ামত সুগরা বা ছোট কিয়ামত হবে। এর অর্থ হচ্ছে রাসূল (সা.) -এর এই বক্তব্যের ১০০ বছর উপস্থিত সকলের মৃত্যু হবে অথবা অধিকাংশের মৃত্যু হবে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; ফাতহুল বারী ১১শ খণ্ড, হা, ৬৫১১)