পরিচ্ছেদঃ ২১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - অত্যাচার
৫১৩১-[৯] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন এ আয়াতটি নাযিল হলো- (الَّذِيْنَ آمَنُوْا وَلَمْ يَلْبِسُوْا إِيْمَانَهُمْ بِظُلْمٍ) অর্থাৎ- ’’সেসব লোক যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের ঈমানে তারা জুলুমকে শামিল করেনি’’- (সূরাহ্ আল আন্’আম ৬ : ৮২)। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীদের কাছে বিষয়টি কঠিন ঠেকল। তাঁরা জিজ্ঞেস করল : হে আল্লাহর রসূল! আমাদের মধ্যে এমন কে আছে, যে নিজের ওপর অত্যাচার করেনি? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ অত্যাচার দ্বারা এ কথা বুঝানো হয়নি; বরং শির্ককে বুঝানো হয়েছে। তোমরা লুকমান (আ.)-এর উপদেশ কি শুনোনি, যা তিনি তাঁর পুত্রকে দান করেছেন? সেটা এই যে, ’’হে বৎস! আল্লাহ তা’আলার সাথে কাউকে শরীক করো না, যেহেতু আল্লাহর সাথে শরীক করা ভয়ঙ্কর অত্যাচার।’’ অপর এক বর্ণনায় আছে, তিনি বলেছেনঃ তোমরা যা মনে করছ প্রকৃতপক্ষ তা নয়। অত্যাচার (জুলুম) দ্বারা এ কথাই বুঝানো হয়েছে, যা লুকমান (আ.) তার পুত্রকে বলেছেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
عَن ابْن مَسْعُود قَالَ: لَمَّا نَزَلَتْ: (الَّذِينَ آمَنُوا وَلَمْ يَلْبِسُوا إِيمانهم بظُلْم)
شَقَّ ذَلِكَ عَلَى أَصْحَابِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَالُوا: يَا رَسُول اله: أَيُّنَا لَمْ يَظْلِمْ نَفْسِهِ؟ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَيْسَ ذَاكَ إِنَّمَا هُوَ الشِّرْكُ أَلَمْ تَسْمَعُوا قَوْلَ لُقْمَانَ لِابْنِهِ: (يَا بني لَا تُشْرِكْ بِاللَّهِ إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ؟)
فِي رِوَايَةٍ: «لَيْسَ هُوَ كَمَا تَظُنُّونَ إِنَّمَا هُوَ كَمَا قَالَ لُقْمَان لِابْنِهِ» . مُتَّفق عَلَيْهِ
ব্যাখ্যাঃ لَمَّا نَزَلَتْ: الَّذِيْنَ آمَنُوْا وَلَمْ يَلْبِسُوْا إِيْمَانَهُمْ بِظُلْمٍ উল্লেখিত হাদীসের ব্যাখ্যায় ইমাম খত্ত্বাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ সাহাবীগণ সন্দেহে পতিত হওয়ার কারণ হলো সাধারণত জুলুমের বাহ্যিক অবস্থা হচ্ছে এ রকম যে, কারো হক নষ্ট করা বা কারো সাথে কোনরূপ অন্যায় আচরণ করা। সাহাবীরা তো কেউ কাবীরাহ্ গুনাহ করে নিজের প্রতি অবিচার করতেন না তাহলে ঈমানের সাথে জুলুমের মিশ্রণের অর্থটা কি? তারা ধারণা করলেন উদ্দেশ্য হতে পারে জুলুমের বাহ্যিক অবস্থা। কারণ দৈনন্দিন জীবনে উঠতে বসতে কত রকমই না ছোট-খাট জুলুম হয়ে থাকে। যেহেতু জুলুমের সংজ্ঞাই হলো কোন জিনিসকে তার সঠিক স্থানে না রেখে অন্য স্থানে রাখা। সেহেতু এই সংজ্ঞা অনুযায়ী প্রতিদিনই কোন না কোন জুলুম হয়। তাই রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের এ সন্দেহ দূর করে দিয়ে বললেন, এ জুলুম হচ্ছে আল্লাহর সাথে কাউকে শির্ক করা। আর এটিই হলো সবচেয়ে বড় জুলুম। (শারহুন নাবাবী ২য় খন্ড, হাঃ ১২৭/১৯৭)
পরিচ্ছেদঃ ২১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - অত্যাচার
৫১৩২-[১০] আবূ উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন মর্যাদার দিক থেকে সে ব্যক্তি নিকৃষ্ট হবে, যে নিজের পরকালকে পার্থিব স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশে ধ্বংস করেছে। (ইবনু মাজাহ)[1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে ‘‘শাহর ইবনু হাওশাব’’ নামের বর্ণনাকারী য‘ঈফ। আর ‘আবদুল হাকাম আস্ সাদূসী নামের বর্ণনাকারী অপরিচিত। দেখুন- য‘ঈফাহ্ ১৯১৫ ।
وَعَنْ أَبِي
أُمَامَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم قَالَ: «مِنْ شَرِّ النَّاسِ مَنْزِلَةً عِنْدَ اللَّهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَبْدٌ أَذْهَبَ آخِرَتَهُ بِدُنْيَا غَيْرِهِ» . رَوَاهُ ابْن مَاجَه
ব্যাখ্যাঃ (أَذْهَبَ آخِرَتَهٗ بِدُنْيَا غَيْرِه) উক্ত হাদীসাংশের ব্যাখ্যায় ‘আবদুল বাক্বী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এখানে দু’টো অর্থের সম্ভাবনা রয়েছে। ১. তুচ্ছ জিনিসের লোভে কাউকে হত্যা করে আখিরাত বরবাদ করা। ২. অথবা অত্যাচারীকে নগণ্য বস্তু ছিনিয়ে নিতে সাহায্য করে আখিরাত নষ্ট করা। (ইবনু মাজাহ ৩য় খন্ড, হাঃ ৩৯৬৬)
পরিচ্ছেদঃ ২১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - অত্যাচার
৫১৩৩-[১১] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ’আমলনামা তিন প্রকার- ১. ঐ ’আমলনামা, যাকে আল্লাহ তা’আলা ক্ষমা করবেন না। আর তা হলো, আল্লাহ তা’আলার সাথে শরীক করা। আল্লাহ মহীয়ান-গরীয়ান বলেন- (إِنَّ اللهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِه) অর্থাৎ- ’’অংশীবাদীদেরকে আল্লাহ তা’আলা ক্ষমা করবেন না’’, ২. ঐ ’আমলনামা, যাতে মানুষের পারস্পরিক জুলুম-অত্যাচার লিপিবদ্ধ আছে। সে ’আমলনামাকে আল্লাহ তা’আলা এমনিতেই ছাড়বেন না। এমনকি একজনের কাছ থেকে অপরজনের প্রতিশোধ নেবেন এবং ৩. ঐ ’আমলনামা, যার প্রতি আল্লাহ তা’আলা ভ্রূক্ষেপ করবেন না। এ ’আমলনামা হলো বান্দা ও আল্লাহ তা’আলার মধ্যকার জুলুম সংক্রান্ত বিষয়। এটা আল্লাহ তা’আলার ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল। যদি তিনি ইচ্ছে করেন, তাকে শাস্তি দেবেন। আর যদি ইচ্ছে করেন, তাকে ক্ষমা করে দেবেন।[1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে ‘‘সাদাকা’’ নামের বর্ণনাকারী য‘ঈফ। আর ইয়াযীদ ইবনু বাবানুস (يَزِيدَ بْنِ بَابَنُوسَ) নামের বর্ণনাকারীর মাঝে অপরিচিত আছে। দেখুন- আল মুসতাদরাক ৮৭১৭।
وَعَنْ
عَائِشَةَ قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: الدَّوَاوِينُ ثَلَاثَةٌ: دِيوَانٌ لَا يَغْفِرُهُ اللَّهُ: الْإِشْرَاكُ بِاللَّهِ. يَقُولُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ (إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ)
وَدِيوَانٌ لَا يَتْرُكُهُ اللَّهُ: ظُلْمُ الْعِبَادِ فِيمَا بَيْنَهُمْ حَتَّى يَقْتَصَّ بَعْضُهُمْ مِنْ بَعْضٍ وَدِيوَانٌ لَا يَعْبَأُ اللَّهُ بِهِ ظُلْمُ الْعِبَادِ فِيمَا بينَهم وبينَ الله فَذَاك إِلَى اللَّهِ فَذَاكَ إِلَى اللَّهِ: إِنْ شَاءَ عَذَّبَهُ وَإِن شَاءَ تجَاوز عَنهُ
পরিচ্ছেদঃ ২১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - অত্যাচার
৫১৩৪-[১২] ’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তুমি অত্যাচারিতের বদদু’আ থেকে নিজেকে রক্ষা করো। কেননা সে আল্লাহ তা’আলার কাছে নিজের অধিকার প্রার্থনা করে। আল্লাহ তা’আলা কোন হকদারকে নিজের পাওনা থেকে বঞ্চিত করেন না।[1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে ‘‘সলিহ ইবনু হাসান’’ নামের বর্ণনাকারী মাতরূক। দেখুন- য‘ঈফাহ্ ১৬৯৭।
وَعَنْ عَلِيٍّ
قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِيَّاكَ وَدَعْوَةَ الْمَظْلُومِ فَإِنَّمَا يَسْأَلُ اللَّهَ تَعَالَى حَقَّهُ وَإِنَّ اللَّهَ لَا يَمْنَعُ ذَا حق حَقه»
পরিচ্ছেদঃ ২১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - অত্যাচার
৫১৩৫-[১৩] আওস ইবনু শুরাহবীল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি অত্যাচারীর সাথে এ উদ্দেশে চলে যে, সে তার শক্তি বৃদ্ধি করবে; আর সে এটা জানে যে, সে জুলুমকারী, তবে সে ইসলাম থেকে বের হয়ে গেল।[1]
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ, এর সনদে ‘‘আমর ইবনু ইসপদক’’ নামের বর্ণনাকারী অপরিচিত। আর আবূ ইসপদক ইবনু ইবরাহীম ইবনু যাবরীক নামের বর্ণনাকারী খুবই দুর্বল। দেখুন- য‘ঈফাহ্ ৭৫৮।
وَعَن أوْسِ
بن شَرحبيل أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «مَنْ مَشَى مَعَ ظَالِمٍ لِيُقَوِّيَهُ وَهُوَ يَعْلَمُ أَنَّهُ ظَالِمٌ فَقَدْ خَرَجَ مِنَ الْإِسْلَام»
পরিচ্ছেদঃ ২১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - অত্যাচার
৫১৩৬-[১৪] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি জনৈক ব্যক্তিকে বলতে শুনেছেন, অত্যাচারী মূলত কারো কোন ক্ষতি সাধন করতে পারে না; বরং নিজেই নিজেকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। আবূ হুরায়রা(রাঃ) এটা শুনে বললেনঃ হ্যাঁ, আল্লাহর কসম! এরূপই। এমনকি ’’সবারা’’ (সারস পাখি)-ও অত্যাচারীর অত্যাচারের কারণে নিজের বাসায় থেকে দুর্বল হয়ে পড়ে, পরিশেষে মৃত্যুবরণ করে।
[ইমাম বায়হাক্বী (রহিমাহুল্লাহ) ’’শু’আবুল ঈমানে’’ উপরিউক্ত চারটি হাদীস বর্ণনা করেছেন।][1]
আলবানী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ আমি এর সানাদ পাইনি তবে ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমরা জেনেছি যে, হাদীসটি য‘ঈফ। ইবনু হাজার (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ তার সনদে মুহাম্মাদ ইবনু জাবির আল ইয়ামানী নামের বর্ণনাকারী মাতরূক। দেখুন- তাফসীর ত্ববারী ১৪/৮৫ পৃঃ।
وَعَنْ أَبِي
هُرَيْرَةَ أَنَّهُ سَمِعَ رَجُلًا يَقُولُ: إِنَّ الظَّالِمَ لَا يَضُرُّ إِلَّا نَفْسَهُ فَقَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ: بَلَى وَاللَّهِ حَتَّى الْحُبَارَى لَتَمُوتُ فِي وَكْرِهَا هُزْلًا لِظُلْمِ الظَّالِمِ. رَوَى الْبَيْهَقِيُّ الْأَحَادِيثَ الْأَرْبَعَةَ فِي «شُعَبِ الْإِيمَانِ»