পরিচ্ছেদঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - দণ্ডায়মান হওয়া

الْقيام এর পরিচিতি : الْقيام শব্দটি বাবে نَصَرَ এর মাসদার শাব্দিক অর্থ : দণ্ডায়মান হওয়া, দাঁড়ানো।

পারিভাষিক অর্থ : কারো সম্মানার্থে দাঁড়ানো তথা ঐ সম্মানিত ব্যক্তি যতক্ষণ বসে থাকবে, ততক্ষণ ঐ স্থানে দাঁড়িয়ে থাকাকে ক্বিয়াম বলা হয়।


৪৬৯৫-[১] আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, বানূ ক্বুরায়যাহ্ সম্প্রদায় যখন সা’দ (রাঃ)-এর ঘোষিত রায় মেনে নেয়ার শর্তে দূর্গ হতে অবতরণ করল, তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সা’দকে ডেকে পাঠালেন। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটবর্তী ছিলেন। সা’দ (রাঃ) যখন গাধার পিঠে আরোহণ করে মসজিদে নাবাবীর নিকটবর্তী হলেন, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসারগণকে বললেনঃ তোমরা তোমাদের নেতার সাহায্যের জন্য দাঁড়িয়ে যাও। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

এ হাদীসের বিস্তারিত বর্ণনা بَابِ حِكَمِ الْإِسْرَاءِ ’’মি’রাজের ঘটনাবলী অধ্যায়ে’’ হয়েছে।

بَابُ الْقِيَامِ

عَن أبي سعيد الْخُدْرِيّ قَالَ: لَمَّا نَزَلَتْ بَنُو قُرَيْظَةَ عَلَى حُكْمِ سَعْدٍ بَعَثَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَيْهِ وَكَانَ قَرِيبًا مِنْهُ فَجَاءَ عَلَى حِمَارٍ فَلَمَّا دَنَا مِنَ الْمَسْجِدِ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِلْأَنْصَارِ: «قُومُوا إِلَى سيِّدكم» . مُتَّفق عَلَيْهِ. وَمَضَى الْحَدِيثُ بِطُولِهِ فِي «بَابِ حِكَمِ الْإِسْرَاءِ»

عن ابي سعيد الخدري قال: لما نزلت بنو قريظة على حكم سعد بعث رسول الله صلى الله عليه وسلم اليه وكان قريبا منه فجاء على حمار فلما دنا من المسجد قال رسول الله صلى الله عليه وسلم للانصار: «قوموا الى سيدكم» . متفق عليه. ومضى الحديث بطوله في «باب حكم الاسراء»

ব্যাখ্যাঃ (عَلٰى حُكْمِ سَعْدٍ) যে ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে তা হলো এই যে, মদীনার ইয়াহূদী গোত্র বানূ ‘‘কুরায়যার সাথে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। শর্ত ছিল তারা মুসলিমদের স্বার্থের পরিপন্থী কাজ করবে না। অথচ ৫ম হিজরীতে সংঘটিত খন্দাক যুদ্ধে প্রায় প্রকাশ্যেই তারা মক্কার কাফিরদেরকে মুসলিমদের বিরুদ্ধে সহযোগিতা করে, ফলে যুদ্ধের পর মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্ব-সৈন্যে বানূ কুরায়যাকে অবরোধ করেন। উপায়ন্তর না দেখে বানূ কুরায়যার লোকেরা আবূ লুবাবাকে ডাকল। আবূ লুবাবাহ্ তাদের শাস্তি স্বরূপ হত্যার ইঙ্গিত দিলেন। পরিশেষে তারা তাদের গোত্রীয় মুসলিম সাহাবী সা‘দ -এর ফায়সালা মেনে নিতে রাজি হয়।

ফলে সা‘দ  নারী ও শিশুকে ব্যতীত সকলকে হত্যার নির্দেশ দেন। এ নির্দেশ শুনে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সা‘দ তাঁর রবের ইচ্ছামত নির্দেশ প্রদান করেছে।

(فَلَمَّا دَنَا مِنَ الْمَسْجِدِ) দ্বারা উদ্দেশ্য : বলা হয় মসজিদ দ্বারা বুঝানো হয়েছে ঐ স্থানকে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বানূ কুরায়যার অবস্থানকালে যে স্থানটিকে সালাত আদায় করার জন্য নির্ধারণ করেছিলেন। পরবর্তীতে মানুষেরা সেখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। এটা দ্বারা মদীনার মসজিদে নাবাবী উদ্দেশ্য নয়।

কিন্তু ইবনু ইসহক (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ এটা দ্বারা উদ্দেশ্য মসজিদে মদীনাহ্। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সা‘দ (রাঃ)-কে বানূ কুরায়যায় নিকট পাঠিয়ে ছিলেন তাদের বিচার-ফায়সালা করার জন্য। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সা‘দ (রাঃ)-এর জন্য মসজিদে নাবাবীতে তাবু তৈরি করা হয়েছিল। সেখানে একজন মহিলা তাঁর আঘাতপ্রাপ্ত স্থানের সেবা করতেন।

فلما خرج إلى بني قريظة এটা দ্বারা উদ্দেশ্য নিশ্চয় সা‘দ  মসজিদে মদীনায় ছিলেন। (ফাতহুল বারী ৭ম খন্ড, হাঃ ৪১২১)

ক্বিয়ামের প্রকারভেদ ও হুকুমসমূহ :

* কারো সম্মানার্থে দাঁড়ানো। যেমন : পিতামাতা, নেতৃস্থানীয় লোকেদের সম্মানার্থে দাঁড়ানো- এটা জায়িয।

* শুভেচ্ছা জ্ঞাপন বা অভ্যর্থনা জ্ঞাপনার্থে দাঁড়ানো জায়িয।

* কাউকে সহযোগিতা করার জন্য দাঁড়ানো- এটা জায়িয ও পুণ্যের কাজ।

* অহংকারী ব্যক্তির জন্য দাঁড়ানো- এটা হারাম।

* কবর যিয়ারতের জন্য দাঁড়ানো- এটা জায়িয।

* মৃতের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য দাঁড়ানো- এটা বিদ্‘আত।

(قُومُوا إِلٰى سيِّدكم) বলা হয় : কারো সম্মানার্থে দাঁড়ানো, এটা দ্বারা প্রমাণিত হয় দাঁড়ানো অপছন্দনীয় নয়। কারো জন্য দাঁড়ানো মুস্তাহাব।

বলা হয় : তোমাদের নেতাকে গাধা হতে নামানোর জন্য দাঁড়াও। কেননা যখন খন্দাক যুদ্ধে সা‘দ  আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে তাঁর হাতের রগ কাটা গিয়েছিল। তাই তার গাধা থেকে নামার জন্য যেন কষ্ট না হয় সে জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন তোমরা নেতার জন্য দাঁড়াও।

ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ সম্মানিত ব্যক্তিদের জন্য দাঁড়ানো মুস্তাহাব। এ ব্যাপারে সহীহ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তবে নিষেধ সম্পর্কে স্পষ্ট হাদীস নেই। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

الْقيام শব্দের صلة যখন إلى আসে তখন সাহায্য-সহযোগিতা অর্থ হয়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - দণ্ডায়মান হওয়া

৪৬৯৬-[২] ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কেউ কোন ব্যক্তিকে তার বসার স্থান হতে উঠিয়ে অতঃপর নিজেই সে স্থানে বসে পড়ে, এরূপ করবে না; বরং তোমরা স্থানটিকে প্রশস্ত করে নেবে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الْقِيَامِ

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا يُقِيمُ الرَّجُلُ الرَّجُلَ مِنْ مَجْلِسِهِ ثُمَّ يَجْلِسُ فِيهِ وَلَكِنْ تَفَسَّحُوا وَتَوَسَّعُوا» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ

وعن ابن عمر عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: «لا يقيم الرجل الرجل من مجلسه ثم يجلس فيه ولكن تفسحوا وتوسعوا» . متفق عليه

ব্যাখ্যাঃ উল্লেখিত হাদীসের মাধ্যমে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসার আদব শিষ্টাচার শিক্ষা দিয়েছেন। ইবনু বাত্ত্বলসহ আরো অনেকে বলেছেন, এটা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মাজলিসের জন্য নির্দিষ্ট। জামহূর ‘উলামা বলেছেনঃ আলোচ্য বাক্যে "مجلس" দ্বারা সবার জন্য উন্মুক্ত বসার স্থানকে বুঝানো হয়েছে। যেমন মসজিদ আলোচনা সভা পাঠকক্ষ। সুতরাং জুমু‘আর দিন হলেও সালাত কিংবা অন্য অবস্থায় বসা থাকলেও তাকে উঠে নিজে বসা নাজায়িয। কেউ নিজের ইচ্ছায় উঠে পড়লে জায়িয হবে। তবে বিশেষ কোন ব্যক্তির জন্য নির্দিষ্ট জায়গা থাকলে সেখানে বসবে না। যদি কেউ সে স্থানে বসে তাহলে তাকে উঠিয়ে দেয়া বৈধ হবে। মানুষদেরকে বসার সুযোগ করে দেয়ার মর্মে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন : ‘‘হে মু’মিনগণ! যখন তোমাদের বলা হয়, মাজলিসের স্থান প্রশস্ত করে দাও, তখন তোমরা স্থান প্রশস্ত করে দিও। আল্লাহ তোমাদের জন্য প্রশস্ত করে দিবেন। যখন বলা হয় উঠে যাও, তখন উঠে যেয়ো’’- (সূরাহ্ আল মুজা-দালাহ্ ৫৮ : ১১)। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৭ম খন্ড, হাঃ ২৭৪৯; ফাতহুল বারী ১১শ খন্ড, হাঃ ৬২৬৯; মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)

পরিচ্ছেদঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - দণ্ডায়মান হওয়া

৪৬৯৭-[৩] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যদি কেউ নিজের স্থান হতে উঠে অন্যত্র চলে যায়, অতঃপর পুনরায় ফিরে আসে, তবে সে-ই ঐ স্থানের অগ্রাধিকারী। (মুসলিম)[1]

بَابُ الْقِيَامِ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ قَامَ مِنْ مَجْلِسِهِ ثُمَّ رَجَعَ إِلَيْهِ فَهُوَ أَحَقُّ بِهِ» . رَوَاهُ مُسلم

وعن ابي هريرة ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «من قام من مجلسه ثم رجع اليه فهو احق به» . رواه مسلم

ব্যাখ্যাঃ কোন স্থানে বসার পর সে স্থান হতে উঠলে পুনরায় সে স্থানে বসার বিধান : ইবনু মালিক বলেন, যে ব্যক্তি বসার স্থান ত্যাগ করে উযূ, থুথু ফেলা বা অন্য কোন সাধারণ প্রয়োজনে উঠে বাইরে যায় এবং পুনরায় ফিরে আসার ইচ্ছা রাখে, এমতাবস্থায় সে যদি সেখানে কিছু রেখে যায় অথবা না রেখে যায় সেই স্থানে বসতে পারবে এবং সে ব্যক্তি তার পূর্বের স্থানে বসার অধিক হকদার। তার স্থানে কোন লোকের বসা উচিত নয়। কেউ বসলে পূর্বের ব্যক্তি ফিরে আসলে তার জন্য আসন ছেড়ে দিতে হবে। ছেড়ে দেয়ার বিধান হলো মুস্তাহাব, ওয়াজিব নয়।

কেউ কেউ বলেছেন, যদি সে বসার স্থানে কোন কিছু না রেখে যায় তাহলে তার পূর্বের বসার হুকুম বাতিল হয়ে যায়। তবে দারস প্রদান, শিক্ষক বা উচ্চমর্যাদা বা কোন ব্যক্তি যদি তার স্থান হতে উঠে যায়। তিনি ফিরে আসলে তাকে তার স্থান ফেরত দিতে হবে।

(তুহফাতুল আহওয়াযী ৭ম খন্ড, হাঃ ২৭৫১; শারহুন নাবাবী ১৪শ খন্ড, হাঃ ২১৭৯)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৩ পর্যন্ত, সর্বমোট ৩ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে