পরিচ্ছেদঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ - ‘আরব ভূখণ্ড হতে ইয়াহূদীদের বিতাড়ন

৪০৫০-[১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমরা মসজিদে নববীতে বসে ছিলাম। এমন সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে এসে বললেনঃ ইয়াহূদী জনপদে চলো। সুতরাং আমরা তাঁর সঙ্গে রওয়ানা হলাম এবং তাদের শিক্ষালয়ে উপস্থিত হলাম। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে বললেনঃ হে ইয়াহূদী জাতি! তোমরা ইসলাম গ্রহণ করো, তবেই নিরাপত্তা বা আশ্রয় লাভ করবে। জেনে রাখো, সারা বিশ্বের ভূখণ্ড আল্লাহ ও তাঁর রসূল-এর একচ্ছত্র অধিকারে। আমি তোমাদেরকে এ ভূখণ্ড (’আরব উপদ্বীপ) হতে বহিষ্কার করার সংকল্প করেছি। অতএব তোমরা কোনো জিনিস বিক্রি করতে চাইলে তা বিক্রি করতে পারো (সুযোগ দেয়া হলো)। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ إِخْرَاجِ الْيَهُوْدِ مِنْ جَزِيْرَةِ الْعَرَبِ

عَن أبي هُرَيْرَة قَالَ: بَيْنَا نَحْنُ فِي الْمَسْجِدِ خَرَجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «انْطَلِقُوا إِلَى يهود» فخرجنا مَعَه حَتَّى جِئْنَا بَيت الْمدَارِس فَقَامَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «يَا مَعْشَرَ يَهُودَ أَسْلِمُوا تَسْلَمُوا اعْلَمُوا أَنَّ الْأَرْضَ لِلَّهِ وَلِرَسُولِهِ وَأَنِّي أُرِيدُ أَنْ أُجْلِيَكُمْ مِنْ هَذِهِ الْأَرْضِ. فَمَنْ وَجَدَ مِنْكُمْ بِمَالِهِ شَيْئا فليبعه»

عن ابي هريرة قال: بينا نحن في المسجد خرج النبي صلى الله عليه وسلم فقال: «انطلقوا الى يهود» فخرجنا معه حتى جىنا بيت المدارس فقام النبي صلى الله عليه وسلم فقال: «يا معشر يهود اسلموا تسلموا اعلموا ان الارض لله ولرسوله واني اريد ان اجليكم من هذه الارض. فمن وجد منكم بماله شيىا فليبعه»

ব্যাখ্যা: (جِئْنَا بَيْتَ الْمِدْرَاسِ) অতঃপর আমরা যখন বায়তুল মিদরাসে আসলাম। কাযী ‘ইয়ায বলেনঃ الْمِدْرَاسِ এর দু’টি অর্থ হতে পারে-

১. শিক্ষক যিনি পাঠ দান করেন অর্থাৎ আমরা যখন আহলে কিতাবদের পাঠদানকারী শিক্ষকের বাড়ীতে আসলাম। ২. পাঠশালা, অর্থাৎ এমন জায়গা যেখানে আহলে কিতাবগণ তাদের কিতাবসমূহ পাঠ করে থাকে এবং তা শিক্ষা করে।

(فَقَامَ النَّبِىِّ ﷺ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে দাঁড়ালেন। অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখান থেমে গেলেন এবং বসে না পড়ে দাঁড়িয়েই থাকলেন।

(فَقَالَ : يَا مَعْشَرَ يَهُوْدَ أَسْلِمُوْا تَسْلَمُوا) অতঃপর তিনি বললেন, হে ইয়াহূদী সম্প্রদায়! তোমরা ইসলাম গ্রহণে করো তাহলে নিরাপত্তা লাভ করবে। অর্থাৎ ইসলাম গ্রহণ করলে দুনিয়ার অপমান এবং পরকালের শাস্তি থেকে রক্ষা পাবে।

ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ تَسْلَمُوا শব্দটি যদিও সর্বপ্রকার অনিষ্ট থেকে নিরাপত্তা লাভ করা বুঝায় তথাপি এখানে নির্দিষ্ট অর্থ উদ্দেশ্য যা অবস্থার প্রেক্ষাপট দ্বারা বুঝা যায়। অর্থাৎ তোমরা ইসলাম গ্রহণ করলে নির্বাসনের কষ্ট থেকে রেহাই পাবে। (মিরকাতুল মাফাতীহ; ‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ৩০০১)

(اِعْلَمُوْا أَنَّ الْأَرْضَ لِلّٰهِ وَلِرَسُوْلِه) জেনে রাখবে, এ জমিন আল্লাহ ও তাঁর রসূলের। অর্থাৎ এ জমিন প্রকৃতপক্ষেই আল্লাহর তিনি তার মালিক। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘‘জমিন একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার, তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা তাকে তার উত্তরাধিকার প্রদান করেন’’- (সূরা আল আ‘রাফ ৭ : ১২৮)। আর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে জমিনের মালিক।

(وَأَنِّىْ أُرِيْدُ أَنْ أُجْلِيَكُمْ مِنْ هٰذِهِ الْأَرْضِ) আমি তোমাদের অত্র এলাকা থেকে নির্বাসনে পাঠানোর ইচ্ছা করেছি অর্থাৎ আমি ‘আরব উপদ্বীপ থেকে বের করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আর এখানে ইয়াহূদী থেকে উদ্দেশ্য বানী নাযীর-কে বহিষ্কার এবং বানী নাযীর-কে হত্যা করার পর মদীনাহ্ ও তার আশেপাশের অবস্থিত ইয়াহূদীগণ উদ্দেশ্য। কেননা অত্র হাদীসের বর্ণনাকারী আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) ৬ষ্ঠ হিজরীর শেষ দিকে ইসলাম গ্রহণ করেন। আর বানী নাযীর-কে বহিষ্কার করা হয় ৪র্থ হিজরীতে এবং বানূ কুরায়যাহ্-কে হত্যা করা হয় ৫ম হিজরীতে। অতএব আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে উল্লেখিত ইয়াহূদী দ্বারা উদ্দেশ্য তারাই যারা আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) ইসলাম গ্রহণের সময় মদীনাহ্ ও তার আশেপাশে অবস্থিত ছিল। (মিরকাতুল মাফাতীহ; ‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ৩০০১)

(فَمَنْ وَجَدَ مِنْكُمْ بِمَالِه شَيْئًا فَلْيَبِعْهُ) অতএব তোমাদের মধ্যে যাদের মাল আছে তারা যেন তা বিক্রয় করে ফেলে। অর্থাৎ যে সমস্ত মাল বহন করে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় যেমন ঘর-বাড়ী ও বৃক্ষসমূহ ইত্যাদি। সেগুলো যেন তারা বিক্রয় করে ফেলে। ইমাম খত্ত্বাবী বলেনঃ অত্র হাদীস দ্বারা ইমাম বুখারী দলীল পেশ করেছেন যে, কোনো ব্যক্তিকে কিছু বিক্রয় করতে বাধ্য করা হলে সে ক্রয়-বিক্রয় বৈধ। তবে অত্র হাদীসে ইয়াহূদীদের বিক্রয়টি নিরুপায় ব্যক্তির বিক্রয়ের সাথে অধিক সাদৃশ্য রাখে। কেননা বাধ্য তো তাকে বলা যায় যে বিক্রয় করতে না চাইলেও তা বিক্রয়ে বাধ্য করা হয়। আর এখানে ইয়াহূদীরা যদি বিক্রয় না করে তা ফেলে যেতো তাহলে তাদেরকে তা বিক্রয় করতে বাধ্য করা হতো না। অতএব নিরুপায় বিক্রয় বৈধ আর বাধ্য করা হলে সে বিক্রয় বৈধ নয়।

ইমাম নববী বলেনঃ ইমাম মালিক ও শাফি‘ঈ এবং অন্যান্য ইমামগণের মতে ‘আরব উপদ্বীপ থেকে কাফিরদের বহিষ্কার করা ওয়াজিব। অতএব তাদেরকে ‘আরব উপদ্বীপে বসবাস করতে দেয়া নাজায়িয। তবে ইমাম শাফি‘ঈ এ হুকুমকে শুধুমাত্র হিজাযের জন্য খাস মনে করেন। কিন্তু তারা এ অঞ্চলে যাতায়াত করতে পারবে মক্কা ছাড়া। মক্কাতে কোনো কাফিরকে প্রবেশ করার সুযোগ দেয়া যাবে না কোনো অবস্থাতেই না। গোপনে তারা মক্কায় প্রবেশ করলে বহিষ্কার করা ওয়াজিব। এমনকি কেউ গোপনে প্রবেশ করে সেখানে মারা যাওয়ার পর দাফন করা হলে তার লাশ কবর থেকে উত্তোলন করে মক্কার বাহিরে নিয়ে দাফন করতে হবে যতক্ষণ পর্যন্ত লাশের মধ্যে কোনো পরিবর্তন বা পঁচন না ধরে। পক্ষান্তরে ইমাম আবূ হানীফাহ্ হারাম অঞ্চলে কাফিরদের প্রবেশ বৈধ মনে করেন। জুমহূর ‘আলিমদের দলীল হলো আল্লাহর বাণী : ‘‘মুশরিকগণ তো নাপাক, অতএব তারা মসজিদে হারামের নিকটবর্তী হতে পারবে না’’- (সূরা আত্ তাওবাহ্ ৯ : ২৮)। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد) 19. Jihad

পরিচ্ছেদঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ - ‘আরব ভূখণ্ড হতে ইয়াহূদীদের বিতাড়ন

৪০৫১-[২] ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন ’উমার খুৎবা দানকালে দাঁড়িয়ে বললেনঃ অবশ্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বারের ইয়াহূদীদের সাথে চুক্তির শর্তানুযায়ী তাদের খামারে কাজ করার সুযোগ দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন : আল্লাহ তা’আলা যতদিন তোমাদের এখানে রাখেন, আমরাও তোমাদেরকে রাখব। (’উমার বলেন) এখন আমি তাদেরকে বহিষ্কার করার দৃঢ়সংকল্প করেছি। অবশেষে ’উমার যখন এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন, তখন এ সংবাদ পেয়ে আবুল হুকায়ক গোত্রের এক ইয়াহূদী এসে বললঃ হে আমীরুল মু’মিনীন! আপনি কি আমাদেরকে বহিষ্কার করবেন? অথচ আপনি জানেন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে এখানে অবস্থানের অনুমতি দিয়েছেন এবং মালের বিনিময়ে আমাদের কাজ করিয়েছেন।

উত্তরে ’উমার বললেনঃ তুমি কি মনে করো যে, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সে কথাটি ভুলে গেছি? তোমাকে যখন খায়বার হতে বিতাড়িত করা হবে তখন তোমার উটগুলো তোমাকে নিয়ে রাতের পর রাত ছুটতে থাকবে, এমতাবস্থায় তোমার অবস্থা কিরূপ হবে? লোকটি বললঃ তা তো আবুল কাসিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাস্যোস্পদ উক্তি ছিল। এবার ’উমার ক্রোধান্বিত হয়ে বললেনঃ হে আল্লাহর শত্রু! সাবধান! নিঃসন্দেহে তুমি মিথ্যা বলছ। অতঃপর ’উমার তাদেরকে খায়বার হতে বিতাড়িত করলেন এবং তিনি উট ও অন্যান্য আসবাবপত্র যেমন- উটের পিঠে বসার পালান ও রশি ইত্যাদির দ্বারা তাদের ফল-ফলাদির মূল্য পরিশোধ করে দেন। (বুখারী)[1]

بَابُ إِخْرَاجِ الْيَهُوْدِ مِنْ جَزِيْرَةِ الْعَرَبِ

وَعَن ابْن عمر قَالَ: قَامَ عُمَرُ خَطِيبًا فَقَالَ: إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ عَامَلَ يَهُودَ خَيْبَرَ عَلَى أَمْوَالِهِمْ وَقَالَ: «نُقِرُّكُمْ مَا أَقَرَّكُمُ اللَّهُ» . وَقَدْ رَأَيْتُ إِجْلَاءَهُمْ فَلَمَّا أَجْمَعَ عُمَرُ عَلَى ذَلِكَ أَتَاهُ أَحَدُ بَنِي أَبِي الحُقَيقِ فَقَالَ: يَا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ أَتُخْرِجُنَا وَقَدْ أَقَرَّنَا مُحَمَّدٌ وَعَامَلَنَا عَلَى الْأَمْوَالِ؟ فَقَالَ عُمَرُ: أَظْنَنْتَ أَنِّي نَسِيتُ قَوْلُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «كَيْفَ بِكَ إِذَا أُخْرِجْتَ مِنْ خَيْبَرَ تَعْدُو بِكَ قَلُوصُكَ لَيْلَةً بَعْدَ لَيْلَةٍ؟» فَقَالَ: هَذِهِ كَانَتْ هُزَيْلَةً مِنْ أَبِي الْقَاسِمِ فَقَالَ كَذَبْتَ يَا عَدُوَّ اللَّهِ فَأَجْلَاهُمْ عُمَرُ وَأَعْطَاهُمْ قِيمَةَ مَا كَانَ لَهُمْ مِنَ الثَّمَرِ مَالًا وَإِبِلًا وَعُرُوضًا مِنْ أَقْتَابٍ وَحِبَالٍ وَغَيْرِ ذَلِكَ. رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ

وعن ابن عمر قال: قام عمر خطيبا فقال: ان رسول الله صلى الله عليه وسلم كان عامل يهود خيبر على اموالهم وقال: «نقركم ما اقركم الله» . وقد رايت اجلاءهم فلما اجمع عمر على ذلك اتاه احد بني ابي الحقيق فقال: يا امير المومنين اتخرجنا وقد اقرنا محمد وعاملنا على الاموال؟ فقال عمر: اظننت اني نسيت قول رسول الله صلى الله عليه وسلم: «كيف بك اذا اخرجت من خيبر تعدو بك قلوصك ليلة بعد ليلة؟» فقال: هذه كانت هزيلة من ابي القاسم فقال كذبت يا عدو الله فاجلاهم عمر واعطاهم قيمة ما كان لهم من الثمر مالا وابلا وعروضا من اقتاب وحبال وغير ذلك. رواه البخاري

ব্যাখ্যা: (نُقِرُّكُمْ مَا أَقَرَّكُمُ اللّٰهُ) আমরা তোমাদের (খায়বারে) ততদিন থাকতে দিবো যতদিন আল্লাহ তোমাদের থাকতে দেন। অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা যতদিন তোমাদের বহিষ্কার করার নির্দেশ না দেন ততদিন আমরা তোমাদের সেখানে থাকতে দিবো। ইবনুল মালিক (রহঃ) বলেনঃ এর অর্থ হলো যতদিন তোমরা জিয্ইয়াহ্ দিতে থাকবে ততদিন আমরা তোমাদের সেখানে থাকতে দিবো।

(وَقَدْ رَأَيْتُ إِجْلَاءَهُمْ) আমি তাদের বহিষ্কার করা মনস্থ করেছি। অর্থাৎ তাদেরকে বহিষ্কার করার মধ্যেই কল্যাণ রয়েছে বলে আমি মনে করি। এ বক্তব্যটি ‘উমার -এর।

(أَتَاهُ أَحَدُ بَنِىْ أَبِى الْحُقَيْقِ) ‘উমার -এর নিকট আবুল হুকায়ক-এর সন্তানদের মধ্য থেকে কোনো একজন আগমন করলো। অর্থাৎ তাদের নেতা অথবা তাদের মধ্যে বয়সে বড় একজন ‘উমার -এর নিকট এসে বললো :

(يَا أَمِيْرَ الْمُؤْمِنِيْنَ أَتُخْرِجُنَا وَقَدْ أَقَرَّنَا مُحَمَّدٌ وَعَامَلَنَا عَلَى الْأَمْوَالِ؟) হে আমীরুল মু’মিনীন! আপনি আমাদের বহিষ্কার করতে চান অথচ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বসবাস করার অনুমতি দিয়েছেন এবং মালের বিনিময়ে আমাদের কাজ করিয়েছেন। অর্থাৎ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের স্বীয় গৃহে থাকার বিষয়টি মেনে নিয়েছেন এবং আমাদেরকে তার জমিনে শ্রমিক নিয়োগ করেছেন। অথচ আপনি আমাদের বহিষ্কার করতে চাচ্ছেন।

(فَقَالَ عُمَرُ : أَظْنَنْتَ أَنِّىْ نَسِيْتُ قَوْلُ رَسُوْلِ اللّٰهِ ﷺ) ‘উমার বললেনঃ তুমি কি মনে করো আমি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সে কথাটি ভুলে গিয়েছি।

(كَيْفَ بِكَ إِذَا أُخْرِجْتَ مِنْ خَيْبَرَ) তোমার কি অবস্থা হবে যখন তোমাকে খায়বার থেকে বের করে দেয়া হবে? অর্থাৎ তোমাদেরকে খায়বার থেকে বহিষ্কার করা হবে, এটা তো রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এরই কথা। আর আমি তা ভুলিনি।

(فَقَالَ : هٰذِه كَانَتْ هُزَيْلَةً مِنْ أَبِى الْقَاسِمِ) তখন ইয়াহূদীবর্গ বললো : এটা তো আবুল কাসিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ঠাট্টামূলক কথা ছিল। অর্থাৎ তিনি আমাদেরকে বহিষ্কার করার উদ্দেশে এ কথা বলেননি। বরং তা বলেছিলেন হাসি তামাশামূলকভাবে।

(فَقَالَ كَذَبْتَ يَا عَدُوَّ اللّٰهِ) তখন ‘উমার বললেনঃ হে আল্লাহর দুশমন! তুমি মিথ্যা বলছো। অর্থাৎ তোমার দাবী রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঠাট্টামূলকভাবে বলেছিলেন। বাস্তবে তা সত্য নয়। বরং তিনি সঠিক কথাই বলেছিলেন। তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, তোমাদেরকে খায়বার থেকে বহিষ্কার করা হবে। (فَأَجْلَاهُمْ عُمَرُ) অতঃপর ‘উমার তাদেরকে বহিষ্কার করে দিলেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد) 19. Jihad

পরিচ্ছেদঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ - ‘আরব ভূখণ্ড হতে ইয়াহূদীদের বিতাড়ন

৪০৫২-[৩] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকালের সময় তিনটি বিষয়ে ওয়াসিয়্যাত করে যান। [১] ’আরব উপদ্বীপ হতে মুশরিকদেরকে (বিধর্মীদেরকে) বহিষ্কার করবে, [২] প্রতিনিধি বা দূতকে আমি যেভাবে আতিথেয়তা করি, তোমরাও অনুরূপভাবে করবে। ইবনু ’আব্বাস বলেনঃ তৃতীয়টির ব্যাপারে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজেই নীরব রয়েছেন, অথবা তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, অতএব তা ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ إِخْرَاجِ الْيَهُوْدِ مِنْ جَزِيْرَةِ الْعَرَبِ

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسلم أَوْصَى بِثَلَاثَةٍ: قَالَ: «أَخْرِجُوا الْمُشْرِكِينَ مِنْ جَزِيرَةِ الْعَرَبِ وَأَجِيزُوا الْوَفْدَ بِنَحْوِ مَا كُنْتُ أُجِيزُهُمْ» . قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ: وَسَكَتَ عَن الثَّالِثَة أَو قَالَ: فأنسيتها

وعن ابن عباس ان رسول الله صلى الله عليه وسلم اوصى بثلاثة: قال: «اخرجوا المشركين من جزيرة العرب واجيزوا الوفد بنحو ما كنت اجيزهم» . قال ابن عباس: وسكت عن الثالثة او قال: فانسيتها

ব্যাখ্যা: (وَأَجِيْزُوا الْوَفْدَ بِنَحْوِ مَا كُنْتُ أُجِيْزُهُمْ) ‘‘সাক্ষাৎ করতে আসা প্রতিনিধি দলকে মেহমানদারী করবে যেভাবে আমি মেহমানদারী করতাম।’’ অর্থাৎ সাক্ষাৎপ্রার্থী প্রতিনিধি দল যতদিন অবস্থান করবে ততদিন পর্যন্ত তাদের যা প্রয়োজন তা প্রদান করবে।

ইমাম নাববী বলেনঃ ‘আলিমগণ বলেন, প্রতিনিধি দলকে উপঢৌকন দেয়া এবং তাদের মেহমানদারী করার নির্দেশ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদান করেছেন তাদের মনোতুষ্টি এবং অন্যদের হৃদয় আকৃষ্ট করার এবং সফরে সাহায্য করার জন্য।

কাযী ‘ইয়ায বলেনঃ আলিমগণ বলেন যে, প্রতিনিধি দল মুসলিম অথবা কাফির যেই হোক না কেন তাদের মেহমানদারী করতে হবে। (শারহে মুসলিম ১১শ খন্ড, হাঃ ১৬৩৭)

তূরিবিশতী (রহঃ) বলেনঃ প্রতিনিধি দলের মেহমানদারী করার নির্দেশ প্রদান এজন্য করেছেন যে, প্রতিনিধি দল স্বীয় গোত্রের বার্তাবাহক। তাকে আকৃষ্ট করার মাধ্যমে তার গোত্রের হৃদয় আকৃষ্ট হবে এবং অসন্তুষ্ট হলে তার গোত্র অসন্তুষ্ট হবে। আর প্রতিনিধি দল আসে ইমামের নিকট, তাই তার কর্তব্য হলো আল্লাহর দেয়া সম্পদ জনগণের কল্যাণে ব্যবহার করা। আর প্রতিনিধি দলের সম্মান ও মেহমানদারীর মধ্যে জনগণের কল্যাণ নিহিত।

(وَسَكَتَ عَنِ الثَّالِثَةِ) তৃতীয় বিষয় থেকে তিনি নীরব থেকেছেন। অর্থাৎ ইবনু ‘আব্বাস বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বক্তব্যের শুরুতে যদিও বলেছিলেন আমি তোমাদেরকে তিনটি বিষয়ে উপদেশ দিচ্ছি কিন্তু তৃতীয় বিষয়টি তিনি আর বলেননি। অথবা ইবনু ‘আব্বাস বলেছেন, তৃতীয় বিষয়টি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো বলেছিলেন কিন্তু আমাকে তা ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ আমার তা স্মরণ নেই।

ইমাম নববী বলেনঃ কাযী ‘ইয়ায বলেছেন, হতে পারে যে, তৃতীয় বিষয়টি ছিল এই ‘‘আমার কবরকে তোমার পূজার সামগ্রী তথা পূজার স্থানে পরিণত করো না।’’

এ বিষয়টি ইমাম মালিক তার মুয়াত্ত্বা গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন ইয়াহূদীদের বহিষ্কারের বিষয়ের সাথে আর ঐ হাদীসটির বর্ণনাকারী হলেন ‘উমার। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد) 19. Jihad

পরিচ্ছেদঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ - ‘আরব ভূখণ্ড হতে ইয়াহূদীদের বিতাড়ন

৪০৫৩-[৪] জাবির ইবনু ’আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। ’উমার ইবনুল খত্ত্বাব আমাকে বলেছেন, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ নিশ্চয় আমি ’আরব ভূখণ্ড হতে ইয়াহূদী ও নাসারাদেরকে বহিষ্কার করব। এমনকি মুসলিম ছাড়া আর কাউকে এখানে রাখব না। (মুসলিম)[1]

অপর এক বর্ণনাতে আছে, ইনশা-আল্লা-হ আমি যদি বেঁচে থাকি নিশ্চয় ’আরব ভূখণ্ড হতে ইয়াহূদী ও নাসারাদেরকে বের করে দেব।

بَابُ إِخْرَاجِ الْيَهُوْدِ مِنْ جَزِيْرَةِ الْعَرَبِ

وَعَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ قَالَ: أَخْبَرَنِي عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «لأخرِجنَّ اليهودَ والنصَارى من جزيرةِ الْعَرَب حَتَّى لَا أَدَعَ فِيهَا إِلَّا مُسْلِمًا» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ وَفِي رِوَايَةٍ: «لَئِنْ عِشْتُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ لَأُخْرِجَنَّ الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى مِنْ جَزِيرَةِ الْعَرَبِ»
الْفَصْلُ الثَّانِي
لَيْسَ فِيهِ إِلَّا حَدِيثُ ابْنِ عَبَّاسٍ «لَا تَكُونُ قِبْلَتَانِ» وَقَدْ مَرَّ فِي بَاب الْجِزْيَة

وعن جابر بن عبد الله قال: اخبرني عمر بن الخطاب رضي الله عنه انه سمع رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: «لاخرجن اليهود والنصارى من جزيرة العرب حتى لا ادع فيها الا مسلما» . رواه مسلم وفي رواية: «لىن عشت ان شاء الله لاخرجن اليهود والنصارى من جزيرة العرب» الفصل الثاني ليس فيه الا حديث ابن عباس «لا تكون قبلتان» وقد مر في باب الجزية

ব্যাখ্যা: (حَتّٰى لَا أَدَعَ فِيهَا إِلَّا مُسْلِمًا) ‘‘সেখানে মুসলিম ব্যতীত অন্য কাউকে থাকতে দিবো না।’’ অর্থাৎ ‘আরব উপদ্বীপ একমাত্র মুসলিমদের আবাসভূমি। সেখানে কোনো অমুসলিম থাকবে না।

অন্য এক বর্ণনায় আছে, (لَئِنْ عِشْتُ إِنْ شَاءَ اللّٰهُ لَأُخْرِجَنَّ الْيَهُوْدَ وَالنَّصَارٰى مِنْ جَزِيْرَةِ الْعَرَبِ)

আমি যদি বেঁচে থাকি তাহলে আল্লাহ চাহে তো ‘আরব উপদ্বীপ থেকে সকল ইয়াহূদী নাসারাদের বহিষ্কার করে দিবো। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৯: জিহাদ (كتاب الجهاد) 19. Jihad
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৪ পর্যন্ত, সর্বমোট ৪ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে