পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মদ পানের দণ্ডবিধি
৩৬১৭-[৪] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মদ পান করে তাকে চাবুক মারো। যদি সে (পর্যায়ক্রমে) চতুর্থবারও মদ পান করে, তাহলে তাকে হত্যা কর। রাবী বলেন, অতঃপর একদিন জনৈক ব্যক্তিকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত করা হলো, যে চতুর্থবার মদ পান করেছে। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে প্রহার করলেন কিন্তু হত্যা করেননি। (তিরমিযী)[1]
عَنْ جَابِرٌ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ شَرِبَ الْخَمْرَ فَاجْلِدُوهُ فَإِنْ عَادَ فِي الرَّابِعَةِ فَاقْتُلُوهُ» قَالَ: ثُمَّ أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَعْدَ ذَلِكَ بِرَجُلٍ قَدْ شَرِبَ فِي الرَّابِعَةِ فَضَرَبَهُ وَلَمْ يقْتله. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
ব্যাখ্যা: মুল্লা ‘আলী কারী বলেনঃ হত্যা করা উদ্দেশ্য কঠোরভাবে শাস্তি প্রদান করা। বিষয়টি ধমকানো উদ্দেশ্য, কেননা পূর্বের এবং পরের যুগের কোনো ‘আলিমই মদ্যপায়ীকে হত্যা করতে আদেশ দেননি। অথবা কারো ভাষ্যমতে ইসলামে প্রাথমিক যুগে এ বিধান ছিল পরে তা মানসূখ তথা রহিত হয়েছিল। আমি ভাষ্যকার বলি, ইমাম তিরমিযী দ্বিতীয় মত প্রাধান্য দিয়েছেন। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১৪৪৪)
ইমাম নববী বলেনঃ সকল মুসলিম মদ্যপান হারাম হওয়ার ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেছেন আর মদ্যপানকারীর ওপর দণ্ড প্রয়োগ করা ওয়াজিব চাই কম পান করুক বা বেশী পান করুক। আর বার বার পুনরাবৃত্তি করলেও হত্যা করা যাবে না।
আর কাযী ‘ইয়ায ও স্বল্প সংখ্যক ‘উলামাহ্ বলেছিল হত্যা করা হবে চতুর্থবারে মদ পান করলে। এ হাদীসের আলোকে এটা বাতিল মত ইজমা বিরোধী আর এটা রহিত হয়েছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ হাদীস দ্বারা
«لَا يَحِلُّ دَمُ امْرِئٍ مُسْلِمٍ إِلَّا بِإِحْدَى ثَلَاثٍ»
কোনো মুসলিমের রক্ত হালাল না তবে তিনটি কারণ পাওয়া গেলে হত্যা বৈধ। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মদ পানের দণ্ডবিধি
৩৬১৮-[৫] আর আবূ দাঊদ এ হাদীসটি কবীসাহ্ ইবনু যুআয়ব হতে বর্ণনা করেন।[1]
وَرَوَاهُ أَبُو دَاوُد عَن قبيصَة بن دؤيب
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মদ পানের দণ্ডবিধি
৩৬১৯-[৬] এছাড়া তিরমিযী ও আবূ দাঊদ-এর অপর বর্ণনাতে এবং নাসায়ী, ইবনু মাজাহ্ এবং দারিমীর বর্ণনাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একদল সাহাবী রয়েছে, যাদের মধ্যে ইবনু ’উমার, মু’আবিয়াহ্, আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) ও শারীদ প্রমুখ এ হাদীস ’তাকে হত্যা করে দাও’ পর্যন্ত বর্ণিত হয়েছে।[1]
وَفِي أُخْرَى لَهُمَا وَلِلنَّسَائِيِّ وَابْنِ مَاجَهْ وَالدَّارِمِيِّ عَنْ نَفَرٍ مِنْ أَصْحَابِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْهُمُ ابْنُ عُمَرَ وَمُعَاوِيَةُ وَأَبُو هُرَيْرَة والشريد إِلَى قَوْله: «فَاقْتُلُوهُ»
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মদ পানের দণ্ডবিধি
৩৬২০-[৭] ’আবদুর রহমান ইবনু আযহার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এমন একটি ঘটনা যা এখনো আমি চোখে দেখছি। একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এমন ব্যক্তিকে আনা হলো যে মদ পান করেছিল। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) লোকেদেরকে বললেনঃ তোমরা একে প্রহার করো। সুতরাং তাদের কেউ জুতার দ্বারা, আবার কেউ লাঠির দ্বারা এবং কেউ খেজুরের ডাল দ্বারা লোকটিকে প্রহার করল। রাবী ইবনু ওয়াহব বলেনঃ مِيْتَخَةْ এর অর্থ হলো- খেজুরের কাঁচা ডাল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জমিন থেকে কিছু মাটি উঠিয়ে তার মুখে নিক্ষেপ করলেন। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ الْأَزْهَرِ قَالَ: كَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذْ أُتِيَ بِرَجُلٍ قَدْ شَرِبَ الْخَمْرَ فَقَالَ لِلنَّاسِ: «اضْرِبُوهُ» فَمِنْهُمْ مَنْ ضَرَبَهُ بِالنِّعَالِ وَمِنْهُمْ مَنْ ضَرَبَهُ بِالْعَصَا وَمِنْهُمْ مَنْ ضَرَبَهُ بِالْمِيتَخَةِ. قَالَ ابْنُ وَهْبٍ: يَعْنِي الْجَرِيدَةَ الرَّطْبَةَ ثُمَّ أَخَذَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تُرَابًا مِنَ الْأَرْضِ فَرَمَى بِهِ فِي وجهِه. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছু মাটি তুলে তার মুখে নিক্ষেপ করলেন নিন্দা ও ভৎর্সনার জন্য সে যা পাপ কাজ করেছে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৪৪৭৭)
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মদ পানের দণ্ডবিধি
৩৬২১-[৮] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন জনৈক ব্যক্তিকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আনা হলো, যে মদ পান করেছে। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমরা তাকে প্রহার করো। সুতরাং আমাদের কেউ তাকে হাত দ্বারা, কেউ চাদর দ্বারা, কেউ জুতার দ্বারা প্রহার করল। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ এরূপ কাজের জন্য তোমরা তাকে নিন্দা ও ভৎর্সনা করো। সুতরাং লোকেরা তার সম্মুখপানে তিরস্কার করতে বলল, তুমি কি আল্লাহকে ভয় কর না, তোমার কি আল্লাহর ’আযাবের ভয় নেই। তুমি এরূপ অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে আসতে লজ্জাবোধ হলো না? অতঃপর জনৈক ব্যক্তি বলল, আল্লাহ তোমাকে হেয় ও লাঞ্ছিত করুক। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এরূপ বলো না (বদ্দু’আ করো না)। এরূপ বলে তার ওপর শায়ত্বনকে প্রাধান্য দিও না; বরং তোমরা এভাবে বলো- হে আল্লাহ! তাকে ক্ষমা করে দাও। হে আল্লাহ! তার প্রতি রহম করো। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أُتِيَ بِرَجُلٍ قَدْ شربَ الخمرَ فَقَالَ: «اضْرِبُوهُ» فَمِنَّا الضَّارِبُ بِيَدِهِ وَالضَّارِبُ بِثَوْبِهِ وَالضَّارِبُ بِنَعْلِهِ ثُمَّ قَالَ: «بَكِّتُوهُ» فَأَقْبَلُوا عَلَيْهِ يَقُولُونَ: مَا اتَّقَيْتَ اللَّهَ مَا خَشِيتَ اللَّهَ وَمَا اسْتَحْيَيْتَ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ بَعْضُ الْقَوْمِ: أَخْزَاكَ اللَّهُ. قَالَ: لَا تَقُولُوا هَكَذَا لَا تُعِينُوا عَلَيْهِ الشَّيْطَانَ وَلَكِنْ قُولُوا: اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ اللَّهُمَّ ارْحَمْهُ . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: কাযী ‘ইয়ায বলেনঃ তার ব্যাপারে শায়ত্বনের সাহায্য করো না- এ কথার অর্থ হলো যদি আল্লাহর রহমাত থেকে বঞ্চিত হয় তবে শায়ত্বন তার ওপর প্রাধান্য বিস্তার করবে ফলে সে আরো অধিক পাপে লিপ্ত হবে। অথব যখন সে আল্লাহর রহমাত ও দয়া থেকে নিরাশ ও হতাশ হয়ে যাবে তখন আরো জঘন্যতম পাপ করতে কুণ্ঠাবোধ করবে না। আর শায়ত্বন এটাই চায়। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মদ পানের দণ্ডবিধি
৩৬২২-[৯] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি মদ্যপায়ী হয়ে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে রইল। তখন লোকেরা তাকে এমন অবস্থায় পেল যে, সে রাস্তায় মাতলামী করছে। অতঃপর লোকেরা তাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট ধরে আনতে লাগল। অতঃপর সে যখন ’আব্বাস -এর ঘরের সন্নিকটবর্তী হলো, তখন সে লোকেদের হাত থেকে ছুটে গিয়ে ’আব্বাস -এর ঘরে প্রবেশ করে তাঁকে জড়িয়ে ধরল। এমতাবস্থায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এতদসম্পর্কে বর্ণনা করা হলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হেসে দিলেন এবং বললেনঃ সে কি এমন (অপরাধ) করেছে? অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার ব্যাপারে কোনো নির্দেশ দেননি। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: شَرِبَ رَجُلٌ فَسَكِرَ فَلُقِيَ يَمِيلُ فِي الْفَجِّ فَانْطُلِقَ بِهِ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمَّا حَاذَى دَارَ الْعَبَّاسِ انْفَلَتَ فَدَخَلَ عَلَى الْعَبَّاسِ فَالْتَزَمَهُ فَذَكَرَ ذَلِكَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فضحكَ وَقَالَ: «أفعَلَها؟» وَلم يأمرْ فيهِ بشيءٍ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
ব্যাখ্যা: খত্ত্বাবী (রহঃ) বলেনঃ এটা দলীল হিসেবে সাব্যস্ত যে, মদপানের দণ্ড সবচেয়ে হালকা আর সকল কুকর্মের মধ্যে এর ভয়াবহতা হালকা।
আর সম্ভাবনা রয়েছে ‘আব্বাস -এর ঘরে প্রবেশ করার পরও তাকে হাদ্দ কায়িমের নির্দেশ দেয়া হয়নি, কেননা মদ পান করার তার স্বীকারোক্তি অথবা সাক্ষী দ্বারা প্রমাণিত হয়নি শুধু মাতলামীর বর্ণনা দ্বারা হাদ্দ প্রযোজ্য হয় না। (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৪৪৬৬)