পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - মদ পানের দণ্ডবিধি

ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ الخمر (খামর) আভিধানিক অর্থ হলো আচ্ছন্ন করা। মহিলাদের মাথা, চুল ইত্যাদি যে কাপড় দ্বারা আবৃত বা আচ্ছাদিত করা হয় তাকে الخمر ’’খামর’’ বলা হয় আর এজন্য খামর নাম রাখা হয়েছে যে মদ পানের মাধ্যমে জ্ঞান ও বুদ্ধি আচ্ছাদিত হয়। কারো মতে মদ হলো যে জিনিসই মাদকতা সৃষ্টি করে। মদ তৈরি করা হয় আঙ্গুর ও খেজুর থেকে। ইমাম তিরমিযী বর্ণনা করেন :

عَنْ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ: صَنَعَ لَنَا عَبْدُ الرَّحْمٰنِ بْنُ عَوْفٍ طَعَامًا فَدَعَانَا وَسَقَانَا مِنَ الْخَمْرِ فَأَخَذَتِ الْخَمْرُ مِنَّا، وَحَضَرَتِ الصَّلَاةُ فَقَدَّمُونِىْ فَقَرَأْتُ: قُلْ يٰاَيُّهَا الْكَافِرُوْنَ لَا أَعْبُدُ مَا تَعْبُدُوْنَ وَنَحْنُ نَعْبُدُ مَا تَعْبُدُوْنَ. قَالَ: فَأَنْزَلَ اللّٰهُ تَعَالٰى يٰاَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَقْرَبُوا الصَّلَاةَ وَأَنْتُمْ سُكَارٰى حَتّٰى تَعْلَمُوْا مَا تَقُولُوْنَ

’আলী ইবনু আবূ তালিব থেকে বর্ণিত। ’আবদুর রহমান বিন ’আওফ খানার আয়োজন করেন এবং আমাদেরকে দা’ওয়াত দিলে আমাদেরকে মদও পান করালেন। মদের ক্রিয়া আমাদেরকে আক্রমণ করল। এমতাবস্থায় সালাতের সময়ও হলো তারা আমাকে ইমামতির দায়িত্ব দিলো আমি সূরা কাফিরূন পড়তে লাগলাম। আমি তাতে পড়লাম, অর্থাৎ- ’’তুমি বল, হে কাফির সম্প্রদায়! আমি ’ইবাদাত করি না, তোমরা যার ’ইবাদাত কর, আর আমরা তার ’ইবাদাত করছি তোমরা যার ’ইবাদাত করছো।’’ তখন আল্লাহ এ আয়াত নাযিল করলেন, অর্থাৎ ’’হে ঈমানদারগণ! তোমরা যখন নেশাগ্রস্ত থাক, তখন সালাতের ধারে-কাছেও যেও না। যতক্ষণ না বুঝতে সক্ষম হও যা কিছু তোমরা বলছ।’’ (সূরা আন্ নিসা ৪ : ৪৩)

ইবনু হুমাম বলেনঃ যদিও নেশাগ্রস্ত ব্যক্তি মুরতাদ হয় তার স্ত্রী তালাক হয় না, কেননা কুফরীর বিষয়টি বিশ্বাস ও অবজ্ঞাকরণের সাথে সংশ্লিষ্ট। এজন্য কুফরীর হুকুম লাগানো হয়েছে রসিকতাকারীকে বিশ্বাসের সাথে। সুতরাং এটা স্পষ্ট যে, ’আলী (রাঃ)-এর সূরা আল কাফিরূন-এর আয়াতটির তিলাওয়াত ছিল ভুলবশত বা অনাকাঙ্ক্ষিত, ইচ্ছাকৃত না।

এ অধ্যায়ের সংশ্লিষ্ট মাসআলার মধ্যে অন্যতম একটি মাস্আলাহ্ হলো যদি কেউ মদ পান করে এবং গন্ধ চলে যাওয়ার পর স্বীকার করে তাহলে তার ওপর হাদ্দ প্রয়োগ করা হবে না- ইমাম আবূ হানীফাহ্ ও ইউসুফ-এর মতে। তবে মুহাম্মাদের মতে হাদ্দ প্রয়োগ হবে। অনুরূপ গন্ধ চলে যাওয়ার পর কেউ সাক্ষী দেয় তাহলেও হাদ্দ প্রয়োগ হবে না। আর মাতাল অবস্থায় হাদ্দ প্রয়োগ করা যাবে না জ্ঞান ফিরে আসার পর হাদ্দ প্রয়োগ করতে হবে। এ ব্যাপারে চার ইমামই ঐকমত্য। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


৩৬১৪-[১] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদ পানের জন্য খেজুর গাছের ডাল ও জুতা দ্বারা প্রহার করেছেন। আর আবূ বকর চল্লিশ চাবুক মেরেছেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ حَدِّ الْخَمْرِ

عَنْ أَنَسٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ضَرَبَ فِي الْخَمْرِ بِالْجَرِيدِ والنِّعالِ وجلَدَ أَبُو بكرٍ رَضِي الله عَنهُ أربعينَ

عن انس ان النبي صلى الله عليه وسلم ضرب في الخمر بالجريد والنعال وجلد ابو بكر رضي الله عنه اربعين

ব্যাখ্যা: রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদ পানকারীকে খেজুর গাছের ডাল ও জুতা দ্বারা প্রহার করেছেন। এটা প্রমাণ করে নির্ধারিত সংখ্যা ছাড়া প্রহার করেছেন। আগত হাদীসে চল্লিশ বেত্রাঘাতের কথা এসেছে প্রথমে সংখ্যা উল্লেখ বলা হয়নি পরবর্তীতে সংখ্যা বলা হয়েছে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৭: দণ্ডবিধি (كتاب الحدود) 17. Prescribed Punishments

পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - মদ পানের দণ্ডবিধি

৩৬১৫-[২] অপর এক বর্ণনায়, আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদ পানকারীকে জুতা ও খেজুরের ডাল দ্বারা চল্লিশবার প্রহার করতেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ حَدِّ الْخَمْرِ

وَفِي رِوَايَة عَنْهُ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَضْرِبُ فِي الْخَمْرِ بِالنِّعَالِ وَالْجَرِيدِ أَرْبَعِينَ

وفي رواية عنه: ان النبي صلى الله عليه وسلم كان يضرب في الخمر بالنعال والجريد اربعين

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৭: দণ্ডবিধি (كتاب الحدود) 17. Prescribed Punishments

পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - মদ পানের দণ্ডবিধি

৩৬১৬-[৩] সায়িব ইবনু ইয়াযীদ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে, আবূ বকর এবং ’উমার (রাঃ)-এর খিলাফাতের প্রারম্ভে মদ্যপায়ীকে আনা হত। তখন আমরা আমাদের হাত, জুতা এবং চাদর দ্বারা প্রহার করতাম। কিন্তু ’উমার -এর খিলাফাতের শেষ দিকে তিনি চল্লিশ চাবুক মারতেন। পরিশেষে তারা অতিমাত্রায় মদ্যপানের দরুন ব্যাপকভাবে পাপকার্যে জড়িয়ে পড়ল, তখন তিনি আশি চাবুক মারেন। (বুখারী)[1]

بَابُ حَدِّ الْخَمْرِ

وَعَنِ السَّائِبِ بْنِ يَزِيدَ قَالَ: كَانَ يُؤْتَى بِالشَّارِبِ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَإِمْرَةِ أَبِي بَكْرٍ وَصَدْرًا مِنْ خِلَافَةِ عُمَرَ فَنَقُومُ عَلَيْهِ بِأَيْدِينَا وَنِعَالِنَا وَأَرْدِيَتِنَا حَتَّى كَانَ آخِرُ إِمْرَةِ عُمَرَ فَجَلَدَ أَرْبَعِينَ حَتَّى إِذَا عَتَوْا وَفَسَقُوا جَلَدَ ثَمَانِينَ. رَوَاهُ البُخَارِيّ

وعن الساىب بن يزيد قال: كان يوتى بالشارب على عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم وامرة ابي بكر وصدرا من خلافة عمر فنقوم عليه بايدينا ونعالنا وارديتنا حتى كان اخر امرة عمر فجلد اربعين حتى اذا عتوا وفسقوا جلد ثمانين. رواه البخاري

ব্যাখ্যা: (حَتّٰى كَانَ اٰخِرُ إِمْرَةِ عُمَرَ فَجَلَدَ أَرْبَعِينَ) দৃশ্যত নির্ধারিত চল্লিশ বেত্রাঘাত সংঘটিত হয়েছিল। ‘উমার -এর শাসনামলে শেষের দিকে আর খালিদ বিন ওয়ালীদ-এর ঘটনা আশি বেত্রাঘাত। তা ছিল ‘উমার -এর শাসনামলের মাঝখানে। কেননা খালিদ বিন ওয়ালীদ ‘উমার -এর মাঝামাঝি শাসনামালে মারা গেছেন।

(وَفَسَقُوْا) তথা আনুগত্য থেকে বের হয়েছে আর নাসায়ী বর্ণনা «فَلَمْ يَنْكُلُوا» তথা আহবানে সাড়া দেয়নি।

(جَلَدَ ثَمَانِينَ) অর্থাৎ আশি বেত্রাঘাত করলেন। ‘‘মুসনাদ ‘আব্দুর রাযযাক’’-এ সায়িব হতে সহীহ সানাদে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে, ‘উমার প্রথমে চল্লিশ বেত্রাঘাত চালু করেন যখন তাদেরকে দেখলেন তারা বিরত হচ্ছে না তখন ষাট বেত্রাঘাত চালু করেন। এরপরেও যখন তারা বিরত হলো না তখন আশি বেত্রাঘাত চালু করেন এবং বলেন, এটা সর্বনিম্ন হাদ্দ। (ফাতহুল বারী ১২শ খন্ড, হাঃ ৬৭৭৯)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৭: দণ্ডবিধি (كتاب الحدود) 17. Prescribed Punishments
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৩ পর্যন্ত, সর্বমোট ৩ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে