পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - মানৎ
৩৪২৬-[১] আবূ হুরায়রাহ্ ও ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তারা উভয়ে বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা মানৎ করো না। কেননা মানৎ তাকদীরের কোনই পরিবর্তন করতে পারে না। অবশ্য এর দ্বারা কৃপণের ব্যয়-নির্বাহ হয় মাত্র। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابٌ فِى النُّذُوْرِ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ وَابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ قَالَا: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تَنْذُرُوا فَإِنَّ النَّذْرَ لَا يُغْنِي مِنَ الْقَدَرِ شَيْئًا وَإِنَّمَا يُسْتَخْرَجُ بِهِ من الْبَخِيل»
ব্যাখ্যা: (إِنَّه لَا يَرُدُّ مِنَ الْقَدَرِ شَيْئًا) মানৎ তাকদীরের কিছু্ পরিবর্তন করতে পারে না। মাযিরী বলেনঃ বাক্যটি নেতিবাচক বলার উদ্দেশ্য। সম্ভবত মানৎ করলে ব্যক্তির জন্য পূরণ অপরিহার্য হয়ে উঠে। ফলে উৎসাহ ব্যতিরেকে তার জন্য তা বাস্তবায়ন করা খুবই কষ্টকর হয়। এও সম্ভাবনা রয়েছে, নেকির উদ্দেশ্যই মানৎকে নিজের জন্য অপরিহার্য করেছে কোনো প্রকার বিনিময় ছাড়াই, ফলে প্রতিদান কম হয়। আর ‘ইবাদাত কেবলমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্য হয়।
সম্ভবনা রয়েছে মানৎ না করার অনেক অজ্ঞ ব্যক্তি মনে করে মানতের দ্বারা তাকদীর পরিবর্তন হয় এবং তাকদীর অর্জনে বাধা দান করে- অজ্ঞদের এই ভ্রান্ত ‘আক্বীদার আশঙ্কায় এটার কারণে মূলত নিষেধ করা হয়েছে। হাদীসের ভাষ্য এটার সমর্থন করে। [আল্লাহই বেশী ভালো জানেন] (শারহে মুসলিম ১১শ খন্ড, হাঃ ১৬৪০)
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - মানৎ
৩৪২৭-[২] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ তা’আলার আনুগত্যের মানৎ করে, সে যেন অবশ্যই তা আদায় করে। আর যে ব্যক্তি তাঁর নাফরমানীর মানৎ করে, সে যেন অবশ্যই তা না করে। (বুখারী)[1]
بَابٌ فِى النُّذُوْرِ
وَعَنْ عَائِشَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ نَذَرَ أَنْ يُطِيعَ اللَّهَ فَلْيُطِعْهُ وَمَنْ نَذَرَ أَنْ يَعْصِيَهُ فَلَا يَعْصِهِ» . رَوَاهُ البُخَارِيّ
ব্যাখ্যা: (قَالَ : مَنْ نَذَرَ أَنْ يُطِيعَ اللّٰهَ فَلْيُطِعْهُ) যে ব্যক্তি আল্লাহর আনুগত্য করার মানৎ করে সে যেন অবশ্যই তা করে, মানৎ ব্যতিরেকেই আল্লাহর আনুগত্য ওয়াজিব। সুতরাং মানৎকে যখন দৃঢ় করে নিবে সঠিকভাবে তা ওয়াজিব হবে না।
শারহুস্ সুন্নাতে রয়েছে, যে হাদীস দলীল হিসেবে সাব্যস্ত হয়, যে আনুগত্য করার মানৎ করে তা বাস্তবায়ন করা আবশ্যিক হয়ে উঠে যদিও কোনো কিছুর সংশ্লিষ্ট না হয় আর যে পাপের মানৎ করে তা পুরা করা বৈধ না আর কাফফারা আদায় করা আবশ্যিক না যদি তাতে কাফফারা থাকে। তবে আমি ভাষ্যকার বলি, কাফফারা সাব্যস্ত হওয়া না হওয়াতে হাদীসে দলীল সাব্যস্ত হয় না, হুকুম ‘আম্ভাবে বর্ণিত হয়েছে। মুসলিম-এর হাদীসে كَفَّارَةُ النَّذْرِ كَفَّارَةُ الْيَمِينِ মানতের কাফফারা হলো কসমের কাফ্ফারার মতো।
আরও সুস্পষ্ট হাদীস যা আবূ দাঊদ, তিরমিযী নাসায়ী, ইবনু মাজাহ্ ও অন্যান্যরা বর্ণনা করেছেন। «لَا نَذْرَ فِي مَعْصِيَةٍ وَكَفَّارَتُه كَفَّارَةُ يَمِينٍ» পাপ কাজে কোনো মানৎ নেই এবং তার কাফ্ফারা কসমের কাফ্ফারার মতো, এর উপর ভিত্তি করে কেউ যদি মানৎ করে ঈদের দিনে সওম পালন করবে তার ওপর কোনো কিছু ওয়াজিব হবে না।
কেউ যদি তার সন্তানকে কুরবানী করার মানৎ করে তা বাতিল বলে গণ্য হবে- এ মতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিশাল সংখ্যক সাহাবী গেছেন আর এটা মালিক ও শাফি‘ঈ-এরও বক্তব্য। আর যে কেউ মানৎ করে ‘আম্ভাবে সে বলে আমার ওপর মানৎ বা আমি মানৎ করলাম আর কোনো কিছু উল্লেখ করল না তার ওপর কসমের কাফফারা হবে। যেমন ‘উমার বিন ‘আমির-এর হাদীস,
قَالَ رَسُولُ اللّٰهِ - ﷺ- : كَفَّارَةُ النَّذْرِ إِذَا لَمْ يُسَمِّ كَفَّارَةُ الْيَمِينِ
মানতের কাফফারা যখন তা উল্লেখ করা হয় না তা কসমের কাফফারা হবে।
অনুরূপ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, مَنْ نَذَرَ وَلَمْ يُسَمِّه، فَكَفَّارَتُه كَفَّارَةُ يَمِينٍ، وَمَنْ نَذَرَ شَيْئًا لَا يُطِيقُه فَكَفَّارَتُه كَفَّارَةُ يَمِينٍ যে মানৎ করে এবং তা উল্লেখ করল না তার কাফফারা হলো কসমের কাফ্ফারার মতো আর সে কোনো মানৎ করল আর তা বাস্তবায়নে সক্ষম না, তার কাফফারা কসমের কাফ্ফারার মতো। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - মানৎ
৩৪২৮-[৩] ’ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ গুনাহর কাজের মানৎ পূরণ করতে নেই। আর যে জিনিসের মালিক বান্দা নয়, এরূপ জিনিসের মানৎ করলে তাও পূর্ণ করতে হয় না। (মুসলিম)[1]
অপর বর্ণনায় আছে, আল্লাহর নাফরমানী হয় এমন প্রত্যেক কাজে মানৎ বাস্তবায়িত হয় না।
بَابٌ فِى النُّذُوْرِ
وَعَنْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا وَفَاءَ لِنَذْرٍ فِي مَعْصِيَةٍ وَلَا فِيمَا لَا يَمْلِكُ الْعَبْدُ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ وَفِي رِوَايَةٍ: «لَا نَذْرَ فِي مَعْصِيّة الله»
ব্যাখ্যা: গুনাহ হয় এমন কাজের মানৎ পুরা করতে নেই, কেননা তা মানতেই সংঘটিত হয় না। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - মানৎ
৩৪২৯-[৪] ’উকবা ইবনু ’আমির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মানতের কাফফারা শপথের কাফফারার ন্যায়। (মুসলিম)[1]
بَابٌ فِى النُّذُوْرِ
وَعَن عقبَة بن عَامر عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «كَفَّارَةُ النَّذْرِ كَفَّارَةُ الْيَمِينِ» . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
ব্যাখ্যা: (كَفَّارَةُ النَّذْرِ كَفَّارَةُ الْيَمِينِ) ‘‘মানতের কাফফারা হলো শপথের কাফ্ফারার মতো’’ বাক্যটির উদ্দেশে ‘উলামারা মতানৈক্য করেছেন। জুমহূরের ভাষ্য হলো, এটা জিদের মানতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যেমন কোনো মানুষ মায়েদের সাথে কথা না বলার ইচ্ছা করেছে। উদাহরণ স্বরূপ আমি যদি যায়দ-এর সাথে কথা বলি, তাহলে আমার ওপর অমুক বিষয় বর্তাবে। অতঃপর সে কথা বলল তাহলে তার ইচ্ছাধীন রয়েছে ইচ্ছা করলে কসমের কাফফারা আদায় করবে অথবা সে নিজের যা ধার্য করেছে তা আদায় করবে। আর এটাই আমাদের নিকট সহীহ মাযহাব। (শারহে মুসলিম ১১শ খন্ড, হাঃ ১৬৪৫)
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - মানৎ
৩৪৩০-[৫] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুৎবা প্রদান করছিলেন। এমন সময় দেখলেন, এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে আছে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলেন। লোকেরা বলল, তিনি আবূ ইসরাঈল। সে মানৎ করেছে যে, দাঁড়িয়ে থাকবে বসবে না, ছায়ায় থাকবে না এবং কথাবার্তা বলবে না এবং সিয়ামরত থাকবে। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা তাকে বলে দাও, সে যেন অবশ্যই কথা বলে এবং ছায়ায় থাকে ও বসে, আর সিয়াম পালন করে। (বুখারী)[1]
بَابٌ فِى النُّذُوْرِ
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: بَيْنَا النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَخْطُبُ إِذا هُوَ بِرَجُل قَائِم فَسَأَلَهُ عَنْهُ فَقَالُوا: أَبُو إِسْرَائِيلَ نَذَرَ أَنْ يَقُومَ وَلَا يَقْعُدَ وَلَا يَسْتَظِلَّ وَلَا يَتَكَلَّمَ وَيَصُومَ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مُرُوهُ فَلْيَتَكَلَّمْ وَلْيَسْتَظِلَّ وَلْيَقْعُدْ وَلْيُتِمَّ صَوْمَهُ» . رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ
ব্যাখ্যা: হাদীসের ভাষ্যমতে, বৈধ বিষয়ে নিশ্চুপ থাকা আল্লাহর আনুগত্য নয়। আবূ দাঊদ-এর হাদীস ‘আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত, (صمت يَوْم إِلَى اللَّيْلِ) দিন হতে রাত্রি পর্যন্ত নিরবতা থাকা বৈধ না। আর আবূ বাকর সিদ্দীক নির্দিষ্ট একজন মহিলাকে বলেছিলেন, নিশ্চুপ থাকা জাহিলী প্রথা। হাদীসে আরও সাব্যস্ত হয়, মানুষ যা কিছু দ্বারা কষ্ট পায় যেমন খালি পায়ে হাঁটা, রৌদ্রে বসে থাকা আল্লাহর আনুগত্যের অন্তর্ভুক্ত নয়। অতএব এটা দ্বারা মানৎ বাস্তবায়ন হবে না। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ ইসরাঈল-কে অন্যান্য কাজগুলো ছাড়া সওম পুরা করতে বলেছেন। কেননা তাতে তার কষ্ট হবে না, আর আদেশ করেছেন বসতে, কথা বলতে এবং ছায়া গ্রহণ করতে।
কুরতুবী বলেনঃ জুমহূরদের জন্য এ হাদীসটি সুস্পষ্ট দলীল পাপের কাজে এবং এমন কাজে অনুগত্য নেই তাতে মানৎ করতে কাফফারা ওয়াজিব করে না। ইমাম মালিক বলেনঃ আমি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কাফ্ফারার আদেশের বিষয়টি পাইনি। (ফাতহুল বারী ১১শ খন্ড, হাঃ ৬৭০৪)
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - মানৎ
৩৪৩১-[৬] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক বৃদ্ধকে দেখলেন যে, তার দুই পুত্রের কাঁধে ভর দিয়ে চলছে। তখন জিজ্ঞেস করলেন, লোকটির কি হয়েছে? লোকেরা বলল, সে মানৎ করেছে যে, পায়ে হেঁটে বায়তুল্লাহ পর্যন্ত যাবে। এতদশ্রবণে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এই লোককে কষ্ট দেয়া আল্লাহ তা’আলার নিষ্প্রয়োজন। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে সওয়ারীতে আরোহণের নির্দেশ দিলেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابٌ فِى النُّذُوْرِ
وَعَنْ أَنَسٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَأَى شَيْخًا يُهَادَى بَيْنَ ابْنَيْهِ فَقَالَ: «مَا بَالُ هَذَا؟» قَالُوا: نَذَرَ أَنْ يَمْشِيَ إِلَى بَيت الله قَالَ: «إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى عَنْ تَعْذِيبِ هَذَا نَفسه لَغَنِيّ» . وَأمره أَن يركب
ব্যাখ্যা: (أَنَّ النَّبِىَّ ﷺ رَأَى شَيْخًا يُهَادَى بَيْنَ ابْنَيْهِ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেখলেন, এক বৃদ্ধ তার দুই পুত্রের কাঁধের উপর ভর করে চলছে। ত্বীবী বলেন, এই বৃদ্ধ লোকটি হলো আবূ ইসরাঈল। (ফাতহুল বারী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১৮৬৫)
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - মানৎ
৩৪৩২-[৭] মুসলিম-এর অপর এক বর্ণনায় আছে, আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ বৃদ্ধকে বললেন, হে বৃদ্ধ! তুমি সওয়ারীতে আরোহণ কর। কেননা আল্লাহ তা’আলা তোমার ও তোমার মানতের প্রতি মুখাপেক্ষী নন।[1]
بَابٌ فِى النُّذُوْرِ
وَفِي رِوَايَةٍ لِمُسْلِمٍ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: «ارْكَبْ أَيُّهَا الشَّيْخُ فَإِنَّ اللَّهَ غَنِيٌّ عَنْكَ وَعَن نذرك»
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - মানৎ
৩৪৩৩-[৮] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সা’দ ইবনু ’উবাদাহ্ (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট ফতোয়া জানতে চাইলেন যে, তার মা একটি মানৎ করেছিল, কিন্তু তা আদায় করার পূর্বেই মৃত্যুবরণ করেন। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ফতোয়া দিলেন, তাঁর পক্ষ থেকে তুমি তা আদায় করে দাও। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابٌ فِى النُّذُوْرِ
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ: أَنَّ سَعْدَ بن عبَادَة رَضِي الله عَنْهُم اسْتَفْتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي نَذْرٍ كَانَ عَلَى أُمِّهِ فَتُوُفِّيَتْ قَبْلَ أَنْ تَقْضِيَهُ فَأَفْتَاهُ أَنْ يَقْضِيَهُ عَنْهَا
ব্যাখ্যা: হাদীসে দলীল সাব্যস্ত হয় যে, মৃত ব্যক্তির পক্ষ হতে তার অধিকার আদায় করা ওয়াজিব। সুতরাং মালের অধিকার তার পক্ষ হতে আদায় করা সর্বসম্মত ইজমা। শারীরিক ‘ইবাদাতের ক্ষেত্রে মতানৈক্য রয়েছে। অন্যত্র আমরা এই কিতাবে আলোচনা করেছি।
শাফি‘ঈ মাযহাব ও অন্যান্যদের নিকট মৃত ব্যক্তির পক্ষ হতে মালের অধিকার আদায় করা ওয়াজিব যেমন যাকাত, কাফফারা, মানৎ ইত্যাদি চাই তা ওয়াসিয়্যাত করুক বা নাই করুক। মানুষের ঋণের মতো। মালিক, আবূ হানীফাহ্ ও তাদের সাথীদের মতে যদি ওয়াসিয়্যাত করে না যায় তাহলে কোনো কিছু আদায় করা ওয়াজিব না।
কাযী ‘ইয়ায বলেনঃ উম্মু সা‘দ-এর মানতের বিষয়ে মতানৈক্য রয়েছে। কারও মতে ‘আম্ মানৎ ছিল, কারও মতে সওম, আবার কেউ বলেন গোলাম আযাদ, আবার কেউ বলেন সাদাকার ব্যাপারে ছিল। আর প্রত্যেকেই উম্মু সা‘দ-এর হাদীসের ঘটনাকেই দলীল হিসেবে পেশ করেছে, তবে অধিকতর শক্তিশালী মত হলো তার মানৎ ছিল মালের ব্যাপারে যা দারাকুত্বনীর বর্ণনাকে শক্তিশালী করে।
(حَدِيثِ مَالِكٍ فَقَالَ لَه يَعْنِي النَّبِيَّ ﷺ اسق عنها الماء) মালিক-এর হাদীস নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তার পক্ষ হতে পানির ব্যবস্থা কর তথা করুণার ব্যবস্থা কর। সওমের হাদীসে ব্যাপারে সানাদ ও মাতানের দিক হতে মতানৈক্য রয়েছে। আর অন্য গোলাম আযাদ করব এটা মালের সাথে সামঞ্জস্য রাখে, কেননা গোলাম আযাদের বিষয়টি অর্থের সাথে জড়িত। (শারহে মুসলিম ১১শ খন্ড, হাঃ ১৬৩৮)
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - মানৎ
৩৪৩৪-[৯] কা’ব ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! নিশ্চয় আমার তাওবার মধ্যে এটাও রয়েছে যে, আমি সম্পূর্ণরূপে আমার ধন-সম্পদ হতে পৃথক হয়ে যাব, যা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের জন্য সাদাকা হয়ে যাবে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সম্পদের কিয়দংশ তোমার নিজের জন্য রেখে দাও। সেটাই হবে তোমার জন্য উত্তম। আমি (কা’ব) বললাম, তাহলে আমি আমার খায়বারের অংশটি নিজের জন্য রেখে দেই। উল্লেখিত বর্ণনাটি একটি দীর্ঘ হাদীসের অংশবিশেষ। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابٌ فِى النُّذُوْرِ
وَعَنْ كَعْبِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ مِنْ تَوْبَتِي أَنْ أَنْخَلِعَ مِنْ مَالِي صَدَقَةً إِلَى اللَّهِ وَإِلَى رَسُولِهِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَمْسِكْ بَعْضَ مَالِكَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ» . قُلْتُ: فَإِنِّي أُمْسِكُ سَهْمِي الَّذِي بِخَيْبَر. وَهَذَا طرف من حَدِيث مطول
ব্যাখ্যা: কা‘ব বিন মালিক তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কবিদের মধ্যে অন্যতম কবি ছিলেন, যিনি তিনজনের একজন ছিলেন যারা তাবূকের যুদ্ধে খাওয়া হতে নিজেদেরকে বিরত রেখেছিলেন আর তিনজন হলেন কা‘ব বিন মালিক, হিলাল বিন উমাইয়্যাহ্, মুররাহ্ বিন রাবী। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
(أَمْسِكْ عَلَيْكَ بَعْضَ مَالِكَ) তুমি কিছু অংশ নিজের ওপর রেখে দাও, দৃশ্যত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আদেশ ছিল কিছু সম্পদ বের করা ও কিছু সম্পদ রেখে দেয়া। তবে বিস্তারিত ব্যাখ্যা ব্যতিরেকে আর হাদীস সুস্পষ্ট প্রমাণ করে, সমস্ত সম্পদ সাদাকা করা ঘৃণিত। এ ব্যাপারে বিস্তারিত ‘যাকাত অধ্যায়ে’ আলোচনা হয়ে গেছে। (ফাতহুল বারী ৫ম খন্ড, হাঃ ২৭৫৭)