পরিচ্ছেদঃ ১৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - জরায়ু মুক্তকরণ বা পবিত্রকরণ
৩৩৩৮-[২] আবূ সা’ঈদ আল খুদরী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উদ্ধৃতিতে বর্ণনা করেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, আওত্বাস যুদ্ধেলব্ধ বন্দীনীদের ব্যাপারে ঘোষণা করেন, গর্ভবতীর সাথে সন্তান প্রসব না পর্যন্ত এবং ঋতুবতীর সাথে ঋতুস্রাব শেষ না হওয়া পর্যন্ত কেউ যেন সহবাস না করে। (আহমাদ, আবূ দাঊদ, দারিমী)[1]
عَن أبي سعيدٍ الخدريِّ رَفْعَهُ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ فِي سَبَايَا أَوْطَاسٍ: «لَا تُوطَأُ حَامِلٌ حَتَّى تَضَعَ وَلَا غَيْرُ ذَاتِ حَمْلٍ حَتَّى تَحِيضَ حَيْضَةً» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَأَبُو دَاوُدَ وَالدَّارِمِيُّ
ব্যাখ্যা: হাদীস থেকে আমরা জানতে পারি যে, গর্ভবতী দাসী অন্যের জন্য বৈধ হতে তার গর্ভ প্রসব হওয়া জরুরী। এই হাদীসের পূর্ববতী হাদীসেও আমরা বিষয়টি জেনে এসেছি। তবে দাসী যদি গর্ভবতী না হয় তবে সে অন্যের জন্য বৈধ হতে একটি হায়িয বা ঋতুস্রাব অতিক্রম করবে। এ ক্ষেত্রে স্বাধীনা নারীর ‘ইদ্দাতের সাথে বেশকম হলো, স্বাধীনা নারী গর্ভবতী না হলে ‘ইদ্দত তিন হায়িয। আর দাসী নারীর গর্ভাশয় মুক্ত কিনা এক হায়িয দিয়ে দেখাই যথেষ্ট। মূলত একবার হায়িয না হলেই নারী গর্ভবতী নয়- এ কথা স্পষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু শারী‘আত চূড়ান্ত সতর্কতা অবলম্বনের কারণে স্বাধীনা নারীর ক্ষেত্রে তিন হায়িয ‘ইদ্দত পালনের নির্দেশ দিয়েছে।
গর্ভবতী নয় এমন দাসীর ইসতিব্রা বা গর্ভাশয়মুক্ত এক হায়িয দিয়ে দেখার বিষয়টি হাদীসে স্পষ্ট। তাই এ ব্যাপারে কোনো দ্বিমত নেই। তবে দাসী নারী যদি এমন হয় যার হায়িয হয় না, তার ক্ষেত্রে ‘উলামাদের দু’টি মত পাওয়া যায়। একমতে একমাস অপেক্ষা করে ইসতিব্রা করবে। আরেক মতে তিন মাস। প্রথম মতটিই অধিকাংশ ‘আলিমদের মত। কেননা গর্ভবতী নয় আবার হায়িয হয় না এমন নারী স্বাধীনা হলে তিন মাস ‘ইদ্দত পালন করতে হয়।
শারী‘আত একেকটি হায়িযকে একেক মাসের স্থলে রেখেছে। অতএব হায়িযপ্রাপ্তা দাসীকে যখন এক হায়িয দিয়ে ইসতিব্রা করতে হয় তখন যার হায়িয হয় না সে একমাস দিয়ে ইসতিব্রা করবে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ১৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - জরায়ু মুক্তকরণ বা পবিত্রকরণ
৩৩৩৯-[৩] রুওয়াইফা’ ইবনু সাবিত আল আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুনায়ন যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাত দিবসের উপর ঈমান রাখে, তার পক্ষে অপরের শস্যক্ষেত্রে নিজের পানি সিঞ্চন করা বৈধ নয়। তিনি (রুওয়াইফা’) বলেন, অন্যের ক্ষেত্রে পানি সিঞ্চন দ্বারা গর্ভবতীর সাথে সহবাস করাই বুঝিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের উপরে ঈমান রাখে, তার পক্ষে যুদ্ধবন্দীনী রমণীর সাথে সহবাস করা জায়িয নয় (তথা জরায়ুমুক্ত বা পবিত্রকরণ ছাড়া)। অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের উপর ঈমান রাখে, তার পক্ষে বণ্টনের পূর্বে গনীমাতের মাল বিক্রি করা জায়িয নয়। (আবূ দাঊদ)[1]
ইমাম তিরমিযী (রহঃ) শুধুমাত্র ’অপরের শস্যক্ষেত্রে নিজের পানি সিঞ্চন করা’ পর্যন্ত বর্ণনা করেছেন।
وَعَنْ رُوَيْفِعِ بْنِ ثَابِتٍ الْأَنْصَارِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم يَوْم حُنَيْنٍ: «لَا يَحِلُّ لِامْرِئٍ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ أَنْ يسْقِي مَاء زَرْعَ غَيْرِهِ» يَعْنِي إِتْيَانَ الْحُبَالَى «وَلَا يَحِلُّ لِامْرِئٍ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ أَنْ يَقَعَ عَلَى امْرَأَةٍ مِنَ السَّبْيِ حَتَّى يَسْتَبْرِئَهَا وَلَا يَحِلُّ لِامْرِئٍ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ أَنْ يَبِيعَ مَغْنَمًا حَتَى يُقَسَّمَ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَرَوَاهُ التِّرْمِذِيّ إِلَى قَوْله «زرع غَيره»
ব্যাখ্যা: হাদীসে তিনটি জিনিসকে অবৈধ করা হয়েছে। প্রত্যেকবারই রসূল বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে তার জন্য বৈধ নয়...। এভাবে বলে এই বিষয়গুলোর অবৈধ হওয়ার দৃঢ়তা বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ যার ঈমান আছে তার জন্য এই তিন কাজের কোনোটিই শোভা পায় না। প্রথমতঃ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর এই হাদীসে যে বিষয়টি হারাম করেন তা হলো, অন্যের গর্ভবতী নারীর সাথে সহবাস না করা। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীসে ইঙ্গিতমূলক শব্দ ব্যবহার করে বলেছেন, (أَنْ يسْقِى مَاء زَرْعَ غَيْرِه) অর্থাৎ বৈধ নয় যে, সে অন্যের ক্ষেতের স্থানে কোনো পানি দিবে। পানি দ্বারা বীর্য এবং ক্ষেতের জায়গা দ্বারা নারীর গর্ভাশয় বুঝানো হয়েছে। কুরআনেও আল্লাহ তা‘আলা নারীকে ক্ষেতের সাথে তুলনা করেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘‘তোমাদের স্ত্রীরা হলো তোমাদের জন্য শস্যক্ষেত্র।’’ (সূরা আল বাকারা ২ : ২২৩)
শস্যক্ষেত্র থেকে আমরা যেমন ফসল পাই তেমনি একজন নারী থেকে সন্তানের মতো উত্তম ফসল পাওয়া যায়। তাই নারীকে শস্য ক্ষেতের সাথে সাদৃশ্য দেয়া একেবারে স্পষ্ট।
দ্বিতীয়তঃ হাদীসে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে বিষয়টি হারাম করেন তা হলো দাসী নারীর গর্ভাশয় ইসতিব্রা না করেই তার সাথে সহবাস করা। যার আলোচনা ইতোপূর্বের দুই হাদীসে আমরা দেখেছি।
তৃতীয়তঃ যে বিষয়টি হাদীসে হারাম করা হয়েছে তা হলো গনীমাতের সম্পদ মুজাহিদদের মাঝে বণ্টনের পূর্বেই বিক্রি করে দেয়া।
গনীমাতের মাল যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুজাহিদদের হক। বণ্টনের আগে সবাই এর সমষ্টিগত মালিক। তাই বণ্টনের আগে কারো জন্যই এই সম্পদে কোনো ধরনের গোপন হস্তক্ষেপ জায়িয নয়। একটি হাদীসে এসেছে- «لَا تُقْبَلُ صَلَاةٌ بِغَيْرِ طُهُورٍ وَلَا صَدَقَةٌ مِنْ غُلُولٍ» ‘‘পবিত্রতা ছাড়া সালাত কবুল হয় না এবং গনীমাতের মালে খিয়ানাতের সাদাকা কবুল হয় না।’’ (সহীহ মুসলিম- অধ্যায় : পবিত্রতা, অনুচ্ছেদ : সালাতে পবিত্রতা ওয়াজিব, হাঃ ৩২৯)