পরিচ্ছেদঃ ১৬. প্রথম অনুচ্ছেদ - জরায়ু মুক্তকরণ বা পবিত্রকরণ
৩৩৩৭-[১] আবুদ্ দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসন্ন প্রসবা জনৈকা রমণীর নিকট দিয়ে গমনকালে তার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলেন, সে কে? উপস্থিত লোকজন বলল, অমুকের দাসী। উক্ত ব্যক্তি কী (এ অবস্থায়) তার সাথে সহবাস করে থাকে? তারা বলল, হ্যাঁ। এতে (ক্রোধান্বিত হয়ে) তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমার তাকে এমনভাবে অভিশাপ দিতে ইচ্ছা করছে যে, এ অভিসম্পাত যেন তার সাথে কবর পর্যন্ত পৌঁছে, যাতে ইহকাল-পরকাল বরবাদ হয়। কিরূপে সে তার থেকে বাঁদির ন্যায় খিদমাত গ্রহণ করছে, অথচ তার জন্য তা নাজায়িয। প্রকৃতপক্ষে সে কিরূপে অপরের সন্তানকে নিজের ওয়ারিস করবে, অথচ তার জন্য তা নাজায়িয। (মুসলিম)[1]
بَابُ الْاِسْتِبْرَاءِ
عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ قَالَ: مَرَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِامْرَأَةٍ مُجِحٍّ فَسَأَلَ عَنْهَا فَقَالُوا: أَمَةٌ لِفُلَانٍ قَالَ: «أَيُلِمُّ بِهَا؟» قَالُوا: نَعَمْ. قَالَ: «لَقَدْ هَمَمْتُ أَنْ أَلْعَنَهُ لَعْنًا يَدْخُلُ مَعَهُ فِي قَبْرِهِ كَيْفَ يَسْتَخْدِمُهُ وَهُوَ لَا يَحِلُّ لَهُ؟ أَمْ كَيْفَ يُوَرِّثُهُ وَهُوَ لَا يحلُّ لَهُ؟» . رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: (مُجِحٍّ) শব্দের অর্থ হলো ঐ মহিলা যার গর্ভ নিকটবর্তী হয়ে গেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন, সে দাসী নাকি স্বাধীনা নারী। যখন সাহাবীরা বললেন, সে অমুকের দাসী, তখন জিজ্ঞেস করলেন, সে কি তার সাথে সহবাস করে? তারা বললেন, হ্যাঁ। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার ইচ্ছা হয় যে, তাকে এমন অভিশাপ দিবো যা নিয়ে সে কবরে প্রবেশ করবে।
হাদীস থেকে যে মাস্আলাটি বের হয় তা হলো, স্বাধীনা নারীর ত্বলাকের পর যেমন ‘ইদ্দত পালন করা জরুরী তেমনি দাসী নারীর মালিকানা পরিবর্তনের সময় পরবর্তী মালিক তাকে ব্যবহার করার জন্য তার গর্ভাশয় মুক্ত করা জরুরী। গর্ভবতী নারীর ‘ইদ্দত যেমন গর্ভপাত তেমনি স্বাধীনা নারী গর্ভবতী হলে তার এই গর্ভ প্রসবের পরই অন্যের জন্য হালাল হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিশ্চয় জানা ছিল যে, বর্ণিত ব্যক্তি উক্ত দাসীর মালিক গর্ভাবস্থায় হয়েছে। তাই গর্ভের বাচ্চা প্রসব পর্যন্ত তার সাথে স্ত্রীসুলভ আচরণ জায়িয ছিল না। তাই এই হারাম কাজ দেখে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাগ করে অভিশাপ দেয়ার ইচ্ছা করেন।
(لَقَدْ هَمَمْتُ أَنْ أَلْعَنَه) আমার ইচ্ছা হয় যেন অভিশাপ দেই। এতে প্রমাণ হয় না যে, তিনি অভিশাপ দিয়েছেন। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উম্মাতকে অভিশাপ দেন না। তবে সে কাজ করেছে তা অভিশাপ পাওয়ার যোগ্য হওয়ায় রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথা বলেন।
(أَمْ كَيْفَ يُوَرِّثُه وَهُوَ لَا يحِلُّ لَه؟) অর্থাৎ এই বাচ্চাকে ওয়ারিস বানানো তার জন্য হালাল নয়। এমতাবস্থায় সে কেমনে এই বাচ্চাকে ওয়ারিস বানাবে? কেননা বাচ্চাটি যদি ছয় মাসের মাথায় প্রসব হয় তখন জানা যাবে না যে, এটা তার সন্তান নাকি তার পূর্বে যার সাথে এই দাসীর মিলন হয়েছে তার সন্তান। তার বলে নিশ্চিত না হলে এই বাচ্চা ওয়ারিস হবে না, কেননা এতে তার কারণে অন্য ওয়ারিসদের মীরাসে কমতি পড়বে। নিশ্চিত না হয়ে অন্যের মীরাসে কমতি করার কোনো সুযোগ নেই। এছাড়া সে দাস হিসেবে অন্যরা তার মালিক হয়ে তার সাথে দাসের আচরণের ব্যাপারটি ধুম্রজালে পড়ে যাবে। বাস্তবে তার সন্তান না হলে তার ওয়ারিসরা একে গোলাম হিসেবে তাদের মালিকানায় নিতে পারছে না। কেননা এখানে কোনো কিছুই স্পষ্ট নয়। তাই অবস্থা স্পষ্ট হওয়ার জন্য দাসী নারীর সাথে সহবাস করতে তার ‘ইসতিবরায়ি রেহেম’ বা গর্ভাশয় পাক হওয়া জরুরী। (শারহে মুসলিম ৯/১০ খন্ড, হাঃ ১৪৪১)