পরিচ্ছেদঃ ১২. প্রথম অনুচ্ছেদ - তিন তালাকপ্রাপ্তা রমণীর বর্ণনা
৩২৯৫-[১] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রিফা’আহ্ আল কুরাযী নামে এক সাহাবীর স্ত্রী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বলল, আমি রিফা’আহ্-এর বিবাহিতা স্ত্রী ছিলাম, সে আমাকে তিন তালাক দিয়ে সম্পূর্ণ সম্পর্ক নিঃশেষ করে দিয়েছে। অতঃপর ’আব্দুর রহমান ইবনুয্ যাবীর -এর সাথে আমার বিবাহ হয়, কিন্তু তাঁর কাছে এই কাপড়ের আঁচলের মতো ছাড়া আর কিছুই নেই। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি রিফা’আহ্-এর নিকট ফিরে যেতে চাও? সে বলল, জি, হ্যাঁ। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, না, যে পর্যন্ত না তুমি তার স্বাদ আস্বাদন (সহবাস) কর এবং সে তোমার স্বাদ আস্বাদন করে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الْمُطَلَّقَةِ ثَلَاثًا
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: جَاءَتِ امْرَأَةُ رِفَاعَةَ الْقُرَظِيِّ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَتْ: إِنِّي كُنْتُ عِنْدَ رِفَاعَةَ فَطَلَّقَنِي فَبَتَّ طَلَاقِي فَتَزَوَّجْتُ بَعْدَهُ عَبْدَ الرَّحْمَنِ بْنَ الزُّبَيْرِ وَمَا مَعَهُ إِلَّا مِثْلُ هُدْبَةِ الثَّوْبِ فَقَالَ: «أَتُرِيدِينَ أَنْ تَرْجِعِي إِلَى رِفَاعَةَ؟» قَالَتْ: نَعَمْ قَالَ: «لَا حَتَّى تَذُوقِي عُسَيْلَتَهُ وَيَذُوقَ عُسَيْلَتَكِ»
ব্যাখ্যা: عَبْدَ الرَّحْمٰنِ بْنَ الزَّبِيْرِ (‘আবদুর রহমান ইবনুয্ যাবীর)। এখানে ‘যা’ হরফটি যবর এবং ‘বা’ হরফটি যের বিশিষ্ট। এতে কোনো মতানৈক্য নেই। তিনি হলেন যাবীর ইবনু বাত্ত্বা। তাকে ‘বাত্বায়া-’ও বলা হয়। ‘আবদুর রহমান একজন সাহাবী ছিলেন। এই ‘আবদুর রহমান ইবনুয্ যাবীর ইবনু বাত্ত্বল কুরাযী তিনিই রিফা‘আহ্ আল কুরাযী-এর স্ত্রীকে বিবাহ করেছিলেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
(هُدْبَةِ الثَّوْبِ) অর্থাৎ কাপড়ের আচল বা ঝালর। চোখের পাপড়ি যাকে ‘হাদবুন’ বলা হয় তার সাথে সাদৃশ্য রেখে ‘হুদবাতুন’ বলা হয়েছে।
(لَا حَتّٰى تَذُوقِى عُسَيْلَتَه وَيَذُوْقَ عُسَيْلَتَكِ) ‘আইন’ হরফ পেশ এবং ‘সীন’ হরফে যবর। عَسَلَة শব্দের তাসগীর। যার অর্থ মধু। সহবাসের প্রতি ইঙ্গিত। সহবাসের স্বাদকে মধুর স্বাদ ও তার মিষ্টের সাথে সাদৃশ্য দেয়া হয়েছে।
হাদীসের মর্মঃ তিন তালাকপ্রাপ্তা নারীকে তালাকদাতা স্বামী বিবাহ করতে পারবে না, যতক্ষণ না এই নারী অন্য কোনো পুরুষের সাথে বিবাহে আবদ্ধ হয়েছে এবং নতুন স্বামী তাকে সহবাস করে তালাক দিয়েছে এবং ত্বলাকের পর ‘ইদ্দত অতিক্রান্ত হয়েছে। অর্থাৎ দ্বিতীয় স্বামী সহবাসের পর যদি তাকে তালাক দেয় এবং ত্বলাকের পর ‘ইদ্দত শেষ হয় তখনই পূর্বের স্বামী আবার তাকে নতুনভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করতে পারে। কেবল বিবাহের ‘আকদ হওয়া যথেষ্ট নয়। কেবল ‘আকদ করেই তালাক দিয়ে দিলে উক্ত নারী পূর্বের স্বামীর জন্য বৈধ হবে না। এটাই সহাবা, তাবি‘ঈন এবং তাদের পরবর্তী সমস্ত ‘আলিমের মত। কেবলমাত্র সা‘ঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব তিনি সবার ব্যতিক্রম মত পোষণ করেন এবং বলেন, দ্বিতীয় স্বামী ‘আকবদের পর সহবাস ছাড়া তালাক দিয়ে দিলেও পূর্বের স্বামীর জন্য বিবাহ করা বৈধ হয়ে যাবে। তিনি কুরআনের আয়াতঃ حَتّٰى تَنْكِحَ زَوْجًا غَيْرَه অর্থাৎ ‘‘যতক্ষণ না অন্য স্বামীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে’’- (সূরা আল বাকারা ২ : ২৩) দিয়ে দলীল দেন। কেননা বিশুদ্ধ মতে ‘নিকাহ’ শব্দটি ‘আকদের উপর প্রয়োগ হয়। অর্থাৎ কুরআনের মর্মানুযায়ী ‘আকদ হলেই পূর্বের স্বামী এই স্ত্রী হালাল হয়ে যাবে। জুমহূর ‘উলামাহ্ তার কথার উত্তরে বলেন, আয়াতটি যদিও ব্যাপক কিন্তু হাদীস আয়াতটিকে বিশেষিত করে দিয়েছে এবং আয়াতের উদ্দেশ্য বর্ণনা করে দিয়েছে। ‘উলামাগণ বলেন, হতে পারে সা‘ঈদ-এর কাছে হাদীসটি পৌঁছেনি।
কাযী ‘ইয়ায বলেনঃ খারিজীদের এক গোত্র ছাড়া সা‘ঈদ-এর কথা কেউই গ্রহণ করেননি।
‘উলামারা এ কথার উপরও একমত যে, স্বামী স্ত্রীর মিলনই পূর্বের স্বামী বৈধ হওয়ার জন্য যথেষ্ট। অর্থাৎ পুরুষের সামনের অঙ্গ মহিলার সামনের অঙ্গে প্রবেশ করলেই বৈধ হয়ে যায়। সহবাসের চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে বীর্য বের হওয়া জরুরী নয়। (শারহে মুসলিম ৯/১০ম খন্ড, হাঃ ১৪৩৩)
[রিফা‘আহ্ হলো মদীনার বিখ্যাত ইয়াহূদী ফুরায়যাহ্ গোত্রের লোক, তিনি ইসলাম গ্রহণ করার পর তার স্ত্রীকে তিন তালাক প্রদান করেন। এটা একত্রেই প্রদান করেন না পৃথক পৃথক, তা উল্লেখ নেই। একত্রে তিন তালাক দেয়ার যেহেতু বিধান নেই। সুতরাং ধরা হবে এ তিন তালাক পৃথক পৃথকভাবেই দিয়েছিলেন।] (সম্পাদক)