পরিচ্ছেদঃ ৯. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - দেউলিয়া (দারিদ্র্য) হওয়া এবং ঋণীকে অবকাশ দান
২৯২৪-[২৬] সুওয়াইদ ইবনু কায়স (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি এবং মাখরাফাতুল ’আবদী (রাঃ) ’হাজার’ নামক অঞ্চল হতে ব্যবসার উদ্দেশে কাপড় নিয়ে মক্কায় আসলাম। এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের নিকট হতে একটি পায়জামা কিনতে চাইলেন। আমরা তাঁর নিকট তা বিক্রি করলাম। (অর্থের) বিনিময়ে বিভিন্ন দ্রব্য-সামগ্রী ওযন পরিমাপ করে দেয় এমন এক ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত ছিল। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে (রৌপ্য-মুদ্রার বিনিময়ে) ওযন করে দিতে বললেন এবং এটাও বললেন, ওযন করার সময় প্রাপ্যের চেয়ে একটু বেশি দেবে। (আহমাদ, আবূ দাঊদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ ও দারিমী; আর ইমাম তিরমিযী বলেছেন, হাদীসটি হাসান সহীহ)[1]
عَن سُوَيْد بن قيس قَالَ: جَلَبْتُ أَنَا وَمَخَرَفَةُ الْعَبْدِيُّ بَزًّا مِنْ هَجَرٍ فَأَتَيْنَا بِهِ مَكَّةَ فَجَاءَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَمْشِي فَسَاوَمَنَا بِسَرَاوِيلَ فَبِعْنَاهُ وَثمّ رجل يزن بِالْأَجْرِ فَقَالَ لَهُ رَسُول الله: «زِنْ وَأَرْجِحْ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَأَبُو دَاوُدَ وَالتِّرْمِذِيُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَالدَّارِمِيُّ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ
ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসে দলীল রয়েছে যে, ওযন কিংবা পরিমাপ করার উপরে পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয। এর অর্থ হলো, বণ্টনকারী ও হিসাবরক্ষকের পারিশ্রমিক প্রদান। তবে সা‘ঈদ বিন মুসাইয়্যাব (রহঃ) ওযনকারীর পারিশ্রমিক দেয়া অপছন্দ করতেন। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বলও অপছন্দ করতেন। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ১৩০৫)
পরিচ্ছেদঃ ৯. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - দেউলিয়া (দারিদ্র্য) হওয়া এবং ঋণীকে অবকাশ দান
২৯২৫-[২৭] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আমার কিছু পাওনা ছিল। পরিশোধের সময় তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে আমার প্রাপ্যের চেয়ে বেশি দিলেন। (আবূ দাঊদ)[1]
وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: كَانَ لِي عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَيْنٌ فَقَضَانِي وَزَادَنِي. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
পরিচ্ছেদঃ ৯. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - দেউলিয়া (দারিদ্র্য) হওয়া এবং ঋণীকে অবকাশ দান
২৯২৬-[২৮] ’আব্দুল্লাহ ইবনু আবূ রবী’আহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট হতে চল্লিশ হাজার (দিরহাম) ঋণ করেছিলেন। যখন তাঁর কাছে অর্থের ব্যবস্থা হলো, তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমার প্রাপ্য পরিশোধ করলেন এবং দু’আ করলেন- ’বা-রকাল্লা-হু তা’আলা- ফী আহলিকা ওয়ামা-লিকা’ (অর্থা- আল্লাহ তা’আলা তোমাকে ধন-সম্পদ ও পরিবার-পরিজনে বরকত দান করুন)। আর বললেন, ঋণ দেয়ার প্রতিদান হচ্ছে ঋণদাতার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা এবং ঋণ পরিশোধ করা। (নাসায়ী)[1]
وَعَن عبد الله بن أبي ربيعَة قَالَ: اسْتَقْرَضَ مِنِّي النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَرْبَعِينَ أَلْفًا فَجَاءَهُ مَالٌ فَدَفَعَهُ إِلَيَّ وَقَالَ: «بَارَكَ اللَّهُ تَعَالَى فِي أَهْلِكَ وَمَالِكَ إِنَّمَا جَزَاءُ السَّلَفِ الْحَمْدُ وَالْأَدَاءُ» . رَوَاهُ النَّسَائِيُّ
ব্যাখ্যা: (الْأَدَاءُ) অর্থাৎ- উত্তমরূপে পূর্ণ করে দেয়া। ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ যদি বল যে, ঋণের উপর অতিরিক্ত কিছু দেয়া জায়িয নয় কেননা এ মর্মে হুকুম সাব্যস্ত রয়েছে এবং মূল পাওনা বা ঋণ ছাড়া কিছু দেয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে আমি বলব যে, এটা ঋণের উপর বর্ধিত কিছু আবশ্যকতার ভিত্তিতে শর্তের মাধ্যমে চাপিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কিন্তু অনুগ্রহ কর্তার ওপর কৃতজ্ঞ হওয়া এবং তার হক আদায় করা (ঋণ যথাযথ আদায় করা) ওয়াজিব। আর কিছু বৃদ্ধি দেয়াটা অনুগ্রহ। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
পরিচ্ছেদঃ ৯. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - দেউলিয়া (দারিদ্র্য) হওয়া এবং ঋণীকে অবকাশ দান
২৯২৭-[২৯] ’ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঋণ প্রদানকারী ব্যক্তি যদি ঋণ গ্রহণকারীকে কিছু দিনের সময় দিয়ে থাকে, তবে সে প্রতিদিনের বিনিময়ে সাদাকা বা দান-খয়রাত করার সাওয়াব লাভ করবে। (আহমাদ)[1]
وَعَنْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ كَانَ لَهُ عَلَى رَجُلٍ حَقٌّ فَمَنْ أَخَّرَهُ كَانَ لَهُ بِكُلِّ يَوْمٍ صَدَقَةٌ» . رَوَاهُ أَحْمد
পরিচ্ছেদঃ ৯. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - দেউলিয়া (দারিদ্র্য) হওয়া এবং ঋণীকে অবকাশ দান
২৯২৮-[৩০] সা’দ ইবনুল আত্বওয়াল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার ভাই তিনি নাবালক সন্তান-সন্ততি ও তিনশত দীনার (স্বর্ণ-মুদ্রা) রেখে মৃত্যুবরণ করলেন। আমার ইচ্ছা হলো- এ দীনারগুলো তাদের জন্য ব্যয় করবো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, তোমার ভাই ঋণগ্রস্ত অবস্থায় মারা গেছে; তার ঋণ পরিশোধ কর। এমতাবস্থায় আমি গিয়ে ঋণ পরিশোধ করলাম এবং পুনরায় এসে বললাম, হে আল্লাহর রসূল! সব ঋণই পরিশোধ করে দিয়েছি; কেবলমাত্র জনৈকা মহিলা অবশিষ্ট রয়েছে। সে দুই দীনার পাওয়ার দাবি করে, কিন্তু তার পক্ষে কোনো সাক্ষী নেই। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তাকেও দিয়ে দাও, সে সত্যবাদিনী। (আহমাদ)[1]
وَعَن سعد بن الأطول قَالَ: مَاتَ أَخِي وَتَرَكَ ثَلَاثَمِائَةِ دِينَارٍ وَتَرَكَ وَلَدًا صِغَارًا فَأَرَدْتُ أَنْ أُنْفِقَ عَلَيْهِمْ فَقَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِن أخلك مَحْبُوسٌ بِدَيْنِهِ فَاقْضِ عَنْهُ» . قَالَ: فَذَهَبْتُ فَقَضَيْتُ عَنهُ وَلم تبْق إِلَّا امْرَأَةٌ تَدَّعِي دِينَارَيْنِ وَلَيْسَتْ لَهَا بَيِّنَةٌ قَالَ: «أعْطهَا فَإِنَّهَا صَدَقَة» . رَوَاهُ أَحْمد
পরিচ্ছেদঃ ৯. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - দেউলিয়া (দারিদ্র্য) হওয়া এবং ঋণীকে অবকাশ দান
২৯২৯-[৩১] মুহাম্মাদ ইবনু ’আব্দুল্লাহ ইবনু জাহশ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমরা মসজিদের সামনে খোলা জায়গায় বসাছিলাম, যেখানে জানাযা রাখা হতো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মধ্যে বসে ছিলেন। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আকাশের দিকে চোখ উঠিয়ে তাকালেন, অতঃপর দৃষ্টিকে অবনত করে কপালের উপর হাত রেখে বললেন, সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! কী কঠোরতম (আয়াত) অবতীর্ণ হলো!
বর্ণনাকারী বলেন, আমরা একদিন একরাত নিশ্চুপই রইলাম; এ সময়ের মধ্যে সব ভালোই দেখলাম। মুহাম্মাদ বলেন, পরবর্তী দিন ভোর হলে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে জিজ্ঞেস করলাম, কি কঠোরতা অবতীর্ণ হয়েছে? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ঋণের বিষয়ে কঠোরতা অবতীর্ণ হয়েছে। ঐ আল্লাহর কসম, যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ! কোনো লোক আল্লাহর পথে শহীদ হয়ে পুনরায় জীবন লাভ করেছে, আবার শহীদ হয়ে পুনরায় জীবন লাভ করেছে, আবার শহীদ হয়ে পুনরুজ্জীবিত হয়েছে এবং তার ওপর ঋণ থাকায় সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত না তার ঋণ পরিশোধ করা হয়। (আহমাদ ও শারহুস্ সুন্নাহ্)[1]
وَعَنْ مُحَمَّدِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ جَحْشٍ قَالَ: كُنَّا جُلُوسًا بِفِنَاءِ الْمَسْجِدِ حَيْثُ يُوضَعُ الْجَنَائِز وَرَسُول الله جَالِسٌ بَيْنَ ظَهْرَيْنَا فَرَفَعَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَصَره قبل السَّمَاء فَنظر ثُمَّ طَأْطَأَ بَصَرَهُ وَوَضَعَ يَدَهُ عَلَى جَبْهَتِهِ قَالَ: «سُبْحَانَ الله سُبْحَانَ الله مَا نَزَلَ مِنَ التَّشْدِيدِ؟» قَالَ: فَسَكَتْنَا يَوْمَنَا وَلَيْلَتَنَا فَلَمْ نَرَ إِلَّا خَيْرًا حَتَّى أَصْبَحْنَا قَالَ مُحَمَّدٌ: فَسَأَلْتُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَا التَّشْدِيدُ الَّذِي نَزَلَ؟ قَالَ: «فِي الدَّيْنِ وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لَوْ أَنَّ رَجُلًا قُتِلَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ثُمَّ عَاشَ ثُمَّ قُتِلَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ثُمَّ عَاشَ ثُمَّ قُتِلَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ثُمَّ عَاشَ وَعَلَيْهِ دَيْنٌ مَا دَخَلَ الْجَنَّةَ حَتَّى يُقْضَى دَيْنُهُ» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَفِي شَرْحِ السُّنَّةِ نَحْوَهُ
ব্যাখ্যা: ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেনঃ এখানে উদ্দেশ্য হলো, ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিকে কিয়ামতের দিন ঋণ পরিশোধ করতে হবে এবং তিনি বলেন, আমার জীবনে ঋণের ব্যাপারে এত কঠোর কথা আমি কখনো পাইনি। (মিরকাতুল মাফাতীহ)